ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলজুড়ে বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুকে উদ্দেশ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে দেশটি। ইরানের এই হামলারে মধ্যে জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রোববার (২২ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি ভূখণ্ডের দিকে ইরান থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র কিছুক্ষণ আগে শনাক্ত করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইডিএফ। হুমকি মোকাবিলায় প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে এই বিবৃতিতে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জনগণকে সুরক্ষিত একটি স্থানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে আইডিএফ। এদিকে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে, এমন সতর্কবার্তার পরই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার ফলে জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো বাছেগা জেরুজালেম থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন। জর্ডানের আম্মানে আজ সকালে শহর জুড়ে দুইবার সাইরেন বেজে উঠেছে, যেটা ইঙ্গিত দেয় ইরানের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আম্মান থেকে বিবিসির সংবাদদাতা টম বেনেট এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে জেরুজালেম থেকে বিবিসির সংবাদদাতা একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জর্ডানকে টার্গেট করে নয়। তবে জর্ডানের বিমান বাহিনী সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলো তাদের ভূখণ্ডে অবতরণ করতে পারে মনে করে এগুলোকে প্রতিহত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে বাধা দেওয়া বা প্রতিহত করার ফলে আকাশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরো পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এই অঞ্চল জুড়ে বাতিল হওয়া ফ্লাইটের ঢেউয়ের পাশাপাশি পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে এই সংঘাত কিভাবে প্রভাবিত করছে এটি তার আরেকটি লক্ষণ। এর আগে ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। রাতের আঁধারে দেশটির ফোর্দো, নাতাঞ্জ আর ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলা চালায়। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়েদ আব্বাস আরাগচি যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলাকে ‘গর্হিত’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ইরান তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব বিকল্প সংরক্ষণ করছে।” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ তিনি লিখেছেন, “আজ সকালের ঘটনাগুলো ভয়াবহ এবং এর পরিণতি চিরস্থায়ী হবে। জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্যকে এই অত্যন্ত বিপদজনক, আইনহীন এবং অপরাধমূলক আচরণের জন্য সতর্ক থাকতে হবে।” জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ করেছে বলেও যোগ করেছেন আরাগচি।

ইরানে মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়াল লাতিন আমেরিকার ৪ দেশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে সাম্প্রতিক বোমাবর্ষণের কড়া সমালোচনা করেছে লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশ। কিউবা, চিলি, মেক্সিকো ও ভেনেজুয়েলা এ হামলাকে আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন এবং মানবতার জন্য বিপজ্জনক হুমকি হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। কিউবার প্রতিক্রিয়া কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-কানেল এই হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি জাতিসংঘ সনদের সরাসরি লঙ্ঘন এবং বিশ্বকে একটি ‘অপরিবর্তনীয় সংকটের’ দিকে ঠেলে দিচ্ছে। চিলির প্রতিবাদ চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচ ‘এক্স’-এ এক বার্তায় লেখেন, চিলি এই মার্কিন হামলার নিন্দা জানায়। ক্ষমতা থাকা মানেই তা অন্যায়ের জন্য ব্যবহার করার অধিকার পাওয়া নয়— এমনকি আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রও হন। মেক্সিকোর শান্তি আহ্বান মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে কথা বলেছে। তারা লিখেছে, আমাদের সংবিধান ও শান্তিবাদী পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আমরা আবারও আহ্বান জানাচ্ছি—উত্তেজনা প্রশমিত হোক এবং এই অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ফিরিয়ে আনা হোক। ভেনেজুয়েলার কঠোর ভাষা টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল বলেন, আমরা এই হামলার তীব্র ও সুস্পষ্ট নিন্দা জানাচ্ছি। ইসরায়েলের অনুরোধে মার্কিন সামরিক বাহিনী এই বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। আমরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সংঘাত এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়’ বরং বৈশ্বিক কূটনৈতিক অঙ্গনেও তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশের চোখে, এই হামলা শান্তির পরিবর্তে যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলার পথ তৈরি করছে। তথ্যসূত্র : আলজাজিরা

