ড. ইউনূস-নরেন্দ্র মোদির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। রোববার (৮ জুন) প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের চিঠিগুলো শেয়ার করা হয়। ৪ জুন পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই পবিত্র উৎসব সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং লাখো ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ এই উৎসব অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে উদ্‌যাপন করেন। এটি আমাদের ত্যাগ, করুণা ও ভ্রাতৃত্বের চিরন্তন মূল্যবোধের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠনে অপরিহার্য। শুভেচ্ছাবার্তায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতাও কামনা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তার উত্তরে শুক্রবার (৬ জুন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার এই শুভ উপলক্ষে আপনার (মোদি) চিন্তাশীল বার্তা, আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দনের জন্য আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ, যা আমাদের দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে। আমি এই পবিত্র ঈদ উপলক্ষে আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে ভারতের জনগণকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাতে চাই। পবিত্র ঈদুল আজহা এমন একটি উৎসবের সময়, যা মুসলিম সম্প্রদায়কে উৎসব, ত্যাগ, উদারতা ও ঐক্যের চেতনায় একত্রিত করে এবং বিশ্বব্যাপী জনগণের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য একসাথে কাজ করতে আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। আমি বিশ্বাস করি যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার চেতনা আমাদের জনগণের কল্যাণের জন্য একসাথে কাজ করতে নির্দেশনা দেবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এও বলেন, এই পবিত্র ঈদে আমি আপনার (মোদি) সুস্বাস্থ্য ও সুখ এবং ভারতের জনগণকে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করি।

এবারও চামড়া নিয়ে হতাশা, লোকসানের শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নিয়ে এবারও হতাশা দেখা দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও কমে বিকোচ্ছে গরু ও ছাগলের চামড়া। দাম কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। তবে তার প্রভাব পড়েনি বাস্তবে। কোথাও কোথাও আগের বারের মতো এবারও কম দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। কেউ কেউ বলছেন, চামড়া বিক্রি হয়েছে গতবারের মতোই ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। গত ২৬ মে কোরবানি পশুর চামড়ার এই দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা।এছাড়া ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ট্যানারি পরিচালক ও এজেন্টরা জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লবণ দেওয়া প্রস্তুতকৃত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ট্যানারি থেকে কাঁচা চামড়া কেনায় দাম কম পড়েছে। তবে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় সব চামড়া কেনা হয়েছে; এমন তথ্য ভুল দাবি করেছেন তারা। অনেক ভালো মানের চামড়া এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায়ও কেনা হয়েছে বলে জানান ট্যানারি সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে রাজধানীর চামড়ার বাজারগুলো ঘুরে জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দরে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। গত বছরের কাছাকাছি দরে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। কুরবানিদাতাদের থেকে তারা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়। আর ছাগলের চামড়া কেনায় ব্যবসায়ীদের কোনো আগ্রহ নেই বলেই দেখা গেছে। এবারের ঈদে সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ট্যানারি মালিকরা। যার সিংহভাগ সংগ্রহ হয়েছে ঈদের প্রথম দিনেই। ঈদের দিন কাঁচা চামড়া আসার এই হারও ছিল সন্তোষজনক। যদিও গতবারের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া কিছুটা বেশি দরে কিনছেন বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, চামড়া বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য মেলেনি। গতবারের চেয়েও দাম কম। সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকা।পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। সেখানে শনিবার বিকেলে বড় ও মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৭০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব ও হাজারীবাগ এলাকায় একই দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত বছরও প্রায় একই রকম দাম ছিল।শনিবার বিকেল থেকে সরেজমিন পোস্তা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে শনিবার দুপুরের পর পোস্তায় কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিনিধিরা ট্রাক, ভ্যান ও রিকশায় করে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন। আড়তদারেরা সেই চামড়া দরদাম করে কেনেন। কেনার পর আড়তে সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজটি করেন শ্রমিকরা।পোস্তায় শহীদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শতাধিক চামড়া কিনেছেন। এবার ৬০০-৯০০ টাকায় চামড়া কিনছেন। উত্তরার চামড়া ব্যবসায়ী হেফাজ উল্লাহ বলেন, কুরবানিদাতাদের থেকে ৭৫০ টাকায় চামড়া সংগ্রহ করে রীতিমতো বিপদে পড়তে হয়েছে। এই এলাকায় ভালো মানের চামড়ার দাম উঠেছে সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা। এর ওপরে কোনোভাবেই চামড়া বিক্রি করা যায়নি। খিলক্ষেতের চামড়া ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, ‘আগে জানলে এত দাম দিয়ে চামড়া কিনতাম না। প্রতিবারই ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম দিতে অনাগ্রহ দেখায়। এতে আমাদের মধ্যেও দাম দিয়ে চামড়া কেনার প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে।’ সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো. শরীফ জানান, প্রতি পিস গরুর চামড়া ৬৫০-৮০০ টাকায় কিনছেন। একেকটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০-৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছেন। ঢাকার কলাবাগান এলাকা থেকে গরুর ১৩ পিস কাঁচা চামড়া গতকাল বিকেলে বিক্রির জন্য সায়েন্স ল্যাব এলাকায় নিয়ে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ী কাউছার আহমেদ। ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে কেনা একেকটি চামড়া বিক্রির জন্য দাম চান ১ হাজার ২০০ টাকা করে। তবে আড়তদার বা ট্যানারির মালিকের প্রতিনিধিদের কেউই ৭৫০ টাকার ওপরে দাম দিতে চাননি। শেষ পর্যন্ত ৭৫০ টাকা দরেই সব চামড়া বিক্রি করেন কাউছার। কাউছার আহমেদ বলেন, ‘যে আকারের চামড়া আমি বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছি, সেগুলোর দাম হওয়া উচিত ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। কিন্তু একপ্রকার লোকসান করেই চামড়া বিক্রি করতে হলো। সারাদিনের ভ্যান ভাড়া আর একজন সহকারীর মজুরি দিয়ে কিছুই থাকবে না।’ সায়েন্স ল্যাব এলাকাতেই মৌসুমি বিক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে রাখছিলেন কালাম ব্রাদার্স ট্যানারির পরিচালক সাজেদুল খায়ের। এবার তারা দেড় লাখ পিস লবণযুক্ত চামড়া সংগ্রহ করবেন। এ ছাড়া কোরবানি ঈদের দুই দিনে নিজেরা ১০ হাজারের মতো কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন।মোহাম্মদপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, লবণ ছাড়া বড় ও মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর যেসব গরুর চামড়া আকারে তুলনামূলক ছোট ও মান কিছুটা খারাপ, সেগুলো ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে, গতবারের মতো এবারও ছাগলের চামড়ার চাহিদা নেই বললেই চলে। অনেকেই বিনামূল্যে ছাগলের চামড়া দিয়ে দিয়েছেন, অনেকক্ষেত্রে দাম উঠেছে ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সড়কের পাশে কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ছাগলের চামড়া থেকে মাংস ছাড়াতে দেখা গেল। তাদের মধ্যে কয়েকজন জানালেন, ছাগলের চামড়ার কোনো দাম নেই। তারা বিনামূল্যেই চামড়াগুলো পেয়েছেন। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্পকে দূষণমুক্ত পরিকল্পিত শিল্পনগরে স্থানান্তরের জন্য ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ২১ বছরেও এই চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। সাভারের হেমায়েতপুরের ২০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার) পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় পাশের ধলেশ্বরী নদী দূষণের শিকার হচ্ছে। চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরের দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। ফলে বাংলাদেশি চামড়ার বড় ক্রেতা বর্তমানে চীন। তারা মূল্য কম দেয়।সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। সেবার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৮৫-৯০ টাকা। তারপর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে চামড়া সড়কে ফেলে ও মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাতে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার চামড়ার নষ্ট হয়।

লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক

যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক আগামী সপ্তাহে লন্ডনে সফররত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছেন। রবিবাার (৮ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, একটি চিঠি পাঠিয়ে এই অনুরোধ করেছেন টিউলিপ। চিঠিতে ব্রিটিশ এমপি বলেছেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিযোগের বিষয়ে এই বৈঠকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দূর করতে চান তিনি। টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সুবিধা ভোগ করেছেন। তার খালা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হয়েছে। দুদক দাবি করেছে, টিউলিপ বা তার মা ‘ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে’ অবৈধভাবে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি প্লট পেয়েছেন। সিদ্দিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার আইনি দল অভিযোগগুলোকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছে। তিনি দাবি করেছেন এসব বিষয়ে তার সঙ্গে বা তার আইনজীবীদের কেউ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করেনি। চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক ড. ইউনূসকে লিখেছেন, লন্ডনে আপনার সফরকালে যদি আমাদের সাক্ষাতের সুযোগ হয়, তবে আমার মায়ের বোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও প্রশ্নের উত্তর আমাকে দিতে হবে—তা পরিষ্কার করা সম্ভব হবে। চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক ড. ইউনূসকে লিখেছেন, লন্ডনে আপনার সফরকালে যদি আমাদের সাক্ষাতের সুযোগ হয় তাহলে এই বৈঠক ঢাকার দুর্নীতি দমন কমিটির সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে পারে। যেখানে আমার খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জড়িত কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি আরও লিখেছেন, আমি লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং গত এক দশক ধরে হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের সংসদ সদস্য। বাংলাদেশের প্রতি আমার আবেগ থাকলেও, আমি সেখানে জন্মগ্রহণ করিনি, থাকি না বা কোনও ব্যবসায়িক স্বার্থও নেই। টিউলিপ অভিযোগ করেন, তার আইনজীবীরা লন্ডন থেকে দুদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনও জবাব পাননি। উল্টো সংস্থাটি ঢাকার একটি ‘অচেনা ঠিকানায়’ কাগজপত্র পাঠিয়ে যাচ্ছে। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, এই কল্পিত তদন্তের প্রতিটি পদক্ষেপ সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করা হচ্ছে অথচ আমার আইনি দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হচ্ছে না। সিদ্দিক আরও বলেন, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন, এসব অভিযোগ কীভাবে আমার পার্লামেন্টারি দায়িত্ব ও দেশের প্রতি অঙ্গীকারকে ব্যাহত করছে। গত বছর যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী পর্যায়ের মানদণ্ড বিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনেস তাকে নির্দোষ ঘোষণা করলেও সিদ্দিক পদত্যাগ করেন। তিনি বলেছিলেন, বিতর্ক কেয়ার স্টারমারের নতুন সরকারের জন্য ‘বিব্রতকর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৯ জুন লন্ডন সফরে যাচ্ছেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের আয়োজনে তাকে কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদান করা হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের সঙ্গে তার কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। ড. ইউনূসের এই সফরে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস ও প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।

