প্রতীক বরাদ্দে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ করছে নির্বাচন কমিশন: এনসিপি
- নিউজ ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৭:১৮ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে প্রতীক বরাদ্দে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। দলের অভিযোগ, ইসি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় ‘শাপলা’ প্রতীক না দিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিচ্ছে এবং বিদ্যমান বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করছে।
সম্প্রতি ইসি সচিবালয় থেকে এনসিপিকে পাঠানো একটি চিঠির প্রেক্ষিতে দলটি কড়া ভাষায় লিখিত জবাব দিয়েছে। এনসিপি জানিয়েছে, বহুদিন ধরে ‘শাপলা’ প্রতীকটি তাদের দলের পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে এবং জনসাধারণের সঙ্গে এ প্রতীকের একটি আবেগঘন সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, যা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
এর আগে ১৪ অক্টোবর ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, “জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ১৯ তারিখের মধ্যে অন্য প্রতীকের নাম দিতে বলা হয়েছে। এই সময়ে নাম না দিলে কমিশন স্বীয় বিবেচনায় একটি প্রতীক বরাদ্দ দেবে।”
এই বক্তব্যের জবাবে এনসিপি জানায়, তারা ২২ জুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন করে এবং সেইসঙ্গে ‘শাপলা’ প্রতীক সংরক্ষণের আবেদনও জমা দেয়। এরপর ৩ আগস্ট, ২৪ সেপ্টেম্বর ও ৭ অক্টোবর তিনটি পৃথক আবেদনের মাধ্যমে তারা কমিশনের কাছে অনুরোধ জানায়, যেন প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ অথবা ‘লাল শাপলা’ বরাদ্দ দেওয়া হয়। দলটি প্রতীকের ভিজ্যুয়াল ডিজাইনসহ আলাদা সংস্করণও কমিশনের কাছে উপস্থাপন করে।
তবে এনসিপির অভিযোগ, এসব অনুরোধ এখনো নিষ্পত্তি না করেই নির্বাচন কমিশন ১৩ অক্টোবর একটি চিঠি পাঠায়। এই চিঠিকে দলটি ‘বিধি-বহির্ভূত’, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, ‘স্বেচ্ছাচারী’ এবং ‘বেআইনি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের ভাষ্য, “ইসি এই চিঠির মাধ্যমে আমাদের ওপর ইচ্ছামতো প্রতীক চাপিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।”
দলটি আরও দাবি করেছে, সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সব রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকের প্রতি সমতা ও আইনের আশ্রয়ে ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করা কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এনসিপির মতে, প্রতীক বরাদ্দের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসি তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।
চিঠিতে এনসিপি জানতে চেয়েছে, কোন নির্দিষ্ট নীতিমালা বা মানদণ্ড অনুসরণ করে ‘শাপলা’ প্রতীককে অনুমোদিত তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। যদি এমন কোনো নীতিমালা না থাকে, তবে তা দ্রুত প্রণয়ন করে প্রকাশ করতে হবে বলে দলটির দাবি।
এছাড়া দলটি উল্লেখ করেছে, নিবন্ধনের পরবর্তী ধাপে যেতে হলে ‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮’-এর বিধি ৭ (২) এবং তফসিলভুক্ত ফরম-২ অনুসারে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। যেখানে প্রার্থিত প্রতীকের নাম উল্লেখ করাও বাধ্যতামূলক।
এনসিপি বলছে, “কমিশনের পক্ষ থেকে এ নিয়ম লঙ্ঘনের বা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী প্রতীক নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই।”
চিঠির শেষ অংশে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে ‘অন্যায্য’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে, কমিশনের এই আচরণ জনমনে প্রশ্ন তুলেছে; ইসি কি জনগণের সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সম্পর্ক এড়িয়ে চলছে?
দলটির ভাষ্য, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অতীতের ‘ফ্যাসিবাদী আমলের পাতানো নির্বাচন আয়োজনকারী’ কমিশনের আচরণ থেকে নিজেদের আলাদা করতে পারছে না। এতে করে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ আবারও একটি নতুন সংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এনসিপি।
শেষ পর্যন্ত দলটি আশা প্রকাশ করেছে, ইসি ২০০৮ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার বিধি ৯ (১) সংশোধন করে এনসিপির অনুকূলে ‘শাপলা’, ‘সাদা শাপলা’ বা ‘লাল শাপলা’ প্রতীকের যেকোনো একটি দ্রুত বরাদ্দ করবে।