ইস্তাম্বুলে ওআইসি বৈঠকে ফিলিস্তিনের পাশে সৌদি আরব

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরবের আবারও দৃঢ় সমর্থন করেছেন। শনিবার (২১শে জুন) তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের ৫১তম সভায় তিনি ইরানে হামলা নিয়ে কথা বলেন। ওই সময় তিনি, গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধ, মানবিক সংকট লাঘব এবং আরব ও ইসলামি দেশগুলোর ঐক্য বজায় রাখার প্রয়াসে সৌদি আরবের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। এ সভায় তিনি পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। তিনি ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর আক্রমণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এই হামলা পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।” তিনি দ্রুত যুদ্ধবিরতির এবং ইরান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি ইয়েমেন সংকট নিয়েও কথা বলার সময় রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেন দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে। এইবৈঠকে সভাপতির দায়িত্ব তুরস্কের কাছে হস্তান্তর করার মাধ্যমে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুরস্ককে অভিনন্দন জানান এবং পূর্ববর্তী সভাপতি ক্যামেরুনকে ধন্যবাদ জানান। সূত্র: আরব নিউজ এএস/ এমআর

মার্কিন হামলার দিনে আরেক মোসাদ গুপ্তচরকে ফাঁসিতে ঝুলালো ইরান

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে ফাঁসি দিয়েছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের দশম দিনে এ ফাঁসি কার্যকর হলো। ইরানের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজান অনলাইনের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, ‘সম্পূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে মজিদ মোসাইবি নামের ওই ব্যক্তিকে আজ সকালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তিনি মোসাদকে সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করেছিলেন।’ গত ১৬ জুন ইসমাইল ফকরি নামের আরেক মোসাদ গুপ্তচরের ফাঁসি কার্যকর করে ইরান। ইরানের বিচারবিভাগ-সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা মিজান অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ইরানের সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখায় ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থার এক ‘ছদ্মবেশী এজেন্টের’ ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ইরানে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো। গত ১৩ জুন ইসরায়েলি হামলার পর থেকে ইরান একাধিক ব্যক্তিকে ইসরায়েলের হয়ে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।

ব্রাজিলে গরম বাতাসের বেলুন দুর্ঘটনা, নিহত ৮

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের সান্তা ক্যাটারিনায় প্রাইয়া গ্রান্দে শহরে গরম বায়ুর বেলুন দুর্ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার(২১ শে জুন) ভোরে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতদের মধ্যে দুটি দম্পতি, এক মা-মেয়ে, একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং একজন ফিগার স্কেটার রয়েছেন। রাজ্যের গভর্নর জর্জিনহো মেলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্স'- পোস্টে এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, দুর্ঘটনার সময় বেলুনটিতে মোট ২১ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ৮ জন মারা গেছেন এবং ১৩ জন বেঁচে গেছেন। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বেলুনের ঝুড়ির মধ্যে আগুন লাগার পর পাইলট সেটি নিচে নামানোর চেষ্টা করেন। বেলুন মাটির কাছাকাছি এলে পাইলট যাত্রীদের লাফ দিতে বলেন। তবে অনেক যাত্রী লাফ দিতে না পারায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং অতিরিক্ত ওজনের কারণে বেলুনটি আবার ওপরে উঠে যায়। পরে ভারসাম্য হারিয়ে সেটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। বেলুনটির পরিচালনা করা পর্যটন প্রতিষ্ঠান ‘সোব্রেভোয়ার সার্ভিসোস তুরিস্তিকোস’ জানায়, দুর্ঘটনার পর তাদের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তারা জাতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (এএনএসি)-এর সব নিয়ম মানত এবং তাদের অতীতে কোনো দুর্ঘটনার রেকর্ড ছিল না। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, “অভিজ্ঞ পাইলট সব নিয়ম অনুসরণ করা স্বত্তেও আমরা এই ঘটনার শিকার হয়েছি। চীনে সরকারি সফরে থাকা গভর্নর মেলো এক ভিডিও বার্তায় জানান, দুর্ঘটনার পর রাজ্যের সব উদ্ধার ও সহায়তা সংস্থাকে এগিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনায় “আমরা শোকাহত। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে থাকা।” ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও, নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “ফেডারেল সরকার তাদের পাশে আছে”। সূত্র: বিবিসি এএস/এমআর

