চাটমোহরে জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাদ্যের রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত


Feb 2025/Zink food.jpg

আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হারভেস্ট প্লাস প্রোগ্রামের স্কেলিং বায়োফর্টিফাইড ক্রপ প্রকল্পের আয়োজনে পাবনার চাটমোহরে জিংক সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাদ্যের রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জিংক সমৃদ্ধ ধান, গম ও ডালের সম্প্রারণের অংশ হিসেবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ওয়াহিদুল আমিন, বিসেফ ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মিটন, ঢাকা সিএমএইচের ট্রেইনার ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশিয়ানিস্ট শারমিন শিল্পী নকশী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চাটমোহর উপজেলার সাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলী, চাটমোহর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরকেএম আব্দুর রব মিঞা, চাটমোহর প্রেস ক্লাবের সভাপতি হেলালুর রহমান জুয়েল, সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান টুকুন, বিসেফ ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মধু।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ‘খাবার নয়, পুষ্টিকর খাবার উৎপাদন, গ্রহণ ও বাণিজ্যিক ব্যবহারে জনসচেতনতা তৈরিতে এই প্রয়াসটি  দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা রাখবে।’

আয়োজকরা জানান, ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকা পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জের ৩৪ হাজার কৃষক এই প্রকল্পের আওতায় জিংক ধান উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন।

ওয়াহিদুল আমিন বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, জিংক ধান, গম ও ডাল দিয়ে কি কি ধরণের রান্না তৈরি করা যায়। এর মাধ্যমে আমরা এখান থেকে এমন কিছু খাদ্য বের করতে পারি কি না, যেটা স্কুলের বাচ্চাদের জন্য উপযোগী হবে। মূলত খাবারের মাধ্যমে জিংকটাকে যাতে সহজলভ্য করা যায়, সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই আয়োজন।’

আতাউর রহমান মিটন বলেন, ‘সরকারি তথ্য বলছে, প্রতি চারজনে একজন অপুষ্টির ঘাটতির মধ্যে রয়েছে। সেটা মোকাবলো করতে এই জিংক চাল একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের দেশে উৎপাদিত ধানের যে জাতগুলো আছে, তাতে বিজ্ঞানীরা ফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে জিংকের উপাদান ঢুকিয়ে দিয়েছেন। সেকারণে ভাতের সাথে সাথে আমরা জিংকটাও খেতে পারবো। তাহলে আলাদা করে জিংক ট্যাবলেট বা জিংক খাবার প্রয়োজন হবে না। নিউট্রিশন চ্যালেঞ্জ মোকাবলো করা, অপুষ্টির ঘাটতি মোকাবেলা করায় জিংক সমৃদ্ধ ধানের উৎপাদন ও বিপণনে সরকার সহযোগিতা করতে পারে।’

শারমিন শিল্পী নকশী বলেন, মানুষের প্রতিদিন ৭-১০ বা ১৪ মিলিগ্রাম পর্যন্ত জিংক চাল খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি হলেও অন্যান্য সোর্স থেকে নিয়মিত জিংক নিতে পারি না। ভাত যেহেতু আমাদের প্রতিদিন খাওয়া হচ্ছে সেখানে জিংক ফর্টিফাইড রাইচ সেই ঘাটতিটা পূরণ করতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, হাড়ের গঠন, যেকোনো ক্ষত দ্রুত সারাতেও জিংকের প্রয়োজন। জিংকের আরো একটি বড় উপকারিতা হচ্ছে এটি ত্বক মসৃণ রাখে। এই আয়োজন ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে গেলে সবাই উদ্বুদ্ধ হবে আশা করি।’

বিসেফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলার ১৫ জন রন্ধন শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। তারা বায়োফর্টিফাইড জিংক সমৃদ্ধ চাল ও গম এবং জিংক ও আয়রন সমৃদ্ধ মসুর ডাল ব্যবহার করে রান্না করেন।

প্রতিযোগতিা শেষে খাবারের পুষ্টিগুণ, বায়োফর্টিফাইড উপকরণ ব্যবহার, খাবারের স্বাদ, উপস্থাপন বিবেচনায় বিচারক প্যানেল শ্রেষ্ঠ তিনজন রন্ধন শিল্পীকে নির্বাচন করেন। পরে তাদের হাতে ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন হাফসা খাতুন। মনিরা খাতুন দ্বিতীয় ও পারুল খাতুন তৃতীয় হয়েছেন।

উল্লেখ্য, হারভেস্ট প্লাস বাংলাদেশ জিংক ধান, জিংক গম এবং জিংক ও আয়রন মুসর ডালের সম্প্রারণ এবং অভিযোজনে কাজ করছে। সেইসঙ্গে ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ বায়োফর্টিফাইড খাদ্য শস্যের বিকাশ ও প্রচার করে যাচ্ছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ এর খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন ।
ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন [email protected] ঠিকানায়।
×