.png)
ভোলার তজুমদ্দিনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালী এবং অপরিল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে আশেপাশের এলাকার কয়েকশ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী প্রায় আড়াইশ পরিবার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেও কোনো ব্যবস্থাগ্রহন না করায়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি বেড়িবাঁধের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৭৪ কোটি ১৭ লক্ষ ৩৬ হাজার ৪৫৭.৩১ টাকা ব্যায়ে উপকূলীয় বাঁধ পুর্নবাসন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন জীবনমান প্রকল্পের আওতায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোলাম রব্বানী কনাষ্ট্রাকশন। কাজটি শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে। সেই অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধে মাটি খননের কাজ শুরু করেন ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে।
অপরিকল্পিতভাবে খননের কাজ শুরু করার ফলে দুই শতাধিক বসতঘর, ফসলি জমি ও সুপারি বাগানসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ পালা কেটে নষ্ট করলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভুক্তভোগী পরিবারগুলিকে ক্ষতি পূরণ না দিয়ে ক্ষমতার জোড়ে বেড়িবাঁধের কাজ বাস্তবায়ণ করার চেষ্টা চালায়। পরে ভুক্তভোগীরা একত্রিত হয়ে গত শুক্রবার সকালে বেড়িবাঁধের মাটি খননের কাজ বন্ধ করে দেয়।
ক্ষতিগ্রস্তরা বেড়িবাঁধটি বর্তমান অবন্থান থেকে ৫-১০ ফুট পূর্বদিকে নিতে অথবা তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোলাম রব্বানী কনাষ্ট্রাকশন ইতিপূর্বে যে সব বাড়িঘর ভেঙ্গে মাটি কাটার কাজ করেছে সেসব ঘরমালিক গরীব অসহায় ভূমিহীন পরিবারগুলো বর্তমানে কনকনে শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। পরিবারগুলোর ভূমিহীন এবং গরীব হওয়ার ফলে খোলা আকাশই তাদের একমাত্র ভরসা।
এই পরিস্থিতিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দাবি করছে- সরকারি বরাদ্দ না থাকায়, তারা ক্ষতিগ্রস্থ মানুষজনকে কোন সহযোগিতা করতে পারবে না।
ভুক্তভোগী মোঃ শাহিন বলেন, "ঠিকাদারের লোকজন আমাদেরকে ১৫ হাজার করে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু আমরা তা গ্রহণ করিনি। হয়তো আমাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, অথবা পূর্বদিকে অনেক জায়গা আছে- সেদিকে সরিয়ে দিলে আমার শেষ সম্বল ঘর ভিটাটুকু রক্ষা হবে। আর তাতেই আমরা আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থকেতে পারবো।"
শাহিন আরও বলেন, "অন্যদিকে হাজিকান্দি এলাকায় নদী থেকে ১০ থেকে ১৫ মিটার দূরত্বে নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। চৌমুহনী এলাকায় আরো কম দূরত্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু আমাদের এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গোলাম রব্বানী কনাষ্ট্রাকশনের লোকজন দালালকান্দি ও মাওলানা কান্দির গরীব মানুষের বাড়িঘর উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে।"
এ বেপারে জানতে চাইলে ঠিকাদারী 'প্রতিষ্ঠান গোলাম রব্বানী কনাষ্ট্রাকশন'-এর প্রকল্প ম্যানেজার তন্ময় বলেন, আমি চরফ্যাশনের মিটিংয়ে আছি। তজুমদ্দিনে আসলে সরাসরি কথা বলবো।' বলে কল কেটে দেন।
তজুমদ্দিন-লালমোহনের এসএসডিও আহসান আহমেদ বলেন, জমির মালিকদের সাথে কথা বলে সমঝোতার মাধ্যমে বন্ধ কাজ শুরু করা হবে। বেড়িবাঁধের জমি অধিগ্রহণ করতে সরকারি কোন বরাদ্দ না থাকায় ঘর ও জমির মালিকদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া সুযোগ নেই। তবুও ঘর মালিকরা কোথাও অস্থায়ীভাবে থাকলে বেড়িবাঁধ সম্পন্ন হলে আবার বেড়িবাঁধে থাকতে পারবে।
তজুমদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বেড়িবাঁধের এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।