ইরানে হামলার ঘোষণার পরই অচল ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে ইরানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি বিশ্বজুড়ে অচল হয়ে পড়ে। স্থানীয় সময় শনিবার রাত ৮টার দিকে এই বিভ্রাট শুরু হয়, যা চলে অনেকক্ষণ। তবে এখন আবার স্বাভাবিকভাবে চলছে প্ল্যাটফর্মটি। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৭টা ৪৬ মিনিটে ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরদো, নাতান্‌জ ও ইস্পাহানে অত্যন্ত সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।’ এই ঘোষণার ঠিক সাত মিনিট পর ৭টা ৫৩ মিনিটে ট্রাম্পের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটির একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। এরপর স্থানীয় সময় রাত ৮টার পর থেকে ট্রুথ ব্যবহার করতে গিয়ে বিশ্বব্যাপী বহু ব্যবহারকারী সমস্যার মুখে পড়েন। অনেকেই ‘নেটওয়ার্ক ফেইলড’ বা ‘প্লিজ ট্রাই অ্যাগেইন’ বার্তা দেখতে পান। প্রযুক্তি ত্রুটি শনাক্তকারী সাইট ডাউনটেকারও রাত ৮টার দিকে ট্রুথ সোশ্যালের অচল হয়ে পড়ার অনেক রিপোর্ট পায়। ব্লুস্কাই অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা নেটব্লকস জানায়, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ট্রুথ সোশ্যাল আন্তর্জাতিকভাবে অনেক ব্যবহারকারীর জন্য অচল হয়ে পড়েছে। এ ঘটনা দেশীয় পর্যায়ে কোনো ইন্টারনেট ব্লক বা ফিল্টারিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ এদিকে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন ও ইরানি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ফোরদো, নাতান্‌জে বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে হামলার ফলে ওই স্থাপনাগুলোর বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গত বুধবার কিছু ব্যবহারকারীকে ইমেইল পাঠিয়ে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছিল ট্রুথ সোশ্যাল। সেখানে লেখা ছিল, ‘যদি আপনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পকে ট্রুথ সোশ্যালে অনুসরণ না করেন, তবে আপনি আজকের বিশ্ব পরিস্থিতি বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস মিস করছেন।’ প্রসঙ্গত, ইসরায়েল গত ১৩ জুন প্রথম ইরানে বিমান হামলা শুরু করে। এরপর থেকে দু দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। এদিকে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট জানিয়েছেন, ট্রাম্প শনিবার রাত ১০টায় একটি টেলিভিশন ভাষণ দেবেন। তথ্যসূত্র:ওয়্যারড

ইরানের ফোর্দোতে ছয়টি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ তথ্য জানিয়েছেন। এর মধ্যে ইরানের অত্যন্ত সুরক্ষিত ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে ছয়টি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের এক উপস্থাপকের বরাত দিয়ে রোববার (২২ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল। ফক্স নিউজের জনপ্রিয় উপস্থাপক শন হ্যানিটি জানিয়েছেন, তিনি সদ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন, ইরানের পাহাড়ের নিচে থাকা গোপন ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করেছে। এর আগে ধারণা করা হচ্ছিল, এই দৃঢ় সুরক্ষিত স্থাপনাটি ধ্বংস করতে হয়তো দুটি বাঙ্কার-বাস্টার বোমা যথেষ্ট হবে। কিন্তু ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, বাস্তবে প্রয়োজন হয়েছে ছয়টি। হ্যানিটি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন থেকে ৩০টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোঁড়া হয়। সাবমেরিনগুলোর অবস্থান ছিল প্রায় ৪০০ মাইল দূরে। এর আগে ইসরায়েল দাবি করেছিল, গত ১৩ জুন ইরানে চালানো তাদের প্রথম হামলায় নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনাটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত, ফোর্দো ও নাতাঞ্জ— এই দুটি পারমাণবিক কেন্দ্র ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বহুদিন ধরে এই দুটি কেন্দ্রকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূলভিত্তি হিসেবে দেখে আসছে। আর বাঙ্কার-বাস্টার বোমা হলো এমন একধরনের শক্তিশালী অস্ত্র যা মাটির নিচে বা পাহাড়ের নিচে থাকা কংক্রিট সুরক্ষিত ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চাননা যুক্তরাষ্ট্র

২০১৯ সালের ৩০ শে জুন দক্ষিণ কোরিয়ার পানমুনজমে অবস্থিত ডিমিলিটারাইজড জোনে (ডিএমজেড) এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একসঙ্গে ছবি তোলেন। ছবিটি তখন থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। তৎকালীন সময়ের ঘটনা ঘিরে এখন অনেকেই মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন হয়তো এখন নিজের কৌশলের সফলতা নিয়ে সন্তুষ্ট। কারণ, উত্তর কোরিয়া যখন মহাদেশীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামরিক হামলার কথা বিবেচনা করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি কূটনীতির পথ বেছে নেন। এই ঘটনার পর থেকে অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো দেশকে আক্রমণ করতে চায় না যার পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে এবং যে দেশগুলো তার কার্যকারিতাও প্রমাণ করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৫ সালে ইরান পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ত্যাগ করে। এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড চলতি বছরের মার্চে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না। তবে,সাম্প্রতিক বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নটি সামনে এসেছে—পারমাণবিক অস্ত্রই কি একমাত্র উপায় যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টিকে থাকার। সূত্র বিবিসি এএস/ এমআর

