
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর হামলা, গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ প্রধান উপদেষ্টার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়–সংশ্লিষ্ট বিশেষ সহকারীরা। পাশাপাশি পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বৈঠকে অংশ নেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়কালে অন্যতম উদ্বেগজনক ঘটনা। তার ভাষায়, এই হামলা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত, যার মাধ্যমে পরাজিত শক্তি দেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলার চেষ্টাকে আমরা যেকোনো মূল্যে ব্যর্থ করে দেবো। জাতির ওপর এই ধরনের অপশক্তির আঘাত কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেবো না। আঘাত যাই আসুক, যত ঝড় তুফান আসুক, কোনো শক্তিই আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে পারবে না।’
তিনি জানান, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য, ‘আমরা দেশের আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে জাতির জন্য একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করব।’
বৈঠকে বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানান, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। পরিবারের সম্মতিতে তাকে ইতোমধ্যে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যে করেই হোক দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাদির ওপর হামলা ও হামলার পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’ একই সঙ্গে তিনি দেশবাসীকে হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার আহ্বান জানান।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হামলার স্থান থেকে সিসিটিভি ফুটেজসহ প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তাৎক্ষণিকভাবে সীমান্তে কড়া নজরদারির নির্দেশ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হামলাকারীরা যাতে কোনোভাবেই দেশ ছাড়তে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’ পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন- এমন সম্ভাব্য টার্গেট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনকালীন যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটি বিশেষ হটলাইন নম্বর চালু করা হবে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এবং অপরাধীদের সম্ভাব্য আশ্রয়স্থলে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে শিগগিরই দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন প্রধান উপদেষ্টা।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, ‘জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালায়।
জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ইস্রাফিল ফরায়েজী জানান, নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালেই ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো হয়।