
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে ইতিবাচক সুরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। রাশিয়া বলছে, নথির বেশ কিছু অংশ তাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এই কৌশলগত নথিতে ইউরোপের “সভ্যতা বিলুপ্তির” মতো সম্ভাব্য হুমকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ‘মূল’ স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
রোববার (০৭ ডিসেম্বর) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, নীতিমালার বিভিন্ন দিক রাশিয়ার ব্যাখ্যার সঙ্গে “মিল খুঁজে পাওয়া যায়।” তিনি নথিতে ন্যাটোকে “ক্রমাগত সম্প্রসারণশীল জোট” বলে বর্ণনা করার প্রচলিত ধারা থেকে সরে আসার বিষয়টিকেও স্বাগত জানান। ন্যাটোর বিস্তারকে রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখে।
তবে পেসকভ সতর্ক করেন, যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘ডিপ স্টেট’- যে শব্দটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও প্রায়ই ব্যবহার করেন, তাদের অবস্থান এই নতুন কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইউক্রেন যুদ্ধের কূটনীতি
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল এবং ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক নিরাপত্তা নথিতে রাশিয়াকে শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনে এসে ওয়াশিংটনের অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে প্রকাশ্য মতবিরোধ এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে “বন্ধু” বলে অভিহিত করা- এসবই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হোয়াইট হাউসের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি সোমবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎসের সঙ্গে চারপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বারবার ইউরোপীয় মিত্রদের দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছেন- বিশেষত এই সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে কিয়েভকে সীমান্ত ছাড়ের প্রস্তাব বিবেচনা করতে বলছেন।
চীনের দিকে কৌশলগত নজর
নতুন নিরাপত্তা কৌশলে মার্কিন নীতির কেন্দ্রস্থলে রাখা হয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে। এটিকে “অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্র” হিসেবে বর্ণনা করে তাইওয়ান প্রণালীতে সংঘাত প্রতিরোধে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপের মুখে রাশিয়া চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করেছে।
ট্রাম্প গত মার্চে ফক্স নিউজকে বলেছেন, “ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমার কাছে একটি জিনিস স্পষ্ট, তা হলো রাশিয়া ও চীনকে একত্র হতে দেওয়া উচিত নয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই কৌশলগত নথি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে বদলে দিয়ে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আলোকে আন্তর্জাতিক জোটগঠনে নতুন দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
নথিতে ইউরোপের “পশ্চিমা পরিচয়” রক্ষা এবং সম্ভাব্য “সভ্যতার বিলুপ্তি” প্রতিরোধে অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের অতিদক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গেও সাদৃশ্যপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।