
বয়াতি ও পালাকার আবুল সরকারের মুক্তি এবং মানিকগঞ্জে তার সমর্থকদের ওপর হামলার বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি জমা দিয়েছে সাধু-গুরু ভক্ত ও ওলি-আওলিয়া আশেকান পরিষদ।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে সংগঠনটির প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে একটি পালাগানের পরিবেশনা ঘিরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে “বয়াতি ও পালাকার মহারাজ আবুল সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।” এতে আরও বলা হয়, এ ঘটনার প্রতিবাদে তার ভক্তরা মানববন্ধনে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। পরিষদ এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আবুল সরকারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে।
স্মারকলিপিতে পালাগানকে বাংলার শতবর্ষী লোকঐতিহ্যের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, পালার মধ্যে তর্ক-বিতর্ক, যুক্তি-খণ্ডন ও প্রতীকি চরিত্রাভিনয়ের মাধ্যমে ধর্মীয়, নৈতিক ও মানবিক শিক্ষার প্রকাশ ঘটে। পালাকারদের বিপরীত চরিত্রে অভিনয় কাঠামোগতভাবে একটি স্বীকৃত নান্দনিক রীতি, যা যুগ যুগ ধরে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য। অথচ কিছু শিক্ষাহীন ও অসৎ উদ্দেশ্যসম্পন্ন মহল আবুল সরকারের পরিবেশনার একটি অংশ বিচ্ছিন্নভাবে তুলে ধরে তাকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, তিনি সুফি ধারার শিল্পী। এ ধারায় নাস্তিকতার কোনো স্থান নেই, বরং আল্লাহ ও রাসুলের প্রশংসাই মূল বিষয়। তাই অভিযোগকে “ভিত্তিহীন ও অসৎ উদ্দেশ্যমূলক” বলা হয়েছে।
পরিষদ আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, এক শ্রেণি এই ঘটনাকে ব্যবহার করে সমাজে নৈরাজ্য ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে। স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয়- আবুল সরকারের অবিলম্বে মুক্তি, মানিকগঞ্জে তার ভক্তদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, সামাজিক নৈরাজ্য প্রতিরোধে রাষ্ট্রের দৃশ্যমান পদক্ষেপ এবং গণঅভ্যুত্থানোত্তর সারাদেশে বিভিন্ন মাজার ভাঙচুর ও প্রায় শতাধিক হামলার ঘটনায় উদ্বেগের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি রোধে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গবেষক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, বাউল মোহাম্মদ রোমেল, আবুল কাশেম, আলেয়া বেগমসহ আরও অনেকে।