নভেম্বরে রপ্তানি আয় এসেছে ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার

চলতি বছরের গেল নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। বছর ব্যবধানে বেড়েছে ১৫ দশমিক ছয় তিন শতাংশ। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। ইপিবির হিসেবে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থ্যাৎ জুলাই-নভেম্বরে মোট রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৯৯০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য। গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় যা বেড়েছে পৌনে ১২ শতাংশ। নভেম্বরে শুধু তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় এসেছে ৩৩০ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বছর ব্যবধানে পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এই সময়ে কৃষি খাতের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ এবং উৎপাদনমুখী শিল্পের রপ্তানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। হোমটেক্সাটাইলে বেড়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। কিছুটা কমেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের পরিমাণ। চলতি অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের পণ্য। বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ।

ভারতের সাথে টানাপোড়েন রাজনৈতিক, বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না

‘ভারতের সাথে বর্তমান সম্পর্কের যে টানাপোড়েন, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব পড়বে না।’ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা জানান। বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হবে- এমন হুমকি প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক, এই বক্তব্যের প্রভাব বাণিজ্যের ওপর পড়বে না। ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলো ঠিকভাবে ও সময়মত আসবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। সেক্ষেত্রে ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে দেশ থেকে কম দামে পাওয়া যাবে, সেখান থেকেই চাল আমদানি করা হবে।’ সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে দাম কমানোর জন্য। আসছে রমজানে তাই পণ্যের দাম বাড়বে না। রমজানের জন্য খেজুর, তেল, মসুর ডাল আমদানি করা হচ্ছে, কমানো হচ্ছে এসব পণ্যের ভ্যাট। এই প্রভাব জিনিসপত্রের দামের উপর পড়বে।’ অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেন, জিনিসপত্রের দাম কমানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাঁদাবাজির প্রভাব পড়ে। সিন্ডিকেট বন্ধ করা গেলেও চাঁদাবাজি বন্ধ করা যাচ্ছে না।’

পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে ডাচ-বাংলা ব্যাংক

ডাচ-বাংলা ব্যাংক পিএলসির কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ব্যাংকের সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম ১-৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অব-সাইট সুপারভিশন বিভাগ এ অনুমোদন দেয়। এ সময় ব্যাংকের সব ধরনের লেনদেন, এটিএম বুথ, ডেবিট কার্ড সেবা, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং (মাইক্যাশ) ও এজেন্ট ব্যাংকিংসহ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সব সেবা ও কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে, ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন বা কেনাকাটা করতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন কার্যক্রম সম্পাদন করতে ১-৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সব ব্যাংকিং কার্যক্রম সাময়িকভাবে বিরত থাকবে বলে এ বিষয়ে ব্যাংকের আবেদনে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’ ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’-এর ৪৫ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে এ সম্মতি দেয়া হয়েছে বলে নির্দেশনায় জানানো হয়েছে।

চার শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে আইসিবি, বিনিয়োগ হবে ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারে

রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপারেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ঋণ অনুমোদনের এক সপ্তাহ পরে তার সুদহার কমিয়ে চার শতাংশে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পূর্বে সরকারের সার্বভৌম জামানতের বিপরীতে আইসিবিকে দেয়া তিন হাজার কোটি টাকার ঋণের সুদহার দশ শতাংশ ঠিক করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকাল নাগাদ অর্থ ছাড় করার প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘পত্র পেয়েছি। আজ দুপুরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব হবে। আশা করছি, বিকালের মধ্যে অর্থ ছাড় শুরু হবে।’ সুদহার কমানোর পরে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আইসিবিকে পত্র দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় বলে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা। গেল ২৭ নভেম্বর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আইসিবিকে দিতে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঋণের সব অর্থের সার্বভৌম জামানত (সভরেইন গ্যারান্টার) হয়েছে সরকার। গ্যারান্টার হওয়ায় কোন কারণে আইসিবি ঋণের অর্থ ফেরত দিতে না পারলে সরকারকে তা শোধ করতে হবে। ঋণের অর্থের সুদহার ধরা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার (পলিসি রেট) অনুযায়ী। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সময়ে সময়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান নীতি সুদহার হচ্ছে দশ শতাংশ। পরে সুদহার ব্যাংক রেট অর্থাৎ চার শতাংশ নির্ধারণ করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করে আইসিবি। আবু আহমেদ বলেন, ‘অর্থ উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করলে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেন। গভর্নরও দ্রুত সম্মতি দেয়ায় চার শতাংশ সুদে আইসিবি টাকাটা পাচ্ছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন তহবিলসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ তহবিল পরিচালনা করলে তার সুদহার ব্যাংক রেটে ধরা হয়। বর্তমানে ব্যাংক রেট হচ্ছে চার শতাংশ। গত কয়েক মাসে নীতি সুদহার, রেপো, বিশেষ রেপো ও রিভার্স রেপো সুদহার বাড়লেও ব্যাংক রেট একই স্থানে আছে। গেল নভেম্বরে আইসিবির অনুরোধে সরকার এ ঋণের গ্যারান্টার হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে শর্তের কথা জানিয়ে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। আইসিবিকে দেয়া সরকারের গ্যারান্টির মেয়াদ হবে ঋণ দেওয়ার তারিখ থেকে ১৮ মাস। সরকারের দেয়া গ্যারান্টিপত্রে বলা হয়, ‘আইসিবি ঋণ শোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে যে মুনাফা দেয়, সেখান থেকে অপরিশোধিত বা বকেয়া ঋণ বা ঋণের উপর ধার্য সুদ সমন্বয় করা যাবে না।’ শুধু ‘এ’ শ্রেণির শেয়ারে বিনিয়োগ: এর পূর্বে আবু আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কিছু উচ্চ সুদের আমানত আছে আইসিবিতে। তাতে সুদ বাবদ বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা শোধ করতে হয়। সেই উচ্চ সুদের আমানতের একটি অংশের ধারাবাহিকতা রাখবে না আইসিবি। অবশিষ্ট অর্থ ধাপে ধাপে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করবে।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গেল ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে পুঁজিবাজারে লেনদেন ও সূচক বাড়ছিল। কিন্তু, সেই ধারা ছিল কেবল দুই সপ্তাহ। ১৪ আগস্টের পরে বাজারে ধারাবাহিক পতন শুরু হয়। এমনকি এক দিনে সূচকের ১০০ পয়েন্ট হারানোর ঘটনাও বিনিয়োগকারীরা দেখেছেন। পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাজারে তারল্য প্রবাহে সংকট রয়েছে ও আইসিবিও বিনিয়োগ করতে পারছে না- এমন দাবি করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিন হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চায় প্রতিষ্ঠানটি। ঋণ আবেদন পর্যালোচনা করতে গেল ১৭ অক্টোবর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সচিব ও বিএসইসির চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছিল সরকার।

