
দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে পুলিশের ‘হামলার’ প্রতিবাদে রাজধানীতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা।
শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত ১২টার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে হামলার নিন্দা জানান এবং আটক শিক্ষকদের মুক্তি ও আহতদের যথাযথ চিকিৎসার দাবি তোলেন।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, “গ্রেপ্তার শিক্ষকদের মুক্তি ও আহতদের সুচিকিৎসা এবং পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আমাদের এ কর্মসূচি। হামলায় আমাদের দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পিজি হাসপাতালে আছেন। আমরা হামলার প্রতিবাদে ও আটকদের মুক্তির দাবিতে রোববার থেকে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।”
হামলায় আহত বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি স্ট্রেচারে শুয়ে থেকে এই মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচিতে অংশ নেন।
প্রাথমিক শিক্ষকদের তিনটি দাবির মধ্যে রয়েছে: দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তিতে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
শিক্ষক নেতা শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, কর্মসূচি ছত্রভঙ্গ করার সময় পাঁচজন শিক্ষককে পুলিশ আটক করেছে। তিনি বলেন, “পুলিশের সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগ থানায় অনশনে বসেছেন থানা হেফাজতে আটক থাকা প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মো. আব্দুল কাদের, মো. নুরুল ইসলাম (লিটন), মো. শরিফুল ইসলাম ও মো. সোহেল। আমরা দ্রুত তাদের মুক্তি চাই।”
তবে আটক ও অনশনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানার ওসি খালেদ মনসুর জানান, “শিক্ষকরা কেউ আটক নেই। থানায় পাঁচজন আছেন, তাদের বিষয়ে সকালে সিদ্ধান্ত হবে। কেউ অনশনে নেই, থানায় এমন কিছু হচ্ছে না।”
শনিবার সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে তারা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ অভিমুখে ‘কলম বিরতি মিছিল’ শুরু করলে পুলিশ তাদের ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে আটকে দেয়।
এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে কর্মসূচি ছত্রভঙ্গ করে বলে দাবি করেন শিক্ষকরা। এতে বহু শিক্ষক আহত হন এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে অভিযোগ তাদের।
বাধার মুখে শিক্ষকরা আবার শহীদ মিনারে ফিরে এসে রোববার থেকে সারাদেশে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ এপ্রিল সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এ সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানিয়ে সহকারী শিক্ষকরা দশম গ্রেডে উন্নতির দাবি জানাচ্ছেন।
এদিকে, প্রাথমিক শিক্ষকদের অপর একটি সংগঠন ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতির নিশ্চয়তা দিতে সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।