
জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় নামাজ শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও নামাজ আদায় করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ অনেকে। নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। জামাতে অংশ নিতে সকাল ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টা ঈদগাহ মাঠে আসেন। নামাজ শেষে খুতবা পাঠ করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। এর আগে আলোচনায় দেশ ও মুসলিম জাতির কল্যাণে দোয়া করেন তিনি। খুতবা ও মোনাজাত শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশ ও জণগণের মঙ্গলের জন্য ঈদ জামাতে উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে না: প্রধান উপদেষ্টা
চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে বলে দেশের মানুষের মধ্যে যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে তা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বরং যাদেরকে এই বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে দিলে বাংলাদেশ বহুভাবে উপকৃত হবে। তাদের কাছ থেকে বন্দর পরিচালনার শিক্ষা নিয়ে একদিন বাংলাদেশের মানুষরাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের বন্দর পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। তারা সেসব বন্দরে কাজ করতে পারবেন। এতে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব কাদের দেয়া হচ্ছে সেই দেশের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। বরং বন্দর নিয়ে যারা অপ্রচার করছে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থনৈতিকভাবে আমাদের যে উন্নতির শিখরে থাকার কথা ছিল, বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার কথা ছিল সে উচ্চতায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। আমরা চাই, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। এ কারণে বিনিয়োগ পরিষেবার উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি। এটা করা সম্ভব না হলে দেশের কোটি কোটি মানুষের বেকারত্ব ঘুচবে না। অর্থনৈতিক সংকট রয়েই যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঝেমাঝে এমন কথাও শুনেছি যে এ বন্দর বিদেশিদেরকে নাকি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি আগেও জানিয়েছি, চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। বর্তমানে এই হৃৎপিণ্ড অতি দুর্বল। এখন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় তাকে রেখে দিলে আমাদের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই হৃদপিণ্ডকে বড় করতে হবে। মজবুত করতে হবে। সুঠাম করতে হবে। তা করতে হলে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অভিজ্ঞদের সাহায্য লাগবে। আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তারা ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে বন্দর পরিচালনা করে। তিনি বলেন, তাদের কাজ বন্দর ব্যবস্থাপনা করা, আমাদের লক্ষ্য হলো বন্দর ব্যবস্থাপনার কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি ৩১ সালের মধ্যে আমরা বন্দরের কাজ শিখে ফেলি এর পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ৩৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর যত দেশে যত বন্দর এই কোম্পানিগুলো চালায় তাদের বহু বন্দর এই বাংলাদেশিরাই পরিচালনা করবে। আপনারা যে বন্দরেই পা দেবেন, দেখবেন সেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। বহু লোকের ওপরে ওঠার সুযোগ হবে। তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তারা আমাদের চাকরি দেবে। ‘আগে যেকোনো জাহাজে চড়লে দেখতাম জাহাজের নাবিক চট্টগ্রামের কিংবা সিলেটের। বন্দরের কাজ একবার শিখে নিতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা যে বন্দরে যাব না কেন দেখব সেখানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট আর বরিশালের লোক। বাংলাদেশের লোক, বলেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের বন্দর যদি আধুনিক হয়, তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই ভূমিকা রাখবে না, বরং আমরা নেপাল, ভূটানসহ পাশ্ববর্তী সকল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো। এই বন্দরই হবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।’ তিনি বলেন, কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নানা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যে সমগ্র উপকূল অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই পুরো অঞ্চলে অনেকগুলো শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে শুধু সমুদ্রের সান্নিধ্য এবং তার ব্যবহারের দক্ষতার কারণে। তার সঙ্গে গড়ে উঠবে আরেকটি নতুন শিল্প। আধুনিক পদ্ধতিতে সমুদ্রে মাছ পালন, আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প। এটি আরেকটি নতুন জগত সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং তারা উৎসাহ সহকারে সাড়া দিয়েছেন।’ বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদেরকে আনছি তারা পৃথিবীর যে-সব দেশে কাজ করে সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা নিজেদেরকে ভিত্তিহীন বিরোধিতা এবং অপপ্রচারের শিকার হতে দেবেন না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে আপনাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখুন। যারা বিরোধিতা করছে তাদের প্রতিহত করুন।’

