
বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবনাকে সমর্থন জানিয়ে চীনা বিনিয়োগকারীরা দেশের পাট, বস্ত্র, ওষুধ এবং সবুজ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চীনের এক্সিম ব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইয়াং ডংনিং। তিনি এ সময় বাংলাদেশে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানান।
ইয়াং ডংনিং বলেন, "চীন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও এখন তারা গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন খাতে মনোযোগ দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ছাদের সৌর প্যানেল এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পাট, যা শক্তি, জৈব-সার ও প্লাস্টিকের বিকল্প উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "চীনা উদ্যোগ এবং এক্সিম ব্যাংক, যারা পূর্বে বাংলাদেশে প্রধান অবকাঠামোগত উদ্যোগে অর্থায়ন করেছে, তারাও এই সরাসরি উৎপাদন বিনিয়োগে অর্থায়ন করতে আগ্রহী।"
চীনা কোম্পানিগুলি বাংলাদেশের পাট শিল্পে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে চায় এবং তারা দশ লাখ টন পর্যন্ত পাট ব্যবহারের প্রস্তুতি রেখেছে। ইয়াং ডংনিং জানান, চীনা সংস্থাগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ই-কমার্স খাতেও বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুঁজছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনের বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "বিশ্ববাজারে রপ্তানির জন্য উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে রূপান্তরিত করতে চীনের বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ।" তিনি ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতেও বিনিয়োগের সম্ভাবনার উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, চীনা বিনিয়োগ সৌরশক্তি ব্যবস্থায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যা দেশের পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে রূপান্তরকে সহায়তা করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের তরুণ শ্রমিকদের সম্ভাব্য ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, "বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো নতুন যৌথ উদ্যোগে কাজে লাগানো যেতে পারে।" তিনি চীনা কোম্পানিগুলিকে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের জন্য আহ্বান জানান, যা দেশের বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের সুযোগ দেবে।
তিনি বলেন, "দেশের এই অংশে সমুদ্রের সঙ্গে বিশাল যোগাযোগ রয়েছে। চীনা শিল্প এখানে স্থানান্তরিত হলে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি সহজ হবে।" এছাড়াও তিনি দক্ষিণ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের রেলপথ সংযোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ ও রপ্তানি প্রসারিত করার আহ্বান জানান।
বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা হংকংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন। সভায় সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও উপস্থিত ছিলেন।