
‘টপ টেন ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড’ পেল ন্যাশনাল ব্যাংক
২০২৪ সালে রেমিট্যান্স সংগ্রহে অনন্য অবদান রাখার জন্য সেন্টার ফর এনআরবির পক্ষ থেকে ‘টপ টেন ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। শনিবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া বছরব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এই পুরস্কার হস্তান্তর করেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুরস্কার নেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) শেখ আকতার উদ্দিন আহমেদ ও ফরেন রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধান মিল্টন রায়। সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরী ও গণ্যমান্য দেশি ও বিদেশি অতিথি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায় সম্মেলন ২০২৫ অনুষ্ঠিত
‘সংহতি’র বছর: একসাথে গড়ি আগামী’- এই প্রতিপাদ্যে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসির বার্ষিক ব্যবসায় সম্মেলন- ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল আজিজ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান একেএম আবদুল আলীম।ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে অতিথি ছিলেন ব্যাংকের পরিচালক কাজী আকরাম উদ্দিন আহ্মদ, কামাল মোস্তফা চৌধুরী, অশোক কুমার সাহা, ফিরোজুর রহমান, এসএএম হোসাইন, মোহাম্মদ শামসুল আলম, গুলজার আহমেদ, মো. জাহেদুল হক, ফেরদৌস আলী খান ও মো. আবুল হোসেন। ব্যাংকের শরি‘আহ্ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ্ ও সদস্য সচিব যুবাইর মোহাম্মদ এহসানুল হক, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ওপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. সিদ্দিকুর রহমান, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান এবং ব্যাংকের সব শাখাপ্রধানসহ প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন নির্বাহী ও বিভাগীয় প্রধান সম্মেলনে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বিগত বছরে ব্যাংকের অর্জিত সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করে সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি অভিনন্দন জানান। তিনি শরি‘আহ্ পরিপালন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উত্তম সেবা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকের উন্নতির ধারা অব্যাহত রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। অন্য অতিথিরা সর্বস্তরের নির্বাহী ও কর্মীদেরকে পেশাগত মান উন্নয়ন পূর্বক ২০২৫ সালের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দলগতভাবে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

রেমিট্যান্স আহরণে ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ পেল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহে প্রথম স্থান অর্জন করায় সেন্টার ফর এনআরবি প্রদত্ত ‘টপ টেন রেমিট্যান্স গোল্ড অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ পেয়েছে। শনিবার (১১ জানুয়ারি) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবির উদ্যোগে আয়োজিত ‘ব্রান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছ থেকে এ পুরস্কার নেন ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা। সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেট স্পিকার বাংলাদেশি ব্রিটিশ নাগরিক সাইফুদ্দিন খালেদ। অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের প্রথম ‘অনলাইন বাণিজ্য মেলা’ শুরু রকমারির
অনলাইন বই বিক্রির ফ্ল্যাটফর্ম রকমারি.কম শুরু করেছে দেশের প্রথম ‘অনলাইন বাণিজ্য মেলা’। এখন গ্রাহকরা ঘরে বসেই মেলার অফার, সেরা পণ্য ও আকর্ষণীয় ডিল উপভোগ করতে পারবেন। মেলা চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রকমারি.কমের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনলাইন ট্রেড ফেয়ারে এক লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি পণ্যে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে। মেলায় থাকছে ১০০টিরও বেশি বান্ডেল ডিল, ‘একটি কিনলে একটি ফ্রি’ অফার ও নির্দিষ্ট পণ্যে ফ্রি শিপিং।’ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইলেকট্রনিক্স, গৃহস্থালি পণ্য, ফ্যাশন ও বইসহ বিভিন্ন বিভাগে আকর্ষণীয় অফার রয়েছে। এছাড়া, প্রতিদিন রিভিউ দেওয়া গ্রাহকদের জন্য থাকছে ৫০০ টাকার বিশেষ গিফট ভাউচার ও ফ্ল্যাশ সেলের মত চমক। এ বিষয়ে রকমারি.কমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়রুল আনাম রনি বলেন, ‘দেশের ই-কমার্স খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে আমরা সব সময় উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিতে চেষ্টা করি। প্রথম বারের মত এই অনলাইন ট্রেড ফেয়ার আয়োজনের মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী ও আধুনিক কেনাকাটার সুযোগ তৈরি করেছি।’ ‘আমাদের মেলায় ছয় শতাধিক ব্র্যান্ড রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাতেও নেই। সেই হিসাবে দেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য মেলা আমরাই করছি। আমি বিশ্বাস করি, রকমারি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের কেনাকাটার অভ্যাসে অথেনটিক পণ্যর সুযোগ নিশ্চিত করা এবং তার জন্য আমরা কাজ করে চলেছি।’