মিয়ানমারকে করিডোর দেওয়া নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: ড. ইউনূস
মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য করিডোর দেওয়া হচ্ছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (৬ জুন) ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প। যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, এটা তাদেরই কৃতকর্ম। তিনি আরও বলেন, আপনারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকবেন। কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হবেন না। এসব অপপ্রচার সত্ত্বেও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হব না। এই জটিল সমস্যাটি সমাধানে আমরা কাজ চালিয়ে যাব। ড. ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চ মাসে ঢাকা সফরকালে রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে। টানা চার বছর ধরে জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের প্রতিবেশি মিয়ানমার। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন রাজ্যের কায়ুকফায়ু সমুদ্রবন্দর ছাড়া পুরোটা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। গত বছরের নভেম্বরে ‘রাখাইন: গড়ে উঠছে একটি দুর্ভিক্ষ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রাখাইন। বাণিজ্য প্রায় বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে থাকার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মানুষের আর্থিক সংকট এবং ব্যাপক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি উপার্জন আর স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকমাত্রায় কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরের পর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ‘মানবিক সহায়তা চ্যানেল’ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। গত ১৪ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে যান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে আলোচনায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলে’ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম তুলে ধরে ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান জানান, আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মিয়ানমার সরকার; সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি আরও জানান, রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা বা যে সংকট তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নাই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। তার ওই বক্তব্যের পর গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান ‘মানবিক প্যাসেজ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে। উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন বিরোধিতার মুখে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ’ বা ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া নিয়ে ‘জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার’ সঙ্গে সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি। সম্প্রতি এই করিডোর নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে আসলে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। পরে ২১ মে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি, হবেও না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার করিডোর শব্দটি স্লিপ অব টাং। দু’দিন আগে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসও বলেছেন, মানবিক করিডোর এই নামটি কোথা থেকে এসেছে আমি জানি না। কিন্তু এটা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজেদের বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, তারা যখন সরকার গঠন করে দেশের দায়িত্ব নেন তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি ‘প্রায় মৃত অবস্থায়’ পেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে ইস্যুটি ঝরে পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আমরা ইস্যুটিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টির সম্মুখভাগে নিয়ে আসতে পেরেছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ও আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সরকারসহ সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমরা যত দেশেই সফর করেছি সব দেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় নেতা ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও ইতিবাচকভাবে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় শুনে খুশি জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা আজ সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় (২০২৬ সালের এপ্রিল) ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। বিবৃতিতে জামায়াত আমির বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। তার এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, জাতির তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

জুলাই সনদ নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই মাসেই সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ দেশের সামনে উপস্থাপন করা হবে। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব ও অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। তারা আমাকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানায়। আমি বলেছিলাম, দেশের সব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলে এ ঘোষণাপত্র দেওয়া ভালো হবে। এর পাশাপাশি আগামী জুলাই মাসেই সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবো বলে আশা করছি। ‘জুলাই সনদ’ হবে একটি প্রতিশ্রুতিপত্র, যেখানে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত জনকল্যাণমুখী সংস্কারগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করে জাতির কাছে সেই সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই জুলাই সনদ হলো একটি প্রতিশ্রুতি। একটা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টিতে একমত হয়েছে তার তালিকা থাকবে এই সনদে। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে তারা জাতির কাছে সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। এই সনদ অনুযায়ী আশুকরণীয় সংস্কার কাজগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাকি অংশের বেশকিছু কাজও আমরা শুরু করে যেতে চাই। আশা করি, অবশিষ্ট অংশ পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের কাছে দেশের নতুন ঐক্যবদ্ধ ভাবমূর্তি তুলে ধরা যাবে। বিশ্বব্যাপী সবার কাছে জাতি হিসেবে বাংলাদেশের শক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন গঠন করা আমাদের একটি দুঃসাহসিক উদ্যোগ ছিল। অন্য কোনো দেশে এমন কোনো নজির নেই। এর মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে রাজনৈতিক গভীরতার সন্ধান পেয়েছি। রাজনৈতিক ঐক্যে পৌঁছার জন্য ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সব দলের দলগত প্রস্তুতি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কমিশনের সঙ্গে ঐকান্তিক আলোচনা, জাতীয় লাইভ টেলিভিশনের সামনে সব দলের ঐকমত্যে পৌঁছার একান্ত প্রয়াস আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সব রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের সীমাহীন ধৈর্য এবং কমিশনের প্রতি তাদের সহযোগিতা এবং সৌজন্য প্রকাশের জন্য জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি, আমাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করে জাতির জন্য একটা নতুন পথনির্দেশনা রেখে যেতে পারব। প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যাশা জানিয়ে আরও বলেন, এই কমিশনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশে যে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সেটা বিকাশমানভাবে স্থায়ী রূপ দিতে পারি তাহলে আমরা ভবিষ্যতের সব রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো। সব প্রস্তুতি সমাপ্ত করে দেশের সব মানুষের- কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক-জেলে, গৃহিণী, দিনমজুর, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিল্পী সবাই মিলে চেষ্টা করে একটি সুন্দর, নিখুঁত নির্বাচন আয়োজন করে নতুন বাংলাদেশের দৃঢ় ভিত্তি রচনা হবে বলেও মস্তব্য করেন তিনি।