রাজধানীর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে সম্পন্ন : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সমন্বিত উদ্যোগে মাত্র ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে সম্পন্ন হয়েছে রাজধানী ঢাকার বিস্তৃত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যারা ঘামের বিনিময়ে এই শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখেন, তাঁরা আমাদের নীরব নায়ক। ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে পরিচ্ছন্ন ঢাকা-এটাই কর্মের শক্তি, এটাই নিষ্ঠার গল্প। তারা প্রচারে নেই, তবে তাদের কাজই শহরের মুখ। কোরবানির ঈদের আসল বীরদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।’ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে মাত্র ১২ ঘণ্টারও কম সময়ে সম্পন্ন হয়েছে বিস্তৃত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি শুধু দক্ষতা ও কর্মদক্ষতার প্রতিফলন নয়, বরং জনকল্যাণে নিবেদিত স্থানীয় সরকারের দায়িত্বশীলতা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের বাস্তব প্রমাণ।’ এর আগে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে সরেজমিনে অংশ নেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ। দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ২০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নগরবাসীর দায়িত্ববোধের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। সেবা কার্যক্রমে যুক্ত প্রত্যেক পরিচ্ছন্নতা যোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের জন্য বিশেষ খাবার ও প্রণোদনার কথাও বলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ঈদুল আযহা উদযাপন শুরুর প্রাক্কালে বলেন, ‘কোরবানির আনন্দ হোক সুস্থ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা এবং জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টায়, আমরা পারি ঈদের দিনকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে। ত্যাগের এই দিনে আমাদের দায়িত্ব কেবল কোরবানিতেই শেষ নয়, পরিবেশ রক্ষা করাটাও বড় ইবাদত।।আসুন সবাই মিলে নিজ নিজ এলাকার কোরবানির বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়ি। পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ আমাদের সকলের।’

ঈদের ফিরতি যাত্রায় ট্রেনে মাস্ক পরার অনুরোধ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ফিরতি যাত্রায় ট্রেন ভ্রমণে যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এছাড়া যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানানো হয়েছে। রবিবার (৮ জুন) রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সিনিয়র তথ্য অফিসার রেজাউল করিম সিদ্দিকী'র সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অনুরোধ জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়তে থাকায়, জনসমাগমপূর্ণ স্থানে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এমন স্থান এড়িয়ে চলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঈদের পরবর্তী ট্রেনযাত্রায় সংক্রমণ রোধে সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ট্রেন স্টেশন ও চলন্ত ট্রেনেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে।

চালু হয়েছে মেট্রোরেল, মাংস পরিবহন করা যাবে না

পবিত্র ঈদুল আজহার পরদিন রোববার থেকে ফের চালু হয়েছে মেট্রোরেল চলাচল। সকাল ৮টা থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পরপর ট্রেন চলছে (হেডওয়ে অনুযায়ী)। আগামীকাল সোমবার থেকে মেট্রোরেল সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে। তবে এই চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মঙ্গলবার ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসন) এ কে এম খায়রুল আলমের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে কোরবানির পশুর চামড়া, কাঁচা বা রান্না করা মাংস পরিবহন করা যাবে না। মেট্রো স্টেশনের প্রতিটি গেটে যাত্রীদের যথাযথভাবে তল্লাশি করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো যাত্রীর কাছে কাঁচা বা রান্না করা মাংস পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তার মেট্রো স্টেশনে প্রবেশ আটকে দেওয়া হবে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা কর্মীদের এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতেও বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঈদের দ্বিতীয় দিনেও চলছে পশু কোরবানি

ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পশু কোরবানি চলছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ঈদের দিন ও পরবর্তী দুই দিন অর্থাৎ ১২ জিলহজ পর্যন্ত কোরবানি করার সুযোগ রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী সুযোগ থাকায় এবং ঈদের দিন কসাই না পাওয়ায় অনেকেই আজ কোরবানি দিচ্ছেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঈদের দিনের কোরবানির পশুর বর্জ্য রাতের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। রাজধানীর বাসিন্দারা কোরবানি অব্যাহত রাখলে সোমবার (৯ জুন) পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য অপসারণের কাজ করবেন। এতে রাজধানীর বাসিন্দারা তাদের সুবিধামতো সময়ে কোরবানি দিতে পারছেন। রোববার (৮ জুন) সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফজরের নামাজ শেষ হওয়ার অল্প পর থেকেই কোরবানির প্রস্তুতি নেন অনেকে। ঈদের আগেই পশু কিনে রেখে আজ তারা কোরবানি দিচ্ছেন। রামপুরার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, ঢাকার বেশিরভাগ মানুষ ঈদের দিন কোরবানি দেন। এতে কসাইদের অনেক ব্যস্ততা থাকে। দেখা দেয় কসাই সংকট। তাই আমরা আগে থেকেই ঠিক করেছি দ্বিতীয় দিনে কোরবানি করবো। তিনি বলেন, আজ খুব নিরিবিলি পরিবেশে কোরবানি দিতে পারছি। ফজরের নামাজের পরে হুজুর এসে গরু জবাই দিয়ে গেছেন। কসাইরা মাংস বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আশা করছি সকল ১০টার মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো। মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, ঈদের দিন কোরবানি দিলে যা হবে ঈদের পরের দিন কোরবানি দিলেও তাই হবে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তিনদিন কোরবানি দেওয়া যায়। আর কোরবানি দেওয়া প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই কোরবানি দিচ্ছি, এখন কবুল করার মালিক তিনি নিজেই। রামপুরার আর এক বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছা ছিল ঈদের দিনই গরু কোরবানি দেবো। কিন্তু কসাই না পাওয়ায় আজ কোরবানি দিচ্ছি। শুধু আমরা না, অনেকেই কসাই সংকটে আজ কোরবানি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন কোরবানি দিতে পারিনি, তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। তবে অন্যদের কোরবানি দেওয়া দেখে বাচ্চাদের মন একটু খারাপ হয়েছিল। এখন ওরা আবার হাসি খুশি। বাচ্চাদের খুশিই তো আমাদের খুশি। আর কোরবানি দেওয়া হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। কার দোয়া, কার কোরবানি কবুল হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ কেউ জানে না। খিলগাঁওয়ে বাসিন্দা মো. হাসান বলেন, ঈদের দিন এবং পরের দুদিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। কোরবানি দেওয়া জন্য এই তিনদিনই সমান। কোনদিন সওয়াব বেশি কম হওয়ায় সুযোগ নেই। গতকাল যারা কোরবানি দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্য ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, আজ আমরা যারা কোরবানি দিচ্ছি তাদের উদ্দেশ্যও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তিনি বলেন, কোরবানির মাংস তিনভাগ করতে হয়। আমরা ধর্মীয় বিধান মেনে মাংস তিনভাগ করে, যার যা অংশ বুঝিয়ে দেবো। এখন কবুল করার মালিক আল্লাহ। মো. হাসান আরও বলেন, আমাদের গরুর মাংস বানানোর কাজ যে কসাই করছে, গত বছরও এই কসাই দিয়ে কাজ করিয়েছিলাম। এদের কাজ ভালো। গতকাল ওরা অনেক ব্যস্ততা ছিলেন। বিকেলে আমাদের কাজ করতে চেয়েছিলেন। আমরা বলেছি বিকেলে না করে আজ করতে। আল্লাহর রহমতে এখন নিরিবিলি পরিবেশে কোরবানি দিতে পারছি। এদিকে, ঈদের দিনের কোরবানির বর্জ্য রাতের মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আজ ও আগামীকাল সিটি করপোরেশনের বর্জ্য অপসারণ কাজ চলমান থাকবে।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী মারা গেছেন

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। নাসরিন সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নাসরিন সিদ্দিকীর প্রথম জানাজা রোববার বাদ জোহর টাঙ্গাইলের পিটিআই স্কুল মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। পরে কালিহাতির ছাতীহাটিতে নিজ বাড়িতে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা হবে। এরপর অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজ এলাকায় দাফন সম্পন্ন হবে।

‘স্যার আপনাকে ৫ বছর চাই’

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শনিবার (৭ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ শুভেচ্ছা জানানো হয়। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের পাঠানো শুভেচ্ছা বার্তায় বলা হয়েছে, ঈদুল আজহা আমাদেরকে ত্যাগ ও ধৈর্যের শিক্ষা দেয়। এই পবিত্র দিনে আমরা শুধু পশুই কোরবানি করি না; বরং নিজের অহংকার, স্বার্থপরতা এবং অন্যায়ের সঙ্গে আপসের মনোভাবকেও ত্যাগ করার শপথ নিই। সমাজে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি-চাঁদাবাজি বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সত্য ও সুন্দরের পথ নির্মাণই হোক আজকের দিনের প্রত্যাশা। এতে আরও বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানে এই জনপদের মানুষের ত্যাগের সর্বোচ্চ রূপে ফুটে উঠেছিল। সাহসী ও ত্যাগী মানুষেরা নিজেদের রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছিলেন নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে কর্তা হয়ে না উঠলে পরিবর্তন আসে না আর আত্মত্যাগ ছাড়া মুক্তি অসম্ভব। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেই সব শহীদদের, যাদের রক্তে এই জাতি নতুন আশার আলো দেখেছিল।রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (০৭ জুন) সকালে জামাত শুরু হয় ঠিক সাড়ে ৭টায় এবং শেষ হয় ৭টা ৪৩ মিনিটে। এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাইকে ঈদ মোবারক। সবাই দেশের মঙ্গলের জন্য দোয়া করবেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই জামাতে অংশগ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। মোনাজাত শেষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক এগিয়ে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তিন উপদেষ্টার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঈদ মোবারক জানান। সালাম দিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে আজকে একসঙ্গে ঈদের জামাতে পেলাম। সবাইকে ঈদ মোবারক জানালাম। সবাই এ পবিত্র দিনে দেশের মঙ্গলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ। তারপর প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যদিয়ে সবার উদ্দেশে হাত নাড়তে নাড়তে ময়দান ছাড়েন। উপস্থিত জনতার পক্ষ থেকেও তখন শুভেচ্ছা জাননো হয়। জনতার মাঝ থেকে, ‘স্যার আপনাকে ৫ বছর চাই’, দালালদের কথা শুনবেন না, পাঁচ বছর স্যার’ এসব কথা বলতে শোনা যায়। এবারের ঈদের প্রধান জামাতের আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ জানায়, প্রায় ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। নারীদের জন্যও ছিল আলাদা নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। অনেক শিশু বাবা-মায়ের হাত ধরে জামাতে অংশ নেয়, ময়দানে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আয়োজন সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনায় পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।

