
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে টেলিফোনে কথা বললেন পুতিন-জিনপিং
চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ফোনালাপে ইসরায়েলের ইরানবিরোধী পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন দুই বিশ্ব নেতা। সংঘাত থামাতে ভ্লাদিমির পুতিন আবারও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। খবর সিএনএন। ফোনালাপে পুতিনকে জিনপিং বলেন, যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইসরায়েলকে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া দরকার। রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিন ও জিনপিং একমত যে, এই সংঘাতের বা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কোনো সামরিক সমাধান নেই। এগুলো কেবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়েই সমাধান সম্ভব। ক্রেমলিন উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, রাশিয়ার পক্ষ থেকে মধ্যস্থতার যেকোনো সম্ভাব্য উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তুতির কথা নিশ্চিত করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন।’ অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতির জন্য ইরান ও ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষে করে উত্তেজনা কমানোর জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া সংঘাত নিরসনে ‘বড় শক্তিগুলোর’ প্রতি উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট যা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি পরোক্ষ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে শি জিনপিং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়- বিশেষ করে যেসব বড় শক্তির সংঘাতরত পক্ষগুলোর ওপর বিশেষ প্রভাব আছে তাদের উচিত পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্যোগ নেওয়া, উল্টোটা নয়।’ এদিকে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ পরিবেশকে ‘আরেকটি ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে এ কথা বলেন তিনি। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আলাদাভাবে দুই পক্ষকে সমর্থন করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের কাছে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ এবং তাদের বিরুদ্ধে হামলার কথা ভাবলেও, মস্কো তেহরানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবেই দেখে। চলতি বছরের শুরুতে ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেখানে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে দুই দেশ। ইরান মস্কোকে ‘শাহেদ ড্রোন’ সরবরাহ করেছে যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইরানে ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই পদক্ষেপকে উস্কানিমূলক বলেও উল্লেখ করেছে। এছাড়া বুধবারই ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার জন্য আমেরিকাকেও সতর্ক করেছেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। তিনি বলেছেন, ‘এটি নাটকীয়ভাবে পুরো পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে।’ এমন প্রেক্ষাপট ইসরায়েল-ইরান সংকট নিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনকে সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ইরানের হামলায় হাজার হাজার ইসরায়েলি গৃহহীন
ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়োথ আহরোনোথের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাদের অনেকেই বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে ও সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত কয়েক দিনে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে হাজারও মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৫ হাজার ১১০ জন মানুষ বর্তমানে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কেবল রাজধানী তেল আবিবেরই বাসিন্দা আছেন ৯০৭ জন। এদিকে, ইসরায়েলের আরেক সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ইরানের সামরিক বাহিনীর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। হামলার পরপরই অন্তত ২৭১ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহতদের মধ্যে ২২০ জনের শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে। এছাড়া ২৪ জন তীব্র উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন। এছাড়া বাকি সাতজনের শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের দিকে তেল আবিবের বীরসেবা এলাকার সরোকা মেডিকেল সেন্টারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৭১ জন আহত হয়েছেন। তবে তাদের অবস্থা গুরুতর নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রান্তে ২ হাজার ৩৪৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের মধ্যে ৮৭ জনের শরীরে হালকা জখম ও ২ হাজার ১০৫ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। সূত্র: আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল।

ইরানে হস্তক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করলো রাশিয়া
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ পরিবেশকে “আরেকটি ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে,” রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে একথা বলেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আলাদাভাবে দুই পক্ষকে সমর্থন করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের কাছে "নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ” এবং তাদের বিরুদ্ধে হামলার কথা ভাবলেও, মস্কো তেহরানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবেই দেখে। এই বছরের শুরুতে, ভ্লাদিমির পুতিন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেখানে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছে দুই দেশ। ইরান মস্কোকে ‘শাহেদ ড্রোন’ সরবরাহ করেছে যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইরানে ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই পদক্ষেপকে উস্কানিমূলক বলেও উল্লেখ করেছে। এছাড়া গতকালই ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার জন্য আমেরিকাকেও সতর্ক করেছেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। "এটি নাটকীয়ভাবে পুরো পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে," তিনি বলেছেন। এমন প্রেক্ষাপট ইসরায়েল-ইরান সংকট নিয়ে মস্কো এবং ওয়াশিংটনকে সংঘর্ষের পথে ঠেলে দিচ্ছে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সূত্রঃ বিবিসি

সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের জেরে সম্ভাব্য যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তুরস্ক। দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা জোরদারের পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। খবর আলজাজিরার। তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, দেশে উৎপাদিত রাডার ও অস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে সমন্বিত আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক। এর প্রধান লক্ষ্য হলো সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রস্তুতিকে উচ্চ পর্যায়ে রাখা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রটি রয়টার্সকে জানায়, ইসরায়েল যখন দক্ষিণ-পূর্ব প্রতিবেশী দেশ ইরানে হামলা শুরু করে, তখন তুরস্কের কুইক রিঅ্যাকশন অ্যালার্ট বিমানগুলো উড্ডয়ন করে। ইসরায়েলি আকাশসীমা লঙ্ঘনের সম্ভাবনার মধ্যেও এই বিমানগুলো সীমান্ত বরাবর টহল অব্যাহত রেখেছে। সূত্রটি আরও উল্লেখ করেছে, তুরস্ক তার সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করছে। ইরান থেকে কোনো অনিয়মিত অভিবাসন প্রবাহ লক্ষ্য করা না গেলেও সীমান্ত নজরদারি বাড়িয়েছে আঙ্কারা। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে তুরস্কের এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক সংঘাতের সম্ভাব্য বিস্তারকেই নির্দেশ করে।

দৃঢ়তার সঙ্গে ইরানি জনগণকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান খামেনির
ইরানি জনগণকে ভয় না পেয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন, ‘যদি শত্রু বুঝতে পারে যে, আপনারা তাদের ভয় পান তাহলে তারা ছেড়ে দেবে না।’ খবর-বিবিসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স- এ এক পোস্টে জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আজ পর্যন্ত আপনাদের যে আচরণ ছিল তা চালিয়ে যান। আরও দৃঢ়তার সঙ্গে চালিয়ে যান।’ এদিকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া অপর বার্তায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘কঠিন দিনগুলো আমরা কাটিয়ে উঠব’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় তিনি সরকারের প্রতিটি অংশকে ‘ইরানের জন্য কাজ করার’ নির্দেশ দিয়েছেন। মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘সব মন্ত্রণালয় এবং সরকারি সব এজেন্সিকে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করে ইরানের জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে। কোনো কিছুর প্রতি বিমুখ না হয়ে আপনাদের ধৈর্য ও সমর্থন দরকার। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরের কৃপায় এবং সহানুভূতি ও সংহতির সাহায্যে আমরা এই কঠিন দিনগুলো কাটিয়ে উঠব।’ ইরানের আহমেদাবাদের কাছে নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় (শহীদ আহমাদি রোশন পারমাণবিক স্থাপনা) হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী বুধবার রাতে ইরানের নাতাঞ্জ শহরে একটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, এটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলছে, এই স্থাপনায় এমন বিশেষ যন্ত্রাংশ ও উপকরণ রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার হয়। সেখানে এমন প্রকল্প চলছে যা পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে নাতাঞ্জে এর আগেও হামলা হয়েছে। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রথম দিকে ১৪ জুন সেখানে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই সময় ইরানে ইসরায়েলের হামলায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল নিহত হন। তেহরান থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নাতাঞ্জ ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে ২০২১ সালের এপ্রিলে এবার হামলা হয়েছিল। এটি বাংকারযুক্ত একটি স্থাপনা। ২০০২ সালে কেন্দ্রটির কথা প্রথম প্রকাশ পায়। এই স্থাপনার দুটি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে প্রায় ৭০টি সেন্ট্রিফিউজের সারি আছে। অন্যদিকে ইসরালের হোলোন, তেল আবিব ও রামাতগনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হোলোন শহরে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রামাতগন এলাকায় প্রায় ২০ জন হালকা আঘাত পেয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তেল আবিবও হামলার শিকার হয়েছে। ইসরায়েলের সাহায্য সংস্থাগুলো বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইরানি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি ছিল ‘ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর ১৪তম শক্তিশালী সমন্বিত হামলা’ যা তারা বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনার ওপর চালিয়েছে। তবে এর চেয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প রক্ষার দায়িত্ব নেবেন পুতিন
ইরান-ইসরায়েলের হামলা পাল্টা-হামলা চলছে। ৭ দিনের এ সংঘাতে দুপক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইসরায়েল ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করছে। অন্যদিকে ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চালাচ্ছে পাল্টা হামলা। তবে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক প্রতিবেদনে এমনটা জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস। খবর অনুযায়ী, পুতিন বলেছেন, ‘ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক ভালো। তাই আমরা ইরানকে একটি প্রস্তাব দিয়েছি। যদি ইরান চায়, তাহলে রাশিয়া ইরানের পরমাণু প্রকল্পের কাজ নিজের তত্ত্বাবধানে চালাতে পারে। ইরানের ইউরেনিয়াম যাতে শুধু শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহার করা হয়, সে বিষয়েও রাশিয়া নজর রাখতে চায়। তবে এ সব কিছুই হবে যদি ইরান রাজি হয়।’ তিনি আরও জানান, ইরানের বুশেহার শহরে দুটি পারমাণবিক চুল্লি তৈরি হচ্ছে। এ কাজের দায়িত্বে আছেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গেওে ফোনে কথা বলেছেন পুতিন। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, বুশেহারের ওই এলাকা তারা আক্রমণ করবে না। রাশিয়া কি ইরানকে অস্ত্র দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, জানুয়ারিতে রাশিয়া ও ইরান একটি চুক্তি করেছে। তবে সেই চুক্তিতে অস্ত্র দেওয়ার কথা নেই। তাছাড়া ইরান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার কাছে অস্ত্র চায়নি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইরানের নিরাপত্তা আর ইসরায়েলের উদ্বেগ, দুটি বিষয়ই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইরান যাতে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে পারে আর ইসরায়েল যেন তাতে ভীত না হয়- এ দুই বিষয় একসঙ্গে সমাধান করা সম্ভব।’