ইউসিবি ও ন্যাশনাল ফাইন্যান্স চেয়ারম্যানের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহির ও তার ভাই ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লিমিটেডের (এনএফএল) চেয়ারম্যান আসিফ জহিরের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার মা কামরুন নাহারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। কার ফাঁকি সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) এনবিআর ও বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্ত এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলেছে। হিসাব জব্দ করা ব্যক্তি ও তাদের ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের সব লেনদেন বন্ধ থাক‌বে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩-এর ২২৩ ধারার ক্ষমতাবলে শরীফ জহির, তার ভাই আসিফ জহির ও তাদের মা কামরুন নাহার এবং সৈয়দ ইশতিয়াক ইসলাম (পিতা- সৈয়দ দিদারুল আলম) ও তাদের পরিবারের (পিতা, মাতা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা) নামে পরিচালিত সব হিসাব (ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ভল্ট লকার) অর্থসম্পদ লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়েছে। শরীফ জহির ইউসিবি ব্যাংকের নবগঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার ভাই আসিফ জহির সম্প্রতি এনএফএলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি অনন্ত গ্রুপে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া, তিনি আসিফ জহির সিন্দাবাদডটকম লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও এমডি।

আইএমএফ ঋণ: চতুর্থ কিস্তি পাওয়া যাবে ফেব্রুয়ারি-মার্চে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দীন আহমেদ। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল এসেছিল। তাদের সঙ্গে ঋণ প্যাকেজ ৪.৭ বিলিয়ন ডলারে মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে এটা পেয়ে যাব। তিনি বলেন, আমাদের স্থিতিশীলতা কিন্তু ফিরে আসছে। সম্পূর্ণ আসে নাই, তবে এখন সময় বিনিয়োগের। আপনারা দেখবেন ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট আগের মতো ওঠানামা করছে না। ব্যাংকিং খাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লিকুইডিটি সার্পোট লাগছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় ব্যাংক কিছুটা ফিরে আসছে। ইসলাসী ব্যাংক সব বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকগুলোও ধীরে ধীরে ফিরে আসবে। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স খুবই ভালো। রপ্তানিও হচ্ছে ভালো, আমদানি একটু কম আছে। তবে আগের থেকে একটু বেড়েছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি কিছু কম আসছে, সেটা কিছু রেস্ট্রিকশনের কারণে। সেটা আমরা চিন্তা করছি, কী করা যায়। তারা আমাদের এখানে থাকবে কিছুদিন। আমরা তাদের বলেছি আমরা এমন কিছু নেব যেটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়। আমরা এমন কিছু নেব না যেটা নিজের....। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা কতগুলো লক্ষ্যমাত্রা দেবে সেটা করতে পারব কিনা, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে। অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে আমরা আবার আলোচনা করে বলব। চলমান ৪.৭ বিলিয়ন ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলে আমাদের ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে, যেমন- ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে আমাদের ফান্ড লাগবে। তিনি বলেন, কিছুদিন পর এডিবি আসবে, ওপেক ফান্ডের টাকা আসবে। সব মিলিয়ে আগামী জুনের মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার পাব। শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইএমএফের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন এবং আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে। এখন চতুর্থ কিস্তিতে ১.১ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক-বিএইচটি ইন্ড্রাস্ট্রিজ পে-রোল চুক্তি সই