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়ে বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে: আন্তোনিও গুতেরেস

ইরান ও ইসরায়েল সংঘাতের বিষয় ও আরও নানা যুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার কথা বলে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বজুড়েই বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে। শনিবার (২১ জুন) রাতে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক মাধ্যম এক্সে এই মন্তব্য করেন তিনি। জাতিসংঘও ইরানে হামলার প্রতি তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এই সংঘাত "বিপজ্জনক বৃদ্ধি" বলে অভিহিত করে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন যে "এখন ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি রয়েছে যে এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে - যার ফলে বেসামরিক নাগরিক, অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি হতে পারে"। তিনি এক্সের এক পোস্টে আরও বলেন: "এই বিপদজনক সময়ে, বিশৃঙ্খলার ক্রমবর্ধমান রূপ এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কোনও সামরিক সমাধান নেই। এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ হল কূটনীতি। একমাত্র আশা হল শান্তি।" অন্যদিকে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রকে ফের হুঁশিয়ার করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ি। এই নেতার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে বুধবার (১৮ জুন) টেলিভিশনে দেয়া তার বক্তব্য আবারও শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে জড়ায়, তাহলে তা হবে তাদের নিজেদের ক্ষতির জন্য। সূত্র: বিবিসি /এমআর

ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার রাতে তিনি জানিয়েছেন, তার দেশ ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলা সম্পন্ন করেছে। স্থাপনাগুলো হলো ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানে চালানো এ হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান অংশ নিয়েছে। ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে—খুবই সফলভাবে হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে।’

তিন পারমাণবিক স্থাপনায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছিল না: ইরান

ইরানের যে তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলার কথা বলছে, সেখানে এমন কোনো পদার্থ নেই যা তেজস্ক্রিয়তা সৃষ্টি করে। খবর আল-জাজিরার। ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থার এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা। ওই কর্মকর্তার মন্তব্য থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ইরানি কর্তৃপক্ষ বোমা হামলার আগেই হয়তো ওই স্থাপনাগুলো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় উপাদান সরিয়ে ফেলেছিল। এদিকে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, সামরিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশজুড়ে জনসাধারণের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ আরও কঠোর করা হয়েছে। এটি ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে নেওয়া পদক্ষেপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইরানের বোমা হামলার পর যা বললেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা করেছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প এই হামলাগুলোকে একটি ‘দর্শনীয় সামরিক সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গেছে। তিনি বলেছেন ইরানকে ‘এখন শান্তি স্থাপন করতে হবে। যদি তারা তা না করে, তাহলে ভবিষ্যতের হামলাগুলো আরও অনেক বড় এবং অনেক সহজ হবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আরও অনেক লক্ষ্য বাকি আছে...যদি দ্রুত শান্তি না আসে, তাহলে আমরা সেই লক্ষ্যগুলোতে নির্ভুলতা, গতি এবং দক্ষতার সঙ্গে আঘাত হানব।’ ট্রাম্প বলেন, ‘এটা চলতে পারে না। হয় শান্তি আসবে অথবা ইরানের জন্য মর্মান্তিক পরিণতি হবে, যা গত আট দিনে আমরা যা দেখেছি তার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ হবে।’ ইসরায়েল বড় ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ‘একটি টিম হিসাবে কাজ করেছে’ এবং ‘ইসরায়েলের প্রতি এই ভয়ানক হুমকি মুছে ফেলার জন্য অনেক দূর এগিয়েছে।’ মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এড়ানোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ট্রাম্প এই হামলাকে তাঁর প্রথম মেয়াদে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেইমানির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় (১২ জিএমটি) একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন।

এবার আল আকসায় হামলার পরিকল্পনা ইসরায়েলের?

