
এবার জেলেনস্কিকে ‘ভালো মানুষ’ বললেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন। দুই নেতার আলোচনার বিষয়বস্তু হবে ইউক্রেনের চলমান সংকট এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমরা স্বাভাবিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। উনার (জেলেনস্কির) সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব। এ সময় জেলেনস্কিকে ‘ভালো মানুষ’ বলে অভিহিত করে ট্রাম্প জানান, তাদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আগে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হলেও তিনি ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে সম্মান করেন। উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে দুই নেতার বৈঠক নির্ধারিত থাকলেও ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তড়িঘড়ি করে হোয়াইট হাউসে ফিরে যান ট্রাম্প। ফলে সেই বৈঠক বাতিল হয়ে যায়। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ, সামরিক সহায়তা, এবং রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই বলেছেন, তিনি ইউক্রেন ইস্যুতে ‘বিস্তৃত ও কার্যকর সমাধান’ খুঁজে বের করতে চান। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য একসময় চিৎকার-চ্যাঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। ‘জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন’ দাবি করে ট্রাম্প বলেন, ‘মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই।’ রাশিয়ার সঙ্গে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে ট্রাম্পের পূর্বসূরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েক শ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন; কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। জেলেনস্কির সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি।

কাতারের আমিরের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
কাতারের ভূখণ্ডে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে গত সোমবারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির কাছে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। কাতার আমিরের দপ্তর (দিওয়ান) থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার টেলিফোনে কথা বলেছেন দুই নেতা। এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘হামলার লক্ষ্যবস্তু কাতার বা দেশটির জনগণ ছিল না। বরং কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে। এটা উপসাগরীয় দেশটির (কাতার) জন্য কোনো হুমকি নয়।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ফোনালাপে ইরানের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেছেন, একটি প্রতিবেশী ও মুসলিম দেশ হিসেবে কাতারের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক রয়ে যাবে। পেজেশকিয়ান আশা করেন, দুই দেশের সম্পর্ক সর্বদা সার্বভৌমত্ব আর সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণের নীতির ওপর ভিত্তি করে বজায় থাকবে। গত সোমবার কাতারের ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। মধ্যপ্রাচ্যে এটাই সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কাতারের প্রতিরক্ষা বাহিনী ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্ক্রিয় করে। আল জাজিরা

ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে আরো তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটির বিচার বিভাগের অধীনস্থ সংবাদ সংস্থা মিজান এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্তরা শুধু গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গেই জড়িত ছিলেন না, বরং তারা দেশটিতে ‘হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য’ সরঞ্জাম পাচারের চেষ্টাও করেছেন। মিজান সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ইদ্রিস আলি, আজাদ শোজাই এবং রাসুল আহমাদ রাসুল। তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনা হয় এবং আদালতের রায় অনুযায়ী তাদের দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়।এদিকে, ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক ১২ দিনের সংঘাত চলাকালীন সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আরও ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্র-সমর্থিত সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ। ইরানি কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের নিরাপত্তা রক্ষা ও বৈদেশিক হুমকি মোকাবিলায় তারা কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং দেশদ্রোহিতার মতো গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে শাস্তি অব্যাহত থাকবে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াল ভারত-চীন-রাশিয়া জোট
ভারত-চীন-রাশিয়া নেতৃত্বাধীন জোট-ব্রিকস ইরানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এ জোট। খবর আলজাজিরার। ব্রাজিল, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, রাশিয়াসহ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর একটি জোট ব্রিকস। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা। মঙ্গলবার (২৪ জুন) ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর জারি করা এক বিবৃতিতে, ব্রিকস ইরানের “শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা”গুলোতে হামলার সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করে হামলা পরিচালিত হয়েছে। জোটটি যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে কূটনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ‘পরিস্থিতি উত্তেজনামুক্ত করার এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মতভেদ নিরসনের লক্ষ্যে আলোচনার বিকল্প নেই।’ ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও ব্রিকস সদস্য। জোটের মতে, সংলাপের মাধ্যমে ‘হিংসার চক্র ভাঙা এবং শান্তি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন’ রয়েছে।

হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি: মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালালেও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির মূল অংশ ধ্বংস হয়নি বলে প্রাথমিক এক মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়েছে। এতে কর্মসূচিটি কয়েক মাসের জন্য পেছানো হয়েছে মাত্র। বুধবার এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। সিএনএন বলছে, সাতটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এই মূল্যায়ন এর আগে প্রকাশিত হয়নি। এই মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের যুদ্ধপরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস” করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা “মুছে ফেলা হয়েছে।” কিন্তু প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) প্রাথমিক মূল্যায়ন সেই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে। দুই সূত্র জানায়, ইরানের মজুতকৃত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধ্বংস হয়নি এবং বেশিরভাগ সেন্ট্রিফিউজ এখনও অক্ষত রয়েছে। একটি সূত্র জানায়, হামলার আগে ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। ডিআইএ-এর মূল্যায়নে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরানকে কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে পেরেছে, সর্বোচ্চ।” হোয়াইট হাউজ এই মূল্যায়নের অস্তিত্ব স্বীকার করলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট সিএনএনকে বলেন, “এই তথাকথিত মূল্যায়ন সম্পূর্ণ ভুল এবং একটি ‘টপ সিক্রেট’ নথি থেকে ফাঁস হয়েছে। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় ও সাহসী পাইলটদের অবমূল্যায়নের চেষ্টা।” ট্রাম্প, বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে ন্যাটো সম্মেলনে অবস্থান করছেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে সিএনএনের প্রতিবেদনের সমালোচনা করে লিখেছেন, “ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযান… ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস।” মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, অপারেশনটি পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে এবং “সম্পূর্ণ সফল” ছিল। তবে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। বিশেষজ্ঞ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানের যে তিনটি কেন্দ্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, সেগুলোর নিচের স্তরের স্থাপনাগুলোর কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি। আঘাত হয়েছে মূলত উপরের কাঠামো, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও ইউরেনিয়ামকে অস্ত্রোপযোগী ধাতুতে রূপান্তরের সুবিধাগুলোর ওপর। ইসরায়েলি মূল্যায়নেও ফোরদোতে প্রত্যাশিত পরিমাণ ক্ষতি হয়নি বলে জানানো হয়েছে। তবে তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে অন্তত দুই বছরের জন্য থামিয়ে দিয়েছে— যদি ইরান পুনর্গঠনের সুযোগ পায়, যা তারা দেবে না। অন্যদিকে, পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ জেফ্রি লুইস স্যাটেলাইট চিত্র পর্যালোচনা করে জানান, “ফোরদো, ইসফাহান ও পারচিনসহ বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থাপনা এখনও অক্ষত রয়েছে, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির দ্রুত পুনর্গঠনে সহায়ক হতে পারে।” এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভায় নির্ধারিত ক্লাসিফায়েড ব্রিফিং হঠাৎ করেই স্থগিত করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান প্যাট রায়ান এক্স-এ বলেন, “ট্রাম্প কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই হাউজের ব্রিফিং বাতিল করেছেন। কারণ— তিনি জানেন, তার দাবি বাস্তবে টিকে না।” যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমাগুলো, বিশেষ করে ফোরদো ও ইসফাহানের গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় আঘাত হানতে কতটা কার্যকর, তা নিয়েও বহুদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি ইসফাহানে ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ বোমা সেখানে কার্যকর নাও হতে পারত। সূত্র আরও জানায়, ইরানে আরও গোপন পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে, যেগুলো এই হামলার টার্গেট ছিল না এবং এখনও সচল রয়েছে। সূত্র: সিএনএন
.png)
গাজায় ত্রাণ বিতরণে আরও ৩ কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ বিতরণ করা এক বিতর্কিত মানবিক সংস্থাকে ৩ কোটি ডলার দিচ্ছে। এই সংস্থার মাসব্যাপী কার্যক্রম এবং খাবার বিতরণ কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের হতাহতের ঘটনায় ‘কিছু মার্কিন কর্মকর্তার উদ্বেগ’ রয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। চারটি সূত্র ও রয়টার্সের হাতে আসা একটি নথির বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফকে’ কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরাসরি এ সংস্থাকে অর্থ সহায়তা দিল। মার্কিন বেসরকারি সামরিক এবং লজিস্টিকস কোম্পানির মাধ্যমে এই সংস্থা গাজায় ত্রাণ পাঠায় এবং তা তথাকথিত নিরাপদ জায়গায় বিতরণ করা হয়। রয়টার্সের হাতে আসা নথি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি জিএইচএফকে ৩ কোটি ডলারের অনুদান দিয়েছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউস এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘অগ্রাধিকারভিত্তিক নির্দেশনায়’ অনুমোদন করা হয়। এরই মধ্যে ৭০ লাখ ডলারের প্রথম কিস্তি ছাড় করা হয়েছে। দুটি সূত্র জানায়, প্রতি মাসে জিএইচএফ-কে আরও ৩ কোটি ডলারের অনুদান দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করেনি, বরং সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছে। তবে পররাষ্ট্র দপ্তরও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। জিএইচএফ-ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বা মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্বেগ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সূত্র জানায়, জিএইচএফ-কে অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সংস্থাটিকে সাধারণত যে নিরীক্ষার (অডিট) মধ্যে পড়তে হয়, তা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ইউএসএআইডি থেকে প্রথমবার অনুদান পেতে যেসব সংস্থার অর্থনৈতিক কার্যক্রমের খুঁটিনাটি যাচাই করা হয়, জিএইচএফ-এর ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এক সাবেক মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘এমন নিরীক্ষা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ, কখনো মাসখানেকও লেগে যায়।’ সূত্র আরও জানায়, গাজায় যেসব সংস্থা ত্রাণ দেয়, তাদের ক্ষেত্রে চরমপন্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু জিএইচএফ-কে এই অতিরিক্ত যাচাই থেকেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। জিএইচএফ গাজায় মার্কিন লভ্যাংশভিত্তিক লজিস্টিকস প্রতিষ্ঠান ‘সেইফ রিচ সলিউশনসের’ সঙ্গে কাজ করছে। এটি এক সাবেক সিআইএ কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত। পাশাপাশি নিরাপত্তা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাসদস্যদের নিয়ে গড়া প্রতিষ্ঠান ‘ইউজি সলিউশনস।’ এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে জিএইচএফ-কে ৫০ কোটি ডলার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। এই অর্থ ইউএসএআইডি—এর বাজেট থেকেই দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে চারটি সূত্র জানায়, অনেক মার্কিন কর্মকর্তা এ অর্থ সহায়তার বিরোধিতা করেছেন। কারণ, তারা মনে করেন, খাবার বিতরণ কেন্দ্রে সহিংসতা, জিএইচএফ-এর অভিজ্ঞতার ঘাটতি এবং বেসরকারি সামরিক-লজিস্টিকস কোম্পানির সম্পৃক্ততা নিয়ে উদ্বেগ আছে। গত ১৯ মে ইসরায়েল গাজায় ১১ সপ্তাহের ত্রাণ অবরোধ শিথিল করে সীমিত পরিসরে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়। এরপর জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৪০০—এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে জিএইচএফ-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশেই নিহত হয়েছে বেশি। অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ ত্রাণ কর্মকর্তা জনাথন হুইটল গত রোববার বলেন, ‘নিহতদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ বা গোলার আঘাতে মারা গেছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো সামরিকীকৃত অঞ্চল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর বাইরে, ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনি জনতার মধ্যে অনেকেই নিহত হয়েছে। কেউ কেউ আবার সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় হতাহত হয়েছে।’ এ বিষয়ে মঙ্গলবার জিএইচএফ জানায়, তারা এখন পর্যন্ত গাজায় ৪ কোটি খাবার বিতরণ করেছে। তবে জাতিসংঘ এবং অন্য সংস্থাগুলো লুটপাটের কারণে তাদের ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না। জিএইচএফ-এর এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের কোনো ট্রাক লুটপাটের শিকার হয়নি। মূল কথা হলো, আমাদের ত্রাণ নিরাপদে পৌঁছে যাচ্ছে। বাদানুবাদ বা কাদা ছোড়াছুড়ির বদলে আমরা জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাকে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আমন্ত্রণ জানাই, যাতে সবাই মিলে গাজার জনগণকে খাদ্য সরবরাহ করা যায়।’

বাঙ্কার বাস্টারেও ধ্বংস হয়নি ইরানের পরমাণু কেন্দ্র
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)। পেন্টাগনের গোপন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা স্থায়ী নয়। কেবল ৬ থেকে ৯ মাসের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে। বুধবার (২৫ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই গত সপ্তাহে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। পরমাণু স্থাপনাগুলো হলো নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহান। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। তবে পেন্টাগনের এই প্রতিবেদন উঠে এলো নতুন তথ্য। সংস্থাটি জানায়, মাটির নিচে থাকা ইরানের গবেষণা ল্যাব ও সেন্ট্রিফিউজ ইউনিটগুলো আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এগুলোর অধিকাংশই আবার চালু করার মতো অবস্থায় রয়েছে। এ হামলা ইরানের কার্যক্রমে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার আগেই ইরান তাদের অধিকাংশ ইউরেনিয়াম নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়। ফলে স্থায়ী কোনো ক্ষতি হয়নি। এর আগে গত রোববার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, আমরা জানি না, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম বর্তমানে কোথায় রাখা হয়েছে। আমরা আগামী সপ্তাহগুলোতে তা বের করার চেষ্টা করব। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেছেন, আমরা ৪০০ কেজি ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো হিসাব রাখতে পারছি না। অবশ্য মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ দাবি করেন, সফল হামলায় স্থাপনাগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে। তবে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের প্রধান জেনারেল ড্যান কেইন বলেন, তিনটি কেন্দ্রই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, তবে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এমন কথা বলা এখনই সম্ভব নয়। চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনো আসেনি। এদিকে, ডিআইএর প্রতিবেদন ফাঁস হওয়ার পর হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই তথাকথিত প্রতিবেদন ফাঁস করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং আমাদের সাহসী পাইলটদের সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে। হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করলেও কংগ্রেসে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ডেমোক্র্যাট সিনেটররা বলছেন, কোটি কোটি ডলারের সামরিক অভিযান চালিয়ে যদি কেবল সময় কেনা হয়, তবে এটি সামরিক কৌশলের ব্যর্থতা। অন্যদিকে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমরা ভয় পাইনি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা পারমাণবিক প্রকল্প আবার চালু করব। ইরানি কর্মকর্তারা এটিকে রাজনৈতিক শো বলেও মন্তব্য করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কৌশলগত নয়; বরং কূটনৈতিক চাপে রাখার একটি প্রচেষ্টা মাত্র। ভবিষ্যতে যদি ইরান চায়, তবে কয়েক মাসের মধ্যেই তারা পুরোনো সক্ষমতা ফিরে পেতে পারে।

