যুক্তরাষ্ট্রে নীরব নেশা: ছড়িয়ে পড়ছে ‘লাফিং গ্যাস’ আসক্তি
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:০২ পিএম, ৩০ জুন ২০২৫

‘লাফিং গ্যাস’ হিসেবে বহুল পরিচিত ‘নাইট্রাস অক্সাইড’ মূলত দাঁতের চিকিৎসায় সময় ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহার হয়। এই গ্যাসে নাক দিয়ে প্রবেশ করলে একধরনের উচ্ছ্বাস অনুভূত হয়। তবে এর বহুবিদ ব্যবহারও রয়েছে, যেমন ‘ক্যানড হুইপড ক্রিম’ (ক্যানবন্দি ফেটানো ক্রিম যা কেক বা অন্যান্য খাবারে ব্যবহার করা হয়)। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ‘ভেপিং’ (ছোট একটা যন্ত্র যার মাধ্যমে মুখ দিয়ে বাষ্প টানা হয়)-এর বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকেই এই গ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়েছেন, বিশেষ করে তরুণরা। আর এই বিষয়েই সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পয়জন সেন্টারের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩-২০২৪ সালে দেশটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে নাইট্রাস অক্সাইডের সামনে ‘এক্সপোজড’ বা সহজভাবে বলতে গেলে স্বেচ্ছায় নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহার করছে, এমন ঘটনায় রিপোর্টের পরিমাণ ৫৮ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে, মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রাস অক্সাইড টানা হলে ‘হাইপোক্সিয়া’ হতে পারে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না এবং এর ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নিয়মিত ইনহেলেশনের (টানা বা শোঁকা) ফলে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব দেখা যেতে পারে যা স্নায়ুর ক্ষতি করে এবং মেরুদণ্ডকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শুধু তাই নয়, প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতও হতে পারে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোর মতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নাইট্রাস অক্সাইডের 'বিষক্রিয়ায়' মৃত্যুর সংখ্যা ১১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। কোভিডের সময় তরুণদের মধ্যে এর অপব্যবহার বেড়ে গিয়েছিল। এই কারণে ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে নাইট্রাস অক্সাইড নিজের কাছে রাখাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা শুরু করে।
অন্যান্য অনেক দেশে এর বিনোদনমূলক ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটা এখনো বৈধ। রান্নার সময় ব্যবহার করা হয় এমন পণ্য হিসেবে নাইট্রাস অক্সাইড বিক্রি করা আইনসম্মত। তবে শুধু লুইজিয়ানাতেই এই গ্যাসের খুচরো বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
'গ্যালাক্সি গ্যাস' নামক সংস্থা এই গ্যাসের প্রধান প্রস্তুতকারক। রান্নায় এর ব্যবহার সম্পর্কে বর্ণনা করতে ওই সংস্থার ওয়েবসাইটে 'চিকেন স্যতে উইথ পিনাট চিলি ফোম' এবং 'ওয়াটার মেলন গাজপাকো'সহ নানান রকম খাবারের রেসিপি দেওয়া রয়েছে। ব্লুবেরি, রাস্পবেরি বা স্ট্রবেরি অ্যান্ড ক্রিম ফ্লেভারের 'হুইপড ক্রিমে'ও 'হুইপিং এজেন্ট' হিসেবে নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহার হয়।
এই বিষয়গুলো সম্পর্কেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, নানান (ব্যবহার বিষয়ক) ফাঁকফোকর, প্যাকেজিং এবং খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসের অপব্যবহার বাড়ার জন্য অনেকটাই দায়ী। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ক্রেতারা প্রায় আটগ্রাম ওজনের একবার ব্যবহার করা যায়, এমন ধাতব ক্যানিস্টার (ক্যান) কিনতেন এবং বেলুন ব্যবহার করে ওই গ্যাস টানতেন।
কিন্তু কোভিডের সময় যখন এর ব্যবহার বেড়ে যায়, তখন নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাস প্রস্তুতকারকরা অনলাইনে বড় ক্যানিস্টার বিক্রি করা শুরু করে দেয়। অনলাইনে দুই কেজি ওজন পর্যন্ত ক্যানিস্টার বিক্রি করতে থাকে তারা। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ‘ভেপ’ এবং অন্যান্য ধূমপানের সামগ্রী পাওয়া যায় এমন দোকানগুলোতেও বিক্রি শুরু করে।
প্যাকেজিংয়েও পরিবর্তন আনে প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো। তারা ওই গ্যাস প্যাকেজিং করা শুরু করে এমন ক্যানে যার ওপর কম্পিউটার গেমস বা টেলিভিশন সিরিজের চরিত্রদের ছবি আঁকা রয়েছে কিম্বা তার গায়ে আছে নজর কাড়া উজ্জ্বল রঙের ডিজাইন।
‘পার্টনারশিপ টু এন্ড অ্যাডিকশন’ নামক সংস্থার প্যাট অসেম মনে করেন এসব কারণেই নাইট্রাস অক্সাইডের অপব্যবহার ক্রমে বেড়েছে। মার্কেটিংয়ের জন্য একে ‘গ্যালাক্সি গ্যাস’ বা ‘মায়ামি ম্যাজিক’ হিসেবেও নামকরণ করা হয়।
মার্কিন ই-কমার্স জ্যায়ান্ট ‘অ্যামাজন’-এ অনলাইনে এই গ্যাস বিক্রি হয়। সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নাইট্রাস অক্সাইডের অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন। এই বিষয়ে আরও মজবুত সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে তারা।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজেদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ‘গ্যালাক্সি গ্যাস’ জানিয়েছে, গ্যাসের রান্না সম্বন্ধিত বিষয়ে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এই গ্যাস বিক্রি করে ওই সংস্থা। পাশাপাশি জানিয়েছে, তাদের ওয়েবসাইটে নাইট্রাস অক্সাইডের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তাও দেওয়া রয়েছে।