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক (এআইবি) পিএলসি এবং বিএইচটি ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের মধ্যে সম্প্রতি পে-রোলব্যাংকিং চুক্তি সই হয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরমান আর চৌধুরী এবং বিএইচটি ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাাফিজুর রহমানের উপস্থিতিতে এ চুক্তি সই হয়ে। ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান চৌধুরী এবং বিএইচটি ইন্ড্রাস্ট্রিজের পরিচালক মাশরিফুর রহমান চুক্তিতে সই করেন। এ চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা ব্যাংকের পেরোল প্রিভিলেজ সার্ভিসের (এপিপিএস) বিশেষ সুবিধা পাবেন। অনুষ্ঠানে ব্যাংকের সিনিয়ির এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মঞ্জুরুল আলম, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, এসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্টগাজী মোস্তাফিজুর রহমান, বিএইচটি ইন্ড্রাস্ট্রিজের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইবাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ডিএসইর পুঁজিবাজার কেন্দ্রীক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক ধারাবাহিক কর্মশালার অংশ হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চ (ডিএসই) ট্রেনিং একাডেমি মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সাভারের আর্মি ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালা করেছে। কর্মশালায় নেতৃত্বে দেন আর্মি ইন্সটিটিউট অব বিজনের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিরেক্টর জেনারেল মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। কর্মশালায় ডিএসইর কর্মকর্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্বিক আহমেদ শাহ বলেন, ‘আজকের প্রোগ্রামটি পুঁজিবাজার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করার আপনাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। আপনারা এই কর্মশালা থেকে পুঁজিবাজার সম্পর্কে বাস্তবধর্মী জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। যা ভবিষ্যতে আপনাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও কর্মক্ষেত্রে সহায়তা করবে।’ কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আল-আমিন রহমান। প্রবন্ধে তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ের আলোকপাত করেন। পরবর্তী বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন ও মহাব্যবস্থাপক মো. ছামিউল ইসলাম। অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যত বেশি ভাল মানের কোম্পানি থাকবে, পুঁজিবাজার তত বেশি উন্নত হবে। অতীতে বেশ কিছু খারাপ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে পুঁজিবাজার বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। আমরা আশা করি, আগামীতে ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে।’ মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কখন, কোথায় ও কেন বিনিয়োগ করবেন, তা জানা প্রয়োজন। এই জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমোশনাল হয়ে বিনিয়োগ করা যাবে না। এছাড়াও, কোম্পানির পারফরমেন্স ও উদ্যোক্তা, পরিচালক দেখে শেয়ারের দাম যখন কম থাকে তখন বিনিয়োগ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গেল ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে বহু নিম্ন মানের আইপিও এসেছে। যা পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ জন্য নিম্নমানের আইপিও বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করা হয়েছে। যেটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

এলপি গ্যাসের নতুন মূল্য ঘোষণা

ডিসেম্বর মাসে ভোক্তাপর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্য অপরিবর্তিত থাকছে। এ মাসে ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাদ এক হাজার ৪৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা নভেম্বর মাসেও একই ছিল। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই দাম ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টা থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাড়ে পাঁচ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৬৬৭ টাকা, সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম এক হাজার ৫১৬ টাকা, ১৫ কেজির দাম এক হাজার ৮১৯ টাকা, ১৬ কেজির দাম এক হাজার ৯৪০ টাকা, ১৮ কেজির দাম দুই হাজার ১৮৩ টাকা, ২০ কেজির দাম দুই হাজার ৪২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ২২ কেজি সিলিন্ডারের দাম দুই হাজার ৬৬৮ টাকা, ২৫ কেজির দাম তিন হাজার ৩২ টাকা, ৩০ কেজির দাম তিন হাজার ৬৩৮ টাকা, ৩৩ কেজির দাম চার হাজার দুই টাকা, ৩৫ কেজির দাম চার হাজার ২৪৪ টাকা, ৪৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম পাঁছ হাজার ৪৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গেল মাসেও একই দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘রেটিকুলেটেড পদ্ধতিতে তরল অবস্থায় সরবরাহ করা বেসরকারি এলপিজির ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্য প্রতি কেজি ১১৭ টাকা ৪৩ পয়সা এবং গ্যাসীয় অবস্থায় সরবরাহ বেসরকারি এলপিজির ভোক্তাপর্যায়ে মূসকসহ মূল্য প্রতি লিটার ০.২৬০৯ টাকায় বা প্রতি ঘনমিটার ২৬০.৯০ টাকায় সমন্বয় করা হয়েছে।’ জালাল আহমেদ বলেন, ‘সৌদি সিপি এই মাসে অপরিবর্তিত রয়েছে। আর ডলারের দামের তেমন তারতম্য হয়নি। এ জন্য দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।’ সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসের জন্য ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৩৫ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪৫৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর নভেম্বর মাসে এক টাকা কমিয়ে এক হাজার ৪৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তারও আগে, গত ২ সেপ্টেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে সেপ্টেম্বর মাসের জন্য ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম আগস্ট মাসের তুলনায় ৪৪ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪২১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর গত আগস্ট ও জুলাইয়ে বাড়ানো হয়েছিল যথাক্রমে ১১ টাকা ও তিন টাকা। সে সময় ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে এক হাজার ৩৭৭ টাকা ও এক হাজার ৩৬৬ টাকা। তবে, গেল জুন ও মে মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম যথাক্রমে ৩০ টাকা ও ৪৯ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৩৬৩ টাকা ও এক হাজার ৩৯৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর টানা আট মাস বাড়ার পর গত ৩ এপ্রিল ভোক্তা পর্যায়ে কমানো হয়েছিল এলপিজির দাম। মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৪০ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৪৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া, গত মার্চ মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম আট টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪৮২ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৪১ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪৭৪ টাকা ও জানুয়ারিতে ২৯ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরছে কনটেইনার ডেলিভারি!

