
ঢাকার রামপুরায় জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক দুই সেনা কর্মকর্তাকে প্রিজনভ্যানে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। মামলায় মোট চারজনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুইজন এখনো পলাতক।
সোমবার ২৪ নভেম্বর সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান লেখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সবুজ রঙের যানটি কঠোর নিরাপত্তায় তাদের নিয়ে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়।
এদিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল শুনানি নেয়। আজই পলাতক দুই আসামির জন্য স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ এবং তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন নির্ধারিত হতে পারে।
হাজির হওয়া দুজন হলেন বিজিবি কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলাম এবং সংস্থাটির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম। পলাতক দুই আসামি হলেন ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম এবং রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান।
সেনা হেফাজতে থাকা রেদোয়ান ও রাফাতকে ২২ অক্টোবর প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে তোলা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল–১। একই আদেশে পলাতকদের হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়, যা ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল ৫ নভেম্বর, তবে প্রসিকিউশনের আবেদন বিবেচনায় পরে ২৬ অক্টোবর নতুন তারিখ হিসেবে আজকের দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের প্যানেল, যেখানে অন্য সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
দুই কর্মকর্তার উপস্থিতি ঘিরে সুপ্রিম কোর্ট এলাকা ও ট্রাইব্যুনাল চত্বরজুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। হাইকোর্টের প্রবেশপথ থেকে ট্রাইব্যুনালের মূল ফটক পর্যন্ত অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা মোতায়েন থাকেন, আর আশপাশের এলাকাজুড়ে টহল দেয় সেনাবাহিনী।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে, যার মধ্যে রামপুরায় নিহত হন ২৮ জন এবং আহত হন আরও অনেকে। আন্দোলনের সময় রামপুরায় বিজিবি কর্মকর্তা রেদোয়ানুল ইসলামকে গুলি ছুড়তে দেখা যায় বলে উল্লেখ রয়েছে তদন্তে। নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আছে অন্য আসামিদের বিরুদ্ধেও। এ পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালে চারজনের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয় এবং তার আগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা।