এনএইচআরসি আইন, ২০০৯ সংশোধনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সরকার: আইন উপদেষ্টা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৪:০০ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২৫
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এনএইচআরসি আইন, ২০০৯ সংশোধনের বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি আবারও নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার সিলেটে আয়োজিত এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “কমিশনার নিয়োগ অবশ্যই স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে। কেবলমাত্র সর্বোচ্চ সততার অধিকারী ব্যক্তিরাই নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন।”
ড. আসিফ নজরুল প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আইন সংশোধন ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও আস্থাভাজন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদাহরণ স্থাপন করতে পারবে। এনএইচআরসি’কে একটি কার্যকর, গ্রহণযোগ্য এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ (এলপিএডি) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), যা সুইস দূতাবাসের সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় এনএইচআরসি আইন, ২০০৯-এর বিদ্যমান আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি দূর করা এবং কমিশনকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড, বিশেষত জাতিসংঘের প্যারিস প্রিন্সিপলস-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত এনএইচআরসি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সীমিত ক্ষমতা ও স্বাধীনতা বিষয়টি এর কার্যকারিতা ব্যাহত করেছে। তাই এই সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমিশনের ভূমিকা ও সক্ষমতা জোরদার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের আটটি বিভাগে বহুপক্ষীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হবে, যার সমাপ্তি হবে ঢাকায় জাতীয় পরামর্শ সভায়। এসব সভায় সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করে বাস্তবসম্মত সুপারিশ প্রদান করবেন।
প্রথম পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৩ আগস্ট ২০২৫ সিলেটে। সভায় অংশগ্রহণকারীরা আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, জবাবদিহিতা জোরদার এবং রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় উভয় ধরনের নির্যাতন থেকে নাগরিক সুরক্ষা বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এলপিএডি সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভালো আইন প্রয়োজন, কিন্তু এর কার্যকর প্রয়োগ সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজ সিলেট থেকে শুরু করে দেশব্যাপী পরামর্শ সভার মাধ্যমে এনএইচআরসি আইনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ আনোয়ারুল হক বলেন, এনএইচআরসি শক্তিশালী করা দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা এবং মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য অপরিহার্য। পরামর্শ সভার মাধ্যমে আমরা কমিশনের স্বাধীনতা, গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চাই, যা বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সভায় এলপিএডি’র যুগ্ম সচিব ড. এস এম শফায়েত হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং এনএইচআরসি আইন, ২০০৯-এর ম্যান্ডেট, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। এছাড়া সিলেটের জেলা প্রশাসক সরওয়ার আলমও বক্তব্য রাখেন।
আলোচনার মূল বিষয় ছিল কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, তদন্ত ক্ষমতা জোরদার, কার্যক্রমের স্বাধীনতা বৃদ্ধি এবং সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতা উন্নত করা। বিভাগীয় পরামর্শ সভা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশগুলো ঢাকার জাতীয় পরামর্শ সভায় আইন সংস্কারের রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সরকার এই সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে, নাগরিক অধিকার রক্ষা করতে এবং মানবাধিকারকে অংশগ্রহণমূলক শাসন ও টেকসই উন্নয়নের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য রেখেছে।