ইরানে ইসরায়েলি হামলার পর যুদ্ধকে বৈধতা দিতে একের পর এক ন্যারেটিভ গড়ছে তেল আবিব। শুরুতে বলা হয়েছিল, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় দাবি করা হয়, ইরানের ইসলামিক শাসনব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করাই ছিল হামলার উদ্দেশ্য। সর্বশেষ, ইসরায়েলের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা সরাসরি হুমকি দিয়েছেন- তেহরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে হত্যা করা হবে। এই উত্তপ্ত ও বিপজ্জনক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখন প্রশ্ন উঠছে- ইসরায়েল কি আল-আকসা মসজিদে হামলা চালিয়ে তার দায় ইরানের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চায়? ইরান যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, তখন জেরুজালেমের দখলকৃত পূর্ব অংশে থাকা ফিলিস্তিনিরা আতঙ্কিত দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। মিসাইলগুলো সরাসরি তাদের দিকে না গেলেও, তা ছিল যথেষ্ট কাছাকাছি। এই পটভূমিতে নতুন করে সামনে এসেছে বহু পুরোনো এক সন্দেহ : আল আকসা কি হতে যাচ্ছে আরেকটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের’ লক্ষ্যবস্তু? তুরস্কের বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহিদে তুবা কোর সতর্ক করে বলেছেন, এই মুহূর্তটি ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। তারা চাইলে মোসাদের মাধ্যমে এমন একটি হামলা ঘটাতে পারে যাতে দোষ চাপানো যায় ইরানের ঘাড়ে। তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি নেতাদের বক্তব্যে বাইবেলীয় ভাষ্য এবং ধর্মীয় উন্মাদনা যেভাবে জায়গা করে নিচ্ছে, তাতে বোঝা যায়- গাজার অভিযানের পেছনে রাজনৈতিক নয়, বরং ধর্মীয় ও মতাদর্শিক উদ্দেশ্য রয়েছে। উল্লেখ্য, আল আকসা মসজিদ, যা মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান, তেল আবিব থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ দূরত্বকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, যুদ্ধের কুয়াশায় ঢাকা এমন সময় একটি হামলা হতে পারে ইসরায়েলের বহু দিনের পরিকল্পনার অংশ- একদিকে ইরানকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করা, অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়ে পবিত্র স্থাপনাটির ধ্বংসযজ্ঞ চালানো। সাম্প্রতিক একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, কট্টর ইহুদি ধর্মীয় নেতা রাবাই ইউসেফ মিজরাচি বলেন, আমি হলে আল-আকসায় বোমা ফেলতাম আর দোষ দিতাম ইরানের ওপর। ইতিহাসবিদ জাকারিয়া কুরসুন বলেন, এটা হবে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো। একদিকে মুসলিম বিশ্বে সুন্নি-শিয়া বিভাজনকে বাড়ানো হবে, অন্যদিকে আল আকসা ধ্বংসের জন্য মানসিকভাবে মুসলমানদের প্রস্তুত করা হবে। আল আকসা মসজিদ ঘিরে ইসরায়েলের পরিকল্পনা নতুন নয়। ‘টেম্পল মাউন্ট মুভমেন্ট’ -এর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ইসরায়েল সরকার সহযোগিতা করে আসছে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো আল আকসা এবং ডোম অব দ্য রক গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে একটি ইহুদি উপাসনালয় গড়ে তোলা। ২০১৮ সালে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেতজ এক অনুসন্ধানে জানায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ পরামর্শক কেনেথ আবরামোভিৎজ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী এলি বেন-দাহান এই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিলেন। ২০২২ সালে ‘টেম্পল ইনস্টিটিউট’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘লাল গরু’ আমদানি করে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই লাল গরুর ছাই ব্যবহার করেই নতুন উপাসনালয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। বিশ্লেষক কোর বলেন, ‘উপাসনালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন শুধু আল আকসা ধ্বংস ও ধর্মীয় আচার শুরুর অপেক্ষা।’ ১৯৬৯ সালে এক অস্ট্রেলীয় খ্রিস্টান আল আকসা মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। সালাহউদ্দিনের নির্মিত ঐতিহাসিক মিনার সে হামলায় ধ্বংস হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ইসরায়েলি আদালত হামলাকারীকে মানসিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশে পাঠিয়ে দেয়, যার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ ছিল। ১৯৯৪ সালে হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদে এক ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী গুলি চালিয়ে ২৯ ফিলিস্তিনি মুসল্লিকে হত্যা করে। এরপরই ইসরায়েল পুরো মসজিদ এলাকা দুই ভাগ করে ৬৩ শতাংশ ইহুদিদের জন্য বরাদ্দ করে। ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করলেও আল আকসার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি ইসরায়েল। এই অসম্পূর্ণতা বহু দিন ধরেই তেল আবিবের একটি গভীর হতাশার কারণ। বিশ্লেষক কোরের মতে, ‘ইসরায়েল যা করতে চায়, তার পরিকল্পনা বহু আগে করে এবং ধৈর্যের সঙ্গে অপেক্ষা করে। যুদ্ধ, বিশ্ব রাজনীতির জটিলতা ও মুসলিম বিশ্বের ভাঙন এখন তাদের সেই সুযোগ এনে দিয়েছে।’ বর্তমান যুদ্ধময় মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিটি আঘাত এবং প্রতিক্রিয়া একটি গভীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বহন করছে। আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল যদি সত্যিই কোনো কৌশলগত ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ হামলার পথে হাঁটে, তবে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো- বিশ্ব কি সেই ঝড়ের জন্য প্রস্তুত? সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড

তিন ধর্মীয় নেতাকে উত্তরসূরি নির্ধারণ করেছেন খামেনি: নিউইয়র্ক টাইমস

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তার উত্তরসূরি হিসেবে তিনজন জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাকে নির্বাচন করেছেন বলে এক প্রতিবেতনে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বোচ্চ নেতা জানেন যে ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে হত্যার চেষ্টা করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে তিনি একটি অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ নেতা নিয়োগের দায়িত্বে থাকা ধর্মীয় সংস্থা, অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টসকে প্রস্তাবিত তিনটি নাম থেকে দ্রুত তার উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। ইরানে একজন নতুন সর্বোচ্চ নেতা নিয়োগের প্রক্রিয়াটি সাধারণত কয়েক মাস ধরে চলে। ধর্মগুরুরা তাদের নিজস্ব তালিকা থেকে নাম বেছে নেন। কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু দেশটি এখন যুদ্ধে লিপ্ত, তাই খামেনি চান ‘তার উত্তরাধিকার ঠিক রাখতে এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দ্রুত এবং সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি নিশ্চিত করতে’। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতার সম্ভাব্য উত্তরসূরি প্রার্থীদের মধ্যে খামেনির ছেলে মোজতাবা নেই।

ইসরায়েল যা করছে ইরানে, তা পুরোপুরি গুন্ডামি : এরদোয়ান

মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তোলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। শনিবার (২১ জুন) ইস্তাম্বুলে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) ৫১তম অধিবেশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এই মন্তব্য করেন। খবর টিআরটি গ্লোবাল। ইসরায়েল এখন কেবল দখলদার নয়, বরং পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়ানোর নীলনকশা নিয়েই এগোচ্ছে উল্লেখ করে এরদোয়ান স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ইরানে ইসরায়েল যা করছে, তা পুরোপুরি গুন্ডামি। তার মতে, এই আগ্রাসন কোনো সামরিক কৌশল নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উদাহরণ। এরদোয়ান বলেন, নেতানিয়াহুর সরকার আঞ্চলিক শান্তির সবচেয়ে বড় বাধা। তারা হাসপাতাল, মসজিদ, গির্জা, স্কুলসহ বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, যেখানে শিশু ও নারীসহ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পরিস্থিতিকে নাৎসি বাহিনীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের চেয়েও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করে এরদোয়ান বলেন, নেতানিয়াহু যে জাতিবিদ্বেষী স্বপ্ন দেখছে, তা কেবল বিশ্বকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে- এতে কারও কোনো লাভ নেই। এরদোয়ান ১৩ জুন ইরানে চালানো ইসরায়েলি হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ হিসেবে আখ্যা দেন। বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক আলোচনায় কূটনৈতিক পথ বন্ধ করে দিতে চায়। একদিকে ইসরায়েল নিজের পারমাণবিক সক্ষমতা লুকিয়ে রাখছে, অন্যদিকে অন্যদের বাধা দিচ্ছে- এটাই সবচেয়ে বড় ভণ্ডামি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, নেতানিয়াহুর সরকার ও তার হত্যাকারী বাহিনী কূটনীতির কোনো পথ খোলা রাখতে চায় না। তারা কেবল আগ্রাসন ও ধ্বংসের পথে চলছে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, ইসরায়েলের উসকানিমূলক বক্তব্য ও হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। এরদোয়ানের এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েল একাধিক মুসলিমপ্রধান দেশ যেমন লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং সর্বশেষ ইরানে সামরিক হামলা চালিয়েছে, যা পুরো অঞ্চলকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে।

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের আরও এক কমান্ডার নিহত

ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)-এর অভিযানে ইরানের সামরিক বাহিনীর আরও এক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। নিহত কমান্ডারের নাম সাঈদ ইজাদি এবং তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার ছিলেন। শুক্রবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান অভিযানে নিহত হয়েছেন তিনি। ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)-এর কুদস ফোর্স প্যালেস্টাইন কর্পস বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ ইজাদির নিহতের সংবাদ নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়া’আল জামির। এক বিবৃতিতে ইয়া’আল জামির বলেন, “সাঈদ ইজাদি ছিলেন আইআরজিসির কুদস ফোর্স প্যালেস্টাইনিয়ান কর্পস ইউনিটের প্রধান। তার মূল কাজ ছিল গাজায় হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং গোষ্ঠীটির সামরিক বিভাগের প্রধঅন মোহাম্মদ দেইফের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং তাদের নির্দেশনা দেওয়া।” “২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল হামাস, সেটির পরিকল্পনাকারী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন সাঈদ ইজাদি। তার হাতে হাজার হাজার ইসরালির রক্ত লেগে আছে।” প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান অভিযানে এই নিয়ে এ পর্যন্ত আইআরজিএসের তিন জন কমান্ডারের নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেল। বাকি দুই জন হলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন পৌর যোধি এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বেনহাম শারিয়ারি।