চার মাস চলার রিজার্ভ আছে, ভয়ের কিছু নেই: গভর্নর
দেশে এখনও চার মাস চলার মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তাই এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুর। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেল ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলার থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় রিজার্ভ নিয়ে ভয় না পাওয়ার কথা বললেন গভর্নর। ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, দেশে এখনও চার মাস চলার মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তাই ভয়ের কিছু নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে। গত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে তিন বিলিয়ন ডলার। রফতানি বেড়েছে দুই দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসীদের সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সৌদি আরবকে টপকে রেমিট্যান্স পাঠানোয় দুবাই শীর্ষে উঠেছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ সৌদি আরব থেকে অর্থ প্রথমে দুবাই আসছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে আসছে। দুবাইয়ের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সুযোগে মুদ্রা বিনিময় হার ম্যানুপুলেট করার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ায় বছরে সরকারের ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর গুরুত্ব তুলে ধরে ড. আহসান এইচ মুনসুর বলেন, প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। প্রশিক্ষিত কর্মী বিদেশে পাঠাতে পারলে এই রেমিট্যান্স অর্জন ‘কঠিন কিছু না’ বলে উল্লেখ করে তিনি। তিনি আরও বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ায় দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

৫ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ বিলিয়ন: গভর্নর
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, গত ৫ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ বিলিয়ন আর রফতানি বেড়েছে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর এনআরবি আয়োজিত ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। গভর্নর বলেন, প্যানিকড হবার মতো কিছু হয়নি, এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৪ মাসের রিজার্ভ রয়েছে তবে সতর্ক থাকতে বলেন গভর্নর। আরও জানান, টাকা পাচার ও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরে আসায় অর্থনীতি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক পরিচয়ে বিভাজন সবচেয়ে বড় সংকট বলেও মন্তব্য করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সবাইকে বাংলাদেশের পক্ষে লবিং করতে হবে নয়তো রাজনৈতিকভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো অসম্ভব।

সব ধরনের পোশাকের দাম বাড়ছে
টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। ফলে পোশাক বানাতে দরজিকে দিতে হবে বাড়তি টাকা। সেই সঙ্গে ব্র্যান্ড ও নন–ব্র্যান্ড সব ধরনের তৈরি পোশাকের দোকানেও ভ্যাট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে বাড়ছে সব ধরণের পোশাকের দাম। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। এসব পণ্যের মধ্যে পোশাকও রয়েছে। এদিন এ-সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এবং ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ ওই দিনেই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। ফলে এই অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে। জানা গেছে, এতদিন টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে থাকা ১০ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে টেইলারিং শপ ও টেইলার্সে ২ হাজার টাকার একটি পোশাক বানাতে ৩০০ টাকা ভ্যাট দিতে হবে। এতদিন সেটি ছিল ২০০ টাকা। খরচ বেড়েছে ১০০ টাকা। অন্যদিকে, ব্র্যান্ড ও নন–ব্র্যান্ড সব ধরনের তৈরি পোশাকের দোকানেও ভ্যাট বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগে এসব দোকানে ভ্যাট ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এখন সেটি ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তার মানে পোশাক কেনা কিংবা বানানো উভয় ক্ষেত্রেই ভোক্তার খরচ বাড়ল।

এখনও বেসামাল চালের বাজার
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে আমদানি বৃদ্ধি, ভর্তুকি মূল্যে বিক্রিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও বেসামাল অবস্থা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১০টাকা পর্যন্ত। আমনের ভরা মৌসুমেও বাজার অস্থিতিশীল। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৭৫ টাকা। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৮৬ টাকা। যা আগে খুচরা পর্যায়ে ৭০ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। যা আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি মাঝারি আকারের চালের মধ্যে বিআর ২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগেও ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, দাম বাড়ার পেছনে মিলারদের দোষ আছে। আর ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক মাসে সরু চালের দাম চার শতাংশ, মাঝারি চালে আড়াই এবং মোটা চালের দর সাত শতাংশ বেড়েছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে গড়ে সব ধরনের চালের কেজিতে বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, চলতি আমন মৌসুমে ৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বন্যায় কিছু এলাকার জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে আবাদ সম্ভব হয়নি। আবাদ হওয়া ৫৬ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ৫৩ লাখ হেক্টরের ধান কাটা হয়েছে। এদিকে এখনও বাজারে সংকট বোতলজাত সয়াবিন তেলের। পণ্যের দাম ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর কথা জানান ভোক্তারা।

রেস্তোরাঁ-ইন্টারনেট ও পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধি করে অধ্যাদেশ জারি
হোটেল, রেস্তোরাঁ, টেলিফোন, ইন্টারনেট ও কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধি করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সই করা অধ্যাদেশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএম) শর্ত পরিপালনে কিছু কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানো এবং যৌক্তিকীকরণ করার পরিকল্পনা নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। উপদেষ্টাদের সভায় এনবিআরের দেওয়া প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে, যা অনুমোদন দেওয়া হয়।

