দুটি হাসপাতালে বোমা হামলা, কেন শুধু একটি শিরোনাম হলো?

সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে যাওয়া দুটি হৃদয়বিদারক ঘটনা বৈশ্বিক গণমাধ্যমের কাভারেজে এক অপ্রত্যাশিত বৈষম্য তুলে ধরেছে, যা অনেক ইরানিকে ক্ষুব্ধ করেছে। একদিকে, ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে বোমা হামলার খবর দ্রুত এবং ব্যাপক আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। অন্যদিকে, এর মাত্র তিন দিন আগে ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি হাসপাতালেও একই ধরনের হামলা চালানো হয়েছিল, অথচ সেটি বিশ্বের নজরে আসেনি বললেই চলে। এই আকাশ-পাতাল পার্থক্যের একটি বড় কারণ হলো গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার ও স্বচ্ছতা। ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের দ্রুত ঘটনাস্থলে প্রবেশাধিকার দেয়, তাদের ব্রিফ করে এবং মুক্তভাবে সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ করে দেয়। ফলে হতাহতের সংখ্যা এবং ঘটনার নিয়মিত আপডেট দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এর বিপরীতে, ইরান সরকার সাংবাদিকদের আটকে রাখে, দেশের অভ্যন্তরীণ গণমাধ্যমের ওপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার সীমিত করে। এর ফলস্বরূপ, কেরমানশাহের ঘটনার ক্ষেত্রে কেবল অস্পষ্ট এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অর্থাৎ বেসরকারি সূত্র থেকে যে ভিডিও পাওয়া যায়, সেগুলোই খবরের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। ইসরায়েলি হামলার দুদিন পর ইরান সারাদেশে ২২৪ জন নিহতের তথ্য দিলেও, স্থান অনুযায়ী কোনো বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেওয়া হয়নি। কেরমানশাহর হাসপাতালটি আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেও আর কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়নি। গণমাধ্যমে প্রবেশাধিকার এবং স্বচ্ছতার অভাবে ইরানের অনেক মর্মান্তিক গল্প হারিয়ে যাচ্ছে। শোকাহত পরিবারগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু ব্যক্তিগত পোস্ট কখনো পরিকল্পিত সংবাদ কাভারেজের বিকল্প হতে পারে না। যুদ্ধের সময়ে যখন বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিক্রিয়ার গতিপথ নির্ধারণ করে, তখন কেরমানশাহর চারপাশে এই নীরবতা ইঙ্গিত দেয় যে, সেন্সরশিপ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একঘরে হয়ে যাওয়ার ফলে কত ভয়াবহ ঘটনাও বিশ্বের দৃষ্টির আড়ালে থেকে যেতে পারে। সূত্র- বিবিসি বাংলা

ইসরায়েলে মাইক্রোসফট-এর কার্যালয় ঘিরে হামলা, যা জানাল ইরান

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বীরশেবায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মাইক্রোসফটের কার্যালয়ের কাছাকাছি এলাকায় আগুন ধরে যায়। এতে সেখানে কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুক্রবার (২০ জুন) সকালেসংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ফায়ার সার্ভিস ও প্যারামেডিক টিম ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালায়। এ পর্যন্ত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে, ইরান আবারও গাভ-ইয়াম অ্যাডভান্সড টেকনোলজি পার্ক লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা এর আগের দিন জানিয়েছিলেন, এই প্রযুক্তি পার্ক লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হচ্ছিল, কিন্তু তখন কাছাকাছি সরোকা হাসপাতাল আক্রান্ত হয়। সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে শুক্রবার (২০ জুন) প্রকাশিতপ্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। এদিকে, চলমান সংঘাতে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র ‘ক্লাস্টার বোমা’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান যেসব প্রাণঘাতী ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে, তা বেসামরিক মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত, কারণ যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু পরেও এগুলো বিস্ফোরিত না হয়ে মাটির নিচে থেকে যেতে পারে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে যা আকাশে বিস্ফোরিত হয়ে ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে দেয়-এর উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি বাড়ানো। সাত দিন ধরে চলা এই সংঘাতে এটাই প্রথম ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের অভিযোগ। গত শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে ইসরায়েল ও ইরান একে অপরের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা অব্যাহত রেখেছে।

যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে নরক নেমে আসবে: ইরান

ইরানে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে তা সমগ্র অঞ্চলে নরক নেমে আসবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে নিজেকে জড়িয়ে ফেললে তা হবে পঙ্কিলময়। এতেগোটা অঞ্চলই নরকে পরিণত হবে। বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাঈদ খতিবজাদে বলেছেন, ‘এটা আমেরিকার যুদ্ধ নয়। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে জড়ান তাহলে ইতিহাস তাকে মনে রাখবে এমন একজন প্রেসিডেন্ট হিসাবে যিনি একটি যুদ্ধে নাম লিখিয়েছেন, যা তার যুদ্ধছিল না।’ ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা এই সংঘাতকে একটি জটিল ফাঁদে পরিণত করবে। এতে আগ্রাসন চলতে থাকবে। নৃশংস নির্যাতনের অবসান আরও বিলম্বিত হবে। সাক্ষাৎকারে খতিবজাদেহ বলেন, ইরান কূটনীতি চায়। কিন্তু তার দেশের বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকলে কেউ আলোচনায় যেতে পারবে না। যে মুহূর্তে এই আগ্রাসন বন্ধ হবে, অবশ্যই কূটনীতিই হবে প্রথম বিকল্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান পারমাণবিক চুক্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল। কিন্তু সেই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই নাশকতা চালিয়ে সুযাগ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল রোববার। কিন্তু শুক্রবার রাতে ইসরায়েল ইরানে হামলা চালায়। এরপরই ইরান জানায়, ইসরায়েলের হামলার পর এই আলোচনার আর কোনও অর্থ হয় না। এদিকে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলের অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানী তেহরান ও অন্যান্য শহরে নিহত হয়েছেন মোট ৫৮৫ জন। এই নিহতদের মধ্যে ১২৬ জনকে সামরিক এবং ২৩৯ জনকে বেসামরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ইসরায়েলের হামলা শুরুর পরের দিন ১৪ জুন নিহত ও আহতদের একটি পরিসংখ্যান জানিয়েছিল ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছিল, তেহরান ও আক্রান্ত অন্যান্য শহরে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৭৭ জন। যদিও ইরান সংঘাতের ঘটনায় নিয়মিত মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি। সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদে মৃতের সংখ্যা ২২৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ১২৭৭ জন বলে জানানো হয়েছে।

ফ্রান্স-জার্মানি-ব্রিটেন-ইইউ’র সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান

নিজেদের পরমাণু প্রকল্প এবং ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত ঠেকাতে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি। আজ শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় হবে এ বৈঠক। আব্বাস আরাগচির সঙ্গে এ বৈঠকে থাকবেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেন-নোয়েল ব্যারট, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেফুল, ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান কাজা কালাস। ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করছে— অভিযোগ তুলে গত ১৩ জুন থেকে দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। হামলায় ইতোমধ্যে ইরানের বেশ কয়েকজন প্রথম সারির সামরিক কমর্কর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও পরমাণু প্রকল্পের প্রধানসহ নিহত হয়েছেন ৬ শতাধিক মানুষ। ইসরায়েল অভিযান শুরুর পর পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইরানও। সেই হামলায় ইসরায়েলে নিহত ও আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেসামরিক ও শান্তিপূর্ণ খাতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ইরান। তবে ২০১৭ সালে প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘জ্যাকোপা’ নামের সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে বের করে আনেন। গুরুত্বপূর্ণ সেই জ্যাকোপা চুক্তিতে সহযোগী দেশ হিসেবে স্বাক্ষর করেছিল জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং রাশিয়া। সূত্র : বিবিসি

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছতে কতক্ষণ সময় লাগে?

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা লক্ষ্যবস্তু হওয়ার পর, পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে। এর অনেকগুলো প্রতিহত করা গেলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আঘাত হেনেছে, যার ফলে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ইরানের হাতে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে—সংখ্যায় ৩,০০০-এরও বেশি। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র এতটাই দ্রুতগামী যে মাত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিটেই ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, গত তিন দশকে ইরান একটি সুসংগঠিত এবং আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি গড়ে তুলেছে। এদের ক্ষেপণাস্ত্রসমূহ বিভিন্ন পরিসরের ও গতির, যেগুলো ভূমি, স্থল ও আকাশপথে চালানো সম্ভব। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের কাছে স্বল্প পাল্লার থেকে শুরু করে ২ হাজার কিমি এরও বেশি পাল্লার মিসাইল রয়েছে। কয়েক বছর আগে ইরানের একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা দাবি করেন, ইসরায়েলকে মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে ধ্বংস করার সামর্থ্য রয়েছে তাদের। তিনি মূলত ইরানের হাইপারসনিক মিসাইলের গতিকে ইঙ্গিত করেন। জানা গেছে, ইরানের হাতে ফাত্তাহ-১ সিরিজের মধ্যম পাল্লার হাইপারসনিক মিসাইল রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ম্যাক ১৫ গতিতে (শব্দের চেয়ে ১৫ গুন গতিতে) লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। চলমান ইরান ইসরায়েল সংঘাতে এই সিরিজের মিসাইল ব্যভহারও করেছে ইরান। এই মিসাইলের গতি হিসেব করলে ইরান মাত্র ৮ মিনিটেই ইসরায়েলে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে, ইরান ইসরায়েলে হামলা চালাতে হাইপারসনিক মিসাইল ছাড়াও প্রচলিত মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বেশি ব্যবহার করছে। ইরানের এসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ১২ থেকে ১৫ মিনিটেই ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলছেন, উচ্চ গতির কারণে এসব ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে আটকানো কঠিন, ফলে চলমান সংঘাতে ইরান অনেকটাই সফলতা পাচ্ছে।

যুদ্ধের জন্য নতুন সামরিক গোয়েন্দাপ্রধান নিয়োগ দিলো ইরান

নিজেদের সামরিক বাহিনীর এলিট ফোরাম ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)- এর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ খাদামিকে নিয়োগ দিয়েছে ইরান। বৃহস্পতিবার আইআরজিসি’র শীর্ষ কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ পাকপৌর তার নিয়োগ চূড়ান্ত করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা ইরনা। এই নিয়োগপ্রাপ্তির মাধ্যমে আইআরজিসির গোয়েন্দা ইউনিটের সাবেক প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মেদ কাজেমি-এর স্থলাভিষিক্ত হলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ খাদামি। গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর (আইএএফ) অভিযান শুরুর ২ দিন পর ১৫ জুন নিহত হন মোহাম্মেদ কাজেমি। মাজিদ খাদেমিকে যিনি নিয়োগ দিয়েছেন, সেই মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ পাকপৌরও আইআরজিসির শীর্ষ কমান্ডার হয়েছেন মাত্র কয়েক দিন হলো। ইরানে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযান শুরুর দিনই নিহত হন আইআরজিসির সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি। তার মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর মেজর জেনারেল পাকপৌরকে এই পদে নিয়োগ দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। প্রসঙ্গত, ইরানের সামরিক বাহিনীর চেইন অব কমান্ডকে তছনছ করে দিতে হামলার শুরু থেকেই দেশটির উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের ‘টার্গেট’ করেছিল ইসরায়েল। গত ১৩ জুন থেকে ১৫ জুনের মধ্যে দেশটির বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডার ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়নি। কারণ হামলায় যেসব কমান্ডার নিহত হয়েছেন— অত্যন্ত দ্রুত তাদের শূন্যপদে নতুন নিয়োগ দিয়েছে তেহরান। সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে: খামেনি

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। শুক্রবার (২০ জুন) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। ওই ভিডিওর শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ও বেসামরিক লোকজনের ওপর চালানো সহিংসতার দৃশ্য দেখা যায়। এরপর ভিডিওতে দেখানো হয়, ইসরায়েলের ওপর ইরানের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর মানুষজন আনন্দ উদযাপন করছে এবং সেই হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে— “এমন ক্ষেপণাস্ত্র, যা বিশ্বের সম্মানিত ও মর্যাদাবান মানুষদের আনন্দ দিয়েছে।” ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এই বক্তব্য তাকে সমর্থনকারী জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে ফিলিস্তিন ও অন্যান্য মুসলিম দেশের জনগণের আবেগকে উসকে দিতেই প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া এটিকে একটি স্পষ্ট বার্তা বলেও মনে করা হচ্ছে যেখানে ইরান নিজেদের হামলাকে ‘ন্যায্য প্রতিক্রিয়া’ হিসেবেই তুলে ধরছে। আর আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক্স অ্যাকাউন্টে এই ভিডিও এমন এক সময় প্রকাশ পেল, যখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ভয়াবহভাবে বিস্তার লাভ করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।

