
ভোলা-বরিশাল সেতুর নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভোলা। ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সফররত সরকারের তিন উপদেষ্টাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এবং প্রায় ২০ মিনিট ধরে তাদের অবরুদ্ধ রাখেন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে ঘটে এই ঘটনা। স্লোগান দিতে দিতে বিক্ষুব্ধ জনতা উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে রাখে, এমনকি এক পর্যায়ে দু’জন তরুণ তাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে যান।
অবরুদ্ধ হওয়া তিন উপদেষ্টা হলেন- সেতু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং উপদেষ্টারা সেখান থেকে বের হন।
ভোলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে ভোলা-বরিশাল সেতুসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে আসছে। এসব দাবির প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির একাধিকবার ঘোষণা করেছিলেন যে সেতুর নির্মাণকাজ ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে।
এ ছাড়া, গত ৯ মে ভোলা সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. মহিউদ্দিন এবং সেতু সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ স্থানীয়দের কাছে আশ্বাস দেন যে আগামী জানুয়ারিতেই কাজ শুরু হবে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে তিন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় স্থানীয়রা ভোলা-বরিশাল সেতুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
জ্বালানি ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, “ভোলা-বরিশাল সেতুর বিষয়টি পূর্বের ডিজাইনে করা সম্ভব নয়। তাই নতুন করে ডিজাইন করা হচ্ছে। এ ডিজাইনের কাজ আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারীতে শেষ হলে এরপর কাজ শুরু হবে।”
কিন্তু তিনি কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা দৃশ্যমান অগ্রগতির কথা জানাননি। এই বক্তব্য প্রকাশিত হতেই সভা শেষে উপস্থিত জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন এবং স্লোগান দিয়ে উপদেষ্টাদের ঘিরে ধরেন।
সদর দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় দুই বিক্ষুব্ধ যুবক উপদেষ্টাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন এবং অন্যরা উপদেষ্টা ফাওজুল কবির ও উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলেন।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তরিকুল ইসলাম কায়েদ বলেন, উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আগেই আগামী ডিসেম্বরে দৃশ্যমান কাজ শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু এবার জানালেন আরও ছয় মাস সময় লাগবে। তার ভাষায়, "উপদেষ্টা কথা রাখেন নাই এবং শপথ ভঙ্গ করেছেন,” তাই তিনি ফাওজুল কবির ও শেখ বশির উদ্দিন- উভয়ের পদত্যাগ দাবি করেন।
ভোলা সদর মডেল থানার ওসি আবু সাহাদাৎ মো. হাসনাইন পারেভজ বলেন, ভোলা-বরিশাল সেতু এবং ঘরে ঘরে গ্যাসের দাবিতে বিক্ষুব্ধ লোকজন উপদেষ্টাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী উপদেষ্টারা চলে যান।