ইরানের হামলার ভয়াবহতা বেড়েছে, হতাহত বহু ইসরায়েলি
ইরান-ইসরায়েল হামলা পাল্টা হামলা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। ৭ দিনের এ সংঘাতে দুপক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইসরায়েল ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে টার্গেট করছে। অন্যদিকে ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চালাচ্ছে পাল্টা হামলা। বৃহস্পতিবার ভোরে চালানো ইরানের সর্বশেষ হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এই হামলায় তেলআবিবের একটি হাসপাতালসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানের সর্বশেষ হামলা ছিল এ কয়দিনের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক। এদিন হতাহতের সংখ্যা অন্য সব হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্তত ১৩৭ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদিকে বুধবার রাতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করে বলেছেন, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এক ভাষণে তিনি বলেন, ইরানের হামলায় ইসরায়েল অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা মর্মান্তিক ক্ষতি ভোগ করছি। দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের বরাতে আনাদোলু এজেন্সি নেতানিয়াহুর ভাষণ প্রকাশ করে। নেতানিয়াহু তার দৈনিক ভিডিও বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, গত রাতসহ আমরা ক্রমাগত যোগাযোগে আছি। আমাদের মধ্যে খুব উষ্ণ আলাপ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে দেশের অভ্যন্তরীণ ফ্রন্ট শক্তিশালী, জনগণ অটল এবং ইসরায়েল আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। এ ছাড়া গাজা উপত্যকায় তীব্র লড়াই চলছে বলে উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা লড়াই চালিয়ে যাব যতক্ষণ না সবাইকে ঘরে ফিরিয়ে আনা যায় এবং হামাস পুরোপুরি পরাজিত হয়।’

চীন থেকে ‘রহস্যময়’ বিমানের উড্ডয়ন, ইরানের কাছে গিয়ে রাডার থেকে ‘উধাও’
ইসরায়েলে হামলার পর এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চীন। এরমধ্যে দেশটি থেকে ইরানে রহস্যময় বিমান পাঠানো হয়েছে। এ বিমান নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে ইসরায়েলের হামলার ঠিক একদিন পর চীন থেকে একটি রহস্যজনক কার্গো বিমান ইরানের দিকে রওনা হয়েছে। এরপর আরও একটি বিমান চীনের উপকূলীয় শহর থেকে ছেড়ে গেছে। এছাড়া সোমবার সাংহাই থেকে তৃতীয় আরও একটি বিমান ইরানে গেছে। এ নিয়ে তিন দিনে ৩টি বোয়িং ৭৪৭ বিমান ইরানে পাঠানো হয়েছে। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রতিটি বিমান উত্তর চীন পেরিয়ে কাজাখস্তান, তারপর উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান হয়ে ইরানের দিকে যাত্রা করেছে। এসব বিমান ইরান সীমান্তের কাছে গিয়ে হঠাৎ রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লাইট পরিকল্পনায় বিমানগুলোর গন্তব্য লুক্সেমবার্গ দেখানো হয়েছে। তবে বাস্তবে কোনো বিমানই ইউরোপের আকাশের কাছে যায়নি। যুদ্ধের মধ্যে ইরানে বিমান পাঠানোয় নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এসব বিমানে কী পাঠানো হয়েছে তা নিয়েও নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। এভিয়েশন বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বোয়িং ৭৪৭ বিমানগুলো সাধারণত সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সরকারিভাবে চুক্তিবদ্ধ পরিবহনেও ব্যবহার করা হয়। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় চীনের কূটনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. আন্দ্রেয়া ঘিসেল্লি বলেন, চীনের পক্ষ থেকে ইরানকে সহায়তার প্রত্যাশা অনেকের মধ্যেই রয়েছে এবং এই কার্গো ট্রান্সপোর্টগুলো সেই সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত দিতে পারে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থার (INSS) গবেষক তুভিয়া গেরিং বলেন, চীনা সামরিক সরঞ্জাম ইরানে পৌঁছেছে কি না, তা পুরোপুরি নিশ্চিত নয় তবে সম্ভাবনাটি উড়িয়ে দেওয়া উচিত হবে না। এদিকে ফ্লাইট অপারেটর লুক্সেমবার্গভিত্তিক কার্গোলাক্স দাবি করেছে, তাদের ফ্লাইটগুলো ইরানি আকাশপথ ব্যবহার করেনি। তবে তারা বিমানের কার্গো নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