ইরানের হামলার মধ্যে ইতিহাস ভেঙে কেন পাক সেনাপ্রধানকে আপ্যায়ন করলেন ট্রাম্প

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে বুধবার (১৮ জুন) হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই প্রথম একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধানকে আতিথ্য দিলেন, যিনি দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান নন। আসিম মুনির পাঁচ দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মিথ্যা আর প্রতারণা ছাড়া কিছুই দেয়নি’ এবং এটি সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সাত বছর আগে অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্প। আর তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেন এই দেশটিকে ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সেই দেশের প্রতি ট্রাম্পের এই মনোভাব একটি নাটকীয় পরিবর্তন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রশাসনের অধীনে সম্পর্ক পুনর্গঠনের কাজটি কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছিল। গত মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বল্প সময়ের কিন্তু তীব্র সামরিক সংঘাতের সময় এটি আরও সুসংহত হয়। ওই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিল। অবশ্য কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করে বলছেন, নতুন করে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক নীতির পরিবর্তে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অবস্থানের ফল হিসেবে দেখা উচিত। মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের (এমইআই) জ্যেষ্ঠ ফেলো মারভিন ওয়েইনবাউম বলেন, ‘আমরা এমন একটি প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছি, যারা প্রতি ঘণ্টায় তাদের সুর পাল্টায়। এখানে নিয়মনীতি বলে কিছু নেই।’ মারভিন আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই বলছে তো পরের মিনিটেই অগ্রাধিকার দ্রুতই পরিবর্তন হচ্ছে। আপনি এমন একটি প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করছেন, যেটি অস্থির এবং ব্যক্তি-নিয়ন্ত্রিত। এটি প্রথাগত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’ তবে অন্যরা বলছেন, আসিম মুনিরকে ট্রাম্পের আতিথ্য জানানোর এই দৃষ্টিভঙ্গির তাৎপর্য রয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের ডিস্টিংগুইশড লেকচারার রাজা আহমদ রুমি বলেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে ট্রাম্পের মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ কেবল প্রোটোকল (রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি) ভঙ্গই নয়, এটি প্রোটোকলকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। তিনি আরও বলেন, এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয়, পাকিস্তান শুধু ওয়াশিংটনের নজরেই নেই, বরং দেশটি ঘনিষ্ঠ মহলের মধ্যেই রয়েছে; অন্তত এই সময়ে। ট্রাম্প ও আসিম মুনিরের বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। ১৩ জুন থেকে ইরানের শহরগুলোতে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে জবাব দিয়েছে। ইরানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা এবং বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ২০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গত ছয় দিনে ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় সরাসরি যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলের সরকার। ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আসিম মুনিরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের পর ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, পাকিস্তানিরা ‘ইরানকে খুব ভালো চেনে, বেশির ভাগ মানুষের চেয়ে ভালো’। তবে তিনি আরও বলেন, তারা (পাকিস্তানিরা) ‘খুশি নন’। ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, আসিম মুনিরের সঙ্গে এই সাক্ষাতের প্রধান কারণ ছিল মে মাসে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সংঘাত নিরসনে তাঁর ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানানো। এই সংঘাতটি ১৬০ কোটির বেশি মানুষের বাসস্থান এই অঞ্চলকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের জন্য পরিচিত ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (আসিম মুনির) এখানে আমন্ত্রণ জানানোর কারণ ছিল আমি তাঁকে (ভারতের সঙ্গে) যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমরা ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছি।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এই দুই অত্যন্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তি এমন একটি যুদ্ধ চালিয়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেটি পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারত। পাকিস্তান ও ভারত দুটি বড় পারমাণবিক শক্তিধর দেশ।’ আসিম মুনিরকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আজ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’ এই সংকট শুরু হয়েছিল গত এপ্রিলে ভারতশাসিত কাশ্মীরে একটি হামলার পর। ওই হামলায় ২৬ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। ভারত এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে এবং একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য, স্বাধীন, স্বচ্ছ’ তদন্তের আহ্বান জানায়। গত ৭ মে পাকিস্তানের ভূখণ্ড ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তান তাদের বিমানবাহিনীর মাধ্যমে হামলার জবাব দেয়। দেশটি দাবি করে, তারা অন্তত ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারত ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করলেও নির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি। এই সংঘাত আরও তীব্র হয় যখন উভয় পক্ষ তিন দিন ধরে ড্রোন হামলা চালায় এবং শেষ পর্যন্ত ১০ মে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। নেপথ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হওয়ায় সংঘাতের অবসান ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবার তাঁর ভূমিকার কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ থামিয়েছি। এই ব্যক্তি (আসিম মুনির) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এটি থামাতে অত্যন্ত প্রভাবশালী ভূমিকায় ছিলেন, মোদি ভারতের পক্ষ থেকে; অন্যরাও ছিলেন।’ পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথা স্বীকার করলেও ভারত জোর দিয়ে বলে আসছে, কেবল দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা পলিট্যাক্ট-এর চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট আরিফ আনসার বলেন, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা ট্রাম্পকে দেশটির সঙ্গে যোগাযোগে আগ্রহী করে তুলেছে। আরিফ আনসার বলেন, ‘দেশটি (পাকিস্তান) প্রমাণ করেছে, নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তারা অনেক বড় প্রতিপক্ষকে কৌশলে পরাস্ত করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মূল কৌশলগত স্বার্থ মাথায় রেখে পাকিস্তানের প্রথাগত ক্ষমতা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহিত করেছে।’ আরিফ আনসার আরও বলেন, বৈশ্বিক ক্ষমতার পালাবদলের এই সময়ে পাকিস্তান আবারও একটি বড় কৌশলগত বিকল্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, অনেক কিছু নির্ভর করছে দেশটি চীন নাকি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে তার ওপর। এই সিদ্ধান্তটি ক্রমবর্ধমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত এবং ইরানের ভূমিকার সঙ্গেও জড়িত। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ওয়েইনবাউম এই সম্পর্ককে অস্থায়ী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কারণ, ট্রাম্পের ‘এই প্রশাসনে কিছুই স্থায়ী নয়’। তিনি বলেন, ‘যদি ইরান সংকটে পাকিস্তান কিছু ভূমিকা পালন করে, তাহলে এই সম্পর্কের আরও উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য থাকতে পারে। তবে এই প্রস্তুতি থাকতে হবে যে এই প্রশাসনের সঙ্গে কিছুই স্থির নয়। এটি যেকোনো মুহূর্তে, যেকোনো সময়ে পরিবর্তন হতে পারে।’ সূত্র: আল-জাজিরা

নেতানিয়াহু ভুল, তার যুদ্ধে আমরা জড়াব না : সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক অবস্থান নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। এক বিবৃতিতে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘নেতানিয়াহু ২০০২ সালে যেমন ভুল ছিলেন, এখনও তিনি তেমনই ভুল করছেন।’ বিবৃতিতে বার্নি স্যান্ডার্স উল্লেখ করে বলেন, ২০০২ সালে কংগ্রেসে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘সাদ্দাম পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদি আপনি সাদ্দামের শাসন উৎখাত করেন, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, এর বিশাল ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বক্তব্যকে ভিত্তি করে ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়, যার ফলে ভয়াবহ মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে।’ স্যান্ডার্স আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহু তখন ভুল ছিলেন, মারাত্মক ভুল। ওই যুদ্ধে ৪ হাজার ৪৯২ জন মার্কিন সেনা প্রাণ হারান, আহত হন ৩২ হাজারেরও বেশি। তাছাড়া প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল সেই যুদ্ধে। সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, লাখ লাখ নিরীহ ইরাকি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আজও নেতানিয়াহু একই ধরনের যুদ্ধোন্মাদ অবস্থান নিচ্ছেন, এবার লক্ষ্য ইরান। কিন্তু আমেরিকার উচিত নয় সেই ভুল পথ আবার অনুসরণ করা। আমরা ইরানের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর যুদ্ধে জড়াব না।’ বার্নি স্যান্ডার্সের এ মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েল ইস্যুতে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে ডেমোক্রেটিক দলের প্রভাবশালী অংশ শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে।বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ নয়, কূটনীতিই হতে হবে ভবিষ্যতের পথ। সূত্র:আনাদুলু এজেন্সি