নিরাপত্তা ঝুঁকির পাশাপাশি কার্গো চুরি ঠেকাতে বছরে ২৫ লাখের বেশি ফুল কনটেইনার লোড (এফসিএল) কনটেইনার শেডের বদলে বেসরকারি অফডকগুলোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। পৃথিবীর কোন বন্দরের শেড থেকে পণ্য ডেলিভারির বিধান না থাকলেও ঝুঁকি নিয়ে একমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর এ কাজ করে আসছিল। তবে, অফডকগুলোর কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা না বাড়িয়ে বন্দরের এমন সিদ্ধান্তে বড় ধরনের জটিলতার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। পণ্য ডেলিভারি নিতে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান যেমন চট্টগ্রাম বন্দরে ঢুকে যানজটের সৃষ্টি করছে, তেমনি যানবাহনগুলোর সঙ্গে ১০-১২ হাজার ড্রাইভার-হেলপার এবং কর্মচারী চট্টগ্রাম বন্দরকেই নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। অবশেষে, এ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি পণ্য চুরি ঠেকাতে সব ধরনের এফসিএল কনটেইনার অফডক থেকেই খালাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চবক।নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে বন্দরের অভ্যন্তরে এফসিএল কনটেইনার খালাস দিতে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টির বিভিন্ন তথ্য। চবকের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরের অভ্যন্তরে যানজট ও হ্যাজার্ড না করার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যাতে করে সবগুলো কনটেইনার অফডক থেকে খালাসের অনুমতি দেয়া হয়।’আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গতি আনতে এক দশক আগে বন্দরের পাশাপাশি চালু হয়েছিল ২১টি অফডক। অফডকগুলোর বছরে ৬-৭ লাখ রফতানি কনটেইনার এবং তিন লাখ আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা আছে। অফডক থেকেই খালাস দেয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে অন্তত ২৫ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অর্জন করতে হবে অফডকগুলোকে।অফডক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে খালাস হওয়া পণ্যগুলো যদি বন্দরের বাইরে অফডকগুলো খালাসের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে অপারেশনাল কার্যক্রমের গতি বহু বেড়ে যাবে।’তবে, নতুন অফডক নির্মাণ না করে বন্দরের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে তৈরি পোশাক খাতকেই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। একইসঙ্গে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা অফডকগুলোকে অনুমতি দিয়ে জটিলতা নিরসনের কথা বলছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। অবশ্য সিটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টির জন্য বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অফডকগুলোকে দায়ী করা হয়।বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক প্রথম সহ সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘অফডকগুলোর কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা না বাড়িয়ে বন্দরের এমন সিদ্ধান্তে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে।’বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘সহজশর্তে অফডকের অনুমতি দিতে হবে। এরপর নিয়ম মেনে আইন অনুযায়ী অফডক তৈরি ও ব্যবহার করতে হবে।’প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনার এবং ১২ কোটি ৩২ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে।

মারকুইস পাম্পস ও স্যানিটারি ওয়্যারের ডিলার মিট অনুষ্ঠিত

ইউরোপিয়ান প্রযুক্তিতে তৈরি সর্বাধুনিক ডিজাইনের পণ্য নিয়ে ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করা এমইএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘মডার্ন ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেডের ‘মারকুইস পাম্পস এন্ড স্যানিটারি ওয়্যার ডিলার মিট-২০২৪’ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমইএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার জাওয়াহিরুল গণি । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নুর মোহাম্মদ, নিংবো-মারকুইস হাইটেক কো: লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নি গোমিং, টিমস ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং উইশিং, ওয়াটার পাম্পের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়াং ফেই, স্যানিটারি ওয়্যারের বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার মাও জিয়ানিং।কনফারেন্সে এমইএল গ্রুপের কিচেন ও বাথ ওয়্যারের নতুন ব্র্যান্ড 'ডরফেন' এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে মারকুইস পাম্পস ও স্যানিটারি ওয়্যার, ডরফেন ব্র্যান্ডের গিজার, কিচেন হুড, গ্যাস বার্নার, মেটাল বেসিন ও কিচেন সিংকের দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।এমইএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিঃ জাওয়াহিরুল গণি বলেন, এমইএল গ্রুপ শুধু পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই নয়, ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক ও পরিবেশগত কাজের প্রতিও আমরা দ্বায়বদ্ধ। এর ফলে মারকুইস একটি দায়িত্বশীল ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।অনুষ্ঠানে মডার্ন ইলেক্ট্রক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসাইন, এম,ই,এল গ্রুপের পরিচালক ইঞ্জি: মো. বায়েজিদ গণি, পাম্পস এন্ড মোটরসের এন,এস,এম হামিদুর রহমান সরকার ও স্যানিটারি ওয়্যার এবং কর্পোরেট হেড অফ বিজনেস ইঞ্জিঃ মো. আরিফ উল্লাহ্ সহ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে আগত প্রায় ৪০০ জন ডিলার অংশগ্রহণ করেন। আয়োজন শেষে র্যাফল ড্র’র মাধ্যমে উপস্থিত ডিলারদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের সমন্বয়ে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়।

নতুন টাকায় থাকবে না বঙ্গবন্ধুর ছবি

আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাজারে আসছে শেখ মুজিবের ছবিমুক্ত নোট। শেখ মুজিবের জায়গায় ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালি ঐতিহ্য এবং জুলাই বিপ্লবের দেয়াললচিত্র বা গ্রাফিতি যুক্ত হবে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন এসেছে। শিগগিরই ২০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০০ টাকা ও এক হাজার টাকা মূল্যমানের নতুন নোট ছাপাবে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব নোটে নতুন করে নকশা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আপাতত এই চার ধরনের নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সব টাকার নোট থেকেই তার ছবি তুলে দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘নতুন টাকা ছাপার বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাজারে আসতে পারে নতুন টাকা।’জানতে চাইলে টাঁকশালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন শুধু টেন্ডার বাকি। টেন্ডারের কাজটা শেষ হয়ে গেলেই নতুন টাকা বাজারে চলে আসতে সময় লাগবে না। এই মুহূর্তে আমরা টাকা ছাপা বন্ধ রেখেছি। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমান নকশা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে চারটি নোট আবার নকশা করা হবে। পরে অন্য নোটগুলোতেও পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান কর্মকর্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ২৯ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে নতুন নোটের বিস্তারিত নকশার প্রস্তাব জমা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছে। নতুন নোট ছাপানোর বিষয়ে মূল সুপারিশ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ও নকশা উপদেষ্টা কমিটি। কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-১। কমিটিতে চিত্রশিল্পীরাও রয়েছেন।