হাসপাতাল নয়, সেনা ও গোয়েন্দা স্থাপনা ছিল হামলার লক্ষ্য: ইরান
ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলের সরোকা হাসপাতাল। দেশটির দাবি, ইরান ইসরায়েলের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের এমন দাবির জবাব দিয়েছে ইরান। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি কর্মকর্তা ও মিডিয়া সূত্র দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের জবাবে ইরান এ দাবি করেছে। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলের বিয়েরশেবায় অবস্থিত সরোকা মেডিকেল সেন্টারে আঘাত হেনেছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরোকা হাসপাতালটি গাজায় অভিযানের সময় আহত ইসরায়েলি সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ইরানি সূত্রগুলো জানিয়েছে, হাসপাতালটি হামলার লক্ষ্য ছিল না। প্রতিবেতনে বলা হয়েছে, সরোকা হাসপাতালটি ইসরায়েলের দুটি প্রধান সামরিক স্থাপনার মাঝে অবস্থিত। এগুলো হলো আইডিএফের প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তর এবং সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার। এ দুটি স্থাপনায় গাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্কে অবস্থিত। এই স্থাপনাগুলো ইসরায়েলের সাইবার অপারেশন, ডিজিটাল কমান্ড সিস্টেম এবং সামরিক গোয়েন্দা অবকাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। ইরানি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাছাকাছি বিস্ফোরণের শকওয়েভ থেকে হাসপাতালটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এটি সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। ইরানের দাবি, সামরিক কমান্ড নেটওয়ার্কের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরাতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে বেসামরিক অবকাঠামোর সঙ্গে মিথ্যাভাবে যুক্ত করে মানসিক যুদ্ধে চালনায় লিপ্ত রয়েছে ইসরায়েল। ইরানি সূত্রগুলো বলেছে, এই মিথ্যা বর্ণনা একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রচারণার অংশ, যার লক্ষ্য ইসরায়েলের সামরিক ইমেজ পরিশুদ্ধ করা এবং এর গোয়েন্দা অবকাঠামোর ওপর আঘাতের মাত্রা গোপন করা।

মিসাইল ছুড়ল উত্তর কোরিয়া
রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের সুনান থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ১০টি মাল্টিলঞ্চার মিসাইল ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে তারা এ মিসাইলগুলো ছুড়ে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী। তবে মিসাইল ছোড়ার ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানায়নি দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী। উত্তর কোরিয়া যেসব মাল্টিলঞ্চার মিসাইল নিক্ষেপ করেছে সেগুলো স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল হিসেবে বিবেচনা করে দক্ষিণ কোরিয়া। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজ্যুলেশন অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করতে পারবে না। তবে দেশটি এসব নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করে না। সূত্র: রয়টার্স

কঠিন দিনগুলো আমরা কাটিয়ে উঠবো: ইরানের প্রেসিডেন্ট
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় সরকারের প্রতিটি অংশকে ইরানের জন্য কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, সব মন্ত্রণালয় ও সরকারি সব এজেন্সিকে তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ও সম্পদ ব্যবহার করে ইরানের জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে। কোনো কিছুরপ্রতি বিমুখ না হয়ে আপনাদের ধৈর্য ও সমর্থন দরকার। পেজেশকিয়ান বলেন, ঈশ্বরের দয়ায়-সহানুভূতি ও সংহতির সাহায্যে আমরা এই কঠিন দিনগুলো কাটিয়ে উঠবো। এদিকে, ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘরিবাবাদী যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করে তবে ইরানের হাতে আর কোনো পথ থাকবে না। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের অস্ত্র ব্যবহার করবো, আগ্রাসীদের শিক্ষা দেবো ও নিজেদের রক্ষা করবো। তিনি আরও বলেন, আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পরামর্শ হলো—যদি ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে না পারে, অন্তত পাশে দাঁড়িয়ে থাকুক। ইরানের সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের হাতে সব ধরনের বিকল্প প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। সূত্র: বিবিসি

ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের ক্যানসার: উত্তর কোরিয়া
ইরানের ওপর দখলদার ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এ হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এ নিন্দা জানান। খবর সিএনএন’র। তিনি বলেন, ইরানের বেসামরিক, পারমাণবিক এবং জ্বালানি স্থাপনায় ইসরাইলের সামরিক হামলায় গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে পিয়ংইয়ং। পাশাপাশি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ইসরাইলি হামলায় বেসামরিক নাগরিক হত্যা মানবতার বিরুদ্ধে এক ক্ষমাহীন অপরাধ। ইসরাইল রাষ্ট্রীয়ভাবেই সন্ত্রাসবাদে জড়িত, যা এই অঞ্চলে একটি নতুন সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যকার চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে হস্তক্ষেপ না করতে সতর্ক করেছে উত্তর কোরিয়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বিশ্বে বর্তমান গুরুতর পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থিত ও পৃষ্ঠপোষকতাহীন ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য একটি ক্যান্সার সদৃশ সত্তা। তারা বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংসের মূলহোতা। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের বৈধ সার্বভৌম অধিকার এবং আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে যুদ্ধের আগুন উসকে দিচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার এই মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, ইরানের প্রতি তার ধৈর্য ফুরিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্রদের হুঁশিয়ারি দিয়ে পিয়ংইয়ং বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে একটি অনিয়ন্ত্রণযোগ্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে।