শেখ পরিবারের নামে থাকা সহস্রাধিক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে
দেশের এক হাজারের বেশি অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এসব অবকাঠামো এবং প্রতিষ্ঠান পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা-মা-ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ তথ্য জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের এক হাজারের বেশি অবকাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানের নাম পলাতক প্রধানমন্ত্রীর বাবা-মা-ভাই-বোন-আত্মীয়স্বজনের নামে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল সেনানিবাস, বিমানঘাঁটি, নৌ-বাহিনীর জাহাজ, মেগাসেতু, সড়ক, স্থাপনা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গবেষণাকেন্দ্র আরও বহু কিছু। এগুলোর সব নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। কোরবানিকে ত্যাগের মহিমায় গরিববান্ধব করে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রদান উপদেষ্টা বলেন, প্রতি বছর এই দিনটি আমাদের সামনে হাজির হয় ত্যাগের এক মহান দৃষ্টান্ত হয়ে। আমরা যদি কোরবানির মাহাত্ম্যকে ধারণ করে লোভ, স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে না পারি, তাহলে কোরবানির ঈদ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আসুন, এ বছর কোরবানিকে সুন্দর, ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত করে গরিববান্ধব করে তুলি।

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম জনগোষ্ঠীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে তিনি বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জানাই শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।’ প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও চরম ত্যাগের অনুপম নিদর্শন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হন। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ ঈদুল আযহায় পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ ও আত্মদানের এই সুমহান দৃষ্টান্ত কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘ঈদুল আযহা মানুষকে শান্তি, ত্যাগ ও সাম্য শেখায়। মুসলমানগণ কোরবানিকৃত পশুর গোস্ত গরিব আত্মীয়স্বজন ও দুঃস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে সবাইকে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক-এই হোক ঈদের চাওয়া।’ পবিত্র ঈদুল আযহার ত্যাগের শিক্ষা নিজেদের ভেতর ধারণ করার আহবান জানিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আসুন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি।’ ঈদুল আযহার এ দিনে প্রধান উপদেষ্টা মহান আল্লাহর কাছে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও উন্নতি প্রার্থনা করেন।

জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলেন প্রধান উপদেষ্টা
আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি। ভাষণের শুরুতে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে সালাম জানান প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "আমি জানি, আগামী জাতীয় নির্বাচন কখন হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে বিপুল আগ্রহ রয়েছে। আমি বারবার বলেছি, এই নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।" তিনি আরও বলেন, "এখানে মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে যতবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে তার সবগুলোরই প্রধান কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল বর্বর ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নির্বাচন যারা আয়োজন করে তারা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এমন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে দল ক্ষমতায় আসে তারাও জনগণের কাছে ঘৃণিত হয়ে থাকে।" "এ সরকারের একটি বড় দায়িত্ব হলো একটি পরিচ্ছন্ন, উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ, বিপুলভাবে অংশগ্রহণের পরিবেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করা যাতে করে দেশ ভবিষ্যতে নতুন সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেগুলোতে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা না যায় তাহলে ছাত্র-জনতার সকল আত্মত্যাগ বিফলে যাবে।" "সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সে বিবেচনায় আগামী রোজার ঈদের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে পারব বলে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—যা কিনা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায় সে বিষয়ে আমরা দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পারব।" "এতে আমাদের ওপর আপনাদের অর্পিত ম্যান্ডেট ন্যূনতম হলেও বাস্তবায়ন করে যেতে পারব। সে বিবেচনায় ও ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য সকল পক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। পাশাপাশি, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।" তিনি বলেন, "আমরা এমন নির্বাচন চাই যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে, তাদের আত্মা শান্তি পাবে। আমরা চাই আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোটার, সবচেয়ে বেশি প্রার্থী ও দল অংশ নিক। এটা সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে জাতির কাছে স্মরণীয় থাকুক।"

