মিয়ানমারকে করিডোর দেওয়া নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: ড. ইউনূস


saurav/DR-Yunus.webp

মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য করিডোর দেওয়া হচ্ছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার (৬ জুন) ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প। যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, এটা তাদেরই কৃতকর্ম।

তিনি আরও বলেন, আপনারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকবেন। কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হবেন না। এসব অপপ্রচার সত্ত্বেও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হব না। এই জটিল সমস্যাটি সমাধানে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।

ড. ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চ মাসে ঢাকা সফরকালে রাখাইন‌ রাজ্যে মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে।

টানা চার বছর ধরে জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের প্রতিবেশি মিয়ানমার। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন রাজ্যের কায়ুকফায়ু সমুদ্রবন্দর ছাড়া পুরোটা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি।

গত বছরের নভেম্বরে ‘রাখাইন: গড়ে উঠছে একটি দুর্ভিক্ষ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রাখাইন। বাণিজ্য প্রায় বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে থাকার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মানুষের আর্থিক সংকট এবং ব্যাপক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি উপার্জন আর স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকমাত্রায় কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরের পর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ‘মানবিক সহায়তা চ্যানেল’ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান।

গত ১৪ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে যান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে আলোচনায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলে’ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম তুলে ধরে ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান জানান, আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মিয়ানমার সরকার; সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা বা যে সংকট তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নাই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে।

তার ওই বক্তব্যের পর গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান ‘মানবিক প্যাসেজ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে।

উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক দলগুলো।

রাজনৈতিক দলগুলোর এমন বিরোধিতার মুখে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ’ বা ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া নিয়ে ‘জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার’ সঙ্গে সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি।

সম্প্রতি এই করিডোর নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে আসলে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়।

পরে ২১ মে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি, হবেও না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার করিডোর শব্দটি স্লিপ অব টাং।

দু’দিন আগে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসও বলেছেন, মানবিক করিডোর এই নামটি কোথা থেকে এসেছে আমি জানি না। কিন্তু এটা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজেদের বিষয়।

প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, তারা যখন সরকার গঠন করে দেশের দায়িত্ব নেন তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি ‘প্রায় মৃত অবস্থায়’ পেয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে ইস্যুটি ঝরে পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আমরা ইস্যুটিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টির সম্মুখভাগে নিয়ে আসতে পেরেছি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ও আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সরকারসহ সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমরা যত দেশেই সফর করেছি সব দেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় নেতা ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও ইতিবাচকভাবে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×