ইসরায়েলের কমান্ড সেন্টার-গোয়েন্দা দপ্তরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কমান্ড সেন্টার, গোয়েন্দা বিভাগের সদর দপ্তর এবং সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার একটি শিবিরে আঘাত হেনেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম ইরনা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কমান্ড সেন্টার, গোয়েন্দা বিভাগের সদর দপ্তর এবং সামরিক গোয়োন্দা শাখার শিবির— এই তিন স্থাপনার অবস্থান ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বিয়ের শেভায়। ইরনা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে ইরানের সামরিক বাহিনী। “এটা ছিল নিখুঁত এবং সরাসরি আঘাত। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে এই তিন সামরিক স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” “গোয়েন্দা বিভাগের সদরদপ্তরের কাছে সোরোকা নামের একটি হাসপাতাল আছে। সেখানে কোনো আঘাত করা হয়নি, তবে ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দের শকওয়েভে হাসপাতালটির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে”, বলা হয়েছে ইরনার প্রতিবেদনে। ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করছে— অভিযোগ তুলে গত ১৩ জুন শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী (আইএএফ)। এ অভিযানকে ‘অপারেশন দ্য রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়েছে ইসরায়েল। এখনও চলছে ‘অপারেশন দ্য রাইজিং লায়ন’। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে এ পর্যন্ত দেশটিতে নিহত হয়েছে ৬ শতাধিক এবং আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি। এদিকে ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’ নামের পাল্টা সেনা অভিযান শুরু করে ইরান। গত ৫ দিনে সে অভিযানে আহত ও নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন, কিন্তু তাদের হালনাগাদ সংখ্যা প্রকাশ করছে না ইসরায়েল। সূত্র : আলজাজিরা

ইসরায়েলে কমপক্ষে ৬৫ জন আহত: এমডিএ
ইরানের সাম্প্রতিক হামলার পর ইসরায়েলের প্যারামেডিকরা কমপক্ষে ৩২ জনকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, ইসরায়েলের জরুরি সেবা বিভাগ ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) এ তথ্য জানিয়েছে। এমডিএ জানিয়েছে, প্রায় ৮০ বছর বয়সী একজন পুরুষ এবং প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন নারীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেইসাথে আরো ৩০ জন হালকা আঘাত পেয়েছেন, বেশিরভাগই বিস্ফোরণ এবং গুলি থেকে আঘাত পেয়েছেন। আরেকটি প্রতিবেদনে, এমডিএ প্যারামেডিক ইয়োসি শিলো বলেছেন যে তার দল একটি ভবনে 'ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ' দেখেছেন। তিনি আরো বলেন, প্রায় ৬০ বছর বয়সী একজন নারীকে 'গুরুতর আহত, তবে স্থিতিশীল অবস্থায়' হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

হ্যালো আমেরিকা, তোমার দিকে প্রেতাত্মা ছুটে আসছে : যুক্তরাষ্ট্রকে শি জিনপিং
যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এবারের এক্স পোস্টে তিনি স্পষ্ট বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের পতনের ভবিষ্যদ্বাণী দেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক্সে শি জিনপিং লেখেন, ‘চীন জানে যে মহাশক্তিগুলো তাদের যুদ্ধযন্ত্রের কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।’ তিনি পূর্বেকার রাজবংশের ধ্বংসের ইতিহাস স্মরণ করেন। যুদ্ধবাজ মনোভাব কীভাবে একটি জাতিকে ধ্বংস করেছে তার বর্ণনা দেন। শি লিখেন, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে শক্তিশালী কিন রাজবংশ যুদ্ধরত রাজ্যগুলোকে একত্র করে। তারা মহান প্রাচীর নির্মাণ করে এবং চীনের প্রথম সম্রাটের কাছে টেরাকোটা সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করে। কিন্তু সৈন্যদের অবিরাম যুদ্ধে বাধ্য করে এবং সাম্রাজ্যের গৌরবের জন্য জনগণের রক্ত শুষে নেওয়ার পর এই রাজবংশ মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যায়। অষ্টম শতাব্দীতে পরাক্রমশালী তাং রাজবংশ বিশ্বের দূরবর্তী প্রান্ত থেকে কর আদায় করত। কিন্তু বিজয়ের নেশায় মত্ত হয়ে এর সেনাবাহিনী মধ্য এশিয়ার গভীরে অভিযান চালায়। যার ফলে সামরিক দলগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি পায়। যখন দুর্বল রাষ্ট্র আর তাদের ক্ষুধা মেটাতে পারেনি তখন আন লুশানের বিদ্রোহ রাজধানী চাংআনকে পুড়িয়ে দেয় এবং সাম্রাজ্যকে অপরিবর্তনীয় পতনের দিকে ঠেলে দেয়। ১৩ শতাব্দীতে চেঙ্গিস খানের অজেয় অশ্বারোহী বাহিনী ইউরোপ থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিজয় তাড়া করে। কিন্তু অবিরাম সম্প্রসারণ সাম্রাজ্যকে যত দ্রুত বিজয় এনে দেয়, তত দ্রুত তা ক্ষয়প্রাপ্ত করে। এটিকে সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী রাজবংশগুলোর একটিতে পরিণত করে। ৫০০০ বছরের ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, যা আমেরিকা শিখতে অস্বীকার করে। সাম্রাজ্য শত্রুর কারণে পতন হয় না, তারা তাদের যুদ্ধযন্ত্রের অতৃপ্ত ক্ষুধার নিচে ভেঙে পড়ে। ৭৫০টি সামরিক ঘাঁটি দিয়ে বিশ্বকে ঘিরে রাখা এবং প্রতি বছর প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার ধোঁয়ায় উড়ে যাওয়ার সঙ্গে... আপনি (মার্কিন সাম্রাজ্য) কি ইতিমধ্যে আপনার প্যারেডে সেই প্রেতাত্মার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন?

ইরানের হামলায় ইসরায়েলের ৪ স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
নতুন করে ইরানের চালানো হামলায় ইসরায়েলের অন্তত চারটি জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল ইসরায়েলে তিনটি জায়গা, যা গুশ দান নামে পরিচিত। এই জায়গাটি বৃহত্তর তেল আবিবের একটি অংশ। বৃহস্পতিবারের (১৯ জুন) হামলায় ওই এলাকায় বেশকিছু ভবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া হলনে একটি ভবন ধসে পড়েছে এবং সোরোকা হাসপাতালেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি ইসরায়েলের অন্যতম বড় হাসপাতাল। মূলত গাজার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আহত অনেক সেনাকে এখানে ভর্তি করা হয়েছে। মূলত হাসপাতালের পাশের একটি ভবনে আঘাত হানে ইরান। কিন্তু হাসপাতালেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবং চিকিৎসা কর্মীরা জনসাধারণকে আঘাতস্থলের কাছে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা টেলিগ্রামে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার "প্রধান লক্ষ্যবস্তু" ছিল "বৃহৎ (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স (আইডিএফ C4I) সদর দপ্তর এবং গাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্কে অবস্থিত সামরিক গোয়েন্দা শিবির"। সংস্থাটি বলছে, এই সদর দপ্তর বের শেভার সোরোকা হাসপাতালের পাশে অবস্থিত। ইরনা দাবি করেছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে সৃষ্ট শকওয়েভ থেকে হাসপাতালটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে সামরিক অবকাঠামো সুনির্দিষ্ট এবং সরাসরি লক্ষ্যবস্তু ছিল। সূত্র :আল জাজিরা

এ সপ্তাহেই ইরানে হতে পারে মার্কিন হামলা
মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সেই বরাতে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, বিষয়টি সম্পর্কে পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে ব্লুমবার্গ। সূত্র সম্ভাব্য হামলার দিনক্ষণও জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আগামী দিনে ইরানে সম্ভাব্য হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিছু সূত্র বলছে, সপ্তাহান্তে হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র বলছে, পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল এবং এখনো পরিবর্তন হতে পারে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর সম্ভাব্য সামরিক হামলার পরিকল্পনায় ব্যক্তিগতভাবে অনুমোদন দিলেও এখনো চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি। হোয়াইট হাউস-ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা অপেক্ষা করতে চান—তেহরান শেষ পর্যন্ত তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম ত্যাগ করে কি না, সেটাই তিনি আগে দেখতে চান। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এটা করতেও পারি, নাও করতে পারি। আগামী সপ্তাহটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে, হয়তো তারও কম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসবে।’ বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরানের সুসজ্জিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে ফোর্ডো সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র হতে পারে সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু। পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এ স্থাপনাটি এতটাই সুরক্ষিত যে, সাধারণ বোমা দিয়ে এর ক্ষতি করা কঠিন—এটি ধ্বংস করতে বিশেষ “বাঙ্কারবাস্টার” বোমার প্রয়োজন হবে। তবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আমরা কখনোই আত্মসমর্পণ করব না। যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো সামরিক আগ্রাসনের ফল হবে ভয়াবহ ও অপূরণীয়।

ইসরায়েলের হাসপাতালে হামলা 'ইচ্ছাকৃত' এবং 'অপরাধমূলক', বললেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইসরায়েলের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল বিয়ারশেবার সোরোকা হাসপাতালে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে "ইচ্ছাকৃত" এবং "অপরাধমূলক" অভিহিত করে এক্সে পোস্ট করেন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিয়ারশেবার সোরোকা মেডিকেল সেন্টারে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরে এ পোস্ট করেন। “ইরান বে'র শেভার সোরোকা হাসপাতালে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে। কোনও সামরিক ঘাঁটি নয়। একটি হাসপাতাল। এটি ইসরায়েলের সমগ্র নেগেভ অঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র। ইচ্ছাকৃত। অপরাধমূলক। বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু। বিশ্বকে অবশ্যই কথা বলতে হবে,” শ্যারেন হাসকেল এক্সে লেখেন। সূত্র: টাইমস অফ ইসরায়েল

সাতসকালে ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা ইরানের, জেরুজালেম-তেল আবিবে বিস্ফোরণ
সাতসকালে ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার পর জেরুজালেম ও তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এই খবর জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমআল জাজিরা। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শনাক্ত করেছে এবং ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা 'হুমকি' প্রতিহত করার জন্য কাজ করছে। নতুন করে ইরানের এই হামলার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। একইসাথে "পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত" সেখানে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের খবর পেয়ে চিকিৎসকরা সেখানে ছুটে গেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দেশটির বীরশেবার সোরোকা হাসপাতালে আঘাত হানে। এছাড়া মধ্য ইসরায়েলজুড়ে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি স্থানে সরাসরি আঘাত হানার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানি ভূখণ্ড থেকে কমপক্ষে ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।

ওয়াশিংটন ইসরায়েলের খারাপ আচরণে মদদ দিয়ে আসছে : মার্কিন সেনা
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট সামনে আসার পর মার্কিন পররাষ্ট্র সদর দপ্তর পেন্টাগন একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে পুরো ঘটনায় অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে পেন্টাগন। অপসারিত ওই কর্মকর্তা হলেন কর্নেল নাথান ম্যাক্করম্যাক। তিনি মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের জে-৫ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং ডিরেক্টরেটের লেভান্ত ও মিসর শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। কর্নেল ম্যাক্করম্যাকের নামে আংশিক মিল থাকা একটি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক পোস্টে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে খারাপ মিত্র’ বলা হয়। জিউইশ নিউজ সিন্ডিকেট (জেএনএস) প্রথম এ খবর প্রকাশ করে। এরপর বিষয়টি সামনে আসতেই পেন্টাগন তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়। খবর আনাদোলু এজেন্সির। পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা জেএনএস-কে জানান, বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ম্যাক্করম্যাক আর জয়েন্ট স্টাফের দায়িত্বে থাকছেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। পরে মিডল ইস্ট আই ওই পোস্টগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরে জানায়, ওই এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে একাধিক বার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার মিত্রদের তীব্র সমালোচনা করা হয়। নেতানিয়াহু ও তার ঘনিষ্ঠদের ‘ইহুদি শ্রেষ্ঠত্ববাদী দল’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগ তোলা হয়, তারা ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন ও জাতিগতভাবে নির্মূল করতে চান। পোস্টগুলোতে আরও অভিযোগ করা হয়, ওয়াশিংটন বহু বছর ধরে ইসরায়েলের ‘খারাপ আচরণে’ মদদ দিয়ে আসছে এবং পশ্চিমা দেশগুলো হলোকাস্ট নিয়ে অপরাধবোধ থেকে ইসরায়েলকে সমালোচনার বাইরে রাখে। সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্নেল ম্যাক্করম্যাক তার পোস্টগুলোতে ইসরায়েলকে ‘হত্যাযজ্ঞপ্রিয় গোষ্ঠী’ বলেও বর্ণনা করেছিলেন এবং দাবি করেন, ইসরায়েলের নীতির কারণে বহু বছর ধরে জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার অভিযোগ উঠে আসছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন হ্যাকের অভিযোগ
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল হ্যাক করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। দেশটির টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করে। খবর: বিবিসির। এর আগে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারের সময় হঠাৎ একটি ভিডিওতে ‘জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে ‘জেগে ওঠার’ আহ্বান জানানো হয়। দর্শকদের অনেকেই এই ভিডিও দেখেছেন বলে জানা গেছে। এরপর এক বিবৃতিতে দর্শকদের সতর্ক করে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, কেউ যদি টেলিভিশন দেখার সময় কোনো অপ্রাসঙ্গিক বার্তা দেখতে পান, তাহলে ধরে নিতে হবে—শত্রুপক্ষ স্যাটেলাইটের সিগন্যালে বাধা দিয়েছে। এদিকে যে ভিডিও সম্প্রচারিত হয়েছিল, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ইরান সরকারকে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, ‘নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করুন।’ তবে ভিডিওটির সূত্র এবং এই হ্যাকিংয়ের পেছনে কারা জড়িত তা এখনো জানা যায়নি। ভিডিওটির ওপরের ডান পাশে একটি সিংহ প্রতীক দেখা গেছে। পাশাপাশি গত ১৩ জুন ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ অভিযানে নিহত ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ছবিও দেখানো হয়েছে। এছাড়াও ভিডিওতে ২০২২ সালে ইরানব্যাপী ছড়িয়েপড়া বিক্ষোভের একাধিক দৃশ্যও ছিল। ওই সময় যথাযথভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল দেশটি।