এলডিসি উত্তরণে মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন : বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় নিরাপত্তা ও পূর্বাভাস প্রদানের ক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এলডিসি উত্তরণের পরিবর্তনে আমাদের ব্যবসায়িক সংগঠন এবং মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার স্থানীয় একটি হোটেলে "বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত জাতীয় কর্মশালার" উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি।বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন,বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হতে চলেছে, যা আমাদের অর্থনৈতিক যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পরিবর্তনটি প্রচুর সুযোগ তৈরি করবে,তবে এর জন্য আমাদের ব্যবসায়িক সংগঠন এবং মানবসম্পদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।তিনি বলেন, আমরা যতই এগিয়ে যাব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনায় জড়িত হবে। এছাড়াও, ইইউ, এসএএসইসি এবং আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।তিনি আরো বলেন, তিন দিনের কর্মশালা ডব্লিউটিওর নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করবে এবং তাদের কাজে এই অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করার সক্ষমতা উন্নত করবে।অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন , আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের পরিচালক জর্জ ক্যাস্ট্রো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী বক্তৃতা করেন।তিনদিনব্যাপী কর্মশালায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশ নিবেন।

এবার এনআরবিসি ব্যাংকের ৬ বিভাগীয় প্রধানের অ্যাকাউন্ট তলব

বেসরকারি খাতের এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ তিনজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পর এবার ব্যাংকটির ৬ বিভাগীয় প্রধানের অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট–বিএফআইইউ। আগামী পাঁচদিনের মধ্যে এদের লেনদেন বিবরণীসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। গতকাল ব্যাংকগুলোতে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়।অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে– হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ কামরুল হাসান, হেড অব আইটি দিদারুল হক মিয়া, হেড অব এমআইএস মো. রাজিদুল ইসলাম, চিফ ডিলার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন, হেড অব সিকিউরিটি ফোর্সেস ফরহাদ সরকার এবং সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদার। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এদের প্রত্যেকের অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, হালনাগাদ লেনদেন বিবরণীসহ সব ধরনের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউ এর আগে গত ১৪ নভেম্বর বিভিন্ন অনিয়ম–জালিয়াতিতে আলোচিত এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ হারানো মোহাম্মদ আদনান ইমাম এবং ব্যাংকটির সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদারের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে। এখন আবার জাফর ইকবাল হাওলাদারের অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর চার মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২৮১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে এক হাজার ৫৫ কোটি টাকা কম। আগের বছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক লাখ দুই হাজার ৩৩৬ কোটি ৪৫ লাভ টাকা। রাজস্ব কমার হার ১ শতাংশ। এসব তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের। জুলাই-অক্টোবর চার মাসে আমদানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। মূল্য সংযাজন কর (ভ্যাট) বাবদ আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৭২৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আয়কর থেকে এসেছে ৩১ হাজার ৮৮০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আমদানি থেকে আদায় ইতিবাচক ধারায় আছে। আর সব চেয়ে বেশি কমেছে মূল্য সংযোজন কর বাবদ আদায়। আগের বছর ২০২৩-২৪ সালের এ সময়ে আমদানি শুল্ক আদায় হয়েছিল ৩২ হাজার ৪০০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এবার এ চার মাসে শুল্ক আদায় শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। আগের বছর ভ্যাট আদায় হয়েছিল ৩৮ হাজার ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা এবার প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এ সভা হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এম মাসুদ রহমান, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খান, মো. আলতাফ হুসাইন ও মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মজুমদার, কোম্পানি সেক্রেটারি (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।

ফেনীতে এনসিসি ব্যাংকের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণ

কৃষি খাতে বিশেষ সিএসআরের আওতায় ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর, পরশুরাম, ফুলগাজী, দাগনভূঁইয়া ও সোনাগাজীতে এক হাজার বন্যাদুর্গত ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করেছে এনসিসি ব্যাংক। শনিবার (৩০ নভেম্বর) তাদের মাঝে বিভিন্ন প্রকারের সবজি ও ধানবীজ, সার ও ব্যাকপ্যাক স্প্রে মেশিন বিতরণ করা হয়। ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনসিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নূরুন নেওয়াজ সেলিম।এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে ছাগলনাইয়ার অনুষ্ঠানে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অভিষেক দাশ ও ছাগলনাইয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবল চাকমা বিশেষ অতিথি ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন এনসিসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুল আলম ও মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সিআরএম ডিভিশনের এসভিপি মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম, এসভিপি ও দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের প্রধান মোহাম্মদ নুরুল হক। সাইফুল ইসলাম এনসিসি ব্যাংকের কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিতরণের মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,‘ ফেনী জেলার কৃষকরা এনসিসি ব্যাংকের এই কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকৃত হবেন এবং এ এলাকার খাদ্যউৎপাদন বৃদ্ধিতে এই কার্যক্রম সহায়ক হবে।’ কৃষকেদের পাশে দাড়ানোর জন্য এনসিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান জেলা প্রশাসক। অনুষ্ঠানে মো. নূরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংক শুধু মুনাফা অর্জনের জন্যই ব্যবসায় করে না। বরং, সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজ করে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ সিএসআরের আওতায় দেশের বিভিন্নঅঞ্চলের কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের সবজির বীজ, সার, কীটনাশক ও যন্ত্রপাতি বিতরণ করছে।’ ভবিষ্যতে উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ ও আরও উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এম শামসুল আরেফিন বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংক দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি উপকরণ ও কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এনসিসি ব্যাংক কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছে।’ এ এলাকার চাষীদের সবজি চাষে আরও বেশী উদ্বুদ্ধ করতে ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে এ উদ্যোগ সহায়তা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশে সুইডেনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে আরও বেশি সুইডিশ বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েন। তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশে ব্যবসায় সহজ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে।’ সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আরও বেশি সুইডিশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই’। তিনি জানান, তার সরকার দুর্নীতি দমন করেছে, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগ সহজ করেছে এবং শ্রম আইনের বিষয়ে আইএলও কনভেনশন অনুমোদনের উদ্যোগ নিয়েছে। সাক্ষাতে নিকোলাস উইকস জানান, সুইডেনের সরকার ইউনূস-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এবং পুলিশের সংস্কার, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন পুনর্গঠনের উদ্যোগকে সমর্থন করে। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, এই পরিবর্তনকালে আমাদের পূর্ণ সমর্থন আপনার সঙ্গে রয়েছে।’ বৈঠককালে তারা জুলাই-আগস্ট বিপ্লব, সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, বাংলাদেশের সুইডিশ বিনিয়োগ ও গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের আগে তার সরকার সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ তিনি বলেন, ‘বিপ্লবের মূলমন্ত্রই ছিল ‘সংস্কার’।’ প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। তবে, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর উচ্চ প্রত্যাশা পূরণের ক্ষেত্রে। ‘দাবিদাওয়া মেটানো একটি বড় কাজ। আমরা চেষ্টা করছি, তবে খুব সতর্কও রয়েছি।’ তিনি বলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক শাহীনা গাজী।

