নজরুল জয়ন্তী: বিদ্রোহী কবির জন্মদিনে নতুন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা
- ফিচার ডেস্ক
- প্রকাশঃ ১০:১৬ এম, ২৫ মে ২০২৫

আখি সাহা
বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর প্রতিভা আর বিদ্রোহের অনন্য প্রতীক—কাজী নজরুল ইসলাম। প্রতি বছর ১১ই জ্যৈষ্ঠ (২৪ মে) আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি এই অগ্নিকণ্ঠ কবিকে। নজরুল জয়ন্তী শুধু একটি জন্মদিন নয়, এটি আমাদের চেতনায় বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতার বার্তা বহন করে আনে।
১৯৪৭ সালের আগে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর কলম যেমন বিদ্রোহ রচনা করেছিল, তেমনি সমাজের নানা বৈষম্যের বিরুদ্ধেও তিনি উচ্চারণ করেছিলেন প্রতিবাদের ভাষা। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় তিনি লিখেছিলেন—
"আমি চির বিদ্রোহী বীর,
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!"
তবে তার লেখায় তিনি শুধু বিদ্রোহ ফুটিয়ে তোলেননি। বিদ্রোহের পাশাপাশি তার সৃষ্টিতে ভরপুর ছিল প্রেম, প্রকৃতি, সঙ্গীত, মানবতা— আরও সবই। তিনি যেমন প্রেমে বলেছিলেন, “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়,” তেমনই আবার গেয়েছেন, “মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!”
নজরুল শুধু কবি ছিলেন না, ছিলেন এক অসামান্য সুরস্রষ্টা। ৪,০০০-এরও বেশি গান রচনা ও সুর করেছেন তিনি—যা আজও 'নজরুলগীতি' নামে আমাদের হৃদয়ে বেঁচে আছে। তার গানগুলো যেন প্রেম, বিরহ, ভক্তি ও দেশপ্রেমের অনন্য প্রতিফলন।
প্রতিবছর নজরুল জয়ন্তীতে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন, আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় তাকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে এই দিনটি নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। তবে নজরুল জয়ন্তী কেবল অনুষ্ঠান নয়—এটি তাঁর আদর্শকে ধারণ করার দিন, নতুন প্রজন্মকে তাঁর চিন্তা ও সৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় করানোর দিন।
আজকের সমাজে যখন বৈষম্য, ধর্মীয় কুপমণ্ডূকতা ও অসহিষ্ণুতার অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, তখন নজরুলের বাণী হয়ে ওঠে আলোর দিশারি। তিনি আমাদের শেখান—ধর্মের দেয়াল নয়, মানুষে মানুষে হৃদয়ের সেতু গড়ে তোলাই শ্রেয়। তার কলমের প্রতিটি অক্ষর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাম্য, ভালোবাসা ও মানবতাই হল মানবজাতির চূড়ান্ত আশ্রয়।
নজরুল জয়ন্তী শুধু অতীতের একজন মহান কবিকে স্মরণ নয়, বরং তার ভাবনা, আদর্শ ও সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার। নজরুলের কণ্ঠে আমরা শুনি বিপ্লবের ডাক, আবার ভালোবাসার মাধুর্য। তার জয়ন্তী যেন হয়ে ওঠে নতুন করে জাগরণের প্রেরণা।