ঈদে যান চলাচলে ডিএমপির নির্দেশনা
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বাড়ির পথে ছুটতে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ধারণা, কোরবানির ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে এবং প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষ ঢাকা প্রবেশ করবে। এমন অবস্থায় ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা ও কোরবানির পশুরহাট সংলগ্ন যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। শুক্রবার (৬ জুন) ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনাগুলো হলো- সড়ক/মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ সংক্রান্ত নির্দেশনা আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ৪ থেকে ৬ জুন এবং ১২ থেকে ১৪ জুন মোট ছয়দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। তবে পশুবাহী যানবাহন, নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি ও খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টস সামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহনসমূহ এর আওতামুক্ত থাকবে। সড়ক/মহাসড়কে যান চলাচল সংক্রান্ত নির্দেশনা— ১. রুট পারমিটবিহীন বাস কোনোক্রমেই চলাচল করতে পারবে না। ২. আন্তঃজেলা বাসসমূহকে টার্মিনালের ভেতরে যাত্রী উঠিয়ে সরাসরি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই টার্মিনালের বাইরে সড়কের ওপরে বাস দাঁড় করানো যাবে না।৩. অনুমোদিত কাউন্টার ব্যতীত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো ও নামানো যাবে না। ৪. ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ ও বাইর হওয়ার রাস্তাসমূহে কোনোভাবেই যানবাহন পার্কিং করা যাবে না। ৫. লক্কড়-ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন, যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত ও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না। ৬. ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিতে ৪, ৫ ও ৬ জুন শুধুমাত্র ঢাকা মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী) সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। উক্ত সড়কের আশুলিয়া-ধউর-কামারপাড়া-আব্দুল্লাহপুর হয়ে ঢাকা প্রবেশ করবে এমন যানবাহনসমূহ আশুলিয়া-ধউর-পঞ্চবটি হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে গাবতলী/অন্য এলাকায় প্রবেশ করবে। ৭. ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের এয়ারপোর্ট টু গাজীপুর আসা ও যাওয়ার লেন দুটিতে শুধুমাত্র ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী ডাইভারশন) সব ধরনের যানবাহন ৪, ৫ ও ৬ জুন ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তার দিকে চলাচল করাবে। উক্ত বিআরটি-এর ঢাকায় প্রবেশের লেনটি দিয়ে কোনো যানবাহন ঢাকা অভিমুখে (ইনকামিং) আসতে পারবে না। মহাসড়কের অন্যান্য লেনের গাড়ি আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। বিআরটি-এর ঢাকা অভিমুখী যানবাহনসমূহ অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে নরমাল সড়কে/লেনে ঢাকায় আসবে।৮. ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য ঢাকা মেট্রো এলাকার বিআরটিসি বাস ডিপোসমূহের বাস ঢাকা শহর অতিক্রম না করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে (যেমন-গাবতলী/কল্যাণপুর ডিপোর বাস রাজশাহী/রংপুর বিভাগ এবং মতিঝিল ও ফুলবাড়িয়া ডিপোর বাস চট্টগ্রাম/সিলেট বিভাগে চলাচল করবে)। ৯. ঈদযাত্রা সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চলাচল সুগম করার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য যানবাহনসমূহকে আগামী ৪, ৫ ও ৬ জুন নিম্ন বর্ণিত সড়কসমূহ পরিহার করে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো। সড়কগুলো হলো- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (বনানী টু আব্দুল্লাহপুর)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু সাইনবোর্ড)। মিরপুর রোড (শ্যামলী টু গাবতলী)। ঢাকা-কেরানীগঞ্জ সড়ক (ফুলবাড়িয়া টু বাবুবাজার ব্রিজ)। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু বুড়িগঙ্গাত্রীঞ্জ)। মোহাম্মদপুর বসিলা ক্রসিং থেকে বসিলা ব্রিজ সড়ক। আব্দুল্লাহপুর টু ধউর ব্রিজ সড়ক। কোরবানির পশুরহাট কেন্দ্রিক যান চলাচলে নির্দেশনা- ১. পশুরহাটের ইজারায় উল্লিখিত সীমানা ও স্কেচ ম্যাপের বাইরে সড়কের ওপর কোনোভাবেই কোরবানির পশু কেনা-বেচা ও লোড-আনলোড করা যাবে না। ২. কোরবানির পশু পরিবহনকারী যানবাহন আনলোড করার জন্য এবং বিক্রয়কৃত পশু লোড করার জন্য হাটের ভেতর পৃথক জায়গা খালি রাখতে হবে। যদি হাটে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তবে নিকটবর্তী কোনো জায়গায় পৃথক আনলোড এবং বিক্রিত পশু লোড করার স্থান নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে কোন হাটে কোরবানির পশু যাবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হাটের নাম সম্বলিত ব্যানার ট্রাকের সম্মুখে টাঙাতে হবে। ৪. হাইওয়ে বা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে কোনো পশুরহাট ইজারা না দেওয়া। ৫. যদি কোনো পশুরহাট ঢাকা মহানগরের ফিডার রোড/সরু রোডের পাশে ইজারা দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই সড়ক ও হাটের মাঝে ৬ ফুট উঁচু প্রাচীর স্থাপন করতে হবে এবং সুবিধাজনক জায়গায় এন্ট্রি ও পৃথক এক্সিট রাখতে হবে। ৬. পশুরহাট সংলগ্ন সড়কসমূহে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পুলিশকে সহযোগিতার জন্য ইজারাদাররা পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী/স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। ৭. পশুরহাটে গমনাগমনকারী সড়কে কোনোক্রমেই ক্রেতাদের গাড়ি, পশুবাহী ট্রাক/পিকআপ ভ্যান পার্ক করা যাবে না। কেউ পার্কিং করলে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি আটক করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে। ৮. পশুরহাটের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৯. সড়কের ওপরে যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এলাকায় যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর জন্য উক্ত নির্দেশনাসমূহ সংশ্লিষ্ট সব যানবাহনের চালক, পশুরহাট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নগরবাসীকে প্রতিপালন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

