নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা মেহরীনের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৬:২৫ পিএম, ১০ জুলাই ২০২৫

শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা থেকে নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলা করা মেয়ে মেহরীন আহমেদ (১৯) আদালতে বলেন,“আমি মা-বাবার পাপেট (পুতুল) নই। আমাকে কেন গালি দেবে? কেন তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করে? আমি আমার সুরক্ষা চাই।”
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালতে এই কথা বলেন মেহরীন।
গত ২২ জুন মেহরীন তার বাবা নাসির আহমেদ ও মা জান্নাতুল ফেরদৌসের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে একই আদালতে মামলা করেন। মামলার শুনানিতে মা-বাবার উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।
মেহরীন অভিযোগ করেন,“বাবা-মায়ের মাধ্যমে আমি জন্মগ্রহণ করেছি, সেটা আমার কোনো দোষ নয়। আমি তাদের পুতুল নই। আমাকে কেন গালি দিবে? আমাকে শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি ভালোভাবে খেতে ও ঘুমাতে পারি না। আমাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, ব্রেইন অ্যান্ড মাইন্ড হাসপাতালে দুই বছর রাখা হয়েছিল। সেখানে আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। কেন আমাকে ওই হাসপাতালে রাখা হয়েছিল, আমি জানতে চাই।”
মেহরীন আরও বলেন,“আমি একটি সুন্দর জীবন চাই, কিন্তু তা পাচ্ছি না। আমি আমার সুরক্ষা চাই, আমি বিচার চাই।” মেহরীন আদালতে তার বক্তব্যের বেশির ভাগ ইংরেজিতেই প্রকাশ করেন।
শুনানির সময় মেহরীনের মা জান্নাতুল ফেরদৌস কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বক্তব্য শুনেন, অন্যদিকে বাবা নাসির আহমেদ মেয়ের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকেন।
অপরদিকে, মা-বাবার পক্ষে আইনজীবী আবুল হোসেন আদালতে বলেন,“মেহরীন তাদের একমাত্র সম্বল এবং আশা-ভরসার স্থান। মা-বাবাও চান তাদের মেয়ে সুরক্ষার আদেশ পাক। দেশের বাইরে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।” শুনানির শেষে তিনি জানান, আদালত পরে আদেশ দিবেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসফাকুর রহমান গালিব জানান,“আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন। বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই বাদী পরিবারের সদস্যদের অবহেলা ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। তাই পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০ অনুযায়ী সুরক্ষা আদেশ ও জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার জন্য আবেদন করা হয়েছে।”
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে,গত ২৫ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসায় মেহরীনকে তার মা ও বাবা শারীরিকভাবে আঘাত করেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। তারা মেহরীনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, অপমান ও নির্যাতন করে যাচ্ছেন। এছাড়া, পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহারে বাধা দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়,পারিবারিক সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার অধিকার থেকে বাদীকে বঞ্চিত করা হয় এবং বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া হয়। তারা মৌখিক নির্যাতন, অপমান, অবজ্ঞা, ভয় দেখানো ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে মেহরীনকে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শারীরিক নির্যাতনের ফলে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।