বাড়ি ছাড়লেন মুরাদনগরের নির্যাতিত সেই নারী
- কুমিল্লা প্রতিনিধি
- প্রকাশঃ ১০:০৯ পিএম, ০১ জুলাই ২০২৫

কুমিল্লার মুরাদনগরের ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার সেই নারী বাড়ি ছেড়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তার বাড়িতে তালা ঝুলতে দেখা যায়। তবে তার বাড়িতে প্রতিদিনের মতো আজও লোকসমাগম ছিল। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমকর্মী, ইউটিউবার, বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে বিব্রত হয়ে তিনি বাড়ি ছেড়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার দুজন প্রতিবেশী বলেন, ‘রবিবার ওই নারী বাড়ি ছেড়ে কিছু সময়ের জন্য থানায় অবস্থান করেন। সোমবার তিনি বাড়ি ছাড়েন। পরে কাল পুলিশের সহযোগিতায় তিনি দুই সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছেন। তাই আজ তাদের পরিবারের কাউকে দেখা যায়নি। তবে বাড়িতে আছেন তার এক প্রতিবন্ধী বোন।’
এদিকে, আজ মঙ্গলবার তাদের বাড়িতে আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। নৌকায় করে দুপুরে তিনি সেখানে আসেন। তিনি আসার আগেই তার হাজারো নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হন।
এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের সামনে বক্তব্য দেন কাজী কায়কোবাদ। তিনি বলেন, ‘হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ বুঝি না। আমি বুঝি আপনারা সবাই আমার ভাই। আপনারা জানেন, এই ঘটনায় বিএনপির কোনও সংযোগ নেই। মুরাদনগর থানার ওসি আওয়ামী লীগের কথিত সাংবাদিক ও যুবলীগ নেতাকে দিয়ে এই ঘটনায় বিএনপির নাম জড়িয়ে দেয়। অথচ আসামি ছিল আওয়ামী লীগের কর্মী। আপনাদের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য আওয়ামী লীগ ও এনসিপি যে ষড়যন্ত্র করেছে তা সফল হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর যেসব আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়েছিল, আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা হওয়ার পর সেসব আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন করেছেন। নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এখন এনসিপির ব্যানারে সব অপকর্ম করছে। আর তাদের শেল্টার দিচ্ছেন মুরাদনগরের ওসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলাটির তদন্ত চলমান। তাই আমি বেশি কিছু বলবো না। সুষ্ঠু বিচার করতে হবেই হবে। আমি এখানে এসেছিলাম সবার সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে। কিন্তু পুলিশ ও আমাদের মাননীয় শিশু উপদেষ্টা ষড়যন্ত্র করে তাদের এখান থেকে দূরে নিয়ে যায়। আমি জানতে চাই তাদের উদ্দেশ্য কী? তারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেদিন থেকে এসপি এখানে বদলি হয়ে এসেছেন, সেদিন থেকেই পুলিশ দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুমিল্লা জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ভিড় করছেন। সাংবাদিক ও ইউটিউবারদের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে ভুক্তভোগীর পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া অনেকে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভিডিওতে ভুক্তভোগীর চেহারা দেখিয়ে আরও সমস্যায় ফেলছেন। এসব কারণেই ভুক্তভোগী বাড়ি থেকে সরে গেছেন। সোমবার তিনি পুলিশের কাছে সহায়তা চাইলে তাকে সহায়তা করেছে।’
সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক কুমিল্লা জেলার সাবেক সভাপতি নারী নেত্রী রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, ‘এ ঘটনার অনেক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। সেগুলোতে ওই নারীর চেহারা দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের এসব বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত। আর যারা এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি একজন নারী। বাড়িতে কীভাবে থাকবেন বলেন? তিনি বাড়িতে নেই আমি সকালেই শুনেছি। তাকে নির্যাতনের পর আবার লোকজন গিয়ে নির্যাতনের মতোই করছে। এটা ঠিক না। তার এখন শেল্টার হোমে থাকার কথা।’
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে শুধু শুধু বলা হচ্ছে। তিনি তার ইচ্ছায় নিজের বাড়ি ছেড়েছেন। এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’