কোরবানি দিতে গিয়ে রাজধানীতে ৬৫ জন আহত

ঈদুল আজহার প্রথম দিনে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় পশু কোরবানি দিতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন অন্তত ৬৫ জন। শনিবার (৭ জুন) সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এসব আহত ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মুশতাক আহমেদ জানান, সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে কোরবানি দিতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়ে ৬৫ জন হাসপাতালে এসেছেন। এদের মধ্যে একজনকে ভর্তি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর ঈদুল আজহার দিন পশু জবাই করার সময় অসাবধানবশত ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বহু লোকজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

ত্যাগ হোক সমাজ বদলের এক নতুন উচ্চারণ: উপদেষ্টা আসিফ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, পশু নয়, কোরবানি হোক অহংকার, হিংসা ও অবিচারের। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক ভিডিও পোস্টে বলেন, ত্যাগ হোক সমাজ বদলের এক নতুন উচ্চারণ। পশু কোরবানি আমাদের এক ধর্মীয় দায়িত্ব, কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ানো তা এক মানবিক কর্তব্য। আসুন, ঈদের আনন্দে কেউ যেন না থাকে বঞ্চিত, সাম্য আর সহযোগিতায় গড়ে তুলি সুন্দর সমাজ। ঈদ মোবারক। ত্যাগ হোক উন্নয়নের মূলমন্ত্র। সারা দেশে উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, কোরবানির ত্যাগ ও পারস্পরিক সহানুভূতির এক মহৎ বার্তা নিয়ে শনিবার (৭ জুন) সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। সকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মসজিদ, ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রধান জামাত। জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর প্রধান ঈদ জামাত। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

রাজারবাগে ঈদের নামাজ আদায় করলেন ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ঈদ জামাতে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, সব স্তরের পুলিশ সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, দেশের অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধি এবং দেশবাসীর শান্তি ও সার্বিক মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরে ডিএমপি কমিশনার উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য এবং মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। ডিএমপি কমিশনার পুলিশ সদস্যদের খোঁজখবর নেন। তিনি নিজেদের ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে নগরবাসীর ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির আভাস দিল আবহাওয়া অফিস

সারাদেশের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি হলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হতে পারে দেশের মানুষের। শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর এই তথ্য জানায়। আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানান, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরও জানান, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। এদিকে আগামী চারদিনের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামীকাল রোববার (৮ জুন) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী সোমবার (৯ জুন) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী মঙ্গলবার (১০ জুন) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী বুধবার (১১ জুন) ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।

ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শনিবার (৭ জুন) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। এ সময় তারা পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঈদের দিন রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। চলছে পশু কোরবানির কার্যক্রম। এর মাঝে স্বস্তির বৃষ্টি রাজধানীতে। গত সপ্তাহ থেকে টানা কয়েকদিনের গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা ছিল সাধারণ মানুষের। সেই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে বৃষ্টির কারণে। তবে কোরবানির মাংস কাটায় কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শনিবার (৭ জুন) সকালে ঈদের নামাজ শেষে শুরু হয় পশু কোরবানির কাজ। রাজধানীতে রাস্তার উপরে, কেউ বাড়ির সামনে, কেউ গলিতে কোরবানির মাংস কাটার কাজ করছেন। বৃষ্টির কারণে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে এতে। শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। তবে বায়তুল মুকাররম মসজিদসহ রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের মসজিদে সকাল সাতটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের নামাজ আদায় করেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরবানি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঢাকায় কোরবানির নির্ধারিত স্থান না থাকায় যে যেখানে খুশি পশু কোরবানি দিচ্ছেন। কোরবানির পশু মাংস কাটাকাটির মধ্যেই দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টির দেখা মিলে। বৃষ্টি আসায় স্বস্তি প্রকাশ করে রামপুরার বাসিন্দা মোহাম্মদ মামুন হোসেন বলেন, এটি আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি। বৃষ্টি না আসলে কিছুক্ষণের মধ্যে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যেত। সব মহল্লার রাস্তায় রক্ত আর রক্ত। কোরবানিদাতারা কোনরকমে সে রক্তের উপরে পানি ছিটিয়ে রেখেছেন। এই বৃষ্টি না আসলে এই রক্ত পরিষ্কার হওয়া কঠিন হতো। একই ধরনের কথা বলেন, রামপুরার আরেক বাসিন্দা সলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ঢাকার মানুষকে সব সময় রাস্তার উপরেই কোরবানি দিতে হয়। কোরবানির পশুর রক্ত যাদের ড্রেনে চলে যায় এজন্য বাসা বাড়ির পানি রক্তের উপর ঢালা হয়। কিন্তু যে পরিমাণ পানি ঢাললে রক্ত পুরোপুরি পরিষ্কার হবে বাসা বাড়ি থেকে সেই পরিমাণ পানি দেওয়া সম্ভব না। বৃষ্টির পানিতেই রক্ত পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়া সম্ভব। তাই এই বৃষ্টি আমাদের জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে।

উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা

সারা দেশে উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, কোরবানির ত্যাগ ও পারস্পরিক সহানুভূতির এক মহৎ বার্তা নিয়ে শনিবার (৭ জুন) সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা। গৃহের আঙিনায়, গলি-মহল্লায়, খোলা স্থানে চলছে পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ। আর সেই সঙ্গে ভাগাভাগি করে দেওয়া হচ্ছে আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে। সকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মসজিদ, ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রধান জামাত। জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর প্রধান ঈদ জামাত। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির প্রস্তুতি নেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশু জবাইয়ের পর দ্রুততার সঙ্গে তা কসাইয়ের সহায়তায় মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। কেউ কেউ মাংস তিন ভাগ করে দরিদ্র, আত্মীয়স্বজন ও নিজের জন্য বণ্টন করছেন। সরকারি-বেসরকারি অনেক সংস্থা ও সংগঠন দরিদ্র মানুষের মধ্যে মাংস পৌঁছে দিচ্ছে। এবারের ঈদুল আজহায় রাজধানীসহ সারা দেশে পশু কোরবানির ব্যবস্থাপনায় দেখা গেছে শৃঙ্খলা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ঈদের আগে থেকে কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের একাধিক সূত্র জানায়, ঈদের দিন দুপুরের মধ্যেই অধিকাংশ ওয়ার্ডে বর্জ্য পরিষ্কার করার কার্যক্রম নিয়েছে এবং রাতের মধ্যেই তা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন।