আ. লীগ আমলের বিএফআইইউ উপ-প্রধানকে এবার প্রধানের দায়িত্ব
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপ-প্রধান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম শাহীনুল ইসলামকে সংস্থাটির প্রধান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম শাহীনুল ইসলামকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে কর্ম সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে ডেপুটি গভর্নর পদ মর্যাদায় বিএফআইইউর প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হলো। যোগদানের তারিখ থেকে তার মেয়াদ হবে ২ বছর। এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে বিএফআইইউয়ের নির্বাহী পরিচালক পদে ছিলেন। এরপর নিয়মিত অবসরে যান। ওই সময়ে বিএফআইইউয়ের প্রধান পদে থাকা মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মাসুদ বিশ্বাস কর্মকর্তাদের চাপে পদত্যাগ করেন। এখন তার সময়ে উপ-প্রধান পদে থাকা ব্যক্তিকে সংস্থাটির প্রধান পদে নিয়োগ দিল অন্তর্বর্তী সরকার।

পূবালী ব্যাংকের সাথে ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশের চুক্তি সই
পূবালী ব্যাংক পিএলসি এবং লজিস্টিক্স ও আন্তর্জাতিক শিপিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশ গো-গ্রীন প্লাস শীর্ষক একটি চুক্তি সই করেছে। সম্প্রতি এ চুক্তি সই হয়। পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ আলী এবং ডিএইচএল এক্সপ্রেস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিয়ারুল হক চুক্তিতে সই করেন। এ সময় পবালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, আন্তর্জাতিক বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নিশাত মাইসুরা রহমানসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। এই চুক্তির লক্ষ্য হল শিপিং সেবায় কার্বন নিঃসরণ কমানো।কার্যকরভাবে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে আনার মাধ্যমে পূবালী ব্যাংকের নেটজিরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গো-গ্রীন প্লাস প্যাকেজ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আর্থিক খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পুঁজিবাজার পুরোপুরি ব্যর্থ: ডিএসইর চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজার ভীষণভাবে সংকোচিত হয়েছে, আর্থিক খাতে যে ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ। দীর্ঘ দিন ধরে যে অনিয়ম অদক্ষতাকে আমরা লালন করেছি, সেটাই পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক হতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকা ক্লাবে ডিএসই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ১০ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের দুর্বল আইপিও বাজার এসেছে। ভাল কোম্পানি আসছে একেবারেই নগণ্য। বাজারে বিনিয়োগকারী সংখ্যা গত ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সক্রিয় বিনিয়োগকারী আরো অনেক কম।’ তিনি আরো বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সক্ষমতা পরিমাপের অন্যতম একক বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ এক শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কর্পোরেট বন্ডের পরিমাণ যদিও এক শতাংশ বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা শুন্য দশমিক ৫১ শতাংশের বেশি নয়। বাজারে নতুন আইপিও, কর্পোরেট বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড আমাদের অগ্রাধিকারী রয়েছে।’ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আমরা সক্ষম করতে না পারি, তাহলে হয়তো আবারো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যাব। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম করতে হলে কিছুটা সময় আমাদের লাগবে। পুঁজিবাজার লিডিং এবং কোঅর্ডিনেশনের জায়গায়টা হোল্ড করবে। ডিএসইকে সামনে এগিয়ে নিতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত লোকবল লাগবে। আমরা নেতৃত্ব গুণাবলী সম্পূর্ণ লোকবল নিয়োগ দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, বাজারে আস্থা আগের চাইতে ভাল হবে, বিনিয়োগকারীরা আবার ফিরে আসবে। আইটি সিকিউরিটি অডিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিএসই ওয়েব সাইটকে আমরা রিভাইব করছি। বিশেষ করে কিভাবে আইপিওটাকে ডিজিটালাইজড করা যায়। বন্ড মার্কেটও পরিচালনা সমস্যা, আমরা বিএসইসির সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।’ মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করছি এবং ভবিষ্যতে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সে কাজও আমরা করছি। ইনসাইডার ট্রেড ও ম্যানুপুলেশন কিভাবে রোধ করা যায় তা নিয়ে কাছ করছি। মার্কেট ডিভলমেন্টের ক্ষেত্রে রিসার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাজারে রিসার্চের মাত্রা খুবই কম এবং এটা কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে কাজ করছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ডিএসইর সুরক্ষা যদি আইনগত হয় তবে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। সিসিবিএল থাকবে এমনটা আমরা চাই না। বিএসইসি, ডিএসই, সিসিবিএল এ বিষয়ে সকাজ করছে। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই দক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে সরকারের নজরে থাকলেও পুঁজিবাজার উপেক্ষিত হয়েছে। পুঁজিবাজার কিভাবে সরকারের পাইরোটি লিস্টে আসে তা নিয়ে কাজ করছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজার ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। আমাদের দেশেও এটা করা সম্ভব।’ চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আমাদের কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে না। আমরা সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছি।’ ডিবিএর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে যে পেশার গ্রুপগুলো হয়েছে। আমাদের দেশে সেগুলো পুরোপুরি কাজ করেছে, এমন কোন ভাল অতীত নেই। তবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার চাপের ফলে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। এটা বাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।’ বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে সবকিছু এফআইডি নির্ভর করা হচ্ছে। অনেক কিছুই প্রাইমারি রেগুলেটরের হাত থেকে নিয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ‘ডিএসই যদি প্রভাব মুক্ত থাকতে পারে, তাহলে পুঁজিবাজার ইতিবাচক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ১৫ বছরের অনিয়মের বিচার বিশ্লেষণ করা দরকার। আপনাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে সব অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে না। আপনারা সহযোগিতা করলে; অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের জন্য সহজ হয়। আপনারা তুলে নিয়ে আসুন, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।’ সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী, মো. শাহজাহান, রিচার্ড ডি রোজারিও, বিএম বিএ প্রেসিডেন্ট মাজেদা খাতুন এবং ডিএসই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী তুরস্ক
বাংলাদেশের কাছে তুরস্ক অস্ত্র বিক্রির আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমর বোলাটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে তিনি এ তথ্য জানান। শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘তবে অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন আলোচনা হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুই দেশের সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গার্মেন্টস, ফার্মেসি ও খাদ্যসহ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ চাইলে তুরস্ক আলাদা ইকোনমিক জোন করে দিতে আগ্রহী। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ দেশে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।’ এ সময় টিসিবির কার্ড নিয়েও কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে টিসিবির কার্ড দেওয়া হয়েছিল। একই পরিবারের অনেককে দেওয়া হত। সেটি বাদ দিয়ে এখন ১ কোটি থেকে ৬৩ লাখ করা হয়েছে।’