রাজধানীর অলিগলিতে ছাগলের হাট
রাজধানীর অলিগলিতে বসেছে ছাগলের হাট। শেষ সময়ে এসে জমে উঠেছে এসব হাট। শুক্রবার মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, মগবাজার, বাংলামোটর, কলাবাগান, ধানমন্ডি, মিরপুর এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। মাদারীপুর থেকে ১০টি ছাগল নিয়ে মৌচাক মার্কেটের পাশে লিলি মার্কেটের খালি জায়গায় এসেছেন ইমরান নাজির। ৮ কেজি ওজনের ছাগলের দাম চাচ্ছেন ১৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বছর ১০-২০ টা করে ছাগল নিয়ে আসি। রাস্তায় বিক্রি করি। এতে হাসিল দেওয়া লাগে না। আবার হাটের থেকেও ৫০০-১০০০ বেশি বিক্রি করা যায়। এই হাটে ছাগল কিনতে এসেছেন সিদ্ধেশ্বরীর হামিম মিয়া। তিনি বলেন, ‘গতকাল শাহজাহানপুর হাট থেকে গরু কিনেছি। আর একটা ছাগল কোরবানি দেব। হাটের থেকে মোড়ে ছাগলের দাম খুব বেশি না। তাই আর হাটে যায়নি। মোড় থেকেই ছাগল কিনছি।’ মৌচাক থেকে মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে ছাগলের হাট বসেছে। মানিকগঞ্জ থেকে ২০টি ছাগল নিয়ে এসেছেন রহিম মিয়া। ১২টি ছাগল বিক্রি করেছেন। আরও ৮টি ছাগল আছে। তিনি বলেন, ‘বাড়তি লাভের আশায় ঢাকায় ছাগল নিয়ে এসেছি। আজ বিকালের মধ্যে বিক্রি করে বাড়িতে যাবো। কাঁঠালবাগানের রইসউদ্দিন বাংলামোটর থেকে খাসি কিনেছেন। তিনি বলেন, এ বছর খাসি কোরবানি দিব। এখানেই প্রত্যেক ঈদে ছাগল পাওয়া যায়। তাই ছাগল কিনতে হাটে না গিয়ে এই সড়কের হাটেই এসেছি। হাতির ঝিলের সড়কের পাশ থেকে ছাগল কিনেছেন সিয়াম। তিনি বলেন, ‘এখানে হাটের থেকেও দাম কম। হাসিল দেওয়াও লাগে না। হাটের ভিড় কাঁদা পানির ঝামেলাও নেই। এখানে কয়েকজন কাঁঠালের পাতাও বিক্রি করছেন। সেখান থেকে কাঁঠালের পাতাও কিনেছি।

সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
.png)
আগামী পাঁচদিন কেমন থাকবে আবহাওয়া
ঈদের ছুটি শুরুর প্রথমদিন আজ বৃহস্পতিবার সকালেই রাজধানীতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আপনজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে মানুষ যখন সড়ক, নৌ ও রেলপথে গ্রামেরবাড়ি ফিরতে ব্যস্ত, তখন এই বৃষ্টি ভোগান্তি বাড়িয়েছে। অনেকককেই দেখা গেছে ভিজে বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে পৌঁছাতে। দেশের আরও বেশ কয়েকটি অঞ্চলেও বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী পাঁচদিন দেশের ৮ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে মাঝারি থেকে থেকে ভারী বর্ষণ। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

দেশের স্বাস্থ্যখাতে আবারও বিপদ, করোনায় ঢাকায় একজনের মৃত্যু
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে তিনজনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মৃত ব্যক্তি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১টি নমুনা পরীক্ষা করে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ২২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৩৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের। ২০২৪ সালে এই রোগে কেউ মারা যাননি। ২০২৩ সালে ৩৭ জন, ২০২২ সালে ১ হাজার ৩৬৮ জনরোগীমারাযান।

ঈদুল আজহার প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায়: ডিএসসিসি
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেছেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ইদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ওইদিন সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) জাতীয় ইদগাহ ময়দানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। প্রশাসক বলেন, ঈদের দিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জামাত আয়োজন অনুপযুক্ত হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আলাদা আলাদা প্রবেশ ও প্রস্থান গেট, নারী মুসল্লির জন্য আলাদা ব্লকে নামাজের ব্যবস্থা ও আলাদা প্রবেশপথ রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান, নগরবাসীর কোরবানির পশু কেনাবেচার সুবিধার্থে ৮টি জায়গায় অস্থায়ী হাট স্থাপন করা হয়েছে। এসব হাটে রয়েছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পুলিশ ও এটিএম বুথ, পশু স্বাস্থ্য সেবার জন্য চিকিৎসক ও মেডিকেল টিম। হাট শেষ হওয়ার পরপরই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শাহজাহান বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের লক্ষে ডিএসসিসির প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ২০৭টি ডাম ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবার ৩০,০০০ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ, ৪০টন ব্লিচিং পাউডার ও ২২২ গ্যালন স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের জামায়াত, কোরবানি হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কোরবানির হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগর ভবনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে এবং বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে সহযোগিতা করতে। নগরবাসীকে ইদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রশাসক বলেন, আপনারা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের জামাতে অংশ নিন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করব। ব্রিফিংয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমানসহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

