পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে সংস্কারের বিকল্প নেই: গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা


February 4 2025/dwww.webp

বর্তমান পুলিশ বাহিনী দিয়ে দেশে ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন সম্ভব কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহমুদুর রহমান। তার ভাষ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের আগের বাংলাদেশে পুলিশ একটা ‘দানবীয় ফোর্স’ ছিল, অভ্যুত্থানের পর আজকের পুলিশ বাহিনী ‘ডিমোরালাইসড’, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।

শনিবার (৫ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির’ আয়োজনে ‘বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা’ শিরোনামে গোলটেবিলে তিনি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

মাহমুদুর রহমান মনে করেন, ফ্যাসিবাদ যেন ফিরে না আসে, সেজন্য প্রথমে গণতন্ত্রে উত্তরণ করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশের অধঃপতন হয়েছে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হলে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে।
 
গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ পুলিশকে সংস্কার করতে হলে, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে, তাদের বেঁচে থাকার মত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, প্রশিক্ষণ আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে, র‌্যাব থেকে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি, আরেকটা ফ্যাসিবাদ যেন আবার ফিরে না আসে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি সেই আহ্বানও জানান বক্তারা।

গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম. আকবর আলীর সভাপতিত্বে প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. মো. মতিয়ার রহমান। 

ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে পুলিশের অধঃপতন হয়েছে। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হলে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. বোরহান উদ্দিন বলেন, পুলিশের পদোন্নতি, পোস্টিংয়ের জন্য আলাদা আইন থাকা প্রয়োজন। কোনো সরকারই পুলিশ কমিশন করতে চাইবে না। পুলিশকে মিলিটারি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসারও আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ আবদুল কাদের বলেন, পুলিশকে কখনো ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এজন্য পুলিশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য জারিফ রহমান বলেন, ঐকমত্য কমিশন থেকে পুলিশ সংস্কারকে বাদ দেওয়া জুলাই আন্দোলনের সাথে এক ধরনের বেঈমানি।

সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, বিগত সরকারের আমলে পুলিশের ভূমিকার কারণেই পুলিশ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সংস্কার আজ অনিবার্য।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, পুলিশকে শুধু ব্যবহার করা হয়। পুলিশে অনেক ভাল মানুষ আছেন তারা পরিবর্তন চায়। পুলিশকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, পুলিশের নিয়োগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। পুলিশ সদস্যদের সম্মানজনক বেতন-ভাতাদি দিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনে পুলিশ সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, শেখ হাসিনা পুলিশকে গণশত্রুতে পরিণত করেছিল। তিনি পুলিশ সদস্যদের পদায়নের ক্ষেত্রে ফিট লিস্ট করার সুপারিশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, ঔপনিবেশিক আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে পুলিশ সংস্কার করতে হবে। শুধু পুলিশ সংস্কার করলেই হবে না, প্রশাসনও সংস্কার করতে হবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. এম. আকবর আলী বলেন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। পুলিশের জনসম্পৃক্ততার কথা নেই।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রহমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা। এতে বিচারপতি, সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতারা এবং সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×