দরবারে হামলা, কবর থেকে তুলে পোড়ানো হলো ‘নুরাল পাগলা’র লাশ
- রাজবাড়ী প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৯:১৫ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মধ্যে কবর থেকে তুলে নুরুল হক ওরফে ‘নুরাল পাগলা’র মরদেহ পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এর আগে দরবার শরিফ ও বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভক্ত, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ক্ষুব্ধরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও পুলিশের দুটি গাড়িও ভাঙচুর করে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লাপাড়ায় এ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান।
ঘটনার সূত্রপাত হয় দুপুরে ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। গোয়ালন্দ আনসার ক্লাবে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা জালাল উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী খান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মণ্ডলসহ ইসলামী দলের নেতারা। সমাবেশ শেষে মিছিলকারীরা দরবার শরিফের দিকে এগোতে চাইলে পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দেয়। তখনই গাড়ি ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য ও দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহত হন।
এরপর উত্তেজিত জনতা দরবার শরিফে হামলা চালিয়ে ভেতরের ভবন ও স্থাপনা ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে কবর থেকে তুলে নুরাল পাগলার মরদেহ পদ্মার মোড় এলাকায় এনে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
পরে সেনাবাহিনী ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে হিমশিম খেতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নুরাল পাগলা গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মারা যান। তাকে বিশেষ কায়দায় দরবার প্রাঙ্গণে উঁচু স্থাপনায় দাফন করা হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় আলেম সমাজের মধ্যে। তারা কবর সমতল, রঙ পরিবর্তন এবং ইমাম মেহেদি দরবার শরিফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি জানায়।
গত ২ সেপ্টেম্বর ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটি এক সংবাদ সম্মেলনে দরবারে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে আল্টিমেটাম দেয়। এরপর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ দরবার কর্তৃপক্ষ এবং আলেম সমাজের সঙ্গে বৈঠক করে। শুক্রবার সকালে জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির অ্যাড. নুরুল ইসলাম জানান, দরবার কর্তৃপক্ষ দাবির অনেকটাই পূরণ করেছে, তাই বড় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
তবে দুপুরে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ দরবারে হামলা চালায়। এ সময় ইউএনওর সরকারি গাড়ি, পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর হয় এবং রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজিবসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মো. শরিফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ২২ জন আহতকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন ভর্তি আছেন এবং গুরুতর অবস্থায় ১৯ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।