এক আসনেই বিএনপির মনোনয়ন চান পিতা-পুত্র


April 2025/Khasru Israfil.png
মির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইসরাফিল মাহমুদ চৌধুরী

চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও দেশের অর্থনৈতিক দিক থেকে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সিংহভাগ রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের অবস্থানও এই আসনে।

এ আসন থেকেই (তখন ছিল চট্টগ্রাম-৮) ১৯৯১ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে সাংসদ হন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও চার বারের সাংসদ ও বিএনপির সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এছাড়া আমির খসরুর ছেলে ইসরাফিল মাহমুদ চৌধুরীও বিএনপি থেকে এ আসনের মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। যেহেতু আমির খসরু মাহমুদ চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকেও মনোনয়ন চাইছেন এবং এ আসনে মনোনয়ন পেলে চট্টগ্রাম-১১ আসন ছেলের জন্য ছেড়ে দেবেন। এছাড়া ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক থাকায় ভোটের মাঠে তাদের থাকা-না-থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এদিকে আগেভাগেই চট্টগ্রামের ১৬ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ আসনে জামায়াত থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর শফিউল আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনিও জনসংযোগ শুরু করেছেন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে বেশি।

চসিকের ২৭-৩০ নম্বর এবং ৩৬-৪১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১১ আসন। পতেঙ্গা, বন্দর, সদরঘাট ও ইপিজেড থানা এবং ডবলমুরিং থানার একাংশ পড়েছে এ আসনে। এখানে রয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, দুটি বৃহৎ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বিমানবন্দর, নৌ-বিমানঘাঁটি, তেল শোধনাগার পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ও ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ জাতীয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ১৯৯১-২০০৬ সাল-টানা ১৫ বছর এ আসন বিএনপির দখলে ছিল। প্রথম বার খালেদা জিয়া আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় উপনির্বাচনে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন আমির খসরু। তবে ২০০৮ থেকে বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে এ আসনে সাংসদ হিসাবে জয়ী হন আওয়ামী লীগের এমএ লতিফ। সর্বশেষ ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনেও জয়লাভ করেন লতিফ। এ সময়ে চট্টগ্রাম চেম্বারে পরিবারতন্ত্র, বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রভাব বিস্তার, জমি দখলসহ সরকারি সুবিধা ও ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তিনি। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান এই সাংসদ। ৯ আগস্ট নগরীর মাদারবাড়ী এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘চট্টগ্রাম-১১ আসনে এখন পর্যন্ত আমির খসরুর কোনো বিকল্প নেতা নেই। তিনি ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। এ আসনের নাড়িনক্ষত্র তার জানা। তবে তার পৈতৃক নিবাস নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায়। এটি এখন চট্টগ্রাম-১০ আসনের অন্তর্ভুক্ত। সেখানেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ দুটি আসনের যেখানেই আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক, জয়ের ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত নেতাকর্মীরা।’

এদিকে একই আসনে আমির খসরুর ছেলে ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরীও বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাওয়ার কথা রয়েছে। গত ২৮ মার্চ চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে আমির খসরুর সঙ্গে ছেলে ইসরাফিল খসরুও উপস্থিত ছিলেন। ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন ইসরাফিল খসরু। দল চাইলে তিনিও প্রস্তুত বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

বিএনপির পররাষ্ট্র উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি কখনো ক্ষমতা বা জনপ্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি চিন্তা করে কোনো কাজ করিনি। ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার ইচ্ছা নিয়েও কাজ করিনি। সবসময় কাজ করেছি দল ও মানুষের স্বার্থে। এক্ষেত্রে দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, তাহলে অবশ্যই সেটি সৌভাগ্যের হবে।’

জামায়াতের প্রার্থী শফিউল আলম বলেন, ‘আমি ২০১৫-২০২০ সাল পর্যন্ত চসিকের ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমার সফলতা ছিল। হয়তো এ কারণে দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমার ইচ্ছা রয়েছে এ আসন হবে নাগরিকদের নিরাপদ বাসস্থান। যেখানে থাকবে না চাঁদাবাজি, দখলবাজি কিংবা কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য।’ 

জামায়াতে ইসলামীর বন্দর থানার শূরা ও কর্মপরিষদের এ সদস্য আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১১ আসনে উচ্চবিত্তের মানুষ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে জেলে ও অস্থায়ী মানুষের আবাসস্থল। তাদের মধ্যে নিচতলার মানুষের কথা শোনার কেউ নেই। তাদের সমস্যাগুলো যুগযুগ রয়ে গেছে। এখনো চট্টগ্রাম বন্দর পতিত সরকারের দোসরদের হাতে জিম্মি। এখানে জলাবদ্ধতাসহ যেসব নাগরিক সমস্যা রয়েছে, জনগণ যদি সুযোগ দেয় সম্মিলিতভাবে সমাধান করার ইচ্ছা রয়েছে।’

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×