সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে তুলে নিলো যুক্তরাষ্ট্র

দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক অবরোধের অধ্যায় শেষ হলো সিরিয়ার জন্য। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনামলে আরোপিত সব মার্কিন নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস। যুদ্ধ ও জাতিগত সংঘাতে বিপর্যস্ত দেশটিতে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের জুলাইয়ে সিরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন তার ছেলে বাশার আল আসাদ। টানা ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট হায়াত তাহরির আল শামস এইচটিএস এর অভিযানের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন এবং সপরিবারে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। এরপর সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন আহমেদ আল শারা, যিনি অতীতে আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দার সিরিয়া শাখার নেতা ছিলেন।

বাশার আল আসাদের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসবের মধ্যে জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বিদেশি বিনিয়োগে কড়াকড়িও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সিরিয়ায় ক্ষমতার পরিবর্তনের পর সৌদি আরব ও তুরস্কের অনুরোধের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিলেন। তবে নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা শুরু থেকেই নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার একটি বিল উত্থাপন করা হয়। ভোটাভুটিতে বিলটির পক্ষে ভোট দেন ৭৭ জন সিনেটর এবং বিপক্ষে ভোট দেন ২০ জন। সিনেটের এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদন পেয়েছে।

ভোটের পর সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্য জিয়ান্নে শাহীন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “গত কয়েক দশক ধরে সিরিয়ার সাধারণ জনগণ যে অকল্পনীয় ভোগান্তি সহ্য করেছেন, এই পদক্ষেপের ফলে সেই ভোগান্তি থেকে বেরিয়ে দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য সত্যিকারের সুযোগ পেলেন তারা।”

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণায় সিরিয়ায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, “সিরিয়ার জনগণের পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”

সূত্র: এএফপি