
জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ আজ (২৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তবে বিশেষ কারণে তা সম্পন্ন হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন নির্ধারণ করেছে। মামলায় সাবেক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল-২-এর দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। প্যানেলের চেয়ারম্যান ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ। অপর সদস্য ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আজকের এদিনে তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি নেওয়ার কথা থাকলেও, প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তা স্থগিত করে নতুন তারিখ ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও অন্যান্যরা।
এরই মধ্যে সকালে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে আনা হয় ছয়জন আসামিকে। তারা হলেন- এএসআই আমির হোসেন, বেরোবির সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী, রাফিউল হাসান রাসেল ও আনোয়ার পারভেজ।
গতকাল ১৬তম দিনের সাক্ষ্য হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন সাজু রায়। তিনি বলেন, “আমি আবু সাঈদকে হাসপাতালে নিয়েছিলাম। পরে মৃত ঘোষণা হলে পুলিশ লাশটি নিয়েছিল।” এছাড়া এই জবানবন্দি পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও গ্রেপ্তারদের আইনজীবীদের মাধ্যমে নেওয়া হয়।
এর আগে, ১৮ নভেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন শিক্ষার্থী শান-এ রওনক বসুনিয়া। ১৬ নভেম্বর মিঠাপুকুর থানার ওসি মো. নূরে আলম সিদ্দিক এবং ১৩ নভেম্বর পুলিশ নায়েক আবু বকর সিদ্দিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ নভেম্বর এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, রংপুর কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন এসি মো. আরিফুজ্জামান ও তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলামের নির্দেশে গুলি চালানো হয়েছিল, যার ফলে আবু সাঈদ শহীদ হন। ১১ নভেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ, এবং ১০ নভেম্বর জুলাই আন্দোলনের নেতা রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকিব রেজা খান।
এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পূর্বে কয়েক দফা স্থগিত হয়েছিল; যথাক্রমে ৪ নভেম্বর, ২১ অক্টোবর ও ১৩ অক্টোবর সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় সময় পেছানো হয়। ৬ অক্টোবর নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে জবানবন্দি দিয়েছেন দুই পুলিশ এসআই, রফিক ও রায়হানুল রাজ দুলাল। ২৮ আগস্ট আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও সাংবাদিক মঈনুল হক সাক্ষ্য দেন।
মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয় ২৭ আগস্ট, সূচনা বক্তব্য দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে ফর্মাল চার্জ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল বিচার শুরু করেন। এখনও বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ জন পলাতক রয়েছেন। তাদের পক্ষে ২২ জুলাই চারজন সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।
চলতি বছরের ৩০ জুলাই পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত চারজন আইনজীবী শুনানি করেন। এর মধ্যে পাঁচজনের হয়ে লড়েন সুজাত মিয়া, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে ছিলেন মামুনুর রশীদ, এছাড়া ইশরাত জাহান ও শহিদুল ইসলাম শুনানি করেন। ২৯ জুলাই তিনজনের পক্ষে শুনানি হয়।
২৮ জুলাই প্রসিকিউশন ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেন। ৩০ জুন ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করেন। ২৪ জুন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এ পর্যন্ত এই মামলায় মোট ৬২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।