
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সংগীত’ ও ‘শারীরিক শিক্ষা’ বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদ পুনর্বহাল করতে দাবিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
বেলা ১১টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই কর্মসূচি শুরু হয়। এতে নাট্যকলা ও নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা এবং নৃত্যকলা বিভাগের পাশাপাশি ঢাকা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক এবং বিভিন্ন হল সংসদের সংস্কৃতি সম্পাদকরাও সমাবেশে উপস্থিত থেকে সমর্থন জানিয়েছেন। সংগীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ানও এদিন সমর্থন জানিয়েছেন।
সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী হুমায়রা উপন্যাস বলেন, ‘সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা একটা শিশুকে মানুষ করে তুলে। আপনি পৃথিবীর সব দেশে দেখবেন সংগীত শেখানো হয়। কারণ সংগীত মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখে। তাহলে আজকে কেন আমাদের এখানে দাঁড়াতে হবে? এটা শুধু সংগীত বিভাগের জন্য লজ্জা না, পুরো দেশের জন্য লজ্জা। আমাদের কেন সংগীত রক্ষায় দাঁড়াতে হবে?’
থিয়েটার ও পারফরম্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীন বলেন, ‘বর্তমানে রাষ্ট্রব্যবস্থায় যারা আছেন, অনেকে শিক্ষক। আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টা তিনিও একজন সংবেদনশীল মানুষ। তাও তার এ নির্দেশ কীভাবে হলো?’ তিনি আরও বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানের পর এ দেশ স্থির ও সুনির্দিষ্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা চায়। তাই হুকুম যখন দিয়েছেন, হুকুমটা বাতিল করুন। ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র চলে না। সেখানে সংগীতও প্রয়োজন।’
ডাকসুর সদস্য হেমা চাকমা বলেন, ‘নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠীর চাপের কারণে আজ সংগীত চর্চা বাতিল করা হয়েছে।’
সংগীত বিভাগের শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিন বলেন, ‘সভ্যতা বেঁচে আছে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে। এটি আগামী প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। আমরা সরকারের নিকট আহ্বান জানাই, অনতিবিলম্বে প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা পদ পুনর্বহাল করুন।’
গত ২৮ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন নিয়োগ বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন বিধিমালায় সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের দুটি পদ তৈরি করা হয়েছিল। তবে এরপর থেকে ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো সংগীত শিক্ষক পদ সৃষ্টিকে সমালোচনা শুরু করে।
হেফাজতে ইসলাম প্রাথমিক স্তরে সংগীত শিক্ষক নিয়োগকে ‘ইসলামবিরোধী এজেন্ডা’ আখ্যা দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা বাতিলের দাবি জানায়। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস এবং অন্যান্য ইসলামী সংগঠনগুলোও সংগীত শিক্ষক পদ সৃষ্টির কঠোর সমালোচনা করে।
এই চাপের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক পদ বাতিল করে। মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘দেশে প্রায় আড়াই হাজার ক্লাস্টারে সমসংখ্যক সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগের প্রাথমিক পরিকল্পনা সচিব কমিটির সুপারিশে বাতিল করা হয়েছে। কারণ সীমিত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের ফলে কার্যকর সুফল পাওয়া যাবে না এবং এতে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে এই নিয়োগ কাঠামো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে অর্থের সংস্থান সাপেক্ষে সব স্কুলে নতুন বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃষ্টি ও নিয়োগের বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে।’