কর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পে লক্ষ্য লক্ষ্য কোটি টাকার দুর্নীতি

এক দিকে কর ফাঁকি, কর ছাড়ের অপব্যবহার ও অর্থ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় রাষ্ট্র রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। অন্য দিকে, বড় বড় প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অপচয় হয়েছে। বাংলাদেশে এ চিত্র বিগত ১৫ বছরের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের সময়ে গড়ে প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। রোববার (১ ডিসেম্বর) বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে। প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ছাড়াও অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বলেন, ‘৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়নকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।’ কমিটি ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক ভারসাম্য, ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি, সরকারের ঋণ, পরিসংখ্যানের মান, বাণিজ্য, রাজস্ব, ব্যয়, মেগা প্রকল্প, ব্যবসার পরিবেশ, দারিদ্র্য ও সমতা, পুঁজিবাজার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও জলবায়ু ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রয়েছে। কমিটি পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কর্ণফুলী টানেলের মত মেগা প্রকল্পগুলোর ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। কমিটির পর্যবেক্ষণে যে-সব বিষয় উঠে এসেছে তা হল- রাজস্ব ফাঁকি ও আর্থিক ক্ষতি: কর ফাঁকি, কর ছাড়ের অপব্যবহার ও দুর্বলভাবে পরিচালিত সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছে। ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৯-২০২৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। যা বিদেশি সাহায্য এবং এফডিআই প্রবাহের সম্মিলিত মানের দ্বিগুণেরও বেশি। তদুপরি, কর ছাড় অর্ধেকে নামিয়ে আনলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ তিনগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। সরকারি বিনিয়োগ: বড় আকারের সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে গড় ব্যয় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ও সময়সীমা পাঁচ বছরের বেশি পেরিয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে এডিপি এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে ১৪-২৪ বিলিয়ন বা এক লাখ ৬১ হাজার থেকে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ ও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তৈরি বাজেটের কারণে সম্পদ হারিয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের সময় তহবিলের অপব্যবহার ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের নিয়োগ আরও বেশি সম্পদ সংকট সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, অবকাঠামো ও সামাজিক বিনিয়োগ থেকে সম্ভাব্য সুফল কমেছে। খাদ্যপণ্যের সরবরাহ চেইন ধ্বংস: গৃহস্থালির উৎপাদন পরিসংখ্যান বিকৃত করা ও চাহিদা কম দেখানো হয়েছে। বিশেষ করে চাল, ভোজ্য তেল ও গমের মত প্রধান পণ্যের ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা গেছে। যা বাজারকে অস্থিতিশীল করেছে। এলোমেলো ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ক্রয় নীতিমালা শক্তিশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিয়েছে ও সাধারণ ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। নিয়মিত মজুত পর্যবেক্ষণের অভাবে এই সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করেছে। ব্যাংকিং ও আর্থিক ব্যবস্থা: রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ঋণদান প্রক্রিয়া ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও গভীর করেছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আর্থিক মূল্য হিসাব করলে ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম বা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণের সমান হবে। ধারাবাহিক ঋণ খেলাপি ও উচ্চ প্রোফাইল জালিয়াতি আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে মূলধন সরিয়ে নিয়েছে। শ্রম অভিবাসন: গেল এক দশকে ১৩ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ভিসা ক্রয়ের জন্য ব্যয় করেছে। যা ঢাকা এমআরটি-৬ (উত্তরা-মতিঝিল) নির্মাণের খরচের চার গুণ। সিন্ডিকেট ও শোষণমূলক রিক্রুটমেন্ট কার্যক্রম অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। যার রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সামাজিক সুরক্ষা নেট: সামাজিক সুরক্ষা প্রোগ্রামের মধ্যে তহবিলের অযথা ব্যয় লাখ লাখ মানুষকে বিপন্ন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ২০২২ সালে ৭৩ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা সুবিধাভোগী গরিব হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ হয়নি। পরিবেশ ব্যবস্থাপনা: জলবায়ু অভিযোজন তহবিলের মধ্যে দুর্নীতি পরিবেশগত অবক্ষয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত জলবায়ু সম্পদের অপব্যবস্থাপনা স্থায়িত্বমূলক উদ্যোগগুলোকে ব্যাহত করেছে ও জলবায়ু-উদ্ভূত ঝুঁকির বিরুদ্ধে দীর্ঘ মেয়াদি স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