ইসরায়েল এই অঞ্চলকে সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শুরু হয়েছে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচিও এই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন। যিনি শুক্রবার (২০ জুন) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথেও বৈঠকে করেছেন। ইসলামী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সতর্ক করে বলেছেন, ইরানের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ এই অঞ্চলকে সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিশ্বশক্তিগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মুসলিম দেশগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানকে সমর্থন করার আহ্বান জানান ফিদান। তিনি বলেন, গাজায় হামলার পাশাপাশি লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং এখন ইরানে হামলার পর এই অঞ্চলটি ইসরায়েল সমস্যার মুখোমুখি। সূত্র: বিবিসি

ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা: এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন পরমাণু আলোচনার ঠিক আগে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্য হলো ‘আলোচনাকে নস্যাতের’ চেষ্টা। তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক কূটনৈতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি। এসময় তিনি ইসরায়েলের হামলাকে "সরাসরি ডাকাতি" উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান এবং অভিযোগ করেন যে দেশটি মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, নেতানিয়াহু সরকার প্রমাণ করছে যে তারা ‘এই অঞ্চলে শান্তির পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা।’ এরদোয়ান বলেন, ‘১৩ জুনের হামলার মাধ্যমে নেতানিয়াহু সরকারের আসলে লক্ষ্য ছিল আলোচনা প্রক্রিয়াকে দুর্বল করা।’

সংঘাতে মার্কিন সম্পৃক্ততা হবে খুবই বিপজ্জনক: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, আমাদের জনগণের ওপর যখন বোমা হামলা করা হচ্ছে তখন আমরা আলোচনায় যেতে পারি না। তিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই আগ্রাসনে প্রথম দিন থেকেই যুক্ত আছে। যদিও এই দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি। ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ‘খুবই বিপজ্জনক’ হবে বলে সতর্ক করেছেন আরাঘচি। যদিও ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে, কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছেন। অবশ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সপ্তাহের শুরুতে ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ইরান যদি তার পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে রাজি হয়, তাহলে তিনি হামলা থেকে বিরত থাকবেন বলেও জানিয়েছেন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানের পথ খুঁজতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আরাঘচি আরও বলেন, কূটনীতি অতীতেও কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতেও কাজ করতে পারে। তবে কূটনীতিতে ফিরে আসতে হলে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। সূত্র: বিবিসি

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ দিয়েছেন গ্যাবার্ড: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার এয়ার ফোর্স ওয়ানের পাশে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য তার কাছে আছে কিনা, অথচ তার গোয়েন্দা সংস্থা আগেই বলেছে যে, তাদের কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। ট্রাম্প জবাব দেন, ‘তা হলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল। গোয়েন্দা সংস্থায় কে এটা বলেছে?’ সাংবাদিক বলেন, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড। ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গে বলেন, ‘তিনি ভুল বলেছেন।’ গত মার্চ মাসে গ্যাবার্ড কংগ্রেসকে বলেছিলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে; ইরান ২০০৩ সালে স্থগিত করা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি আবার শুরু করেনি। যদিও তখন ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপাদান ইউরেনিয়ামের মজুদ সর্বোচ্চ সমৃদ্ধ পর্যায়ে ছিল।

পরমাণু প্রযুক্তিতে ইরানকে সহায়তায় প্রস্তুত রাশিয়া: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইরান যদি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তাতে রাশিয়ার কোনো আপত্তি নেই। বরং রাশিয়া তাতে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত। খবর আনাদুলুর। একটি সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র বানাতে চায় এমন কোনো প্রমাণ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এখন পর্যন্ত পায়নি। তিনি উল্লেখ করেন, ইরানে পারমাণবিক অস্ত্র হারাম বলে ধর্মীয় ফতোয়া জারি রয়েছে, যা বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে দেয়। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া সবসময় পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের বিরুদ্ধে এবং কোনো দেশ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করতে চায়। ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এতে উভয় দেশে প্রাণহানি হয়েছে শতাধিক মানুষের। এই উত্তেজনার মধ্যে পুতিনের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিতে সমর্থনের ঘোষণা ইরানের পক্ষে একটি বড় কূটনৈতিক সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে এই বার্তা ইরানকে কিছুটা কৌশলগত সুবিধা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইরানে ব্যাপক হামলা, ৫ বিপ্লবী গার্ড নিহত

ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ বিপ্লবী গার্ড নিহত হয়েছেন। ইরানি মিডিয়ার বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানি বিপ্লবী গার্ড জানিয়েছে, শনিবার (২১ জুন) খোরামাবাদ শহরে ইসরায়েলি হামলায় তাদের পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন। শহরটিতে ব্যাপক হামলা চালিয়ে বহু স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে দখলদার বাহিনী। এর আগে শীর্ষ দুই কমান্ডারের নিহতের খবর আসে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) ড্রোন ইউনিটের দ্বিতীয় কমান্ডারও নিহত হয়েছেন। প্রধান নিহতের পর তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ইসরায়েলে ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, আইআরজিসির মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী যান (ইউএভি) ইউনিটের নতুন কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো কমান্ডারকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে আমিন পুর জোদখি নামে পরিচিত কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ কমান্ডার ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ইসরায়েলের দিকে শত শত ইউএভি ড্রোন উৎক্ষেপণের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া শনিবার (২১ জুন) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ইরানের কুদস ফোর্সের ফিলিস্তিনি কর্পসের কমান্ডার সাইদ ইজাদি ইরানের কোম শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলায় নিহত হয়েছেন। ইজাদির মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে কাটজ আরও বলেন, ৭ অক্টোবরের গণহত্যার সংঘটনে হামাসকে অর্থায়ন এবং অস্ত্র দিয়েছিলেন ইজাদি। তার নিহত হওয়া ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও বিমানবাহিনীর জন্য একটি বিশাল অর্জন। খুন ও অপহৃতদের জন্য ন্যায়বিচার। ইসরায়েলের দীর্ঘ হাত তার সব শত্রুর কাছে পৌঁছাবে।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি পুতিনের

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার মতে, এ দুটি অঞ্চল এখন মারাত্মক সংঘর্ষের সম্ভাব্য কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। শুক্রবার (২০ জুন) সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের (এসপিআইইএফ) মূল অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে পুতিন এ হুঁশিয়ারি দেন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সংঘর্ষের বিপুল আশংকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা বৈশ্বিক যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। সব সংকটেরই শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়া উচিত’। তিনি ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই জোট বারবার রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করছে। এটি পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদী নীতির আরেকটি রূপমাত্র’। পুতিন এ সময় দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক স্থাপনায় রুশ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করবে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রসঙ্গে পুতিন বলেন, ‘ইসরায়েল যদি সত্যিই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার কথা বিবেচনা করে থাকে, তবে আমি আশা করি এটি কেবল কথার কথা হিসেবেই থাকবে’। এর আগে রুশ প্রেসসচিব দিমিত্রি পেসকভ সেন্ট পিটার্সবার্গের কনস্টান্টিন প্রাসাদে স্কাই নিউজ-কে বলেন, ‘ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা যারা বলছে, তারা যেন মনে রাখে এটা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এতে দেশটিতে চরমপন্থার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে’। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘যারা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করার কথা বলছে, তারা যেন মনে রাখে তাতে তারা এক ভয়ংকর প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে’। সূত্র: ডেইলি সাবাহ

ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ

ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে। এতে ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে ওই এলাকা। শনিবার (২১ জুন) দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় কোনো বিপজ্জনক পদার্থ ছড়িয়ে (লিকেজ) পড়েনি। এ ঘটনায় আইডিএফের কোনো মন্তব্য এখনো নেই। ইরানের ফারস সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনা ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। তবে কোনো বিপজ্জনক পদার্থের ভান্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বর্তমান যুদ্ধের সময় ইসরায়েল পারমাণবিক স্থাপনাটিতে আগেও আক্রমণ করেছিল। কয়েকটি সূত্র জানায়, আজ সকালে ইসফাহানে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। সেখানকার ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এর বেশি কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের (আইআরজিসি) ড্রোন ইউনিটের দ্বিতীয় কমান্ডারও নিহত হয়েছেন। প্রধান নিহতের পর তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ইসরায়েলে ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো কমান্ডারকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে আমিন পুর জোদখি নামে পরিচিত কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ কমান্ডার ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ইসরায়েলের দিকে শত শত ইউএভি ড্রোন উৎক্ষেপণের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছিলেন।