সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে: সালাহউদ্দিন
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৪:৪৩ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতির আন্দোলনকে তিনি নির্বাচন বিলম্ব ও অস্থিতিশীলতার হাতিয়ার হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এনডিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পিআর পদ্ধতির দাবি নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে সালাহউদ্দিন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেকেই আগামী নির্বাচন নিয়ে কিছু দলের রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমি এগুলোকে রাজনৈতিক কর্ম হিসেবে স্বাভাবিক মনে করি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছু রাজনৈতিক দল তাদের বক্তব্য ও নির্বাচনি কৌশল মাঠে-ময়দানে তুলে ধরবে এটাই স্বাভাবিক।”
জামায়াত ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পিআর ও জুলাই সনদ ইস্যুতে আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তারা মিছিল ও সমাবেশ করছে। এটা রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক চর্চা। এই চর্চা হওয়ার জন্যই আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। এটাকে আমি স্বাগত জানাই। জনগণ যদি গ্রহণ করে তাহলে আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে তারা তা যুক্ত করে জনগণের সমর্থন নিয়ে বাস্তবায়ন করবে।”
তবে আন্দোলনে জড়িত দলের অতীত ভূমিকা সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “আজকে যারা পিআর পিআর করছে, তাদের উদ্দেশে বলি, যে কয়টা রাজনৈতিক দল নিয়ে মাঠে বক্তব্য দিচ্ছেন তারা কারা? জুলাইয়ের আন্দোলনে তাদের ভূমিকা কী ছিল তা প্রকাশ করুন। আপনাদের সাথের একটি রাজনৈতিক দল ২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা কীভাবে আপনাদের আন্দোলনের শরিক হয়? যারা বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে বাতাস দিয়েছে তারা এখন আন্দোলনে শরিক হয় কীভাবে? বাংলাদেশের মানুষ তাদের চেনে।”
জনগণকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সতর্ক করেন, “জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কোনো আন্দোলন করা ঠিক হবে না। আমরা চাই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য অটুট থাকুক। এটাকে ধরে রেখে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠাতে হবে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান হয় বা সেই পথ সহজ হয়।”
পিআর প্রণালীকে বিপজ্জনক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি মাঝেমধ্যে বলি, পিআর মানে পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস। এটি স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে। পৃথিবীর যে কয়টা দেশে এটি প্রয়োগ করা হয়েছে, সেখানে কোনো সরকার স্থায়ীভাবে থাকে না। নেপালেই দেখা যায় কিছুদিন পরপর সরকার পরিবর্তন হচ্ছে।”
জামায়াতের পিআর সমর্থন সংক্রান্ত পরিসংখ্যান নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক জরিপে যেখানে ৫৬ শতাংশ মানুষ পিআর কি তাই বুঝে না, সেখানে নাকি ৭০ শতাংশ মানুষ পিআর চায়, এটা আমরা মানতে পারি না। এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। হীন রাজনৈতিক স্বার্থে যারা জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে তাদের বলব, বাংলাদেশের জনগণের জন্য সঠিক রাস্তায় ফেরত আসুন।”
সতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকার কেমন হবে তা নিয়েও উদ্বেগ ব্যক্ত করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনো জায়গা নেই। নির্বাচনি এলাকার মানুষ তার প্রতিনিধিকে চেনার অধিকার রাখবে না। নির্বাচিত হবেন তিনি, যাকে দলের হাই কমান্ড নির্বাচিত করবে। এখানে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হলো না।”
সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি পুনরায় বলেছেন, “সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। কেউ যদি স্বাধীনভাবে পিআর চায় তাহলে তা তারা ইশতেহারে যুক্ত করুক। জনগণ যদি সমর্থন দেয় তাহলে বাস্তবায়ন করুক।”
ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুজ্জীবিত হওয়া নিয়ে সতর্ক করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমরা সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, দেশকে অস্থিতিশীল ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত বা বানচাল করার জন্য যে শক্তি কাজ করছে। আর তাদের পক্ষেই এই রাজনৈতিক দলটি কাজ করছে বলে আমাদের সন্দেহ। দেশে নির্বাচন বিলম্বিত হলেই ফ্যাসিবাদের উৎপাত শুরু হবে। পতিত ফ্যাসিবাদ পুনরায় সুযোগ পাবে। এত রক্তের বিনিময়ে যে অধিকারের জন্য গণঅভ্যুত্থান করেছি সেটা প্রয়োগের জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে আছে।”