রিক্রুটিং এজেন্সির আড়ালে পাচার ১৩ লাখ কোটি টাকা

বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে যে টাকা পাচার করা হয়েছে, তা দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল- এমন মেট্রোরেল বানানো যেত চারটি। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর এমন ভয়াবহ অর্থপাচারের চিত্র উঠে এসেছে শ্বেতপত্রে। বলা হচ্ছে, সামাজিক সুরক্ষা খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হত যাদের পেছনে, তাদের ৭৩ শতাংশই ভুয়া। যা বাড়িয়েছে সরকারি খরচ ও বঞ্চনা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কিংবা ওএমএসের পণ্য কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের অপেক্ষার দীর্ঘ লাইন চোখে আঙুল দিয়ে যখন বুঝিয়ে দেয় আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে সাধারণ মানুষের হিমশিম অবস্থার কথা। এমন দৈন্যদশার মধ্যেই শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে জানানো হয়, দরিদ্র মানুষ নিয়ে রীতিমত ছিনিমিনি খেলা হয়েছে গেল সরকারের আমলে।সামাজিক সুরক্ষা খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে; যাদের জন্য, ২০২২ সালের তথ্য- তাদের ৭৩ শতাংশই ভুয়া, অর্থাৎ, তারা গরিব নয়। দুর্নীতির জালে বন্দি রয়েছে নিম্ন আয়ের দুেই কোটি মানুষ; যারা দুই দিন কাজ করতে না পারলেই পড়ে যায় দারিদ্রসীমার নিচে।শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘সরকার টাকা খরচ করছে ঠিকই, তবে যাদের জন্য খরচ করছে সুবিধা তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। সুবিধা সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য সুবিধাভোগীদের সঠিক তালিকা তৈরি করতে হবে।’এ দিকে, অর্থপাচারের নানা মাধ্যম খুঁজতে যখন হয়রান সরকারি বিভিন্ন সংস্থা; তখন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলছে, ‘বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে শুধু ভিসার আড়ালে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গেল এক দশকে পাচার করেছে ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল বানানো যেত চার বার।’এ অবস্থায় জনশক্তি রফতানির প্রতিটি ধাপে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে রিক্রুটিং এজেন্সিকে বাধ্য করার তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, ‘সিস্টেমটিকে স্বচ্ছ করতে হবে। যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’গেল ১৫ বছরে তথ্যের অস্বচ্ছতা আর ঘুষ-দুর্নীতিকে স্বাভাবিক কর্মযজ্ঞে পরিণত করা হয়েছিল বলেও জানানো হয়েছে শ্বেতপত্রে।

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ, যা জানালেন উপদেষ্টা

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতি হয়ে থাকলে সেটি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি) আয়োজিত তৃতীয় টার্মিনালের সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।বৈঠকে উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয় হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এটি কেন হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।’এর আগে নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মফিজুর রহমান বলেন, ‘নকশায় ভুল ও কয়েক বছরের ব্যবধানে সাত হাজার কোটি টাকার তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কেটি টাকা। বাহ্যিকভাবে এ টার্মিনাল সুন্দর মনে হলেও সর্বস্তরে নিম্নমানের সামগ্রী, অখ্যাত ব্র্যান্ডের বহু যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’তবে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তৃতীয় টার্মিনালে কোয়ালিটি সার্ভিস দেবে জানিয়ে বিমানের পরিচালক বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ২০টি ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানের এক হাজার জনবলের ঘাটতি রয়েছে। স্বল্পতা রয়েছে যন্ত্রপাতির। তবে, সবকিছুই সমাধান প্রক্রিয়াধীন।’আর এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘কোন দেশেই শহরের মাঝখানে এয়ারপোর্ট হতে পারে না। তৃতীয় টার্মিনাল কতটুকু অপারেশনাল সুবিধা কতটুকু বাড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শহরের মধ্যে এয়ারপোর্ট রেখে এভিয়েশন হাব হিসেবে স্বপ্ন দেখা যাবে না।’

শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার থেকে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এ তথ্য উঠে এসেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতারণা ও কারসাজিসহ প্লেসমেন্ট শেয়ার এবং আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’ তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে রোববার (১ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘শেয়ারবাজারে প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কারসাজির একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। বাজারের মধ্যস্থতাকারী দেউলিয়া হয়েছে, তাদের ইক্যুইটি ৩০ হাজার কোটি টাকা নেতিবাচক হয়েছে।’ যারা ব্যাংক খাতের অপরাধী, তারা শেয়ারবাজারে আস্থা নষ্ট করার পেছনেও ছিল বলে শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ‘শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একটি স্বার্থান্বেষী মহলের হস্তক্ষেপের কারণে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’ গেল ২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, সিপিডি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক একে এনামুল হক, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী ইকবাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী।