কারাগারে ঈদ উদযাপনে গরু ও খাসি কোরবানি

সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে চলছে পশু কোরবানি। সারাদেশের কারাগারগুলোতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আদায় করা হয় ঈদের নামাজ। কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের জন্য ৮টি গরু ও ১০টি খাসি কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ঈদ উপলক্ষে কারাগারের এই ব্যতিক্রমী আয়োজনে ফুটে ওঠে মানবিকতা, সহমর্মিতা এবং সংশোধনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রতিবারের ন্যায় এইবারও ঈদুল আজহা উপলক্ষে কারাগারগুলোতে চলছে বিশেষ আয়োজন। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব কারাগারেই বন্দিরা ঈদের বিশেষ খাবার পাবেন। কেন্দ্রীয় কারাগারের ঈদ আনন্দের জন্য ৮ টি গরু ও ১০টি খাসি জবাই করা হচ্ছে আজ। শনিবার (৭ জুন) সকালে এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার বলেন, গতকাল পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে দুস্থ বন্দিদের জন্য ৬০০টি লুঙ্গি এবং ৮৫০টি টিশার্ট বিতরণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের মাধ্যমে ৮ টি গরু ও ১০ টি খাসি জবাই করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দিদের জন্য কারাগারে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও বিনোদন অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এ কে এ এম মাসুদ বলেন, কেরানীগঞ্জের বন্দিদের জন্য ঈদের দিন শুরুতেই সকালের নাস্তায় পায়েস ও মুড়ি, দুপুরে মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসি এবং কোমল পানীয়, সালাদ, পান সুপারি ও মিষ্টান্ন। রাতে ভাত মাছ আলুর দম। এছাড়া ঈদের তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি স্টাফদের জন্য ও একটি কারা বন্দিদের নিয়ে। এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, ঈদের দিন আরপি গেটে বন্দির আত্মীয় স্বজনদের মাঝে উপহার ও সুভিনিয়র বিতরণ করা হবে। বন্দিদের মাঝে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন ও বন্দিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদের পরদিন বন্দিদের জন্য বাইরের রান্না করা খাবার গ্রহণ ও বিতরণ করা হবে। এছাড়া ঈদের ৩য় দিন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণের অংশগ্রহণে প্রিজন ম্যারাথন-২০২৫ আয়োজন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হবে।

আজ মেট্রোরেল চলবে না

পবিত্র ঈদুল আজহার দিন, অর্থাৎ আজ শনিবার (৭ জুন) মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) গত মঙ্গলবার (৩ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। ডিএমটিসিএলের পরিচালক (প্রশাসক) এ কে এম খায়রুল আলমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহার দিন (৭ জুন) মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের পরদিন, অর্থাৎ আগামী রোববার (৮ জুন) সকাল ৮টা থেকে ৩০ মিনিট হেডওয়ে অনুযায়ী মেট্রোরেল চলাচল করবে। এছাড়া আগামী সোমবার (৯ জুন) থেকে সরকারি ছুটির দিনের সময়সূচি অনুযায়ী মেট্রোরেল যথারীতি চলাচল করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) থেকে শুরু হয়েছে টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি। এ ছুটি প্রযোজ্য হয়েছে সচিবালয়সহ সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

বিশেষ মোনাজাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা

ধর্মীয় মর্যাদা ও গভীর ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজের পর মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ জামাতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন যাত্রাবাড়ী তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী। মুকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।মোনাজাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা পরম করুণাময় আল্লাহর নিকট আবেগপূর্ণভাবে হাত তুলে দোয়া করেন। তাদের চোখ-মুখে স্পষ্ট ছিল আত্মিক শান্তি ও ঐক্যের ছাপ। এই বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বিশ্বের সব মানুষের কল্যাণ কামনা করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ৭টায় প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম জামাত যথাক্রমে সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক মুশতাক আহমদ। চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ এবং পঞ্চম ও শেষ জামাতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করবেন দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন। ঈদ জামাতকে ঘিরে বায়তুল মোকাররম এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষণীয়। নামাজের আগে দেওয়া বয়ানে দুর্নীতি প্রতিরোধ করে একটি সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক জীবন গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করলেন প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ৭টায় নামাজ শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও নামাজ আদায় করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানসহ অনেকে। নামাজে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। জামাতে অংশ নিতে সকাল ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টা ঈদগাহ মাঠে আসেন। নামাজ শেষে খুতবা পাঠ করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক। এর আগে আলোচনায় দেশ ও মুসলিম জাতির কল্যাণে দোয়া করেন তিনি। খুতবা ও মোনাজাত শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশ ও জণগণের মঙ্গলের জন্য ঈদ জামাতে উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে না: প্রধান উপদেষ্টা

চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে বলে দেশের মানুষের মধ্যে যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে তা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বরং যাদেরকে এই বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে দিলে বাংলাদেশ বহুভাবে উপকৃত হবে। তাদের কাছ থেকে বন্দর পরিচালনার শিক্ষা নিয়ে একদিন বাংলাদেশের মানুষরাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের বন্দর পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। তারা সেসব বন্দরে কাজ করতে পারবেন। এতে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে আজ সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব কাদের দেয়া হচ্ছে সেই দেশের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। বরং বন্দর নিয়ে যারা অপ্রচার করছে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থনৈতিকভাবে আমাদের যে উন্নতির শিখরে থাকার কথা ছিল, বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার কথা ছিল সে উচ্চতায় আমরা পৌঁছাতে পারিনি। আমরা চাই, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। এ কারণে বিনিয়োগ পরিষেবার উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি। এটা করা সম্ভব না হলে দেশের কোটি কোটি মানুষের বেকারত্ব ঘুচবে না। অর্থনৈতিক সংকট রয়েই যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে ‍উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঝেমাঝে এমন কথাও শুনেছি যে এ বন্দর বিদেশিদেরকে নাকি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি আগেও জানিয়েছি, চট্টগ্রাম বন্দর হলো বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। বর্তমানে এই হৃৎপিণ্ড অতি দুর্বল। এখন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় তাকে রেখে দিলে আমাদের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এই হৃদপিণ্ডকে বড় করতে হবে। মজবুত করতে হবে। সুঠাম করতে হবে। তা করতে হলে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অভিজ্ঞদের সাহায্য লাগবে। আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তারা ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিশ্বজুড়ে বন্দর পরিচালনা করে। তিনি বলেন, তাদের কাজ বন্দর ব্যবস্থাপনা করা, আমাদের লক্ষ্য হলো বন্দর ব্যবস্থাপনার কাজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের কাছ থেকে শিখে নেওয়া। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি ৩১ সালের মধ্যে আমরা বন্দরের কাজ শিখে ফেলি এর পরবর্তী ৫ বছরে অর্থাৎ ৩৬ সালের মধ্যে পৃথিবীর যত দেশে যত বন্দর এই কোম্পানিগুলো চালায় তাদের বহু বন্দর এই বাংলাদেশিরাই পরিচালনা করবে। আপনারা যে বন্দরেই পা দেবেন, দেখবেন সেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। বহু লোকের ওপরে ওঠার সুযোগ হবে। তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই তারা আমাদের চাকরি দেবে। ‘আগে যেকোনো জাহাজে চড়লে দেখতাম জাহাজের নাবিক চট্টগ্রামের কিংবা সিলেটের। বন্দরের কাজ একবার শিখে নিতে পারলে ভবিষ্যতে আমরা যে বন্দরে যাব না কেন দেখব সেখানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সিলেট আর বরিশালের লোক। বাংলাদেশের লোক, বলেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের বন্দর যদি আধুনিক হয়, তা শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতিতেই ভূমিকা রাখবে না, বরং আমরা নেপাল, ভূটানসহ পাশ্ববর্তী সকল দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো। এই বন্দরই হবে এই অঞ্চলের অর্থনীতির সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।’ তিনি বলেন, কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নানা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যে সমগ্র উপকূল অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এই পুরো অঞ্চলে অনেকগুলো শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে শুধু সমুদ্রের সান্নিধ্য এবং তার ব্যবহারের দক্ষতার কারণে। তার সঙ্গে গড়ে উঠবে আরেকটি নতুন শিল্প। আধুনিক পদ্ধতিতে সমুদ্রে মাছ পালন, আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের শিল্প। এটি আরেকটি নতুন জগত সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে আমরা আমাদের বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি এবং তারা উৎসাহ সহকারে সাড়া দিয়েছেন।’ বন্দর ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা যাদেরকে আনছি তারা পৃথিবীর যে-সব দেশে কাজ করে সেসব কোনো দেশেরই সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা নিজেদেরকে ভিত্তিহীন বিরোধিতা এবং অপপ্রচারের শিকার হতে দেবেন না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দর ব্যবস্থাপনার উদ্যোগে আপনাদের দৃঢ় সমর্থন অব্যাহত রাখুন। যারা বিরোধিতা করছে তাদের প্রতিহত করুন।’

মিয়ানমারকে করিডোর দেওয়া নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: ড. ইউনূস

মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য করিডোর দেওয়া হচ্ছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (৬ জুন) ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়ে দিয়েছে বলে একটা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলছি, এটি সর্বৈব মিথ্যা। এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প। যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, এটা তাদেরই কৃতকর্ম। তিনি আরও বলেন, আপনারা এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকবেন। কোনোভাবেই বিভ্রান্ত হবেন না। এসব অপপ্রচার সত্ত্বেও আমরা লক্ষ্যচ্যুত হব না। এই জটিল সমস্যাটি সমাধানে আমরা কাজ চালিয়ে যাব। ড. ইউনূস বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব গত মার্চ মাসে ঢাকা সফরকালে রাখাইন‌ রাজ্যে মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য একটি ত্রাণ চ্যানেলের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন এই প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহায়ক হবে। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রয়ে গেছে। টানা চার বছর ধরে জান্তা সরকারের বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের প্রতিবেশি মিয়ানমার। গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন রাজ্যের কায়ুকফায়ু সমুদ্রবন্দর ছাড়া পুরোটা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। গত বছরের নভেম্বরে ‘রাখাইন: গড়ে উঠছে একটি দুর্ভিক্ষ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি-ইউএনডিপি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন দুর্ভিক্ষের হুমকিতে রাখাইন। বাণিজ্য প্রায় বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ২০ লাখ মানুষ অনাহারে থাকার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মানুষের আর্থিক সংকট এবং ব্যাপক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি উপার্জন আর স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকমাত্রায় কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা বলা হয় ওই প্রতিবেদনে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ঢাকা সফরের পর গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের ‘মানবিক সহায়তা চ্যানেল’ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। গত ১৪ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে যান জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে আলোচনায় ‘হিউম্যানিটারিয়ান চ্যানেলে’ বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রথম তুলে ধরে ওইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান জানান, আরাকান আর্মি, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মিয়ানমার সরকার; সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি আরও জানান, রাখাইনে যে মানবিক সমস্যা বা যে সংকট তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের বিকল্প নাই। সেই কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই হবে। তার ওই বক্তব্যের পর গত ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান ‘মানবিক প্যাসেজ’ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে। উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন বিরোধিতার মুখে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘হিউম্যানিটারিয়ান প্যাসেজ’ বা ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়া নিয়ে ‘জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার’ সঙ্গে সরকারের কোনো আলোচনা হয়নি। সম্প্রতি এই করিডোর নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে আসলে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। পরে ২১ মে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, করিডোর নিয়ে কারও সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি, হবেও না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার করিডোর শব্দটি স্লিপ অব টাং। দু’দিন আগে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসও বলেছেন, মানবিক করিডোর এই নামটি কোথা থেকে এসেছে আমি জানি না। কিন্তু এটা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজেদের বিষয়। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, তারা যখন সরকার গঠন করে দেশের দায়িত্ব নেন তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি ‘প্রায় মৃত অবস্থায়’ পেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে ইস্যুটি ঝরে পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে আমরা ইস্যুটিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টির সম্মুখভাগে নিয়ে আসতে পেরেছি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ও আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সরকারসহ সেখানকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমরা যত দেশেই সফর করেছি সব দেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় নেতা ও সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারাও ইতিবাচকভাবে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন।

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় শুনে খুশি জামায়াতে ইসলামী

প্রধান উপদেষ্টা আজ সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় (২০২৬ সালের এপ্রিল) ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। বিবৃতিতে জামায়াত আমির বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন- ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। তার এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, জাতির তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

জুলাই সনদ নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই মাসেই সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ দেশের সামনে উপস্থাপন করা হবে। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব ও অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা একটি ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। তারা আমাকেও সেখানে আমন্ত্রণ জানায়। আমি বলেছিলাম, দেশের সব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যদের সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলে এ ঘোষণাপত্র দেওয়া ভালো হবে। এর পাশাপাশি আগামী জুলাই মাসেই সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে আমরা জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবো বলে আশা করছি। ‘জুলাই সনদ’ হবে একটি প্রতিশ্রুতিপত্র, যেখানে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত জনকল্যাণমুখী সংস্কারগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করে জাতির কাছে সেই সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই জুলাই সনদ হলো একটি প্রতিশ্রুতি। একটা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টিতে একমত হয়েছে তার তালিকা থাকবে এই সনদে। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে তারা জাতির কাছে সেগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে। এই সনদ অনুযায়ী আশুকরণীয় সংস্কার কাজগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাকি অংশের বেশকিছু কাজও আমরা শুরু করে যেতে চাই। আশা করি, অবশিষ্ট অংশ পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন অব‍্যাহত থাকবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরো বিশ্বের কাছে দেশের নতুন ঐক্যবদ্ধ ভাবমূর্তি তুলে ধরা যাবে। বিশ্বব্যাপী সবার কাছে জাতি হিসেবে বাংলাদেশের শক্তি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন গঠন করা আমাদের একটি দুঃসাহসিক উদ্যোগ ছিল। অন্য কোনো দেশে এমন কোনো নজির নেই। এর মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে রাজনৈতিক গভীরতার সন্ধান পেয়েছি। রাজনৈতিক ঐক্যে পৌঁছার জন্য ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সব দলের দলগত প্রস্তুতি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কমিশনের সঙ্গে ঐকান্তিক আলোচনা, জাতীয় লাইভ টেলিভিশনের সামনে সব দলের ঐকমত্যে পৌঁছার একান্ত প্রয়াস আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সব রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের সীমাহীন ধৈর্য এবং কমিশনের প্রতি তাদের সহযোগিতা এবং সৌজন্য প্রকাশের জন্য জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি, আমাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করে জাতির জন্য একটা নতুন পথনির্দেশনা রেখে যেতে পারব। প্রধান উপদেষ্টা প্রত্যাশা জানিয়ে আরও বলেন, এই কমিশনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেশে যে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে যদি সেটা বিকাশমানভাবে স্থায়ী রূপ দিতে পারি তাহলে আমরা ভবিষ্যতের সব রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো। সব প্রস্তুতি সমাপ্ত করে দেশের সব মানুষের- কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, কৃষক-জেলে, গৃহিণী, দিনমজুর, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, শিল্পী সবাই মিলে চেষ্টা করে একটি সুন্দর, নিখুঁত নির্বাচন আয়োজন করে নতুন বাংলাদেশের দৃঢ় ভিত্তি রচনা হবে বলেও মস্তব্য করেন তিনি।