
বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ ও অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন। ফিলিস্তিনি পাসপোর্টধারী ও আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
হোয়াইট হাউস থেকে গতকাল ওয়াশিংটনে প্রকাশিত এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি যেসব দেশের নাগরিকদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেগুলো হলো বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান, সিয়েরা লিওন, লাওস ও সিরিয়া।
বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞার কারণ ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, “জাতীয় ও জন নিরাপত্তাজনিত হুমকি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন নাগরিকদের রক্ষা নিশ্চিত করতে স্ক্রিনিং, যাচাই-বাছাই এবং তথ্য ভাগাভাগির ক্ষেত্রে প্রদর্শিত, স্থায়ী এবং গুরুতর ঘাটতি থাকায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।”
হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, এই সিদ্ধান্ত ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ১৯টি দেশের নাগরিকদের জন্য সব ধরনের অভিবাসন কার্যক্রম স্থগিত করেছিল। ওই তালিকায় ছিল আফগানিস্তান, মিয়ানমার, বুরুন্ডি, শাদ, কিউবা, রিপাবলিক অব কঙ্গো, ইকুয়াটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লাওস, লিবিয়া, সিয়েরা লিওন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, টোগো, তুর্কমেনিস্তান, ভেনেজুয়েলা ও ইয়েমেন।
পরে ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশের সংখ্যা অন্তত ৩২টিতে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সে সময় অতিরিক্ত ১৩টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে বন্দুক হামলায় ১৫ জন ইহুদি নিহত হওয়ার ঘটনার পর ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান নেওয়াকে অনেকেই অপ্রত্যাশিত মনে করেননি।
তবে সিরিয়ার নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি তুলনামূলকভাবে বিস্ময় তৈরি করেছে। কারণ অল্প কিছুদিন আগেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ শারা হোয়াইট হাউসে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। সাবেক আলকায়দা জঙ্গি শারা’র বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, হোয়াইট হাউস সফরের আগে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
এর মধ্যেই সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের হামলায় দুই মার্কিন সেনা ও তাদের একজন দোভাষী নিহত হওয়ার ঘটনা প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়। গত শনিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে আখ্যা দেন এবং এর জবাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন।
গতকালের হোয়াইট হাউস বিবৃতিতে সিরিয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “সিরিয়া দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ ও আভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে বেরিয়ে আসছে। যদিও দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে তার নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করছে, তবুও সিরিয়ার পাসপোর্ট বা নাগরিক নথিপত্র প্রদানের জন্য দক্ষ ও পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অভাব রয়েছে এবং তাদের যথাযথ স্ক্রিনিং এবং যাচাই-বাছাই ব্যবস্থা নেই।”
সূত্র: রয়টার্স