ইমাম না হয়েও "শ্রেষ্ঠ ইমাম" পুরস্কার পেলেন জসিম উদ্দিন
- নেত্রকোণা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ০৫:১৪ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২৫

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিন কখনো কোনো মসজিদে ইমামতি করেননি, তবে তবুও তিনি জেলার "শ্রেষ্ঠ ইমাম" নির্বাচিত হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে এবং ধর্মপ্রাণ মানুষ ও পেশাদার ইমামদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
গত ২৯ জুন ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের জাতীয় সম্মেলনে জসিম উদ্দিনকে শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে সম্মাননা সনদ, ক্রেস্ট ও একটি চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্মসচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান উপস্থিত ছিলেন।
জসিম উদ্দিন বর্তমানে বারহাট্টা উপজেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোরআন শিক্ষা প্রকল্পে মডেল কেয়ারটেকার হিসেবে কর্মরত। তিনি একাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, যেমন উপজেলা হেফাজতে ইসলাম, ওলামা দল, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংগঠন।
স্থানীয় ধর্মীয় নেতাদের অভিযোগ, যিনি ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালনই করেননি, তাকে শ্রেষ্ঠ ইমাম নির্বাচিত করা ধর্মীয় দায়িত্ব ও ইমামতির গুরুত্বকে অবমূল্যায়ন করে। বিক্রমশ্রী জামে মসজিদের প্রকৃত ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঐ মসজিদে ইমামতি করছেন, অথচ পুরস্কার পেয়েছেন অন্য কেউ। অন্য মসজিদের ইমামরাও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তালিকা তৈরির সময় জসিম উদ্দিন নিজেকে বিক্রমশ্রী মসজিদের ইমাম হিসেবে উল্লেখ করেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই তাকে নির্বাচিত করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, জসিম উদ্দিনকে কখনো মসজিদে ইমামতি করতে দেখা যায়নি।
তবে জসিম উদ্দিন দাবি করেছেন, তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করেছেন, এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্তত ১৫টি প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।
নেত্রকোনা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার পূর্বসূরি শফিকুর রহমান সরকার এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন, যিনি বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন।
স্থানীয় ইসলামিক ব্যক্তিত্বরা মনে করেন, সত্যিকারের ইমামদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কাউকে পুরস্কৃত করা হলে তাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওপর আস্থা নষ্ট হবে এবং ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের উৎসাহ কমে যাবে।