
এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য। দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী লাহোরে অবস্থিত লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ (এলইউএমএস) চার ক্রেডিটের এই কোর্স চালু করছে।
নতুন এই কোর্সে সংস্কৃত ভাষার পাশাপাশি পাঠ্যসূচিতে থাকছে গীতা, রামায়ণ, মহাভারত এবং সংস্কৃত ভাষায় রচিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ শাসন থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ্যক্রমে যুক্ত হলো।
পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা গবেষণা কেন্দ্র গুরমানি সেন্টারের পরিচালক ড. আলী উসমান কাশমি এ উদ্যোগকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, “আমাদের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য সংক্রান্ত বইয়ের বিশাল ভাণ্ডার আছে; সেখানে এমনকি তালপাতায় লেখা সংস্কৃত পুঁথিও রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে তৎকালীন গবেষক জে সি আর উলনার এসব বই, প্রকাশনা ও পুঁথি সংগ্রহ করেছিলেন; কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর সেসব নিয়ে কোনো পাকিস্তানি গবেষক কাজ করেনি। কেবল বিদেশি গবেষকরাই এসব বই-প্রকাশনা তাদের নিজেদের গবেষণার জন্য ব্যবহার করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এলইউএমএস যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। আমি আশা করছি যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ উদ্যোগ নেবে এবং আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আমরা সংস্কৃত ভাষা, গীতা ও মহাভারত বিষয়ে পাকিস্তানি গবেষক দেখতে পাব।”
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সংস্কৃত কোর্স চালুর পেছনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন এলইউএমএসের অধিভুক্ত ফরমান ক্রিশ্চিয়ান কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদ রশীদ। এলইউএমএসে এই কোর্সে পাঠদানও করবেন তিনি। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. রশীদ বলেন, “আমি অনলাইনে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত ভাষা ও ব্যাকরণের ওপর এক বছরের কোর্স সম্পন্ন করেছি এবং এখনও পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছি।”
সংস্কৃত শেখার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, “কেন শিখব না? এটি আমাদের উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ভাষা। সংস্কৃত ভাষার সবচেয়ে বিখ্যাত পণ্ডিত পাণিণির জন্ম আমাদের পাকিস্তানে। আমাদের সিন্ধু উপত্যকায় সংস্কৃত ভাষার অনেক বিখ্যাত সাহিত্য রচনা হয়েছে।”
সংস্কৃতের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, “সংস্কৃত হলো পর্বতের মতো— এটি একটি সাংস্কৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ এবং আমাদের এটি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সম্পত্তি নয়। এটা সম্পদ এবং এই সম্পদ আমাদেরও।”
সূত্র: এনডিটিভি