আলাদিনের চেরাগ নেই, যে সুইচ দিলেন আর বাজার ঠিক হয়ে যাবে
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে নিজের কাছে কোন মেশিন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেছেন, ‘সম্প্রতি চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এ সমস্যা সাময়িক। আসলে এমন কোন আলাদিনের চেরাগতো নেই যে, সুইচ দিলেন আর কালকেই বাজার ঠিক হয়ে যাবে। তবে বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে।’ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. ওমর বোলাতের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীনের এসব কথা বলেন। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমদানি উদার করা হয়েছে। শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আমদানি শুরু হলেই যদি কেউ অনায্যভাবে মজুদ করে থাকে তাহলে তারাও ছাড়তে বাধ্য হবে। বাজারেও স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে।’ এ সময়ের মধ্যেইতো অসাধু ব্যবসায়ীরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেবে- এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে বিষয়টি সাময়িক। কোন আলাদিনের চেরাগ নেই যে, আপনি সুইচ দিলেন আর কালকেই মার্কেটটা ঠিক হয়ে যাবে।’ শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘চালের মজুদে কোন সমস্যা নেই। তারপরও খাদ্য মন্ত্রণালয় ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করছে। এছাড়া, নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে ওএমএস এবং টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে।’

সম্পত্তির নিলাম ঠেকাতে আদালতে যাচ্ছে এস আলম গ্রুপ
খেলাপি ঋণের পৌনে চার হাজার কোটি টাকা আদায়ে এস আলম গ্রুপের দুই কোম্পানির সম্পত্তি নিলামে তোলার যে উদ্যোগ জনতা ব্যাংক নিয়েছে, তা ঠেকাতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক এই শিল্পগ্রুপ। এর মধ্যে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের কাছে দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা পাওনা। ব্যাংকটি বলেছে, ‘শর্তানুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হয়। অসংখ্য বার তলব-তাগাদা দিলেও ঋণ গ্রহীতা পাওনা পরিশোধ করেনি। সে কারণে অর্থঋণ আদালতের আইন অনুযায়ী নিলাম ডেকেছে ব্যাংক।’ এর মধ্যে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানিটি জানিয়েছে, জনতা ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবে গ্রুপের লিগ্যাল বিভাগ। শিগগিরই পদপেক্ষর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের কোম্পানি সচিব আল মামুন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ডিএসই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল। আমরা জানিয়েছি, লিগ্যাল বিভাগের আইনজীবীরা দ্রুত জনতা ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।’ ‘এস আলম গ্রুপের জমি নিলামে তুলেছে জনতা ব্যাংক’ শিরোনামে গত ১ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে। এরপর এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের কোম্পানির কাছে ব্যাখ্যা চায় ডিএসই। উত্তরে ওই কোম্পানি ডিএসইকে জানায়, কোম্পানি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, ব্যাংকের বিধি নিষেধের কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। তাতে কোম্পানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘এ রকম পরিস্থিতিতে ঋণদাতা ব্যাংক বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলেছে। এটা হয়েছে সম্প্রতি তৈরি হওয়া দেশের রাজনৈতিক সংকটের কারণে, যা আমাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। আমরা জানাতে চাই, মজুদ থাকা কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদন, পণ্য বিপণন ও অন্যান্য ব্যবসায় বাণিজ্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ রকম নিলামের নোটিস কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোন প্রভাব ফেলবে না।’ কোম্পানির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, ‘ঋণদাতা ব্যাংকের নিলাম নোটিসের বিরুদ্ধে কোম্পানির পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’ সম্পত্তি নিলামে তোলার বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যাংক টাকা পাবে, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো তো ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। নিয়মানুযায়ী তাদের খেলাপি দেখানো হয়েছে। ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এছাড়া, তো কোন বিকল্প নেই। আইন মেনেই তাদের সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়েছে।’ শিল্পী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ব্যবসায় রয়েছে চিনি, তেলসহ ভোগ্যপণ্য, ইস্পাত, ব্যাগ, সিমেন্ট, বস্ত্র, জ্বালানী, আমদানি-রপ্তানি, পরিবহন, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন খাতে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাভোগী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত এস আলম গ্রুপ সরকার পতনের পর ব্যবসায় পরিচালনায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে ও ভিন্ন নামে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া শিল্পগ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিদেশে চলে গেছেন। তার ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা শেয়ার হস্তান্তরের উপরও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। ইতোমধ্যে বেসরকারি আটটি ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়েছে। ঋণের অর্থ আদায়ে বিভিন্ন ব্যাংক তৎপর হয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঋণ আগ থেকে খেলাপি হয়ে পড়লেও ব্যাংকগুলো তা আগে দেখায়নি। উল্টো দিন দিন বেড়েছে গ্রুপটির ব্যাংক ঋণের অঙ্ক। কর ফঁকির অভিযোগ এনে এস আলম গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের বিন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বার বা ব্যবসায় পরিচিতি নম্বর) বন্ধ রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাতে গ্রুপটির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন ঋণ না দেওয়ায় অর্থ সংকট দেখা দেওয়ায় এস আলমের কোম্পানিগুলোর কয়েকটি মাত্র চলছে কোনমতে। কাঁচামাল আমদানি করতে না পারা ও মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রুপের আটটি কোম্পানি গত ২৪ ডিসেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যদিও সেগুলো পরে ফের খুলে দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর এসব কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে সম্পত্তি নিলামে তোলা এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসও রয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত দুইটি কোম্পানির কাছে জনতা ব্যাংকের মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি। জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রাম সাধারণ বীমা ভবন শাখা এ দুইটি কোম্পানির ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রি করতে ২৩ জানুয়ারি নিলামের তারিখ রেখে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের নামে নেওয়া ঋণের বিপরীতে ঢাকার গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় দুই হাজার ৬৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর সদরে রয়েছে ২০১ শতাংশ জমি। এস আলম গ্রুপের এ কোম্পানির দুইটি ইউনিটের দৈনিক দুই হাজার ৪০০ টন চিনি পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলের ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও গাজীপুরের শ্রীপুর মিলিয়ে দুই হাজার ৯৭১ দশমিক ২৭ শতাংশ জমি বন্ধক রয়েছে ব্যাংকের কাছে। যার মধ্যে গাজীপুরে ২৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ রয়েছে। নিলামে সেসব জমি ও তার উপর নির্মিত অবকাঠামো বিক্রি করে অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা করেছে জনতা ব্যাংক। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪১২ কোটি ১২ লাখ টাকা। পরিশোধ না করায় সুদসহ তা দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এ কোম্পানি ২০২৩ সালে কর পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সবশেষ ২০২৩ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন, ২০২৪ সালের ৪ অগাস্ট ২১ টাকা ৭০ পয়সায় হাত বদল হওয়া এ কোম্পানির শেয়ার এখন অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

জানুয়ারিতে আসছে পৌনে দুই লাখ টন চাল, দাম কমার আশা উপদেষ্টার
বিভিন্ন দেশ থেকে চলতি জানুয়ারি মাসে সরকারিভাবে এক লাখ ৭৫ হাজার টন চাল দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। এ চাল এলে বাজারে দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান উপদেষ্টা। ক্রমেই বাড়ছে চালের দাম- এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আমনের ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাল আমদানির ব্যবস্থা নিয়েছি। বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির জন্য উৎসাহিত করছি।’ তিনি জানান, এরই মধ্যে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির জন্য দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে জি-টু-জি (দুই দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি) ভিত্তিতে এক লাখ টন চাল আনা হবে। পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। চলতি মাসে সরকারিভাবে এক লাখ ৭৫ হাজার টন চাল আসবে জানিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এ চাল এলে দাম কমবে বলে আশা করি।’ আলী ইমাম মজুমদার আরও বলেন, ‘চালের শুল্ক ছাড় দিয়েছি, ওএমএস কার্যক্রম চলছে, সেটি আরও জোরদার করা হবে। টিসিবির অধীনে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টন চাল দেওয়া হচ্ছে। মার্চ থেকে শুরু হবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এ কর্মসূচির অধীনে ৫০ লাখ পরিবার ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘মজুতবিরোধী আইন প্রয়োগে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব নিয়ে সরকার একটি বিধ্বস্ত প্রশাসন ব্যবস্থা পেয়েছে। এছাড়া, পেয়েছে বিধ্বস্ত পুলিশ, বিধ্বস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এগুলো একটা সেটে আনতে সময় লাগে। বাই দিস টাইম এটা চলে এসেছে।’

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৪১৩তম পর্ষদীয় সভা অনুষ্ঠিত
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদের ৪১৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদের চেয়ারম্যান খাজা শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সভায় ব্যাংকের সার্বিক ব্যবসায় পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করাহয় এবং বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় পর্ষদের পরিচালক মো. শাহীন উল ইসলাম, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, এম আবু ইউসুফ, মোহাম্মদ আশরাফুল হাছান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফরমান আর. চৌধুরী, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাফাত উল্লা খান, ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইঞা ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা
নোবেলজয়ী ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা কাঠামো ও পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারের অংশীদারিত্ব ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নতুন অধ্যাদেশের খসড়ায় এ পরিকল্পনার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। ওই অধ্যাদেশে ২০১৩ সালের গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়, ‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের ২৫ শতাংশ মালিকানা সরকারের এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতাদের। তবে, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ঋণগ্রহীতাদের কাছে ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।’নতুন খসড়া অনুযায়ী, ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হবে। ঋণগ্রহীতারা ধীরে ধীরে মূলধনে অবদান বাড়িয়ে ৯৫ শতাংশ মালিকানা অর্জন করবেন। বোর্ড ঘোষিত যে কোন লভ্যাংশ মূলধনের ভিত্তিতে আনুপাতিকভাবে বিতরণ করা হবে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সরকার-নিযুক্ত পরিচালকের সংখ্যা তিনজন থেকে কমিয়ে একজনে নামিয়ে আনা এবং ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নিয়োগে সরকারের ভূমিকা বাতিলের কথা বলা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবে ঋণগ্রহীতারা বোর্ডে ১১ জন পরিচালক নির্বাচনের সুযোগ পাবেন উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়, ‘চেয়ারম্যান অক্ষম হলে, বোর্ডের সদস্যরা অন্য কোন পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির স্বায়ত্তশাসন সুদৃঢ় হবে।বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জোবরা গ্রামে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কোন উল্লেখ নেই। তবে খসড়া অধ্যাদেশে আইনের ধারা ৪-এ একটি ব্যাখ্যা যুক্ত করে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প বলতে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধীনে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে বোঝায়। এ প্রকল্প পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায় এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এতে অংশ নেয়।’এছাড়া বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে, যদি ব্যাংকের কার্যক্রমে তা প্রয়োজনীয় মনে হয়। পাশাপাশি, নতুন নির্বাচিত পরিচালকেরা তাদের দায়িত্ব গ্রহণ না করার আগ পর্যন্ত নির্বাচিত পরিচালকেরা তাদের পদে থাকবেন। শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে, ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তার অবসরের বয়স পেরিয়ে গেছে কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল আওয়ামী সরকার।

একনেকে ৪ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হবে ৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। বুধবার (৮ জানুয়ারি) একনেক সভায় অনুমোদন করার জন্য প্রকল্পগুলো উত্থাপন করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেকের চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় চট্টগ্রাম কর ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হয়, যার মেয়াদকাল জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৮ পর্যন্ত নির্ধারিত। প্রকল্পটির খরচ হবে ৪৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং এটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। মোংলা বন্দরে পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রকল্পও পরিকল্পনায় রয়েছে, যা জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ১৫৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১ হাজার ৩৮৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে এবং ১৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা হবে। এটি বাস্তবায়ন করছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং মেয়াদকাল জুলাই ২০১৯ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত। এছাড়া, ‘এস্টাবলিস্টমেন্ট অফ গ্লোবাল ম্যারিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেইফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড ম্যারিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম (ইজিআইএমএসএস)’ প্রকল্পটি ১১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৯৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা হয়েছে, যা নৌপরিবহণ অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদি। নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ও বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৬১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হয়েছে, যা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত। ডাল ও তেলবীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) বাস্তবায়িত হবে ২৬৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়, যা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পরিচালনা করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল নভেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৯ পর্যন্ত। সিলেট বিভাগে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পটি ৪৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি। এর মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৯ পর্যন্ত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের আয়রন ব্রিজ পুনঃনির্মাণ/পুনর্বাসন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত। ডুপিটিলা-১ ও কৈলাশটিলা-৯ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন প্রকল্পটি সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) বাস্তবায়ন করবে এবং এর ব্যয় হবে ৬৪৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল অক্টোবর ২০২৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। শেষে, কনস্ট্রাকশন অফ বাংলাদেশ বুদ্দিস্ট মোনাস্টারি কমপ্লেক্স এট লুমবিনি কনজারভেশন এরিয়া, নেপাল প্রকল্পের ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নতুন উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পেয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সাবেক নির্বাহী পরিচালক আহসান উল্লাহ। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার কার্যক্রম বিষয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে সহায়তা করবেন। সোমবার (৭ জানুয়ারি) এই নিয়োগ দেওয়ার পর আহসান উল্লাহ উপদেষ্টা পদে যোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বাংরাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ আদেশে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার কার্যক্রম বিষয়ে গভর্নরের উপদেষ্টা পদে আহসান উল্লাহকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হল।’ গেল সেপ্টেম্বরে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আরএফ হোসেন গভর্নরের সঙ্গে এক সভা শেষে জানিয়েছিলেন, দেশের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করবে। ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি উন্নয়নে খেলাপি ঋণ (এনপিএল) ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকাণ্ড শক্তিশালী প্রকল্প ও আইনি কাঠামো বিষয়ে তিনটি আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এর পরপরই ব্যাংক খাত সংস্কারের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই টাস্কফোর্সে আর্থিক খাত বিষয়ে অভিজ্ঞ ছয়জনকে সদস্য করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর নিজেই। ব্যাংক খাত সংস্কারে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে এই টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের বাকি ছয় সদস্য হলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, সাবেক ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ এ রুমি আলী, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহরিয়ার এম হাসান, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের উপাচার্য এম জুবায়দুর রহমান ও হিসাববিদ কোম্পানি হুদা ভাসি চৌধুরীর অংশীদার সাব্বির আহমেদ। তারা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। পাশাপাশি ছয় ব্যাংকের নিরীক্ষা শুরু করেছে দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কার ও শক্তিশালীকরণের জন্য গভর্নরের উপদেষ্টা পদে আহসান উল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হল। নিয়মিত অবসরের পর তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা পদে কাজ করেছেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হন।

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তের কারণ জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা
শিল্পখাতে গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার প্রস্তাবনা প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তটি সরকারের জন্য সুখকর নয়।’ নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালে নির্বাহী আদেশে শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তিন গুণ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। ক্যাপটিভে ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। এরপর গত বছর ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটে আরও ৭৫ পয়সা দাম বাড়ানো হয়। তবে দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস সংকট কাটেনি। এ অবস্থায় সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলে ফের গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়াতে চায় সরকার। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে পেট্রোবাংলার পাঠানো প্রস্তাবনায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। পুরোনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় থাকছে প্রস্তাবে। তবে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ায় বুধবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকার কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় গ্যাপএক্সপো-২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্ষোভ জানান ব্যবসায়ীরা। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে শিল্প উদ্যোক্তারা কারখানা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তাহলে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার আর বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে পার্থক্য কী থাকল?’ আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৭০-৭৫ টাকা কেন করা হবে? এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হল না?’ এ সময় শেখ বশিরউদ্দীন আশ্বস্ত করে বলেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তটি সরকারের জন্য সুখকর নয়। তারপরও করতে হবে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে।’

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে ফের অনিয়ম, পদ খোয়ালেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান
পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান ও নিজের জামাতাকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির (ইসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ইতিমধ্যে তাকে ইসির চেয়ারম্যান পদ থেকে গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) সরিয়ে দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইসলামী ব্যাংক পরিচালনায় যাদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সাবেক ব্যাংকার আব্দুল জলিল। তাকে ইসির চেয়ারম্যান করা হয়। সেই সুযোগে তিনি অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে ব্যাংকটির একটি সূত্র জানায়। ইসলামী ব্যাংকের অর্ধেক ঋণ বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপ নিয়ে গেছে। ব্যাংকটির এখন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ অনুমোদন করে ইসির সভা। জানতে চাইলে মো. আব্দুল জলিল সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান ও জামাতাকে ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের এমডি করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গত ১০ ডিসেম্বর ইসির সভায় ‘ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রস্তাবিত ঋণের অঙ্ক ছিল ২২৫ কোটি টাকা। ঋণ অনুমোদনের দিন সকালে একপ্রকার তড়িঘড়ি করে ইসির চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশে তা বাড়িয়ে ২৫০ কোটি টাকা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তথ্যানুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ঋণখেলাপি ও তাদের কাছে ব্যাংকের ১৮ কোটি টাকা অনাদায়ি। এর পরের সভায় ঋণ অনুমোদন নিশ্চিত করে শাখাকে চিঠি দেওয়ার কথা থাকলেও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়নি। অনুমোদনের পর দিনই তড়িঘড়ি করে ঋণ বিতরণ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সোমবার ইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে আব্দুল জলিলকে সরিয়ে দেয়। তার পরিবর্তে স্বতন্ত্র পরিচালক মুহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাবকে ইসির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এর আগে তিনি ইসি কমিটির সদস্য ছিলেন। মো. আব্দুল জলিল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘যে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটি এই ব্যাংকের পুরনো গ্রাহক। তাদের কারখানা চলমান রাখতে ঋণের প্রয়োজন ছিল। সেজন্য ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। আমি কোন প্রভাব খাটাইনি।’ আব্দুল জলিল এক সময় ইসলামী ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করতেন। এরপর তিনি ট্রু ফেব্রিকস লিমিটেডে কাজ করেন। এ দিকে, আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে গত মাসে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে মশিউর রহমান নামে একজনকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি করার অভিযোগ উঠেছে। মশিউর রহমান সম্পর্কে আব্দুল জলিলের জামাতা। আব্দুল জলিল ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজেরও চেয়ারম্যান। জামাতাকে ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের এমডি পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন আব্দুল জলিল। বলেন, ‘আমার আত্মীয় হলেও তাকে আমি নিয়োগ দেইনি। তিনি ওই পদের জন্য যোগ্য বলে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষই তাকে সেখানে বসিয়েছে। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তিত হওয়ার পর নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের টাকা বের করে নেয় এস আলম গ্রুপ। গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও ইসলামী ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, এস আলম ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন। শুধু টাকাই নেননি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটিও ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন।

ব্যাংকে ডলার সংকটের তথ্য সঠিক নয়: বাণিজ্য উপদেষ্টা
ব্যাংকে ডলারের সংকট আছে বলে যে তথ্য, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর বেগুনবাড়ি দীপিকার মোড়ে টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, গত বছর আমাদের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। আমাদের রপ্তানিতে প্রায় ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ব্যাংকে ডলার সংকট, এ তথ্য সঠিক নয়। ব্যাংকে কোনো ডলার সংকট নেই। ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। নিজস্ব মজুদেও ঘাটতি নেই। স্থানীয় উৎপাদনেও ঘাটতি নেই। আমরা আমনের ভরা মৌসুম পার করছি। ঠিক এই মুহূর্তে বাজারে এই দামের কোনো যৌক্তিক কারণ আমরা দেখছি না। এটার কারণ আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি, বোঝার চেষ্টা করছি। আমাদের কাছে এটা অযৌক্তিক মনে হচ্ছে। আশা করি, কিছুদিনের মধ্যে দাম নেমে আসবে। শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এই মুহূর্তে আলুর দাম ৫০ টাকারও কম। কিছুদিন আগেও অপ্রত্যাশিতভাবে আলুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে সহনীয় পর্যায়ে আসছে। আরো সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। সরকারি পর্যায়ে বছর শেষে কিছু আলু মজুত করব। প্রয়োজন হলে আমদানি করে মজুত করব। গত বছর মূল্য বেশি হওয়ার কারণে আলুর চাষ ব্যাপক হয়েছে। এ বছর স্বাভাবিকভাবে আলু ও পেঁয়াজের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করা করা যায়। তিনি বলেন, শুধু বাজার মূল্য না, কৃষকদের কথাও চিন্তা করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য একটা যৌক্তিক পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থা করা। উপদেষ্টা বলেন, আজ থেকে টিসিবির কাগজের কার্ডের যে ব্যবস্থা ছিল, সেই ব্যবস্থাকে বাতিল করা হলো। নতুন স্মার্ট কার্ডেই টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম হবে। টিসিবির পণ্যের ক্ষেত্রে যে ধরনের নৈরাজ্য এবং দুর্বৃত্তায়ন হয়েছিল, এটাকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে যত ধরনের অনিয়ম ছিল তার একটা বড় অংশ দূর করতে পেরেছি। এ প্রক্রিয়া চলমান। এক কোটি কার্ডের মধ্যে প্রথমে ৫৭ লাখ, পরে আরো ৬ লাখ ডিজিটাল কার্ড বাজারে ছেড়েছি। আমরা আরো ৩০ থেকে ৩৫ লাখ কার্ড দিতে পারি। সেটা আমরা নিয়ে আসবো। তিনি আরও বলেন, আমরা টিসিবির ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ এবং আরো অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। আমরা আরও বেশি লোকের কাছে এই উপকার পৌঁছে দিতে পারব। অনুষ্ঠানে টিসিবির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

৬ লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে খেলাপি ঋণ: বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংক খাতের জন্য বিষফোঁড়ার মতো একটি বিষয় খেলাপি ঋণ। বর্তমানে এ ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ কোটি টাকা বা তার বেশি বলে ধারণা করা হলেও পুরো তথ্য সামনে এলে তা ৬ লাখ কোটি টাকাও ছাড়াতে পারে। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা। তিনি বলেন, আগে খেলাপি ঋণের তথ্য লুকানো হতো। এখন লুকিয়ে রাখা সব তথ্য প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি। তবে, পুরো তথ্য সামনে এলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ কোটিও ছাড়াতে পারে। হুসনে আরা শিখা বলেন, এই মুহূর্তে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর মতো কোনো চিন্তা আমাদের নেই। তদন্ত শেষ হলে খেলাপি কমানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে জানা যাবে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক রুলস ফলো করার চেষ্টা করছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির এটাও একটি কারণ হতে পারে। তবে তথ্য যাইহোক, এখন আমরা সবই প্রকাশ করে দিচ্ছি, আগে যেটা লুকানো হতো। এদিকে আর্থিক স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে গত পাঁচ মাসের অর্জনেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র। হুসনে আরা শিখা বলেছেন, ভালো দিক হলো, এরইমধ্যে আর্থিক ভীতি কেটে গেছে। গত পাঁচ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন, ডলার বাজার স্থিতিশীলতা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বিষয়ে বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু সুফল পাওয়া গেছে, কিছু ফলাফল আসতে আরও সময় লাগবে। তবে, আর্থিক খাতে এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক খুব বেশি খুশি নয়। এছাড়া বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কী পরিমাণ টাকা কোন দেশে পাচার হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট জানা যাবে। পাচারের টাকা ফেরত আনা একটি সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হলেও নির্ধারিত সংস্থাগুলো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থেই তারা এ বিষয়গুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেন না।