দেশের দশ শতাংশ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছে

অর্থনীতির শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির কাজ হল চুরির বর্ণনা দেয়া, চোর ধরা নয়। আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোর চোরতন্ত্র করেছে। বাংলাদেশে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ তছরুপ হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের দশ শতাংশ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছেন।’ সোমবার (২ ডিসেম্বর) ঢাকার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে শ্বেতপত্র কমিটির সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। এর আগে, রোববার (১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, ‘এই স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার ভয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের অনেকেই সরকারের চাপিয়ে দেয়া উন্নয়নের বয়ানকে বৈধতা দিতে বাধ্য হয়েছেন। মোট ১২ জন নামজাদা অর্থনীতিবিদ নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করা হয়েছিল। একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটির মাধ্যমে এই শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এই শ্বেতপত্রে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নয়, দুর্নীতির পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। কমিটির কাজ চোর ধরা না, চুরির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা।’ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘কমিটির প্রতিটি সদস্য বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছে। এমনকি যতটি সভা হয়েছে, সেখানে একটি পয়সা সিটিং অ্যালাউন্স নেয়া হয়নি।’ তবে, বিদেশি পরামর্শক এনে এই শ্বেতপত্র করা হলে ন্যূনতম ২৫ কোটি টাকা খরচ হত বলে জানান তিনি। ‘কমিটি এটি দেশের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান হিসেবে করেছে, যা দেশের স্বার্থে উদহারণ হয়ে থাকবে। রিপোর্টটিকে সাবধানতার কারণে এখনো খসড়া হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিছু পরিসংখ্যান পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। আগামী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে এটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা হবে। এই রিপোর্টের গ্রন্থস্বত্ব স্বয়ং বাংলাদেশ সরকার। এটিকে সরকার নিজস্ব দলিল হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।’ শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, ‘প্রথাগত গবেষণা পদ্ধতির বাইরে গিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশি-বিদেশিদের সাথে আলোচনা করে এই প্রতিবেদনের নানা দিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে আমরা নিজেরা ১৮ বার সভা করেছি। নীতিনির্ধারকদের সাথে ২২ বার সভা করেছি। আমাদের প্রথম সভা ছিল ছাত্রদের সাথে। তাদের সর্বোচ্চ জোর ছিল মানসম্মত শিক্ষার ওপরে। শ্বেতপত্রের পুরো প্রক্রিয়া না বুঝলে এই দলিলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ততা বজায় রেখে এটি প্রস্তুত হয়েছে।’ শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ডক্টর জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়ে দেশের অর্থনীতিবিদরা মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনার কথা বলত। আমরা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এখন বলছি, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে। তবে, বিগত সরকার যেহতু বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির তথ্য-উপাত্তকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেখিয়েছিল। তাই, এই ফাঁদের মধ্যে পড়ে যাওয়াটা আমরা এত দিন বুঝতে পারেনি।’ শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে শুরুর দিকে বাংলাদেশে যে দুর্নীতি হয়েছিল, তা ছিল শ্যাডো ইকোনমি। বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে সে অর্থনীতি কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে, সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু, শেষের দিকে যে দুর্নীতি হয়েছে তার অধিকাংশই বিদেশে পাচার হয়ে গিয়েছে। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব টাকা লোপাট করা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে সেই বোঝা থেকে গেল।’ কমিটির আরেক সদস্য সেলিম রায়হান বলেন, ‘যেসব খাতে সংস্কার দরকার সেখানে শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে।’ সদস্য ইমরান মতিন বলেন, ‘দশ শতাংশ মানুষের কাছে ৮৫ ভাগ সম্পদ।’ নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যেই ৪০০ পৃষ্ঠার এই দলিলটি তৈরি হয়েছে, সর্বোচ্চ দেড় মাসের মধ্যে ছোট খাট সংশোধন শেষে রিপোর্টটি বই আকারে প্রকাশ হবে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা পাচারের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ব্যাংক খাত। এরপর অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তিখাত থেকে বিপুল অংকের টাকা লোপাট হয়েছে।’ সম্মেলনে শ্বেতপত্র কমিটির সদস্যরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী ছয় মাস অর্থনীতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ এ থেকে উত্তরণে সরকারকে একটি মধ্য মেয়াদি নীতি গ্রহণের পরামর্শ তাদের।

অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম: ক্যাব

বাজারে প্রচলিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে বলে মনে করছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বাজারে নিত্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বাজার মনিটরিং বাড়ানোসহ মোট ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সোমবার (২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ক্যাব কর্তৃক ‘আলু, পেয়াঁজ ও ভোজ্য তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে’ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিশেষত আলু, পেঁয়াজ এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস অবস্থা। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু মান ভেদে এখনো ৭৫-৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১৫-১৩০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৫-১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে তারা বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে এমন চড়া দামে আলু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই এবার আলুর দামের এমন অবস্থা। বিপুল আলু হিমাগারে মজুদ থাকায় ও আমদানি জটিলতার কারণে এবার আলুর দাম ভোগাচ্ছে ক্রেতাদের। অবশ্য দাম নিয়ন্ত্রণে বা আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নেই যথাযথ তদারকি। হিমাগার পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় আলুর দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। একইসঙ্গে আলুর মতো নিয়ন্ত্রণে আসেনি পেঁয়াজের দাম। দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকা পেঁয়াজের দামও এখনও কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা। মানবন্ধনে উপস্থিত ক্যাব নেতারা বলেন, কৃষক পর্যায় থেকে নামমাত্র মূল্যে আলু কিনে মজুদ করে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন থেকে এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। এমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। এসময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন তারা৷ সেগুলো হচ্ছে — ১. অসাধু দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।২. নিত্য পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।৩. টিসিবির ট্রাক সেল বাড়াতে হবে।৪. ভোজ্য তেল খোলা বাজারে যারা বিক্রি করছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।৫. ভোক্তা স্বার্থ দেখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ বা কনজুমারস মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে।৬. সরকার ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য দিচ্ছে এর সংখ্যা দেড় কোটি করতে হবে।৭. বাজারে খোলা ভোজ্য তেল বিক্রেতাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।৮. বাজার অভিযান বা মনিটরিং বাড়াতে হবে। মানবন্ধনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. শওকত আলী খান।