দুর্নীতিবাজরা না থাকায় বড় গরুর বিক্রি কম: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
দুর্নীতিবাজরা এবার না থাকায় বড় গরু কম বিক্রি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আগে দুর্নীতির টাকা ছিল। এখন তো সেই দুর্নীতিবাজরা নেই। দুর্নীতির টাকাও নেই। সে জন্য বড় গরুর ক্রেতা কম। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী গরুর হাট পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। পরে উপদেষ্টা রাজধানীর কাফরুল থানা ও মিরপুর পিওএম পরিদর্শন করেন। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কোরবানির পশুর হাটে উইন উইন পরিস্থিতি দরকার। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই যাতে খুশি থাকে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত ক্রেতারা বেশি খুশি বিক্রেতার চেয়ে। ঈদযাত্রায় সড়কের পরিস্থিতি সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, কোরবানির পশুর গাড়ির কারণে চন্দ্রা এলাকায় যানজট একটু বেশি। তবে পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। আইজিপি নিজেই এসব তদারকি করছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সবার সহযোগিতা থাকলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার।

লঞ্চে উঠতে গিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ে গেলেন ৫ যাত্রী
ভিড়ের মধ্যে রাজধানীর সদরঘাটে লঞ্চে উঠতে গিয়ে নারী-শিশুসহ ৫ যাত্রী বুড়িগঙ্গা নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন সবাই। আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধারে নেমে পড়েন। পরে লঞ্চের রশি বেয়ে সবাইকে একে একে উপরে টেনে তোলা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ওই যাত্রীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত চাপের কারণে সদরঘাটে লঞ্চে ওঠার সময় ধাক্কাধাক্কিতে ওই পাঁচ জন যাত্রী বুড়িগঙ্গায় পড়ে যান। ঘটনার পরপরই দ্রুত স্থানীয় কয়েকজন পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তলিয়ে যাওয়ার আগেই সবাইকে উদ্ধার করে নিরাপদে উপরে তোলেন। একপর্যায়ে লঞ্চের রশি ও ঘাটের সিঁড়ি ব্যবহার করে সবাইকে উদ্ধার করা হয়। তারা প্রত্যেকে সুস্থ রয়েছেন। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিআইডব্লিউটিএ বা নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পাইনি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাজধানীর গাবতলীর বিভিন্ন পরিবহনের টিকিট কাউন্টার ঘুরে ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে বাড়তি ভাড়ার কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু ঘুরলাম দেখলাম- কেউ বাড়তি ভাড়া নেয়নি। বাড়তি ভাড়ার অভিযোগ পাইনি। তবে অনেকেই টিকিট পাচ্ছে না।’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিজেরা একটু সচেতন হলে, আইন মেনে চললে সবকিছু সহজ হয়। বিশেষ করে গাড়িতে উঠতে-নামতে এবং রাস্তা পারাপারে আমাদের নিজেদের সচেতনতা দরকার। আশা করি নিজেরা সচেতন হবেন।’ বাসের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ভাড়া অতিরিক্ত নেওয়া হয়, সাংবাদিকদের এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরকম তথ্য আমি পাইনি। বাসের সংকট দেখানো হয় যেহেতু বলেছেন, আমরা এটা কঠোরভাবে দেখবো।’ যানজট নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি-বাদল ও গাড়ির চাপে কিছুটা যানজট আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় আছে। যে কোনো সমস্যা সমাধানে তারা কাজ করছে।’ একই টিকিট একাধিকবার বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মালিকপক্ষের প্রতিনিধি এখানে আছেন, এটা তারা দেখবেন।’

কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক: রেলওয়ে উপদেষ্টা
সড়ক পরিবহন ও রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খান বলেছেন, কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছে। কারণ ভোগান্তির বিষয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুর সোয়া ১২টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করছে সরকার। ঈদে সবাই যেন ঠিকভাবে গ্রামের বাড়ি যেতে পারেন, আমরা এ বিষয়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। ট্রেনে বিনা টিকিটি ভ্রমণের বিষয়ে কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়েছে। কমলাপুর রেল স্টেশনে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি। মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খান বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ট্রেনে ছাদে ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা নিরুৎসাহিত করেছি। তারপরও ঈদের কারণে হয়তো অনেকে যেকোনোভাবে বাড়ি যেতে চায়। তাই অনেক সময় মানবিক কারণে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। তারপরও বিষয়টি দেখতে তিনি রেলওয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। অপরদিকে সড়ক পথে বেশি ভাড়া আদায় করা হয় কিনা সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করা হয়েছে। উপদেষ্টা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সায়েদাবাদে তার উপস্থিতিতে লাল সবুজ পরিবহনের একটি বাসকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে, দুপুর ১২টায় কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টার ও প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখেন তিনি। এ সময় যাত্রীদের টিকিট চেকিং ও তাদের সুবিধা-অসুবিধার খবর নেন।

