
দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত প্রায় ৮০টি হাসপাতাল ভবন এখনও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলছেন, জনবল ও বায়োমেডিকেল সাপোর্টের ঘাটতি এমন পরিস্থিতির মূল কারণ।
এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ডা. সায়েদুর রহমান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস)-কে সতর্ক করেছেন। তার কথায়, “নতুন ভবন নির্মাণই শেষ কথা নয়; সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ, নিরবচ্ছিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা ও জনবল স্থাপন না হলে উন্নত অবকাঠামোও অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।”
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ৫০০ শয্যার নতুন সম্প্রসারণ ভবন উদ্বোধনের সময় তিনি এসব মন্তব্য করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত উচ্চমানের ভবনগুলোর বেশিরভাগই জনবল সংকট, অপারেশনাল ত্রুটি এবং দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বছরের পর বছর ব্যবহার হয়নি। এ ধরনের ভবনে উন্নত মানের মডুলার সিস্টেম থাকলেও প্রয়োজনীয় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট না থাকায় সেগুলো কার্যকর করা যায়নি।
ডা. সায়েদুর রহমান সতর্ক করে বলেন, “উন্নত চিকিৎসা ভবন চালানো শুধু সৌন্দর্য বা নির্মাণকৌশল দিয়ে হয় না - যদি বায়োমেডিকেল টিম ২৪/৭ ব্যাকএন্ড সাপোর্ট দিতে না পারে, তাহলে যন্ত্রপাতি কয়েক মাসেই অচল হয়ে যেতে পারে।”
তিনি নিনসের নতুন ভবনকে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘বড় অর্জন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে শুধু সেবাদান প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ না রেখে নিনসকে দেশের নিউরোসায়েন্স খাতের ‘গার্ডিয়ান প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে মানদণ্ড নির্ধারণ, প্রটোকল উন্নয়ন, গবেষণা এবং স্থানীয় নিউরোলজিক্যাল সমস্যা সমাধানের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
ডা. সায়েদুর রহমান জানান, সরকার এবছর জেনেটিক কেয়ার এবং ইমার্জেন্সি কেয়ারকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বাংলাদেশের মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে প্রথমবারের মতো জেনেটিক মেডিসিন এবং ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগ চালু হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নতুন ভবনের নকশা ও নির্মাণ নিয়ে তিনি স্থাপত্য অধিদপ্তর এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রশংসা করেন। তবে রক্ষণাবেক্ষণে সমন্বিত উদ্যোগের গুরুত্বও তিনি স্মরণ করান এবং সতর্ক করে বলেন, “যদি ব্যবস্থাপনা দুর্বল হয়, তাহলে নতুন ভবনও সেই ৮০টি ভবনের সারিতে চলে যেতে পারে।”
আলোচনার শেষে তিনি নিনসকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিক সহায়তার আশ্বাস দেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভবনের কার্যকর ব্যবস্থাপনায় সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানান।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিনসের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী গিয়াস উদ্দীন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন।