
ইউরোপীয় নেতাদের ‘দুর্বল’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনকে দেওয়া ওয়াশিংটনের সহায়তা ভবিষ্যতে কমিয়ে আনা হতে পারে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনৈতিক সাময়িকী পলিটিকোকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ‘ক্ষয়িষ্ণু’ ইউরোপীয় দেশগুলো অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ এবং রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ইউরোপীয় নেতারা কিয়েভকে “পতন না হওয়া পর্যন্ত” যুদ্ধ করতে দিচ্ছেন—এমন অভিযোগ তুলে ট্রাম্প বলেন, “যুদ্ধের অবসানে যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেখানে নিজেদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন ইউরোপীয় নেতারা। তারা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত এসব পদক্ষেপ এই মহাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার বলেন, তিনি ইউরোপকে দুর্বল নয়, বরং আরও শক্তিশালী হতে দেখছেন। প্রতিরক্ষা খাতে ইউরোপীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কিয়েভকে অর্থসহায়তা বাড়ানো তার প্রমাণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কুপার আরও বলেন, ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উভয়েই শান্তির পথে কাজ করছেন, “তবে আরেকজন প্রেসিডেন্ট, প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত কেবল এই সংঘাতকে আরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছেন।”
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি জেলেনস্কির ওপর শান্তিচুক্তিতে রাজি করানোর চাপ বাড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মস্কোর কাছে কিছু ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার প্রস্তাবও কিয়েভকে বিবেচনায় নিতে বলেছেন।
পরে মঙ্গলবার এক্স-এ দেওয়া বার্তায় জেলেনস্কি লেখেন, ইউক্রেন ও ইউরোপ “যুদ্ধ অবসানের সম্ভাব্য পদক্ষেপের সব উপাদান” নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তার দাবি, পরিকল্পনার ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় অংশগুলো এখন আরও পরিপক্ক হয়েছে।
সাংবাদিকদের তিনি জানান, এই পরিকল্পনাগুলো বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে জমা দেওয়া হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে, ইউরোপীয় নেতারা লন্ডনে যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা নিয়ে বৈঠক করার মাত্র একদিন পরই ইউরোপের বিরুদ্ধে নতুন সমালোচনা শোনাল ট্রাম্পের মুখে।
যুদ্ধ থামাতে ইউরোপ কতটা ভূমিকা রাখতে পারে—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “তারা কথা বলে কিন্তু কোনো ফলাফল আসে না এবং এই যুদ্ধ কেবল চলছেই এবং চলছেই।”
গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। কিয়েভ উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ও ন্যাটো নেতাদের অনুরোধ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যেসব চুক্তির দিকে এগোতে চাইছে, সেগুলো যেন ইউক্রেনকে ভবিষ্যতে আরও ঝুঁকির দিকে ঠেলে না দেয়।
এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে, কোনো প্রমাণ ছাড়াই রোববার ট্রাম্প মন্তব্য করেন, জেলেনস্কিই শান্তি চুক্তির “প্রধান বাধা”।
পলিটিকোকে তিনি আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত প্রস্তাবকে ইউক্রেনের আলোচকরা “পছন্দ করেছে”, তবে জেলেনস্কি এখনও তা পড়েও দেখেননি বলে অভিযোগ তোলেন।
ন্যাটো মহাসচিবের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প বলেন, “ন্যাটো আমাকে ড্যাডি বলে ডাকে। তবে তারা কথা বলে কিন্তু কাজ করে না। আর যুদ্ধ কেবল চলতেই থাকে।”
প্রায় চার বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবগুলো ইউরোপে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা রয়েছে—এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল রাশিয়ার কাছে ছাড় দিতে হতে পারে এবং ভবিষ্যতে কিয়েভ আবারও রুশ আগ্রাসনের মুখোমুখি হতে পারে।
সূত্র: বিবিসি