কমলাপুরে ঘরমুখো মানুষের ভিড়, সময় মতো ট্রেন ছাড়ায় স্বস্তিতে যাত্রীরা
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে আজ সকাল থেকেই ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের ঈদযাত্রা অনেকটাই স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন যাত্রীরা। সকাল ১০টায় নির্ধারিত সময় অনুযায়ী হুইসেল বাজিয়ে জামালপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় জামালপুরের উদ্দেশ্যে। ট্রেন ছাড়ার সময় যাত্রীদের মধ্যে দেখা গেছে প্রবল উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস। ট্রেনের ভিতরে যারা অগ্রিম টিকিট কেটেছেন, তারা আসন পেয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্ট্যান্ডিং টিকিটের ব্যবস্থাও করেছে। অনেক যাত্রী আবার ছাদে উঠে যাত্রা করছেন, যা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ঈদের টানে কেউ তা ভুলে যেতে প্রস্তুত। কমলাপুর স্টেশনের আশপাশে ছিল হালকা বৃষ্টির দৃশ্য। এই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অনেক যাত্রী ছাতা, পলিথিন বা কাগজ দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করেছেন। তবুও তাদের মুখে ছিল বাড়ি ফেরার আনন্দ। ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে অনেকেই চিৎকার করে নিজেদের আবেগ প্রকাশ করেছেন। ঈদযাত্রায় অংশ নেওয়া যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এবারের যাত্রায় অনেকটাই সন্তুষ্ট। তাদের মতে, গত বছরগুলোর তুলনায় এবার যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা কম। অনেক ট্রেনই সময়মতো ছাড়ছে, যদিও দু-একটি ট্রেন পাঁচ থেকে দশ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। তবে যাত্রীরা জানিয়েছেন, এই বিলম্ব নিয়ে তাদের তেমন অভিযোগ নেই। তবে যাত্রীদের পক্ষ থেকে একটি বিষয় বারবার উঠে এসেছে—দাঁড়িয়ে যাতায়াতকারী ও ছাদে ওঠা যাত্রীদের ভোগান্তি ও ঝুঁকি কমাতে ঈদ স্পেশাল ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত। এতে চাপ কমবে এবং যাত্রাও হবে আরামদায়ক। সবমিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রা সময়মতো ট্রেন চলাচল, যাত্রীদের উৎসাহ এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের কারণে অনেকটাই সফল ও সুশৃঙ্খল বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায়: ডিএসসিসি প্রশাসক
রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদের জামাত, হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া। তিনি জানান, শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রধান জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। ডিএসসিসির প্রশাসক আরও জানান, জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ একসাথে পড়তে পারবেন ৩৫ হাজার মুসল্লি। এছাড়া, ১২ ঘণ্টার মধ্যে ডিএসসিসি কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করবে বলে জানান তিনি। ব্রিফিংয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমানসহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে রুজুকৃত মামলার এক পলাতক আসামিকে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেপ্তারের নাম কুরবান আলী (২৫)। তিনি যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার মামুদালীপুর গ্রামের বাসিন্দা। অভিযানকালে তার কাছ থেকে অপরাধকর্মে ব্যবহৃত একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এটিইউ’র একটি চৌকস আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ব্রাহ্মণকিত্তা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) এটিইউ’র মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার (প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ) শিরিন আক্তার জাহান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শিরিন আক্তার জাহান জানান, কুরবান আলী খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানা এলাকার একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-প্রত্যাশী নারী শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে উত্যক্ত করছিলেন। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী তার প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বিভিন্ন কৌশলে তার ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। পরে সেগুলো এডিট করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তৈরি করেন এবং তা হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। ভিকটিম যখন তাকে এসব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ করেন, তখন কুরবান আলী প্রথমে তার কাছে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করেন এবং পরে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের শর্ত দেন। তিনি আরও জানান, নিরুপায় হয়ে ভিকটিম এটিইউর অ্যাপের মাধ্যমে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। পরে ভিকটিমের ভাই বটিয়াঘাটা থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কুরবান আলীকে গ্রেপ্তার করে এটিইউ। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

১২ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণের চ্যালেঞ্জ, কাজ করবে ১০ হাজার পরিচ্ছতাকর্মী
এবারের ঈদুল আজহায় ১২ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। বর্জ্য অপসারণে ঈদের দিন থেকে কাজ করবে ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া এ কথা জানান। শাহজাহান বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের লক্ষ্যে ডিএসসিসির প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ২০৭টি ডাম ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি রেখেছি। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ, ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ২২২ গ্যালন স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের জামাত, কোরবানি হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কোরবানির হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগর ভবনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে এবং বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে সহযোগিতা করতে। নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রশাসক বলেন, আপনারা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের জামাতে অংশ নিন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করব, ইনশাআল্লাহ। এর আগে প্রশাসক ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন। তখন প্রশাসক বলেন, ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জামাত আয়োজন অনুপযুক্ত হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সেবা ব্যবস্থা, যেমন: প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য বিশাল আয়োজনে ঈদ জামাতের আয়োজন, ভিআইপি ব্লকে একসাথে ২৫০ জনের নামাজের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন, অজু, পয়োনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থা, মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা।

যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় টোল আদায় ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা
ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু দিয়ে ৫১ হাজার ৮৪৯ টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার সকালে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ হাজার ৮৪৯টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ৩০ হাজার ৮৪৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৭ হাজার ৩৫০ টাকা। অপরদিকে ঢাকাগামী ২১ হাজার ৪ টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর বিপরীতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫০ টাকা। যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। যমুনা সেতু পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশে ৯টি করে ১৮টি টোল বুথ স্থাপনসহ মোটরসাইকেলের জন্য ৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর উপর কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেই জন্য দুইটি রেকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।এছাড়া এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত অংশটি সার্বক্ষণিক সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে ভুয়া খবর শনাক্ত ও মোকাবিলা বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার বাংলাদেশি সাংবাদিকতার সবচেয়ে সংকটজনক সমস্যাগুলোর একটি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম । বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফাইড পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রায়ই গুরুতর ভুল করে, অথচ সংশোধন করে না। কেবলমাত্র সরাসরি যোগাযোগের পর তারা সামান্য কিছু সংশোধনী আনে।’ তিনি আরও লিখেন, গতকাল (৪ জুন) সকালেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী চারজন মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা নিয়ে ছড়ানো ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার পরেও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সেই মিথ্যা প্রতিবেদন সরাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নেয়, আর অধিকাংশই দুঃখপ্রকাশ পর্যন্ত করে না। তবুও এসব ভুল প্রতিবেদন এমন এক জায়গায় পৌঁছে যায় যে, ভারতীয় গণমাধ্যমসহ অনেকেই আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘পুনর্লিখনের নীতির’ (revisionist agenda) অভিযুক্ত করে। শফিকুল আলম বলেন, সেই রাতেই দেশের শীর্ষস্থানীয় এক সংবাদমাধ্যম “মানবিক করিডোর” (হিউমিনিটেরিয়ান করিডোর) ইস্যুতে মারাত্মক একটি অনুবাদগত ভুল করে। আমরা বারবার ব্যাখ্যা দিয়েছি যে, কোনো করিডোরের প্রস্তাব দেওয়া হয়নি তবুও তাদের ভুল অনুবাদে বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় জাতিসংঘ কূটনীতিকের মুখে মিথ্যা বক্তব্য তুলে ধরা হয়। তিনি আরও বলেন, ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। একজন প্রথিতযশা রাজনীতিক সেই ভুল অনুবাদের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন। পরবর্তীতে সেই সংবাদমাধ্যমটি চুপিচুপি প্রতিবেদনটি সংশোধন করে, কিন্তু শুরুতে তারা কোনো সংশোধনী বা দুঃখপ্রকাশ প্রকাশ করেনি, যার ফলে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা ওই ভুলটি টেরই পাননি। আমাকে রাত ১২টার দিকে ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগকে ব্যক্তিগতভাবে মনে করিয়ে দিতে হয়েছিল যাতে তারা সংশোধন করে। পেস সচিব লেখেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকে সামাজিক ও প্রচলিত গণমাধ্যমে ভুয়া খবর শনাক্ত ও মোকাবিলা করা প্রতিদিনকার একটি বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে । বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, এটি প্রতিরোধে অন্তত ২০০ জনের একটি পৃথক দল প্রয়োজন। সবচেয়ে হতাশাজনক দিক হলো, কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, বিশ্লেষক ও রাজনীতিকদের কোনো তথ্য যাচাই ছাড়াই বারবার মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে দেখা যায়। তিনি আরও লেখেন, ভুয়া সংবাদের বাস্তব পরিণতি আছে। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা গণহত্যার ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তিকর তথ্য একটি বড় ভূমিকা রেখেছিল—যা আজও আমাদের বৈদেশিক নীতিতে ও মানবিক সংকটে গভীর প্রভাব ফেলে চলেছে। ভুয়া তথ্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে পারে, এমনকি বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিতে পারে। এক গবেষক একবার মন্তব্য করেছিলেন যে, ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সামরিক কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের পেছনেও ‘ডাল-ভাত কর্মসূচি’ ঘিরে প্রচারিত গুজবের একটি ভূমিকা ছিল। বিশ্বব্যাপীও মিথ্যা তথ্যের কারণে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখা গেছে—বিশেষত ভারতে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে। তিনি লেখেন, পশ্চিমা দেশগুলোতে মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য গণমাধ্যমগুলোকে বড় অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। যেমন, ফক্স নিউজ ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচন নিয়ে মিথ্যা প্রচারের জন্য ৭৮৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পত্রিকাগুলো নিয়মিতভাবে জননন্দিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে মিথ্যা বা মানহানিকর সংবাদ প্রচারের জন্য শাস্তির সম্মুখীন হয়। সবশেষ তিনি লেখেন, বাংলাদেশে, এর ঠিক উল্টো চিত্র। বিখ্যাত টিভি আলোচকরা প্রায়ই সেলিব্রেটি ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে যাচাই না করেই ভুল তথ্য প্রচার করে থাকেন। তাদের ব্যস্ত সময়সূচিতে তথ্য যাচাইয়ের সময় থাকে না, আর শাস্তির অভাবে কেউই নির্ভুল তথ্য প্রকাশে তেমন আগ্রহ দেখায় না। যখন মিথ্যা বলার জন্য কোনো শাস্তি নেই, তখন সত্য যাচাই করার আগ্রহও আর থাকে না বলেও তিনি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন।