
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থতার কারণে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মেডিকেল বোর্ডের অনুমোদনের পর।
বিএনপি সূত্র ও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে লন্ডনের সেই একই হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়েছিল, সেখানে পুনরায় নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা লন্ডনের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থার কাজও চলছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন বলেছেন, “শারীরিক অবস্থায় সামান্য উন্নতি হলেই পরিবারের সদস্যরা তাকে লন্ডনে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।” নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি জানিয়েছেন, “লন্ডনের হাসপাতাল ও চিকিৎসকের অধীনে চার মাসে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছেন তারেক রহমান ও তার স্ত্রী।”
দেশের চিকিৎসকরা ‘গ্রিন সিগনাল’ দিলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া হবে। এদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থার জন্য কাতার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন গত রোববার নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শারীরিক অবস্থার খোঁজে বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও হাসপাতালে গেছেন। শনিবার সকালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান এনসিপির নেতারা। দলটির মূখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ফেসবুকে জানান, “সংকটাপন্ন হলেও স্থিতিশীল রয়েছে খালেদা জিয়ার অবস্থা। তিনি চিকিৎসক ও নার্সদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারছেন।”
এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা “সংকটময়”। তিনি এবং অন্যান্য বিএনপি নেতারা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ ভুলু সাংবাদিকদের বলেন, “খালেদা জিয়া জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় আছেন, তবে আগের দিনের তুলনায় সামান্য উন্নতি হয়েছে। সবাই দোয়া করবেন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারেন।”
শ্বাসকষ্ট বাড়ায় গত রোববার জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। একুশে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তিনি অস্বস্তি বোধ করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও চোখের সমস্যা সহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
ঢাকায় বাসায় থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের মে মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। ২০২৪ সালের জুনে হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। তার হার্টে তিনটি ব্লক ও একটি রিং আছে। একই বছরে লিভারের চিকিৎসার জন্য পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসি করা হয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পান। প্রথমে কারাগারে, পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০২৪ সালের অগাস্টে রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সমস্ত দণ্ড থেকে মুক্তি পান এবং গুলশানের বাসায় উঠেন।