ইরানে মোসাদের ২ সদস্য গ্রেফতার

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য বলে অভিযোগ তুলে দুজন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের দাবি করেছে ইরান। তাসনিম নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলবোর্জ প্রদেশ থেকে এই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বিস্ফোরক ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস প্রস্তুত করছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত ইরান আগেও বহু ব্যক্তিকে মোসাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বিশেষ করে, যারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ব্যাহত করতে নাশকতা বা হত্যাকাণ্ডের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে তেহরানভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাংক ডিপ্লো হাউস-এর পরিচালক হামিদ গোলামজাদেহ বলেছেন, ইরানের জ্বালানি স্থাপনাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি হামলা দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য তৈরি করেছে। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গোলামজাদেহ বলেন, নেতানিয়াহু ইরানিদের জন্য এক প্রকার উপকারই করেছেন। এই হামলাগুলোর পরিণতিতে ইরানিদের মধ্যে ব্যাপক ঐক্য দেখা গেছে। তিনি জানান, দেশের অভ্যন্তরে জনগণের মনোভাব এখনো অবিচল ও প্রতিরোধমুখী। তিনি আরও বলেন, সবাই বলছে—এটা ইসলামী প্রজাতন্ত্র নিয়ে নয়, সরকার নিয়ে নয়, এমনকি সংস্কারপন্থিদের নিয়েও নয়, এটা শুধুই ইরানকে ঘিরে। সূত্র: আল-জাজিরা

তেহরানে নতুন করে বিস্ফোরণ, বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার আহ্বান ইসরায়েলের

রাতভর হামলা-পাল্টা হামলার পর ইরানের রাজধানী তেহরানে নতুন করে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (১৫ জুন) স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা তৃতীয় দিনের মতো ইরানে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলে। রোববার ইরানের রাজধানীতে নতুন করে বিস্ফারণের শব্দ শোনা গেছে। তবে এই বিস্ফোরণে কোনও ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। ইরানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খবর অনলাইন ও হাম মিহানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির রাজধানী তেহরানের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আবারও সচল করা হয়েছে। নতুন হামলা মোকাবিলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনী এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম দৈনিক শারঘ তেহরানে বিস্ফোরণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে তেহরানের পূর্বাঞ্চলে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলি উড়তে দেখা যায়। এদিকে ইরানের সামরিক স্থাপনার আশপাশের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সাধারণ ইরানিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে এ আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, ‌‌‘‘যে সকল ব্যক্তি... (ইরানের) সামরিক অস্ত্র উৎপাদন কারখানা অথবা এতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান অথবা এসব প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছেন; তাদের অবিলম্বে এলাকা ছেড়ে যাওয়া উচিৎ।’’ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই সব এলাকায় ইরানিদের ফিরে না আসারও আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। আইডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই সব স্থাপনার আশপাশে অবস্থান করা হলে, তা সাধারণ ইরানিদের জীবনকে ‘‘ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।’’ সূত্র: এএফপি, বিবিসি।

ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাশে থাকবে চীন

ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলাকে ‘নির্মম’ ও ‘বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে কড়া নিন্দা জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। একইসঙ্গে তিনি ইরানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীনের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শনিবার (১৪ জুন) তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সির বরাতে জানা গেছে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে ফোনালাপে ওয়াং ই এ বার্তা দেন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “চীন সবসময় ইরানের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এই ধরনের সামরিক আগ্রাসন গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।” ওয়াং ই বলেন, হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানি কর্মকর্তারা, যা একধরনের নির্মম ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কূটনৈতিক সমাধানের পথ এখনো খোলা আছে এবং বলপ্রয়োগ কখনোই টেকসই শান্তি আনতে পারে না। অন্যদিকে, ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার-এর সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন ওয়াং ই। সেখানে তিনি বলেন, “যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করছে, তখন এমন হামলা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলছে।”

পাল্টা হামলার মুখে যাত্রী ছাড়াই বিদেশে বিমান সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল

ইরানের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলার পর ইসরায়েলে পাল্টা হামলার মুখে নিজেদের বিমানগুলো অন্য দেশে সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলি বিমান সংস্থাগুলো। তেল আবিবের এল আল, ইসরাইর, এবং আরকিয়া বিমান সংস্থার উধ্বৃতি দিয়ে রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। তেল আবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বিমানগুলো যাত্রী ছাড়াই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রধান বিমানবন্দরটিও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিমান সংস্থা 'ইসরাইর' জানিয়েছে, তারা বিমানবন্দর থেকে তাদের বিমানগুলো সরিয়ে নিচ্ছে। এটি গত কয়েকদিন ধরে তৈরি হওয়া একটি 'আকস্মিক পরিকল্পনার' অংশ। বিমান সংস্থা 'এল আল' একই কথা জানিয়ে জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল থেকে বিমানগুলো কোথায় সরিয়ে নিচ্ছে, তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং তথ্য দেখায়, গত শুক্রবার থেকে বেশ কয়েকটি বিমান তেল আবিব ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট সাইপ্রাসে গেছে এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপের বিমানবন্দরে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বিমানগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে ইসরায়েলের হামলা

ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইসফাহানে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসফাহানের নিরাপত্তা বিষয়ক ডেপুটি গভর্নর আকবর সালেহি হামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে, ওই হামলায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলে বলেও জানিয়েছেন ডেপুটি গভর্নর মি. সালেহি। এর আগে, শনিবার রাতে ইরানি গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছিল যে, তেহরানের নোবোনিয়াদ এলাকাতেও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। একই দিন ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের কমপক্ষে ১০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। এদিকে, ইরানের সামরিক স্থাপনার আশপাশের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সাধারণ ইরানিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া একটি পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘যেসব ব্যক্তি... (ইরানের) সামরিক অস্ত্র উৎপাদন কারখানা বা এতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান বা সেগুলোর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছেন, তাদের অবিলম্বে ওই এলাকাগুলো ছেড়ে যাওয়া উচিত,’ পোস্টে উল্লেখ করেছে আইডিএফ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওইসব এলাকায় তাদেরকে ফিরে না আসারও আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসরায়েলের হামলার পর ইরানের নাগরিকদের মধ্যে বেড়েছে ঐক্য

তেহরানভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাংক ডিপ্লো হাউস-এর পরিচালক হামিদ গোলামজাদেহ বলেছেন, ইরানের জ্বালানি স্থাপনাসহ অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি হামলা দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য তৈরি করেছে। আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গোলামজাদেহ বলেন, নেতানিয়াহু ইরানিদের জন্য এক প্রকার উপকারই করেছেন। এই হামলাগুলোর পরিণতিতে ইরানিদের মধ্যে ব্যাপক ঐক্য দেখা গেছে। তিনি জানান, দেশের অভ্যন্তরে জনগণের মনোভাব এখনো অবিচল ও প্রতিরোধমুখী। তিনি আরও বলেন, সবাই বলছে এটা ইসলামী প্রজাতন্ত্র নিয়ে নয়, সরকার নিয়ে নয়, এমনকি সংস্কারপন্থিদের নিয়েও নয়, এটা শুধুই ইরানকে ঘিরে। গত পাঁচ দশকে ইরানিরা বহু কঠিন সময় পার করেছে বলেও মন্তব্য করেন গোলামজাদেহ। তিনি বলেন, তারা আট বছর ধরে সাদ্দাম হোসেনের যুদ্ধ সহ্য করেছে, তখন দেশের পরিস্থিতি ও জনগণের কল্যাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তখন দেশ অনেক দুর্বল ছিল। এখন পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা।

ইসরায়েলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইরানের হামলা

ইরানের হামলায় ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর রেহোভতে অবস্থিত গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় উইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি স্থাপনা নষ্ট হয়েছে। খবর আল জাজিরা ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট-এর খবরে বলা হয়েছে, এই হামলায় কেউ হতাহত হয়নি। এদিকে তৃতীয় দিনের মতো ইসরায়েল তাদের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। ইসরায়েলি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশে আটকে থাকা ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিমানবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হলেও সমস্ত এয়ার ক্রু এবং বিমানগুলো উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত হলেও কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, অন্যান্য দেশে ফ্লাইটের অপেক্ষায় থাকা বিমানগুলো ফেরাতে তখনই অনুমতি দেয়া হবে, যখন আমরা নিরাপদ হব। তবে মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে সীমান্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল।

হামলা বন্ধে ইরানকে প্রস্তাব দিল জার্মানি-ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য

ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয়পক্ষেই প্রাণহানি ঘটছে। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে বেসামরিক সম্পদও। শক্তিশালী পক্ষের সংঘাত ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়ানোর আশঙ্কাও প্রবল। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। সৌদি আরব, তুরস্ক, কাতার, পাকিস্তান, ভেনেজুয়েলাসহ আরও অনেক দেশ ইসরায়েলকে উত্তেজনার জন্য দোষারোপ করেছে। তারা অবিলম্বে ইসরায়েলকে দখলদারি মনোভাব পরিহার করে শান্তির পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু অপরপক্ষ ইরানকেই সংঘাতের জন্য দায়ী করছে। সে কারণেই জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য ইরানের সঙ্গে তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। সংঘাত বন্ধে উদ্যোগটি গ্রহণ করার চাপ দিচ্ছে তেহরানকে। রয়টার্সের বরাতে দ্য টাইম অব ইসরায়েল জানায়, জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে ইরানের সঙ্গে তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনা করতে প্রস্তুত। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল বলেছেন এসব কথা। মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকা ওয়াদেফুল বলেছেন, তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত কমাতে অবদান রাখার চেষ্টা করছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে তেহরান পূর্বে গঠনমূলক আলোচনায় প্রবেশের সুযোগ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। জার্মান পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডিকে তিনি বলেন, আমি আশা করি এটি এখনও সম্ভব। জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন একসঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত। আমরা ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাৎক্ষণিক আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছি। আমি আশা করি (প্রস্তাব) গৃহীত হবে। ওয়াদেফুল বলেন, এই সংঘাতের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। যাতে ইরান এই অঞ্চলের জন্য, ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য বা ইউরোপের জন্য কোনো বিপদ না আনে।

তেহরানে ইন্টারনেট বন্ধ করল সরকার, স্টারলিংক সেবা চালু ইলন মাস্কের

ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে ইরান সরকার যখন দেশটির নাগরিকদের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে, তখন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক ইরানে স্টারলিংক স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল ও ওয়াশিংটন টাইমস শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ পোস্টে মাস্ক লেখেন, “The beams are on,” অর্থাৎ “সংযোগ চালু হয়েছে।” এর আগে শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষতি হওয়ার পর তেহরান সরকারের পক্ষ থেকে দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থায় ‘অস্থায়ী বিধিনিষেধ’ আরোপ করা হয়। ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশটির সাধারণ মানুষ আন্তর্জাতিক সংবাদ ও তথ্যের উৎস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় স্টারলিংকের মাধ্যমে বিকল্প ইন্টারনেট সংযোগ চালু করেন ইলন মাস্ক। উল্লেখ্য, স্টারলিংক হলো স্পেসএক্সের মালিকানাধীন একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সক্ষম।

ইরানের দুঃসময়ে পাশে এল কাতার

ইরানে ইসরায়েলি হামলার মুখে দেশটির পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে কাতার। শনিবার সন্ধ্যায় টেলিফোন আলাপের সময় কাতারের আমির শেখ তোমিম বিন হামাদ আল থানি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে বলেন, তার দেশ সম্পূর্ণভাবে ইরানকে সমর্থন করে এবং আলাপ ও সমঝোতাই শান্তিতে পৌঁছার পথ হিসেবে বিশ্বাস করে। খবর মেহের নিউজ এজেন্সির। প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল মুসলিম ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করা, যাতে অঞ্চলে অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা আসে। কিন্তু শুরু থেকেই জায়নিস্ট সরকার এ অগ্রগতিতে বাধা দিতে চাইছে এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। তিনি আরও সমালোচনা করে বলেন,যুক্তরাষ্ট্র এই অপরাধকে সমর্থন দিচ্ছে এবং চাইছে যে তারা যা চাইবে তাই চাপিয়ে দেবে। কিন্তু ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান কারো চাপ মানতে রাজি নয়। পেজেশকিয়ান মুসলিম দেশগুলিকে গাজায় অপরাধ সংঘটনকারী জায়নিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইরান নিজের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের অধিকার রক্ষায় সম্পূর্ণ সক্ষম। অন্যদিকে কাতারের আমির বলেন, কাতার ঘৃণ্য এ হামলার নিন্দা জানাচ্ছে এবং বিশ্বাস করে যে আত্মরক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের। শেখ তোমিম আরও বলেন, কাতার ইরানকে সমর্থন দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিতে পৌঁছাতে চাইছে। অপর দেশগুলোকেও এই অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের হামলার শিকার হয়, তাহলে 'নজিরবিহীন' পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের হামলার শিকার হয়, তাহলে 'নজিরবিহীন' পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ট্রুথ সোশালে করা এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “ যদি ইরান আমাদের ওপর কোনো ভাবে বা আকারে হামলা চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ শক্তি তোমাদের উপর এমনভাবে নেমে আসবে যা আগে কখনও দেখা যায়নি”। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “ তবে আমরা সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি করতে পারি এবং এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি!!!” ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয় বলে উল্লেখ করেছেন ডোনালড ট্রাম্প । প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “ আজ রাতে ইরানের ওপর করা হামলার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক ছিল না।” এদিকে, তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ করতে ইসরায়েলকে সাহায্য না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের সতর্ক করেছে ইরান।

ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকলে কোনো পারমাণবিক আলোচনা হবে না, বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে কথা বলেছেন। মি. ম্যাক্রো তাকে “ উত্তেজনা এড়াতে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের ” আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইরানকে পারমাণবিক আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পেজেশকিয়ান ম্যাক্রোকে বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে ইরান আলোচনার টেবিলে বসবে না। রোববারের নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র - ইরান পারমাণবিক আলোচনা বাতিল ঘোষণা করার পরে ইরান এই কথা বলেছে।

হাজার মাইল উড়ে ফিরে এলেন ইসরায়েলি নারী পাইলট

ইরানে হামলার পর ফিরে এসেছেন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর একজন নারী পাইলট (যুদ্ধ নেভিগেটর)। তিনি বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতের হামলায় অংশ নেন। সফলভাবে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে ইসরায়েলের মাটিতে ফেরার পর এ পাইলট নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। খবর দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের। ওই পাইলট ইরানের ওপর ভয়াবহ বিমান হামলায় অংশ নেন। হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। মেজর শিন নামের ওই পাইলট ফিরে এসে বলেন, এটি ইসরায়েলের জন্য ঐতিহাসিক এবং আবেগপ্রবণ মিশন ছিল। একটি বড় হুমকি ঠেকানোর লক্ষ্যে এ অভিযান করা হয়। পাইলটের পুরো পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। শুধু তার নামের প্রথম হিব্রু অক্ষর দিয়ে তাকে পরিচিত করে আইএএফ (ইসরায়েলি বিমান বাহিনী)। বলা হয়, গর্বিত এয়ার ক্রু-এর একজন নারী সদস্য হিসেবে বিরল প্রকাশ্য মন্তব্য করলেন তিনি। শিন বলেন, আমি ককপিটে দায়িত্ব অনুভব করেছি। ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য একটি সজাগ এবং অস্তিত্বের হুমকি দূর করার দায়িত্ব আমার কাঁধে অনুভব করি। আমরা এটি করছি আগামী দিনের শান্তির জন্য। আমাদের বাড়ির জন্য। এটাই আমাদের মিশন। মেজর শিন ইসরায়েল থেকে ১,৫০০ কিলোমিটারের (প্রায় ১,০০০ মাইল) বেশি দূরত্বে উড়ে হামলার পর ফিরে আসেন। তিনি এ অভিযানকে বহুমুখী, কঠিন ও শক্তিশালী বিমান অপারেশন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ অভিযান এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে নিশ্চিত করা যায়, আমাদের সন্তানদের একটি উন্নত এবং নিরাপদ ভবিষ্যৎ হবে। প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের ১০টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরানি সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান দুটি শুক্রবার হামলায় অংশ নিয়েছিল। সেনাবাহিনীর বরাতে দেশটির আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিমের এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়, হামলায় নিয়োজিত এক নারী পাইলটকে আটক করা হয়েছে। তবে তার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি ইরানের সেনাবাহিনী।

একযোগে ইসরায়েলে দুদেশের মিসাইল হামলা

ইরানের মিসাইল বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রাতের ঘুম হারাম করে ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দিকে ছুটতে হয়েছে। তবুও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়নি। ইসরায়েলে গতকাল শনিবার রাতে একের পর এক হামলা হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এ হামলায় যখন ইসরায়েল দিশেহারা তখন জানা গেল ইয়েমেন থেকেও মিসাইল আঘাত হেনেছে। রোববার (১৫ জুন) দ্য টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। একই সময় ইরানের হামলা চলছিল। বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলে হামলা চালায় হুতিরা। ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতিরা দাবি করেছে, তারা ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে তেলআবিব অঞ্চলে সংবেদনশীল ইসরায়েলি শত্রু লক্ষ্যবস্তুতে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। দাবি সত্ত্বেও সামরিক কর্মকর্তারা টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইয়েমেন থেকে কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়ে আইডিএফ অবগত নয়। কেবল শুক্রবার হুতিদের দ্বারা ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র পশ্চিম তীরের একটি ফিলিস্তিনি শহরে আঘাত হানে। যার ফলে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তবে ফিলিস্তিনি শহরে আঘাত হানা এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের দায় গোষ্ঠীটি স্বীকার করেনি। তারা বলেছে, ইসরায়েলের স্থাপনা ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য। গত রাতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয় ইসরায়েল। ভোরের আলো ফুটতেই সেই ক্ষত দৃশ্যমান হচ্ছে। দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। রাতে হাইফা, তেলআবিব, বাত ইয়াম, জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ শহরে আঘাত হানে ইরানের মিসাইল। এ ছাড়া ইসরায়েলের বাত ইয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কয়েক ডজন মানুষ নিখোঁজ বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়নেট। হোম ফ্রন্ট কমান্ডের অনুমান, তেলআবিবের ঠিক দক্ষিণে বাত ইয়ামে হামলার স্থানে ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করছে ইয়েমেনের হুতিরাও

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করছে ইরান। এর পাশাপাশি ইয়েমেন থেকে হুতিরাও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। আজ রোববার (শনিবার দিবাগত রাত) একের পর এক হামলা হয়েছে ইসরায়েলে। বোমা হামলা থেকে বাঁচতে ইসরায়েলি নাগরিকদের বারবারই নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর দিকে ছুটতে হয়েছে। খবর আল জাজিরার ইসরায়েল বলছে, এবার এসব ক্ষেপণাস্ত্র শুধু ইরান থেকেই যে আসছে তা নয়, ইয়েমেন থেকে হুতিরাও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছেন হুতিরা। এর আগে তারা গত মঙ্গলবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। এর জবাবে হুতিদের নিয়ন্ত্রণাধীন হোদেইদা বন্দরে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। হুতিরা বলছেন, গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলে হামলায় অংশ নিচ্ছেন তারা। গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতির সময় হুতিরা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ রেখেছিল। তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভাঙতেই হুতিরা আবার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে শুরু করেছেন। ইয়েমেনভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি ইরানের সমর্থনপুষ্ট।

অপারেশন সিন্দুরের পর প্রথম বিদেশ ভ্রমণ মোদির

রোববার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাইপ্রাস সফরের মাধ্যমে তিন দেশের সরকারি সফর শুরু করেছেন। এই সফরে তিনি সাইপ্রাস, কানাডা ও ক্রোয়েশিয়া যাবেন। অপারেশন সিন্দুরের পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ১৫ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত এই সফরে নরেন্দ্র মোদি প্রথমে সাইপ্রাস যাবেন, এরপর কানাডার কানানাসকিসে জি-৭ সম্মেলনে অংশ নেবেন এবং সবশেষে ক্রোয়েশিয়া ভ্রমণের মাধ্যমে দেশে ফিরবেন। সাইপ্রাস সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলাইডেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং লিমাসোলে ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। দুই দশকেরও বেশি সময় পর এই প্রথম কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সাইপ্রাস সফর করছেন। সাইপ্রাস ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে। এই সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের প্রভাব বাড়ানোর দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ১৬ জুন মোদি কানাডা পৌঁছাবেন এবং ১৬-১৭ জুন জি-৭ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এটি হবে তার ষষ্ঠতম অংশগ্রহণ জি-৭ সম্মেলনে । এবার তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এই সফরে মোদি ও কার্নির মধ্যেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে। এছাড়াও, নরেন্দ্র মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন এই সফরে। জি-৭ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি জ্বালানি নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর, ১৮ জুন তিনি ক্রোয়েশিয়ায় যাবেন। এটিই হবে কোন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ক্রোয়েশিয়া সফর। এই সফর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও মজবুত করবে বলে ধারনা করছে বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: এনডিটিভি এমআর/ এএস

ইরানের নতুন সেনাপ্রধান আমির হাতেমি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনির নির্দেশে মেজর জেনারেল আমির হাতেমিকে ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জেনারেল হাতেমির ‘নিষ্ঠা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা’-কে বিবেচনায় নিয়ে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে আয়াতুল্লাহ খামেনির আনুষ্ঠানিক আদেশে উল্লেখ করা হয়। নিয়োগপত্রে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর বিশাল ও বিশ্বস্ত জনশক্তি, পবিত্র প্রতিরক্ষা যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে অর্জিত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আপনার নেতৃত্বে যুদ্ধ প্রস্তুতি জোরদার, আধ্যাত্মিক ও আদর্শিক ভিত্তি শক্তিশালী করা, সেনা সদস্যদের কল্যাণ উন্নয়ন এবং সশস্ত্র বাহিনীর অন্যান্য শাখার সঙ্গে সমন্বয় আরও ত্বরান্বিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এছাড়াও জেনারেল মোহাম্মদ হোসেইন বাঘেরি নিহতের পর আয়াতুল্লাহ খামেনি সদ্য পদত্যাগকারী প্রধান মেজর জেনারেল সাইয়্যেদ আব্দুর রহিম মুসাভির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সততা ও মূল্যবান প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। একইসঙ্গে আয়াতুল্লাহ খামেনি মেজর জেনারেল সাইয়্যেদ আব্দুর রহিম মুসাভিকে সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দেন।

মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা

মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে এতে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শনিবার (১৪ জুন) রাতে এ তথ্য জানা গেছে। এপি নিউজ এজেন্সি দুজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলের আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটির দিকে নিক্ষেপ করা তিনটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। ওই ঘাঁটিতে মার্কিন সৈন্যরা অবস্থান করছে। এ হামলায় কোনো গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন বাহিনীর ওপর আক্রমণ করতে পারে। কারণ ইসরায়েল-ইরান সংঘাত তীব্রতর হচ্ছে এবং এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে তেহরান। সংঘাত শুরুর আগেই মধ্যপ্রাচ্যের সব মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার হুমকি দিয়েছিল ইরান। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনার মধ্যে ড্রোন হামলার খবর এলো। শনিবার ফার্স সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল দাবি করেছে, ইরান ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। ইরানের সামরিক নেতৃত্বের পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত একটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়। এক সূত্র সংস্থাটিকে জানিয়েছে, ইহুদিবাদী [ইসরায়েলি] সরকারের আগ্রাসনের ফলে শুরু হওয়া যুদ্ধ এই সরকারের দখলকৃত সব অঞ্চল এবং এই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিতে ছড়িয়ে পড়বে। আক্রমণকারীরা ইরানের কাছ থেকে একটি বড় আকারের প্রতিক্রিয়া পাবে। প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশনায় মধ্যপ্রাচ্যে সব মার্কিন সাম‌রিক ঘাঁ‌টি সক্রিয় করা হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে বড় ধরনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ পদেক্ষেপ। শনিবার (১৪ জুন) ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইরানে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা এবং তেহরানের পাল্টা আক্রমণের প্রেক্ষিতে সব ঘাঁটিকে সক্রিয় থাকতে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। যেকোনো সময় হুমকি মোকাবিলায় বা শত্রুপক্ষে আঘাত হানতে ঘাঁটিগুলোকে সজাগ ও সক্ষম রাখা হয়েছে। আমেরিকা কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ঘাঁটি পরিচালনা করে আসছে। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস অনুসারে, আমেরিকা এই অঞ্চলের কমপক্ষে ১৯টি স্থানে স্থায়ী এবং অস্থায়ী উভয় ধরণের সামরিক ঘাঁটির একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এর মধ্যে আটটি স্থায়ী ঘাঁটি বাহরাইন, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত।

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থামাতে বললেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থামা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এ পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউক্রেনের সংঘাত নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। তাকে তিনি তার অভিমত জানিয়েছেন। বলেছেন ইসরায়েল-ইরানের এই যুদ্ধেরও অবসান হওয়া উচিত। পাশাপাশি তার (রাশিয়া-ইউক্রেন) যুদ্ধেরো অবসান হওয়া উচিত। এদিকে, ইসরায়েলে আবারো বড় হামলা চালাতে যাচ্ছে ইরান। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই হামলা চালাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। আলজাজিরা জানিয়েছে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে ইসরাইলে ‘বড়সর ও ধ্বংসাত্মক’ হামলা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ইসরায়েল আগেই ধারণা করেছিল শনিবার (১৪ জুন) রাতে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে ইরানের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছিল, তেহরানের হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে ইসরায়েলে যেভাবে ইরানের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইরান, ঠিক একইভাবে আবারও হামলা চালাতে পারে তেহরান। এর আগে শুক্রবার রাতে তেল আবিবে ইরান শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত ও অনেক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সৌদি যুবরাজকে ফোন করলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে ফোন করেছেন। এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের হামলা-পাল্টা হামলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি সৌদি যুবরাজকে জানান। খবর আল-জাজিরারইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসুদ পেজেশকিয়ান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে ফোন করে বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা জোরদার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ইহুদিবাদী সরকার (ইসরায়েল) আমরা যেখানে কিছু অর্জন করতে চেয়েছিলাম প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ও নাশকতা সৃষ্টি করেছে।’ তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে কি বলেছেন সেই বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেনি আল-জাজিরা। ইরান ও সৌদি আরব ২০২৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন করে চালু করার ঘোষণা দেয়। ওই সময় থেকে দেশ দুটির সম্পর্কে শীতলতা কাটতে শুরু করে।

ইরানে ১ ঘণ্টায় ইসরায়েলের ১০টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

মাত্র এক ঘণ্টায় ইসরায়েলের ১০টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। খাতাম আল-আম্বিয়া বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটির এক কমান্ডারের বরাত দিয়ে এই খবরে বলা হয়, গত এক ঘণ্টায় ইরানের বিভিন্ন এলাকায় ১০টি ইসরায়েলি সামরিক বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এদিকে, ইসরায়েলের আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে তেল আবিবে অবস্থিত প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইরানে দফায় দফায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর তেহরানের এই প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ শুরু হয়। খবর এনডিটিভি। ইসরাইলের সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নাম ‘আয়রন ডোম’। মূলত এটা এমন একধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশেই ধ্বংস করতে সক্ষম। বড় ক্ষেপণাস্ত্র তো বটেই, ক্ষুদ্র রকেটও ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলের আয়রন ডোম। ইহুদিদের কাছে তাদের এই আয়রন ডোম জাতীয় নিরাপত্তা আর গৌরবের প্রতীক। ইসরায়েলের সেই গর্বকে এবার চূর্ণ করে দিল ইরান। সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তেল আবিবের একেবারে কেন্দ্রস্থলে আঘাত হানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র, যেখানে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা অবস্থিত। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ১৯ সেকেন্ডের ওই ক্লিপে দেখা যায়, ইসরায়েলের আয়রন ডোম একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি ওই আয়রন ডোম ভেঙে চোখের পলকে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে আঘাত হানে। ক্লিপটি শুরু হয় বিকট শব্দে বেরিয়ে আসা প্রজেক্টাইল দিয়ে। তারপর আলোর ঝলক এবং আগুনের একটি গোলা বিকট শব্দে ভবনটিতে আঘাত করে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে ঘণ্টাব্যাপী ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময়, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের নিন্দা জানান তিনি। সেইসাথে এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের বিষয়েও আলোচনা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে। শনিবার (১৪ জুন) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে এ তথ্য। ফোনালাপের ব্যাপ্তি ছিল প্রায় ৫০ মিনিট। ক্রেমলিনের শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদেষ্টাইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের জানান, ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন এবং সংঘাতের সম্ভাব্য বৃদ্ধি সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেইসাথে, এই যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের পুরো পরিস্থিতির অপ্রত্যাশিত পরিণতি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। উশাকভের আরও জানান, ট্রাম্প তার পক্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ সময়, দুই নেতা বলেন, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পথে ফিরে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা আরআইএ অনুসারে, ইউক্রেন সম্পর্কে পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, রাশিয়া ২২ জুনের পরে ইউক্রেনীয়দের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। ফোনালাপকালে ট্রাম্প সংঘাতের দ্রুত সমাধানের জন্য তার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলেও জানানো হয়।

ব্রিটিশ গুপ্তচর জাহাজকে আটকে দিল ইরান

ওমান সাগরে একটি বিট্রিশ গুপ্তচর জাহাজকে আটকে দিয়েছে ইরানের নৌবাহিনীর সদস্যরা। শুধু আটকে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি দিক পরিবর্তন করতেও বাধ্য করেছে তারা। ইরানের সংবাদমধ্যম মেহের নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে ইরানের ভূখণ্ডে নির্ভুলভাবে প্রবেশে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এই ব্রিটিশ জাহাজটি আগের রাতে উত্তর ভারত মহাসাগর দিয়ে প্রবেশ করে। তবে ইরানের নৌবাহিনীর গোয়েন্দা ব্যবস্থা জাহাজটিকে সহজেই শনাক্ত করে ফেলে। পরে তাদের ব্রিটিশ জাহাজটিকে গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য করে ইরান। এদিকে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে বড় হামলা চালাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। আলজাজিরা জানিয়েছে, কয়েক ঘন্টার মধ্যে ইসরাইলে ‘বড়সর ও ধ্বংসাত্মক’ হামলা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল আগেই ধারণা করেছিল শনিবার (১৪ জুন) রাতে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে ইরানের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলি আর্মি রেডিওর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছিল, তেহরানের হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে ইসরায়েল সেনাবাহিনী। শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে ইসরায়েলে যেভাবে ইরানের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইরান, ঠিক একইভাবে আবারও হামলা চালাতে পারে তেহরান। এর আগে শুক্রবার রাতে তেল আবিবে ইরান শতাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত ও অনেক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া আবাসিক স্থানেও হামলা চালায় তেল আবিব। হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ একাধিক কমান্ডারসহ ৮০ জন নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে ২০ জন শিশু রয়েছে। এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতে নিজেদের সেনাদলে আহত হওয়ার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। শনিবার (১৪ জুন) দেশটির সেনাবাহিনীর দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, মধ্য ইসরায়েলে গভীর রাতে এই হামলা হয়, যা ছিল তাদের ওপর ইরানের পাল্টা আক্রমণের অংশ। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলোর আঘাতে অন্তত ৭ সেনা আহত হন। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার পর সবাইকে হাসপাতাল থেকে ছাড়াও দেওয়া হয়েছে।

শুরু হয়ে গেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ: রুশ জেনারেল

রাজধানী তেহরানসহ ইরানের ৮টি শহরে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় ভোররাতে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করে ইসরায়েল। হামলার শুরুতেই অন্তত ২০০ যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এবং ১০০টিরও বেশি স্থানে আক্রমণ চালায়। এর মধ্যে রয়েছে পরমাণু স্থাপনা, ব্যালিস্টিক মিসাইল ঘাঁটি, সামরিক ঘাঁটি ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এদিকে ইরানে ইসরায়েলের এমন ভয়াবহ হামলার মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ‘শুরু হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন এক রুশ জেনারেল। ৫১ বছর বয়সী আপতি আলাদিনোভ নামের ওই মেজর জেনারেল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বেশ প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিররের খবরে জানানো হয়, ইসরায়েলের এমন বিধ্বংসী হামলার পর ওই সেনা কর্মকর্তা ১০ লাখ নতুন সেনা নিয়োগ দিতে ক্রেমলিনকে আহ্বান জানিয়েছেন। বর্তমানে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ‘সামরিক-রাজনৈতিক’ বিভাগের উপপ্রধান হিসেবে নিয়োজিত আলাদিনোভ বলেছেন, ‘নতুন মোড় নেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধ ইতোমধ্যে একটি গতি পেয়েছে।’ আমাদের সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়া উচিত উল্লেখ করে এক টেলিগ্রাম পোস্টে তিনি বলেন, ‘অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ আগেভাগে প্রস্তুত করতে হবে। তবে বাস্তবে তা হওয়া উচিত ১০ লাখ।’ ‘যুদ্ধ ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এটি নতুন মোড় নিয়েছে এবং নতুন গতি পেয়েছে। তাই নতুন সেনা নিয়োগ দিয়ে তাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।’ ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে তারা অন্যদের সঙ্গে খেলছে, এখন ইরানের সঙ্গে খেলছে, একইভাবে যেন আমাদের সঙ্গে এমনকিছু করার সাহস না পায়, সেজন্যও নতুন সেনা প্রস্তুত করতে হবে।’ এরইমধ্যে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে, সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে কাজ করছে। ইসরায়েলের জনগণকে সুরক্ষিত জায়গায় যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এর মধ্যে ইসরায়েলের তেল আবিব শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। আলজাজিরা জানায়, ইরানের হামলায় তেল আবিবে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে সাইরেন বেজে উঠেছে। তেল আবিব ও জেরুজালেমে সাইরেনের শব্দ শোনা গেছে। এদিকে ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে জবাব দেওয়া শুরু হয়েছে। ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েকশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইরানে হামলার পর নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শুক্রবার ভোরে ঘটা এই হামলায় এরইমধ্যে সৌদি আরব, তুর্কিসহ বিশ্বের অনেক দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জানা গেছে, ইরানে পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অংশ হিসেবে অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করছিল ইসরায়েল। এর অংশ হিসেবে তারা সেখানে একটা ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন ও নির্ভুল অস্ত্র ব্যবস্থা ও কম্যান্ডো পাচার করেছে। ইসরায়েলের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা টাইমস অফ ইসরায়েলকে বলেন, মোসাদ এজেন্টরা তেহরানে সেই ঘাঁটি স্থাপন করেছিলেন। তারপর রাতারাতিতে সেই ঘাঁটি ব্যবহার করেই ভূমিতে স্থাপন করা ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলিতে আঘাত হানে। এর ফলেই ইরান তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা চালাতে সক্ষম হয়নি এবং তাদের বিমানপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ধ্বংস হয়ে যায়। ইরানে ইসরায়েলির হামলায় অন্তত ৭৮ জন নিহত ও ৩২৯ জন আহত হয়েছে। দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ে, বাস্তবে নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে।