
তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আইএস- এর জঙ্গি আস্তানায় সামরিক বাহিনীর বিশেষ অভিযান চলাকালে উগ্রবাদী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ছয় সদস্য এবং তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন বছরের ছুটিকে কেন্দ্র করে অমুসলিমদের ওপর বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে সোমবার রাতভর ১৩টি প্রদেশে বিশেষ অভিযান চালানো হয়।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকাইয়া এক বিবৃতিতে জানান, নিরাপত্তা বাহিনী আইএসের আস্তানাগুলোতে মোট ১০৮টি পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে ইস্তাম্বুলের দক্ষিণে ইয়ালোভা প্রদেশের এলমালিক গ্রামে পুলিশের সাথে জঙ্গিদের তীব্র বন্দুক লড়াই সংঘটিত হয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত ২টার দিকে এলমালিক গ্রামের একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। একটি নির্দিষ্ট বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করলে ভেতর থেকে জঙ্গিরা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং পুলিশের পাল্টা গুলিতে ছয় আইএস জঙ্গি মারা যায়।
সংঘর্ষে আরও আটজন পুলিশ সদস্য ও একজন নৈশপ্রহরী গুরুতর আহত হন। নিহত জঙ্গিদের সবাই তুরস্কের নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযানের সময় ওই বাড়ি থেকে পাঁচ নারী ও ছয় শিশুকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ঘটনার জটিলতা ও ঝুঁকি বিবেচনা করে ইয়ালোভার পার্শ্ববর্তী বুরসা প্রদেশ থেকে পুলিশের বিশেষ কমান্ডো বাহিনীকে অভিযান এলাকায় পাঠানো হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম টিআরটি হ্যাবার জানায়, এলমালিক গ্রাম পুরোপুরি অবরুদ্ধ রাখা হয় এবং সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত সপ্তাহ থেকেই তুরস্কজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল। ইস্তাম্বুলের প্রধান কৌঁসুলির দপ্তর আগেই সতর্ক করেছিল যে, আইএসের জঙ্গিরা বছরের শেষ দিনগুলোতে বড় ধরনের নাশকতার ছক কষছে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১২৪টি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১৫ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তুরস্কে আইএসের এই সাম্প্রতিক তৎপরতা মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক অস্থিতিশীলতার সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি সিরিয়ার মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মার্কিন বাহিনী ৭০টিরও বেশি আইএস লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে।
এর ঠিক এক সপ্তাহ আগে সিরিয়ার পালমিরা শহরে আইএস হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হওয়ার পর তুরস্কের অভিযান জোরদার করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে, দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরণের জঙ্গি কর্মকাণ্ড দমনে জিরো টলারেন্স নীতি বজায় রাখা হবে।