ভারতের সঙ্গে সংলাপে প্রস্তুত পাকিস্তান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মীর, পানি, বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদসহ সকল অনিষ্পন্ন বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপের জন্য ইসলামাবাদ প্রস্তুত। মঙ্গলবার (২৪ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এআরওয়াই নিউজ। মঙ্গলবার এক টেলিফোনালাপে তিনি এ কথা বলেন। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে গভীর সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে দুই নেতা একে অপরের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ সৌদি আরবের অব্যাহত সমর্থনের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিয়েও তাদের মধ্যে মতবিনিময় হয়। ইরান-ইসরাইল সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ বলেন, পাকিস্তান এই সংঘাতের তাৎক্ষণিক নিরসন এবং সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তিনি বলেন, সোমবার রাতে সংঘটিত হামলার আলোকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের প্রতি প্রতিটি পক্ষের শ্রদ্ধাশীল থাকা জরুরি। এ প্রসঙ্গে তিনি সৌদি আরবের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি পাকিস্তানের অকুণ্ঠ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। আলাপচারিতায় শাহবাজ শরিফ পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানান। তিনি সফল হজ আয়োজনের জন্য সৌদি নেতৃত্বকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং পাকিস্তানি হজযাত্রীদের প্রতি সৌজন্যমূলক আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা বিশ্বমঞ্চে সৌদি আরবের নেতৃত্বের পরিচায়ক। তিনি বলেন, সৌদি আরব এক শান্তিপ্রেমী শক্তি হিসেবে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব বহন করছে। জবাবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফোনকলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শাহবাজকে ধন্যবাদ জানান এবং সৌদি আরবের প্রতি পাকিস্তানের সংহতি ও সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সৌদি আরব পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ লক্ষ্যে পাকিস্তানের গঠনমূলক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
.png)
ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় ৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীর অতর্কিত হামলায় গাজা উপত্যকার দক্ষিণে খান ইউনিসে পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছেমিডল ইস্ট মনিটর। অতর্কিত হামলায় একটি সামরিক যানকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়, যার ফলে এতে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলে পাঠানো একটি উদ্ধারকারী দলও দ্বিতীয় হামলায় অতর্কিত হামলার শিকার হয়। স্থানীয় গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গাজার উত্তরে জাবালিয়ায় তিন ইসরায়েলি সেনা নিহত হওয়ার দাবি করেছে আল-কাসসাম ব্রিগেড। অন্যদিকে আল-কুদস ব্রিগেড মধ্য খান ইউনিসে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস দিয়ে একটি ইসরায়েলি সামরিক যান ধ্বংস করার ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমপ্যালিস্টিন ক্রনিকেলেরপ্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-কাসসাম ব্রিগেড বলেছে যে তাদের যোদ্ধারা দক্ষিণ খান ইউনিসে একটি বাড়ির ভিতরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে জটিল অভিযান চালিয়েছে। একটি "ইয়াসিন-১০৫" রকেট এবং একটি আরপিজি নিক্ষেপ করেছে তারা, যার ফলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত নাগাদ পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। ইসরায়েলি বাহিনী এখনও হামলার স্থানের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো মধ্য খান ইউনিসে পাঁচটি বিমান হামলা চালিয়েছে। বোমাবর্ষণের সঙ্গে ছিল বিস্ফোরক ধ্বংসযজ্ঞ, ভারী হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও কামানের গোলাবর্ষণ। ফলে বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আক্রমণে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৬ হাজার ৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন ফিলিস্তিনি।

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীর সংখ্যাই অর্ধশতাধিক। অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার (২৫ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজার অবরুদ্ধ এলাকায় খাদ্য ও সহায়তা সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষদের ওপর আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় কমপক্ষে ৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র। এর মধ্যে ৫৬ জন মারা গেছেন সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে। গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর রাফাহ-তেই ২৭ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যারা খাদ্যের জন্য সহায়তা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন। হতাহতের এই সংখ্যা বিশ্বজুড়ে তীব্র উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। আল জাজিরা বলছে, মঙ্গলবারের এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর তত্ত্বাবধানে স্থাপিত সহায়তা বিতরণ পয়েন্টগুলোর আশপাশে। মূলত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিইএ-এর প্রধান এসব সহায়তা বিতরণ পয়েন্টগুলোকে আখ্যায়িত করেছেন “মৃত্যু ফাঁদ” হিসেবে। বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে সালাহ আল-দীন সড়কে সহায়তা নিতে আসা মানুষের ওপর হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আরও ১৪০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের পাশে আল-আওদা হাসপাতালে মৃতদেহ আনা হচ্ছে। আল-জাজিরার যাচাইকারী সংস্থা সানাদ এই ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এছাড়া খান ইউনুসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। অন্যদিতে গাজা শহরের উত্তরে এবং রাফাহতেও সহায়তা নিতে আসা মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, “আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল, অনেকেই চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা যান।” প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা মানুষজনের কাছে সাহায্যের ট্রাক পৌঁছানোর আগেই গুলি চালায়। আহমেদ হালাওয়া নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “এটা ছিল গণহত্যা। আমরা পালিয়ে যাচ্ছিলাম, এমন সময়েও ট্যাংক ও ড্রোন থেকে গুলি চালানো হচ্ছিল।” ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে এবং দাবি করেছে, সহায়তা কেন্দ্রে “সন্দেহভাজনরা” ঘনিষ্ঠভাবে এগিয়ে এলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, এই গুলিবর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই ঘটে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, “মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে শুধু খাদ্য নেওয়ার চেষ্টা করার জন্য। সহায়তার নামে পরিচালিত এই সামরিকীকৃত বিতরণ ব্যবস্থা মানবিকতার মৌলিক শর্ত পূরণ করে না। এটি একটি ভয়াবহ বাস্তবতা।” তিনি আরও বলেন, “উভয় পক্ষের নেতাদের এখনই রাজনৈতিক সাহস দেখিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ থামানো উচিত।”

ইরানি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, ক্ষতিপূরণ চাইছে হাজার হাজার ইসরায়েলি
টানা ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে সংঘাতের আপাত ইতি ঘটলেও ইরানের হামলায় হওয়া ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ক্ষতিপূরণ চাইছে ইসরায়েলের হাজারো নাগরিক। আর এই ক্ষতিপূরণ দাবির সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজারে পৌঁছে গেছে। বুধবার (২৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ৩৯ হাজার ক্ষতিপূরণ দাবি জমা পড়েছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। ইসরায়েলের জনপ্রিয় পত্রিকা ইয়েদিয়থ আহারোনোথ জানিয়েছে, গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুরু হওয়ার পর দেশটির ট্যাক্স অথরিটির অধীনে থাকা ক্ষতিপূরণ তহবিলে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার ৭০০টি দাবি নিবন্ধিত হয়েছে। এই দাবিগুলোর মধ্যে ভবনের ক্ষতির জন্য ৩০ হাজার ৮০৯টি, যানবাহনের ক্ষতির জন্য ৩ হাজার ৭১৩টি এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রীর ক্ষতির জন্য ৪ হাজার ৮৫টি ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, “অনুমান করা হচ্ছে আরও হাজারো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেগুলোর জন্য এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি জমা দেওয়া হয়নি।” ইসরায়েলের আল্ট্রা-অর্থোডক্স সম্প্রদায়ভিত্তিক ওয়েবসাইট বেহাদরেই হারেদিম জানিয়েছে, কেবল তেল আবিবেই ক্ষতিপূরণের দাবি জমা পড়েছে ২৪ হাজার ৯৩২টি, যা সর্বাধিক। এরপর দক্ষিণাঞ্চলের আশকেলন শহর থেকে জমা পড়েছে ১০ হাজার ৭৯৩টি দাবি। তবে এই বিপুল সংখ্যক দাবির জন্য মোট কত টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে, সে সম্পর্কে এখনো সরকারিভাবে কোনো আর্থিক মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়নি। প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, ইরান নাকি পারমাণবিক বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে, যদিও ইরান দৃঢ়ভাবে এই দাবি অস্বীকার করে আসছে। এর জবাবে ইরানও পাল্টা ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং গত রোববার ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এই টানা ১২ দিনের আকাশযুদ্ধের পরে সোমবার গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ঘোষণায় জানান যে ইসরায়েল ও ইরান যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। এর মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের আপাতত অবসান ঘটানো হয়েছে।

সংঘাতের শেষ দিনে প্রথমবারের মতো প্রাণ গেল ইসরায়েলি সেনার
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে প্রথমবারের মতো জানা গেল ইসরায়েলি সেনা নিহতের খবর। দখলদার দেশটির সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, বিয়ারশেবা অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহতদের মধ্যে কর্তব্যরত অবস্থায় থাকা একজন সৈনিকও রয়েছেন। মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকালে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ওই সেনা সদস্যা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। দুইদেশের যুদ্ধবিরতির আগ দিয়ে হামলাটি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েলের দাবি, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এ হামলা চালায় তেহরান। যদিও ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগেই ইসরায়েল ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তাদের সামরিক বাহিনী। ১৮ বছর বয়সী নিহত আইডিএফ সদস্যের নাম কর্পোরেশনাল এইটান জ্যাকস। বিয়ারশেবার অভিজাত মাল্টিডোমেন ইউনিটের একজন প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন তিনি। ইরানের হামলায় নিহত চারজনের মধ্যে জ্যাকস তার পরিবারের দুই সদস্যের সঙ্গে তার বাড়িতে নিহত হন। চতুর্থ ব্যক্তি পাশের অ্যাপার্টমেন্টে নিহত হন। ১৩ জুন থেকে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১২ দিনের সংঘাতে এ নিয়ে মোট ২৮ জন নিহত হওয়ার খবর জানালো তেল আবিব। নিহতদের মধ্যে জ্যাকস ছাড়া বাকি সবাই বেসামরিক নাগরিক।

যুদ্ধবিরতিতে অবদান: নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ট্রাম্প
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে "অসাধারণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকার" জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। পাবলিকান আইনপ্রণেতা বাডি কার্টার এই পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে মনোনীত করেছেন। ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন হাউস প্রতিনিধি বাডি কার্টার তাকে মনোনীত করেছেন। নোবেল শান্তি পুরষ্কার কমিটির কাছে লেখা এক চিঠিতে কার্টার "১২ দিনের যুদ্ধ"-এর অবসান ঘটাতে এবং একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাত এড়াতে সাহায্য করার জন্য ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্ব ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটাতে সাহায্য করেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষককে গ্রহের সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র পেতে বাঁধা দিয়েছে। সোমবার রাতে ট্রাম্প যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করেছিলেন, তা রাতারাতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে ইসরায়েলি আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হওয়া নাটকীয় উত্তেজনার পর এটি শুরু হয়েছিল, যার ফলে কয়েকদিন ধরে মিশাইল হামলা শুরু হয়েছিল। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে এই লড়াইয়ে যোগ দেয় এবং ইরান কাতারে একটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে রকেট হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেয় - যদিও আগে থেকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানা গেছে, এবং কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কার্টার সংকটের সময় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, "অনেকেই যা অসম্ভব বলে মনে করেছিলেন, তা দ্রুত চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।" তিনি আরও বলেন, ‘‘ট্রাম্পের প্রচেষ্টা নোবেল শান্তি পুরষ্কার যে আদর্শগুলিকে স্বীকৃতি দিতে চায় তা তুলে ধরে: শান্তির সাধনা, যুদ্ধ প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির অগ্রগতি।"

ইরানের ফাঁদে মোসাদের ৬ দুর্ধর্ষ গুপ্তচর
ইরানের হামেদান প্রদেশে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ছয় গুপ্তচরকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) দেশটির আধা-সরকারি সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজ এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, হামেদান, রাজান ও নাহাভান্দ শহরে অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ এ ছয়জনকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদেরকে ‘দেশদ্রোহী গুপ্তচর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ইরানে মোসাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছিল। গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই গুপ্তচররা সাইবার জগতে সক্রিয়ভাবে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ইরানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এবং জনমনে অশান্তি ছড়াতে পরিকল্পিত তৎপরতা চালাচ্ছিল। তবে তাদের এই ষড়যন্ত্র অত্যন্ত সতর্ক ও সময়োপযোগী গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। ইরান আগেও একাধিকবার দাবি করেছে যে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং পশ্চিমা গোষ্ঠী ইরানের অভ্যন্তরে গুপ্তচরবৃত্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বিশেষ করে পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক সক্ষমতা ঘিরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ধরনের গ্রেপ্তার ইরানের নিরাপত্তা সংস্থার কঠোর নজরদারিরই আরেকটি বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘ব্যর্থ’ ইসরায়েল-আমেরিকা
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক সামরিক অভিযান সত্ত্বেও এই যুদ্ধে ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। তেহরানের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক আব্বাস আসলানির মতে, ইসরায়েল ও আমেরিকা উভয়ই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস এবং ‘সরকার পরিবর্তন’ ঘটানোর যে লক্ষ্য নিয়ে এই সংঘাতে নেমেছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসলানি বলেন, আমরা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে দেখেছি। কিন্তু দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল সেই স্থাপনা ও সরঞ্জামগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই গবেষক জোর দিয়ে বলেন, ইরান তার পারমাণবিক উপাদানগুলো একটি সুরক্ষিত স্থানে স্থানান্তরিত করেছে। এবং এর জ্ঞান ও প্রযুক্তি উভই অক্ষত আছে। এছাড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংস হয়নি, যার প্রমাণ আজকের ইসরায়েলে তাদের সফল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। এই সংঘাতকে ইরান এবং ইসরায়েল ও তার অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আসলানি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো চুক্তি অস্বীকার করেছিলেন, যা তেহরানের সতর্ক অবস্থানকে তুলে ধরে। যদিও পরবর্তীতে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার খবর দিয়েছে। তবে আসলানির মন্তব্য ইঙ্গিত দেয়, ইরান এই যুদ্ধবিরতিকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থ একটি সামরিক প্রচেষ্টার ফল হিসেবে দেখছে। আসলানি আরও মনে করেন, স্বল্পমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘অর্থপূর্ণ’ আলোচনা সম্ভব নয়। কারণ পারমাণবিক আলোচনা চলাকালীন সময়েই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের ওপর হামলা চালিয়েছে। সামগ্রিকভাবে, তেহরানের এই মূল্যায়ন ইরান-ইসরায়েল-মার্কিন সংঘাতের জটিলতা এবং এর দীর্ঘমেয়াদী ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের ওপর আলোকপাত করে।

যুদ্ধবিরতিকে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘বিজয়’ বলছেন ইরানিরা
কিছু জটিলতা থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার পর কিছু ইরানি কর্মকর্তা ইতোমধ্যে বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ বলেছেন, এক্ষেত্রে ‘বিজয়’ মানে হলো ইরান ‘এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের শিং ভেঙে দিয়েছে’ এবং তাদেরকে ইরানের শক্তিমত্তা দেখিয়েছে। ইরানের পার্লামেন্ট প্রধানের শীর্ষ সহযোগী এবং সাবেক আইআরজিসি কমান্ডার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফের শীর্ষ সহযোগী মাহদী মোহাম্মদীও এই বিজয়কে ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ, ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিজয়’ বলে অভিহিত করেছেন। মাহদী মোহাম্মদী এক্স পোস্টে লেখেন, ‘একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে।’ ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, “অন্যদের জানা উচিত, কেউ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘নির্মূল’ করতে পারবে না। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তা বিবেচনা করে, পারমাণবিক শিল্পকে অবশ্যই টিকে থাকতে হবে এবং এটি বন্ধ করা হবে না।”

এবার ইসরায়েলকে কঠোর বার্তা দিলেন ট্রাম্প
এবার ইসরায়েলকে কঠোর বার্তা দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন ইরানে আর কোনো বোমা হামলা নয়। মঙ্গলবার (২৩ জুন) কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আলজাজিরায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের লাইভ সম্প্রচারে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন যে, ইরানে যেন আর আক্রমণ না চলায় ইসরায়েল। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তীব্র হামলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করায় এ কঠোর সতর্কবার্তা দিলেন ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘ইসরায়েল, বোমাগুলো ফেলো না।’ তিনি আরও লেখেন, ‘যদি এটা করো তাহলে তা হবে যুদ্ধবিরতির বড় লঙ্ঘন। এখনই তোমার পাইলটদের বাড়ি ফিরিয়ে আনো।’ এর আগে ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন আল-উদেইদ ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তেহরান জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রতিশোধ এটি। ইসরায়েলি এক কর্মকর্তার বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানায়, কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান। এ ছাড়া এক্সিওস নিউজ এজেন্সির বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অ্যারাবিক নিউজও কাতারে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে হামলার খবরটি প্রকাশ করে। অন্যদিকে, ইরানের আধাসরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি জানায়, দোহায় অবস্থিত আল-উদেইদ মার্কিন বিমানঘাঁটিতে হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। বাহিনীটি জানায়, কাতারের আমেরিকার আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এর কিছুক্ষণ আগেই এক পশ্চিমা কূটনীতিক জানান, উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্র কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ বিমানঘাঁটির ওপর ইরানের পক্ষ থেকে হুমকি পাওয়া গেছে, দুপুর থেকেই এ হুমকি পাওয়া যাচ্ছিল। হুমকির খবরের পর পর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় কাতার সরকার।

বোমা ফেলো না, পাইলটদের এখনই ফিরিয়ে আনো: ইসরায়েলকে ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বোমা ফেলতে ইসরায়েলকে নিষেধ করেছেন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এছাড়াও তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে একই অনুরোধ করেন। ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল, বোমা ফেলো না। যদি ফেলো, তা হবে একটি বড় ধরনের চুক্তিভঙ্গ। তোমাদের পাইলটদের এখনই ফিরিয়ে আনো! মঙ্গলবার এক ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি, অ্যাক্সিওস, আল-জাজিরা। অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অনুরোধের জবাবে নেতানিয়াহু জানান, তিনি হামলা বাতিল করতে পারবেন না এবং এটি অত্যাবশ্যক, কারণ ইরান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। তবে হামলাটি সীমিত পরিসরে পরিচালিত হবে বলে জানানো হয়েছে। এতে একাধিক লক্ষ্যবস্তু নয়, বরং কেবল একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও ইসরায়েলকে সতর্ক করে ট্রাম্প বলেছেন, তারা যেন কোনো বোমা হামলা না চালায়। নিজ মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেয়া এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল, বোমা ফেলো না। যদি ফেলো, তা হবে একটি বড় ধরনের চুক্তিভঙ্গ। তোমাদের পাইলটদের এখনই ফিরিয়ে আনো! এই সতর্কবার্তা ট্রাম্প এমন এক সময় দেন, যখন আজ ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ইসরায়েল বলেছে, তারা প্রস্তাবে রাজি। ইরান জানায়, ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে তারাও একই পদক্ষেপ নেবে। তবে এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। তবে তেহরান নতুন করে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

যুদ্ধবিরতির পর পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন ঘোষণা দিল ইরান
যুদ্ধবিরতির পর পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন ঘোষণা দিয়েছে ইরান। দেশটির পারমাণবিক সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি এ ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৪ জুন) মেহের নিউজের বরাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মোহাম্মদ ইসলামি বলেন, ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক হামলার পর ইরান তার পারমাণবিক শিল্পের ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছে। এছাড়া এটি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, উৎপাদন ও সেবার প্রক্রিয়ায় কোনো বাধা না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর দ্রুত পুনরুদ্ধারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে ২২ জুন ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি জানিয়েছে, ইরানের ৩টি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইরানের ৩টি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো হলো ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহান। ট্রুথ সোশ্যালে এক বার্তায় ট্রাম্প লেখেন, আমরা ইরানের ৩টি পারমাণবিক স্থাপনা—ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানে আমাদের অত্যন্ত সফল হামলা সম্পন্ন করেছি। সব বিমান এখন ইরানের আকাশসীমার বাইরে রয়েছে। এদিকে সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে অপারেশন মিডনাইট হ্যামার পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান দিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানের ৩টি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো হলো ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহান। সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলায় বি-২ স্টিলথ বিমান ছাড়াও আরও বিভিন্ন বিমান অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে ট্যাংকার, যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন বিমান রয়েছে। সব মিলিয়ে অভিযানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ১২৫ টির বেশি বিমান অংশ নিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযানে ৭টি বি-২ বোমারু বিমান অংশ নিয়েছে। এসব বিমানের প্রতিটি দুটি করে বাংকার বিধ্বংসী বোমা বহনে সক্ষম। যার প্রতিটি বোমার ওজন ৩০ হাজার পাউন্ড। এছাড়া অভিযানে জ্বালানি ভরার ট্যাংকার নজরদারি উড়োজাহাজ ও যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত ছিল।

মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলা নিয়ে জাতিসংঘে কাতারের চিঠি
দোহায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের কাছে চিঠি দিয়েছে কাতার। মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চিঠিতে সোমবার রাতের হামলাকে ‘চরম বিপজ্জনক উসকানি’ হিসেবে উল্লেখ এবং এই হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। চিঠিতে বলা হয়, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। বিবৃতিতে কাতার জোর দিয়ে বলেছে, জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কাতার এর উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে। এদিকে, মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামরার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে দোহায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে কাতার। সোমবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছিল, তারা ইরান থেকে ছোঁড়া সব ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান এই উত্তেজনার মাঝে মঙ্গলবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। টেলিফোনে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে কথা বলেছেন তারা। টেলিফোনে আলোচনার বিষয়ে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম বলেছেন, আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ইরানের প্রেসিডেন্টের কাছে আল উদেইদ ঘাঁটিতে ইরানের হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, টেলিফোনে আলাপকালে কাতারের আমির তার দেশ সবসময় সুসম্পর্ক ও ভালো প্রতিবেশীর নীতি অনুসরণ করে বলে ইরানের প্রেসিডেন্টকে জানান। এ সময় তিনি ইরানের কাছ থেকে এমন ‘‘শত্রুতাপূর্ণ আচরণ’’ প্রত্যাশা করেননি বলেও জানিয়ে দেন। ‘‘কাতারের আমির সম্ভাব্য কূটনৈতিক ও আইনি প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনার কথা বলেন। তবে এই বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে এবং অতীতের বিষয় হিসেবে রেখে দিতে হবে বলে জোর দেন তিনি,’’ বলেন শেখ মোহাম্মদ। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি।

স্পষ্ট অবস্থান নিয়েই ইরানকে সমর্থন করেছি: রাশিয়া
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে নিজেদের ‘স্পষ্ট অবস্থানের’ কথা জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছে, ইরানকে সমর্থন জানানোর পাশাপাশি দেশটির সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ককে আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। রাশিয়া ইরানকে যথেষ্ট সমর্থন করছে না বলে সমালোচনা করেছিলেন কয়েকজন বিশ্লেষক। তার জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘‘অনেকে আগুনে পেট্রল ঢেলে মস্কো ও তেহরানের সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’’ তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকের সময় মস্কোর ভূমিকাকে ‘‘অত্যন্ত মূল্যবান’’ বলে অভিহিত করেছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইরানের ওপর চালানো মার্কিন হামলার নিন্দা জানানোয় ভ্লাদিমির পুতিনকেও ধন্যবাদ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়া সঠিক পক্ষের পাশে রয়েছে।’’ ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে। এর আগে, সোমবার মস্কোতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের চালানো হামলাকে ‘বিনা উসকানিতে আগ্রাসন’ বলে অভিহিত করেন। এই সংঘাতে মস্কো ইরানি জনগণকে সহায়তা করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হামলার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে মস্কো সফরে যান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সোমবার সকালে তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে তেহরানে চালানো ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘‘বিনা উসকানির আগ্রাসন’’ বলে আখ্যায়িত করেন পুতিন। পুতিন বলেন, ‘‘এটি ইরানের বিরুদ্ধে একেবারে বিনা উসকানিতে আগ্রাসন।’’ তিনি এই হামলাকে ‘অযৌক্তিক’ বলেও উল্লেখ করেন। সূত্র: বিবিসি।

‘গঠনমূলক ভূমিকা’ রাখায় কাতারকে ধন্যবাদ জানাল ইরান
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তামূলক ভূমিকা পালন করায় কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভাঞ্চি এক টেলিফোন কলে কাতারের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ আল-খুলাইফিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ইরানের সংবাদমাধ্যম ইয়াং জার্নালিস্ট ক্লাবের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা রোধে সহায়তা করার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভাঞ্চি। টেলিফোনে আলোচনার সময় মাজিদ তাখত-রাভাঞ্চি কাতারের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলআজিজ আল-খুলাইফিকে দেশটির ‘‘গঠনমূলক ভূমিকার’’ জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ও পরস্পরের সর্বোচ্চ স্বার্থের ভিত্তিতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার এবং বিস্তৃত করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর ইরান। কাতারের আল-উদেইদে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঘিরে যখন ওই অঞ্চলে প্রবল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তখন কাতারের গঠনমূলক ভূমিকার জন্য দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাল ইরান। এর আগে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে সোমবার কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। পরে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানায় কাতার। একই সঙ্গে এই হামলার প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার দোহায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে কাতার। সূত্র: আল জাজিরা।

তেহরানে ‘তীব্র হামলার’ নির্দেশ দিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জবাবে তেহরানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে ‘তীব্র হামলা’ চালিয়ে কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ইসরায়েলিদের বেরিয়ে আসা নিরাপদ বলে জানানোর কিছুক্ষণ পরেই এই নির্দেশ দেওয়া হলো। এর আগে, ইরান থেকে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইসরায়েল কাটজ। এরপরই তিনি যুদ্ধবিরতির শর্ত ভাঙায় তেহরানকে কঠোর জবাব দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন। এদিকে, টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরান দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং দুটিই প্রতিহত করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত ইরানের পক্ষ থেকে কোনো হামলার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ইসরায়েল যদি হামলা বন্ধ করে, তাহলেই ইরান প্রতিক্রিয়া বা পাল্টা হামলা বন্ধ রাখবে’। অর্থাৎ, ইরান যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে শর্তসাপেক্ষে। সূত্র : আলজাজিরা

ইরানের আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৯, আহত ৩৩
ইরানের উত্তর-পশ্চিমে গিলান প্রদেশের আবাসিক এলাকায় ইরসায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৩ জনের মতো বেসামরিক নাগরিক। আঞ্চলিক গভর্নরের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, হামলায় আশেপাশের অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৩৩ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচজনের হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। আহতদের মধ্যে ১৬ জন নারী ও শিশু থাকার তথ্যও জানানো হয়েছে। এদিকে, টানা ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে জানিয়ে তা লঙ্ঘন না করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে লিখেছেন, ‘যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর হয়েছে, অনুগ্রহ করে কেউ এটি লঙ্ঘন করবেন না।’