ইরান থেকে নিজ দেশে চলে যাচ্ছেন হাজারো আফগান

ইরান সীমান্তবর্তী পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ইরান থেকে ফিরে আসছে। কাবুলের ২৪ বছর বয়সী সাফিউল্লাহ, যিনি গত দুই মাস ধরে ইসফাহানে বসবাস করছেন এমন কয়েক ডজন আফগানের সাথে আমার দেখা হয়েছে যাদের ইরানে থাকার ভিসা থাকলেও যুদ্ধের পর আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছেন। "আমি আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়ার জন্য টিকিট পেতে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করেছি। এখন টিকিট পাওয়া অনেক কঠিন এবং দামও তিনগুণ বেড়েছে। পরিস্থিতি দেখে আমি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি," বলেন তিনি। তেহরানের প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইসফাহান বারবার ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী মেহরান বেশ কয়েক বছর ধরে ইরানে নির্মাণকাজ করছিলেন।তিনি বলেছিলেন, ইরানিদের শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখেছেন তিনি। "খাবার ও অন্য সবকিছুর দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেকারিতে রুটি খুঁজে পাওয়াও কঠিন ছিল। আমি তিনটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করছিলাম, যার সবগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। হামলা শুরুর পর আমি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেই,” বলেন তিনি। সূত্রঃ বিবিসি

ইরানের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিল মুসলিম ব্রাদারহুড

ইরানের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড। সংগঠনটি এ ঘোষণা দিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে মুসলিম ব্রাদারহুড। দলের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল গাইড ড. সালাহ আবদেল হক ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির কাছে পাঠানো একটি আনুষ্ঠানিক বার্তায় এ ঘোষণা দেন। আবদেল হক বলেন, বর্তমান সংঘাত কেবল ইরানের একক যুদ্ধ নয়, বরং আঞ্চলিক প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে চলমান আক্রমণের একটি নতুন অধ্যায়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে ইরানের সমর্থনের কারণে এই আক্রমণ তীব্র হয়েছে। বুধবারের বার্তায় তিনি ইসরায়েলি হামলাকে অঞ্চলের উপর দখলদার শক্তির আধিপত্য জোরদার করার লক্ষ্যে একটি কৌশলগত উত্থান হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি পশ্চিমা দেশের নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে এই হামলা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘আল-আকসা ফ্লাড’ অভিযানের সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিপর্যয়ের কথাও উল্লেখ করেন। আবদেল হক আরও বলেন, ইসরায়েলি দখলদার শক্তি জাতি, সম্প্রদায় বা ধর্মীয় বিভেদের মধ্যে পার্থক্য করে না, বরং প্রতিরোধ আন্দোলনকে সমর্থনকারী সকলকে লক্ষ্যবস্তু করে। এর মধ্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র থেকে শুরু করে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো ইসলামি আন্দোলনও রয়েছে। তিনি শত্রুর মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং সম্প্রদায়গত ও ঐতিহাসিক পার্থক্য অতিক্রম করার আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন থেকে লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরান পর্যন্ত অঞ্চলটি যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা মোকাবিলায় একটি ব্যাপক ইসলামি কৌশলগত ঐক্য প্রয়োজন।

আলেকজান্ডারও ইরানিদের পরাজিত করতে পারেনি: শি জিনপিং

ইরানে হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এক এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, আলেকজান্ডারও পারস্যবাসীকে পরাজিত করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় দেওয়া তার এই পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে আলোচনা। এদিন সকালে আরেক পোস্টে চীনা প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হ্যালো আমেরিকা, তোমার দিকে প্রেতাত্মা ছুটে আসছে।’ আমেরিকাকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে বলে তিনি বলেন, ৫০০০ বছরের ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, যা আমেরিকা শিখতে অস্বীকার করে। তাদের মনে রাখা দরকার, সাম্রাজ্য শত্রুর কারণে পতন হয় না, তারা তাদের যুদ্ধযন্ত্রের অতৃপ্ত ক্ষুধার নিচে ভেঙে পড়ে। জিনপিং লেখেন, ‘চীন জানে যে মহাশক্তিগুলো তাদের যুদ্ধযন্ত্রের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।’ তিনি পূর্বেকার রাজবংশের ধ্বংসের ইতিহাস স্মরণ করেন। যুদ্ধবাজ মনোভাব কীভাবে একটি জাতিকে ধ্বংস করেছে তার বর্ণনা দেন। শি লিখেন, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে শক্তিশালী কিন রাজবংশ যুদ্ধরত রাজ্যগুলোকে একত্র করে। তারা মহান প্রাচীর নির্মাণ করে এবং চীনের প্রথম সম্রাটের কাছে টেরাকোটা সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করে। কিন্তু সৈন্যদের অবিরাম যুদ্ধে বাধ্য করে এবং সাম্রাজ্যের গৌরবের জন্য জনগণের রক্ত শুষে নেওয়ার পর এই রাজবংশ মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। অষ্টম শতাব্দীতে পরাক্রমশালী তাং রাজবংশ বিশ্বের দূরবর্তী প্রান্ত থেকে কর আদায় করত। কিন্তু বিজয়ের নেশায় মত্ত হয়ে এর সেনাবাহিনী মধ্য এশিয়ার গভীরে অভিযান চালায়। যার ফলে সামরিক দলগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি পায়। যখন দুর্বল রাষ্ট্র আর তাদের ক্ষুধা মেটাতে পারেনি তখন আন লুশানের বিদ্রোহ রাজধানী চাংআনকে পুড়িয়ে দেয় এবং সাম্রাজ্যকে অপরিবর্তনীয় পতনের দিকে ঠেলে দেয়। ১৩ শতাব্দীতে চেঙ্গিস খানের অজেয় অশ্বারোহী বাহিনী ইউরোপ থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিজয় ছিনিয়ে আনে। কিন্তু অবিরাম সম্প্রসারণ সাম্রাজ্যকে যত দ্রুত বিজয় এনে দেয়, তত দ্রুত তা ক্ষয়প্রাপ্ত করে। এটিকে সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী রাজবংশগুলোর একটিতে পরিণত করে। ৫০০০ বছরের ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, যা আমেরিকা শিখতে অস্বীকার করে। সাম্রাজ্য শত্রুর কারণে পতন হয় না, তারা তাদের যুদ্ধযন্ত্রের অতৃপ্ত ক্ষুধার নিচে ভেঙে পড়ে। ৭৫০টি সামরিক ঘাঁটি দিয়ে বিশ্বকে ঘিরে রাখা এবং প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ধোঁয়ায় উড়ে যাওয়ার সঙ্গে... আপনি (মার্কিন সাম্রাজ্য) কি ইতোমধ্যে আপনার প্যারেডে সেই প্রেতাত্মার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন?

ইরানে হামলার অনুমতি দিইনি: ট্রাম্প

ইরানের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘গোপন সম্মতি’ রয়েছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হলেও তা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন তিনি। এ খবর জানিয়েছে আল-জাজিরা। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইরান নিয়ে আমার ভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানে না!’ তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে ইরানের ওপর হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন কিন্তু ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে এই আশায় চূড়ান্ত অনুমোদন বিলম্বিত করেছেন। ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলার পরিকল্পনায় নীতিগত সম্মতি দিয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত রেখেছে এ আশায় যে তেহরান হয়তো তার পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবে।’ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমাকে সবাই এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। দেখা যাক কী হয়। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করে বলেছেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই তার সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ হয়। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক “অত্যন্ত মধুর”।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারত্বের প্রশংসা করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি এটাকে ‘অবিশ্বাস্য’ বলেও অভিহিত করেছেন।

ইরানে হামলার ইঙ্গিত ট্রাম্পের! মার্কিন পরিকল্পনায় নতুন বার্তা

ইরানে মার্কিন হামলার পরিকল্পনায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুমোদন দিয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের বিষয়ে আমার চিন্তা-ভাবনার বিষয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কোনও ধারণাও নেই। এর আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশায় তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই প্রতিবেদনের বিষয়ে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প লিখেছেন, ‌‘‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইরানের বিষয়ে আমার চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানে না!’’ ট্রাম্পের সামরিক হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে বুধবার একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজও। এদিকে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে সরে আসতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, এখানে সংঘাত ‘বৃদ্ধির বড় ঝুঁকি’ আছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। স্টারমার বলেছেন, এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং আমার মতে, এটিই এই সমস্যা সমাধানের উপায়। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আগামীকাল শুক্রবার জেনেভায় বৈঠকে বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাসের সঙ্গেও তার দেখা করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ। ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ইরানি প্রতিনিধি দলের বৈঠক নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনার পর আব্বাস আরাঘচি এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সূত্র: বিবিসি।

ইউরোপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আগামীকাল জেনেভায় বৈঠকে বসছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাসের সাথেও তার দেখা করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ। ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ইরানি প্রতিনিধি দলের বৈঠক নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনার পর আব্বাস আরাঘচি এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এএফপি জানিয়েছে, এই বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবেন আরাঘচি।

প্রায় প্রতিদিন ট্রাম্পের সঙ্গে কথা হয়: নেতানিয়াহু

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি এটাকে ‌‘অবিশ্বাস্য’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলের দক্ষিণে ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতাল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নেতানিয়াহু। তিনি জানান, ‘প্রায় প্রতিদিন’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। খবর-বিবিসি। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি তার দৃঢ় সংকল্প, দৃঢ়চিত্ত ও স্পষ্টতা- যখন তিনি বলেন যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না এবং ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। তিনি তাদের আলোচনার মাধ্যমে এটি (ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করা) করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তারা তার সঙ্গে ছলনা করলো, আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এটা করতে পারেন না।’ সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। কিন্তু তারা ইতোমধ্যেই অনেক সাহায্য করছে।’ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের দিক থেকে পারমাণবিক হুমকি ‘অপসারণ’ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ‘এই অভিযানের শেষে ইসরায়েলের জন্য কোনো পারমাণবিক হুমকি থাকবে না, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকিও থাকবে না। সোরোকা হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল ইতোমধ্যেই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘খুব জোরালোভাবে’ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু ছিলেন কিনা জানতে চাইলে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউই নিরাপদ নয়’।

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়াতে ট্রাম্পকে আহ্বান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর

ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। একই সঙ্গে সব পক্ষকে কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সংঘাত ‘বৃদ্ধির বড় ঝুঁকি’ রয়েছে। ‘এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং আমার মতে, এটিই এই সমস্যা সমাধানের উপায়’। এমন সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য এসেছে যখন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এই উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। যেখানে তিনি ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গেও দেখা করবেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে ল্যামি এবং রুবিও আলোচনা করবেন। এদিকে ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ পরিবেশকে ‘আরেকটি ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে’।

ইসরায়েলে আবারও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ইসরায়েল লক্ষ্য করে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ কথা জানিয়েছে। খবর আল জাজিরা। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, সেটা শনাক্ত করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব হামলা প্রতিহত করতে কাজ করছে। একইসঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনী জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে এবং নতুন নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলেছে। এদিকে ইরানের পাল্টা সামরিক অভিযানে ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইদিয়োথ আহারোনোথ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলমান সংঘাতের কারণে ইসরায়েলের ৫ হাজার ১১০ জন নাগরিক গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে রাজধানী তেল আবিব শহর থেকেই গৃহহীন হয়েছেন ৯০৭ জন।

ইরানের হামলায় বিপর্যস্ত মূল ভূখণ্ড, বের করেনি সর্বাধুনিক মিসাইল!

ইরানের হামলা মোকাবিলা করতে পারেছে না ইসরায়েল। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ফাঁকি দিয়ে মূল ভূখণ্ডে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান। এসব হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান এখনো তার সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বেরই করেনি। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বাতাসংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সির এক বিশ্লেষণে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইরান এখনো তাদের নতুন প্রজন্মের মিসাইল ব্যবহার করেনি। এছাড়া তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের বেশ কয়েকটি ফিচার তুলে ধরেছেন। এসব কৌশলের মাধ্যমে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা কৌশলকে অকার্যকর করে দিয়েছে ইরান। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান একাধারে রাতে এবং দিনের বেলায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে নিজের পুনর্গঠনের সুযোগ পায়নি ইসরায়েল। এছাড়া প্রতারণামূলক অপারেশন এবং প্রকৃত হামলার সমন্বয় ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করেছে। ইসরায়েলে হামলায় ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং সুইসাইড ড্রোনসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করেছে ইরান। এমনকি তাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো থ্যাড, আয়রন ডোম এবং ডেভিডস স্লিংয়ের মতো আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করতে সক্ষম। ফলে ইসরায়েলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হারিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান বিরতিহীনভাবে বিভিন্ন ধরনের অপ্রত্যাশিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দখলকৃত অঞ্চলে বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে অপ্রত্যাশিতভাবে নিশানা করে যাচ্ছে। তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলা কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়। এগুলোদখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত সব অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। এছাড়া ইরানের কাছে লক্ষ্যবস্তুর একটি তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। এগুলো তাদের সামরিক ঘাঁটি, তেল শোধনাগার এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা চালানোর সুযোগ দিচ্ছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী বারবার সতর্ক করে বলেছে, দখলকৃত অঞ্চলের কোথাও আর নিরাপদ নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান এখনো তাদের দূরপাল্লার নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করেনি। ফলে ইসরায়েলের জন্য অপ্রত্যাশিত হামলার কৌশল অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মরো অথবা পালাও, ইসরায়েলের জন্য দুই বিকল্প দিল ইরান

ইসরায়েলের জন্য দুই বিকল্প দিয়েছে ইরান। দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) তাদের ভয়ংকর পরিণতি ভোগ অথবা পালিয়ে যাওয়ার জন্য দুটি বিকল্প বেছে নিতেম বলেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দ্য জুইশ প্রেসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আইআরজিসি এক বিবৃতি বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার মতো সক্ষমতা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নেই। এই পরিস্থিতিতে দখলদারদের সামনে দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রতিবেদনে ইসরায়েলিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে লুকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের দখল করা ফিলিস্তিনি ভূমি ছেড়ে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।। আইআরজিসি জানিয়েছে, এখন ইসরায়েলের আকাশ যেন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বরণ করে নেওয়ার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে। দখলদারদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকবে। চলমান সংঘাতে শহীদ হওয়া আইআরজিসির সাবেক প্রধান হোসেইন সালামির পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, এবার জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে ‘জাহান্নামের দরজা’ খুলে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাহিনীটি। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলে এক মুহূর্তের জন্যও সাইরেনের শব্দ থামবে না। দখলদারদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না এবং যত দ্রুত সম্ভব ফিলিস্তিনের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রকে ফের সতর্ক করলো রাশিয়া

