
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে ঘিরে সুষ্ঠু ভোটপরিবেশ নিশ্চিত করতে অনুমতি ছাড়া সব ধরনের ধর্মীয় প্রচার ও ওয়াজ-মাহফিল আয়োজনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব আয়োজন সীমিত রাখতে স্বরাষ্ট্র ও ধর্মবিষয়ক সচিবকে চিঠি দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে এ বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। একই দিনে সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারের ক্ষেত্রে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছেও পৃথক চিঠি পাঠিয়েছে ইসি। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াজ-মাহফিলের ওপর এই নিয়ন্ত্রণ কার্যকর থাকবে। তবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসারের (আরও) অনুমতি সাপেক্ষে ধর্মীয় প্রচার আয়োজন করা যাবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে রোববার সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ওয়াজ-মাহফিল নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে- এ ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। রোববার আরওদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটের সময় কোনো পক্ষ যেন রাজনৈতিক সুবিধা নিতে না পারে এবং ধর্মীয় মঞ্চে সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রার্থী যাতে ভোট চাইতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করাই উদ্দেশ্য।
ইসির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে ওয়াজ-মাহফিল আয়োজনের অনুমতি না দেওয়ার দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপের কথাও বলা হয়েছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার লিখিত অনুমতি থাকলে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকার নির্দেশনাও রয়েছে।
এদিকে ইসির এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ইসলামি বক্তা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী আমার দেশকে বলেন, শীত মৌসুমে ওয়াজ-মাহফিল আয়োজন দেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নিয়ে এসব মাহফিল আয়োজন করে থাকে। হঠাৎ করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে তা বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা হলো দেশের হাজারো ওয়াজ-মাহফিলে লাখো মানুষের সমাগম হলেও কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে না। বরং এসব মাহফিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সামাজিক সৌহার্দ্য এবং শান্তিপ্রিয় মানসিকতার প্রতিফলন। ওয়াজ মাহফিলগুলোতে উন্নত চরিত্র গঠন, মাদক পরিহার এবং অন্যায় থেকে দূরে থাকার বার্তা দেওয়া হয়, যা সমাজকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী করে। তাই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, যাতে এসব মাহফিল ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা আয়োজকরা হয়রানির শিকার হন। তিনি এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, প্রচারসংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য উপযুক্ত নির্বাচনি পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে এই পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সাক্ষাৎকার, টকশো বা নির্বাচনি সংলাপ প্রচারের সময় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫-এর বিধি ২৫ অনুযায়ী, গণমাধ্যম আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে কোনো প্রার্থী বা দলের প্রতিনিধি ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে পারবেন না। এসব বিষয়ে সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।