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছি : ইরান
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার দাবি জানিয়েছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। বুধবার (১৮ জুন) রাতে আইআরজিসির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে জর্ডানের সংবাদমাধ্যম রয়্যাল নিউজ। এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানিয়েছে, তারা দীর্ঘ পরিসরের সেজ্জিল মিসাইল ব্যবহার করে ইসরায়েলের ১২টি মিসাইল ধ্বংস করেছে। এছাড়া এই অভিযানে ইসরায়েলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। আইআরজিসি আরও বলছে— ‘ইসরায়েলের আকাশ শূন্য’ করে দেওয়া হয়েছে তাদের মিসাইল ও ড্রোনের পথ খোলা রাখতে। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী মিসাইল ও ড্রোন মিলিয়ে ‘স্মার্ট’ ও ‘নির্ভুল’ হামলা চালানো হয়েছে ইসরায়েলের সামরিক কেন্দ্র, বিমানঘাঁটি ও ডিফেন্স অবকাঠামোতে। হামলার পর আইআরজিসি ঘোষণা করেছে, ‘ইসরায়েলের প্রতি আমাদের মিসাইল আক্রমণ লক্ষ্যভিত্তিক ও অব্যাহত থাকবে’ এবং ‘জায়নিস্টদের নরকের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।’ এর আগে, ইরানি সংবাদ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানিয়েছিল, ইরানের ফাতাহ মিসাইলগুলো ইসরায়েলের মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ মিসাইল হামলা প্রমাণ করে আমরা অধিকৃত অঞ্চলগুলোর আকাশের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছি। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সর্বশেষ হামলায় তেলআবিবের উপর বিস্ফোরণ ঘটে এবং একটি পার্কিং লটে আগুন ধরে যায়। ইসরায়েল কৌশলগত স্থানে আঘাতের তথ্য গোপন করায় অন্য কোনো আঘাত হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। এদিকে এর আগে ইরানের আকাশসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির অবস্থান শনাক্ত করার দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (১৭ জুন) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এতে তিনি কোথায় খামেনি লুকিয়ে রয়েছেন তা শনাক্ত করার দাবি করেছেন। ট্রাম্প লিখেছেন, তিনি একটি সহজ লক্ষ্যবস্তু, কিন্তু সেখানে নিরাপদে আছেন- আমরা তাকে হত্যা করছি না, অন্তত এখন নয়।

খামেনিকে হত্যা নিয়ে আমি কোন আলোচনা করতে চাই না: পুতিন
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির হত্যাকাণ্ডের সম্ভাবনা সম্পর্কে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলে রুশ নেতা বলেন: "আমি এই সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতেও চাই না। আমি চাই না। "আমি এই সব শুনছি, কিন্তু আমি এটি নিয়ে আলোচনা করতেও চাই না," বুধবার (১৮ জুন) সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি অর্থনৈতিক ফোরামের ফাঁকে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, "ইরান কি রাশিয়ার সাহায্য চেয়েছে" এখন পর্যন্ত তারা নিজেদের শক্তিতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, যদি সাহায্য চায় অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াব। সূত্র: বিবিসি /এমআর

আমেরিকার সঙ্গে লড়ার জন্য সামরিক ক্ষমতা সংরক্ষিত রাখছে ইরান
ইরান-ইসরায়েল হামলা-পাল্টা হামলা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি দ্রুত আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এবং তা যে কোনো সময় আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মধ্যপ্রাচ্য কৌশলগত গবেষণা কেন্দ্রের বিশ্লেষক আব্বাস আসলানি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুদ্ধের পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে এটি নতুন একপর্যায়ের আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যার প্রভাব শুধু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।’ পারস্যের হরমুজ প্রণালি ইরানের একটি কৌশলগত শক্তি উল্লেখ করে আসলানি বলেন, আন্তর্জাতিক গুরাত্বপূর্ণ এই জলপথে ইরানের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ইরান এখনো হরমুজ প্রণালিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেনি, এমনকি সামরিক শক্তির পুরো অংশও মাঠে নামায়নি। তিনি আরও জানান, তেহরান ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু সামরিক ক্ষমতা সংরক্ষিত রেখেছে, যেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়লে সেগুলো ব্যবহার করা যায়। আসলানির ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি সংঘাতে জড়ায়, তবে ইরান অবিলম্বে নতুন এক সংঘাত শুরু করবে। এই পর্বে তেহরানের লক্ষ্য হবে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক স্বার্থ ও সামরিক ঘাঁটিগুলো। তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করলেই পাল্টা হামলা চালাবে ইরান। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই সংঘাতে শুধু ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং পুরো অঞ্চলজুড়ে আরও অনেক পক্ষ জড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থায় কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখা এবং উত্তেজনা প্রশমন করাই হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রধান দায়িত্ব।