ঝুঁকিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুই কিলোমিটার বাঁধ, দেখা দিয়েছে ভাঙন


April 2025/Padma bridge break.jpg

বর্ষায় শান্ত পদ্মা ফিরবে তার চিরচেনা আগ্রাসী রূপে। এতে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন শরীয়তপুরের পদ্মাপাড়ের মানুষ। তবে এবার যেন আতঙ্ক বেড়েছে কয়েকগুণ। সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশের নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো দুই কিলোমিটার রক্ষা বাঁধটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ, যা সমীক্ষা শেষে নিশ্চিত হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখাও দিয়েছে। আর বাঁধটি ভেঙে গেলে পদ্মায় বিলীন হবে জাজিরার হাট-বাজারসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখারকান্দি জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো তলিয়ে যায় পানিতে।

এছাড়া এলাকাটির আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল তা দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।

এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশের নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো দুই কিলোমিটার রক্ষা বাঁধটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ, যা সমীক্ষা শেষে নিশ্চিত হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এরমধ্যে কিছু কিছু জায়গায় ভাঙন দেখাও দিয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার ও চারটি গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক বসত বাড়ি। বাঁধটি ভেঙে গেলে পদ্মায় বিলীন হবে জাজিরার হাট-বাজারসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।

গত বছর নদীভাঙনের শিকার হয়েছে পাইনপাড়া এলাকার ইদ্রিস মাঝি। ৩০ বিঘা জমি আর সহায় সম্বল হারিয়ে বর্তমানে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের পূর্ব পাশের নদীর পাড়ে। তবে নদীর সেই অংশে ভাঙন দেখা দেওয়ার আতঙ্কে দিন কাটছে তার পরিবারের।

তিনি বলেন, ‘গত বার ঘরবাড়ি জমি-জমা সব হারিয়েছি। পরে অস্থায়ীভাবে পদ্মা সেতুর পূর্ব দিকে বাঁধের পাশে বসবাস শুরু করেছি। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে এখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যদি এইখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করা হয় তাহলে পুরো এলাকায় নদীগর্ভে চলে যাবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা হাতেম খাঁ বলেন, ‘নদী একেবারে আমাদের বাঁধের কাছে চলে এসেছে। গতবার এ বাঁধের অনেক জায়গা নিয়ে ভেঙে গেছে। এবার বর্ষায় মনে হয় পুরো বাঁধ ভেঙে যাবে। যদি সরকার একটি মজবুত বাঁধ নির্মাণ করে দিতো তাহলে মনে হয় আমরা বাড়ি ঘর রক্ষা করতে পারতাম।’

গৃহবধূ আলো বেগম বলেন, ‘আমাদের এ বাঁধ অনেক আগে তৈরি করা হয়েছে। এখন নদী ভাঙতে ভাঙতে বাঁধের কাছে চলে এসেছে। এ পুরাতন বাঁধ এখন মজবুত নেই। সরকার যদি তাড়াতাড়ি শক্ত বাঁধ নির্মাণ না করে তাহলে এ বাঁধ ভেঙে আমাদের বাড়িঘর সব পদ্মায় চলে যাবে। আমরা আমাদের জমিজমা বাড়িঘর বাঁচাতে চাই। সরকার যেন তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য জুলহাস খাঁ বলেন, ‘যুগের পর যুগ আমরা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছি। এ অঞ্চলের হাজারো মানুষ বাড়িঘর হারিয়েছে। বাঁধের পাশে নদী গভীর হওয়ার এবার বর্ষা মৌসুমে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি এ বাঁধ শক্ত এবং টেকসই করে তৈরি করা হোক।’

এ বিষয়ে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন চন্দ্র বনিক বলেন, ‘গত বারের ধসে পড়া বাঁধের ১০০ মিটার অংশের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালু ভর্তি ৩৩ হাজার জিওব্যাগ ও সিসিব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বর্ষার আগে বাঁধটি মেরামতের কাজ শেষ হবে।’

বাঁধের বিষয়ে জানতে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, ‘এক যুগ বেশি সময়ের আগের পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা রক্ষায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন দুই কিলোমিটার বাঁধটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ। টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। অনুমোদন শেষে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×