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ পরিবেশকে ‌‘আরেকটি ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে ওই মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আলাদাভাবে দুই পক্ষকে সমর্থন করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ এবং তাদের বিরুদ্ধে হামলার কথা ভাবলেও, মস্কো- তেহরানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবেই দেখে। চলতি বছরের শুরুর দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে উভয় দেশ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইরান মস্কোকে ‘শাহেদ ড্রোন’ সরবরাহ করেছে; যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইরানে ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই পদক্ষেপকে উস্কানিমূলক বলেও উল্লেখ করেছে। এছাড়া বুধবার ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার জন্য আমেরিকাকেও সতর্ক করেছেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তিনি বলেন, এটি নাটকীয়ভাবে পুরো পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে।এমন প্রেক্ষাপট ইসরায়েল-ইরান সংকট নিয়ে মস্কো এবং ওয়াশিংটনকে সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সূত্র: বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাওয়া ইসরায়েলের ‘দুর্বলতার লক্ষণ’: খামেনি

চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাওয়া ইসরায়েলের ‘দুর্বলতার লক্ষণ’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ মন্তব্য করেন। পোস্টে তিনি বলেন, ‘ইহুদিবাদী সরকারের আমেরিকান বন্ধুরা এই দৃশপটে প্রবেশ করেছে এবং যে ধরনের কথা বলছে, তা ইহুদিবাদী সরকারের “দুর্বলতা এবং অক্ষমতার” লক্ষণ।’ খামেনি আরও বলেন, ‘আমি আমাদের প্রিয় জাতিকে বলতে চাই, শত্রু যদি বুঝতে পারে যে আপনি তাদের ভয় পান, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই আজ পর্যন্ত যে আচরণ করে এসেছেন তা চালিয়ে যান; আগের মতোই দৃঢ় মনোবল এবং আরও শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলুন।’ এরআগে গতকাল বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তায় খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থাপকের পাঠ করা এই বক্তব্যে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘ইরান, এর জনগণ এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা ব্যক্তিরা কখনোই এই জাতির সাথে হুমকির ভাষায় কথা বলেন না। কারণ, ইরানিরা আত্মসমর্পণকারী নয়।’

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে টেলিফোনে কথা বললেন পুতিন-জিনপিং

চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ফোনালাপে ইসরায়েলের ইরানবিরোধী পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন দুই বিশ্ব নেতা। সংঘাত থামাতে ভ্লাদিমির পুতিন আবারও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। খবর সিএনএন। ফোনালাপে পুতিনকে জিনপিং বলেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইসরায়েলকে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া দরকার। রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিন ও জিনপিং একমত যে, এই সংঘাতের বা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কোনো সামরিক সমাধান নেই। এগুলো কেবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়েই সমাধান সম্ভব। ক্রেমলিন উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, রাশিয়ার পক্ষ থেকে মধ্যস্থতার যেকোনো সম্ভাব্য উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তুতির কথা নিশ্চিত করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।’ অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির জন্য ইরান ও ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষে করে উত্তেজনা কমানোর জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া সংঘাত নিরসনে ‘বড় শক্তিগুলোর’ প্রতি উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট যা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি পরোক্ষ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে শি জিনপিং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়- বিশেষ করে যেসব বড় শক্তির সংঘাতরত পক্ষগুলোর ওপর বিশেষ প্রভাব আছে তাদের উচিত পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া, উল্টোটা নয়।’ এদিকে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ পরিবেশকে ‌‘আরেকটি ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে এ কথা বলেন তিনি। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আলাদাভাবে দুই পক্ষকে সমর্থন করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের কাছে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ এবং তাদের বিরুদ্ধে হামলার কথা ভাবলেও, মস্কো তেহরানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবেই দেখে। চলতি বছরের শুরুতে ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেখানে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে দুই দেশ। ইরান মস্কোকে ‘শাহেদ ড্রোন’ সরবরাহ করেছে যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইরানে ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই পদক্ষেপকে উস্কানিমূলক বলেও উল্লেখ করেছে। এছাড়া বুধবারই ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার জন্য আমেরিকাকেও সতর্ক করেছেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তিনি বলেছেন, ‘এটি নাটকীয়ভাবে পুরো পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে।’ এমন প্রেক্ষাপট ইসরায়েল-ইরান সংকট নিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনকে সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ইরানের হামলায় হাজার হাজার ইসরায়েলি গৃহহীন

ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়োথ আহরোনোথের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের অনেকেই বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে ও সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত কয়েক দিনে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে হাজারও মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৫ হাজার ১১০ জন মানুষ বর্তমানে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কেবল রাজধানী তেল আবিবেরই বাসিন্দা আছেন ৯০৭ জন। এদিকে, ইসরায়েলের আরেক সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ইরানের সামরিক বাহিনীর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। হামলার পরপরই অন্তত ২৭১ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহতদের মধ্যে ২২০ জনের শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে। এছাড়া ২৪ জন তীব্র উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন। এছাড়া বাকি সাতজনের শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে তেল আবিবের বীরসেবা এলাকার সরোকা মেডিকেল সেন্টারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৭১ জন আহত হয়েছেন। তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে ২ হাজার ৩৪৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের মধ্যে ৮৭ জনের শরীরে হালকা জখম ও ২ হাজার ১০৫ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। সূত্র: আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল।