
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর একটি প্রশ্নই এখন আলোচনায় কেন্দ্রীয় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কি লন্ডনে অবস্থান করেও ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন? নির্বাচন কমিশন বলছে, আইনগত কোনো বাধা নেই।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। তার সঙ্গে সঙ্গেই স্পষ্ট করা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, সংবিধান ও ভোটার তালিকা আইনে বর্ণিত শর্ত পূরণ করলে তারেক রহমানের ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতা নেই।
ইসি জানিয়েছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে আগামী ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই তাকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে এবং একই সময়সীমার মধ্যে জমা দিতে হবে মনোনয়নপত্র।
ভোটার তালিকা আইনে বলা আছে, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে থাকলেও ফরম-২ পূরণ করে দেশে বা সংশ্লিষ্ট দেশের রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার কাছে অথবা অনলাইনে ভোটার হওয়ার আবেদন করতে পারেন। আইনের ১৫ ধারা কমিশনকে যেকোনো সময় যোগ্য ব্যক্তিকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা দেয়। তবে ১৩ ধারা অনুযায়ী, নাগরিকত্ব হারালে বা আদালতের মাধ্যমে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস আদেশ কিংবা ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস অ্যাক্টে দোষী হলে ভোটার হওয়ার যোগ্যতা বাতিল হয়। পাশাপাশি ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়াও আবশ্যক।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পরও যোগ্য যে কোনো নাগরিককে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তাদের ব্যাখ্যা, তারেক রহমান চাইলে লন্ডন থেকেই ভোটার হতে পারবেন, কারণ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতোমধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আইন অনুযায়ী কমিশন চাইলে তফসিল ঘোষণার পরও যেকোনো নাগরিককে ভোটার করতে পারে। এই এখতিয়ার আইন কমিশনকে দিয়েছে। সে কারণে তারেক রহমানের ভোটার হতে কোনো বাধা নেই। নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে অবশ্যই মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনের মধ্যে তাকে ভোটার হতে হবে। বাংলাদেশের যেকোনো এলাকার ভোটার যেকোনো আসনে প্রার্থী হতে পারেন, যদি তিনি যোগ্যতা না হারান।”
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, প্রার্থী হতে হলে মনোনয়নপত্র প্রার্থী নিজে অথবা প্রস্তাবক বা সমর্থকের স্বাক্ষরসহ রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। প্রার্থীকে দেশে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আইন অনুযায়ী কিছু যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বিবেচনায় নিতে হবে।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিক এবং বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলেই সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়। অপরদিকে, আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হওয়া, ফেরারি আসামি থাকা, দেউলিয়া হয়ে দায়মোচন না পাওয়া, বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ বা অন্য দেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাতে হয়। বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে পুনরায় বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ফিরিয়ে আনলে সেই যোগ্যতা ফিরে আসে।
নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি সাজা পেলে এবং কারামুক্তির পাঁচ বছর না পেরোলে প্রার্থী হওয়া যায় না। ১৯৭২ সালের ‘বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশ’ অনুযায়ী দণ্ডিত হলে অথবা প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোনো পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়া যায় না। মনোনয়নপত্রে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে সেটি বাতিল হতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা আরও জানান, তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব গ্রহণ না করে থাকলে ভোটার হতে কোনো আইনগত বাধা নেই। লন্ডন থেকেই ভোটার হওয়ার পর প্রার্থী হওয়াও সম্ভব। মনোনয়নপত্র ডাকযোগে পাঠানো বা প্রতিনিধির মাধ্যমে জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং লন্ডনেই তার স্বাক্ষর করানো যেতে পারে।
তারেক রহমান বিদেশে থেকেই অংশ নেবেন নাকি দেশে ফিরে এসে ভোটার হবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “তারেক রহমান দেশে এসে ভোটার হয়ে যাবেন। এতে কোনো সমস্যা হবে না। তারেক রহমানের ভোটার হওয়ার সময়সীমা নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না।”
উল্লেখ্য, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। আপিল দাখিলের শেষ সময় ১১ জানুয়ারি, নিষ্পত্তি ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি। প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।