
গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে দুর্নীতিবাজদের ধরপাকড় এবং সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নতুন রেকর্ড গড়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১১ মাসে দেশ-বিদেশে তিন শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৬ হাজার ১৩ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে, ২০২৪ সালের পুরো বছরে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৬১ কোটি টাকা। এছাড়াও, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের পাঁচ বছরে ক্রোক ও ফ্রিজ করা সম্পদের মোট পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ছিল। অর্থাৎ, গত ১১ মাসে দুদক সম্পদের ক্রোক ও ফ্রিজে নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে।
দুদকের বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার আওতায় আদালতের নির্দেশে এই সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুদকের কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী জানান, “দুদকের দন্ত ও নখ রয়েছে। যা আরও শার্প করার দরকার আছে। দুদক যথার্থ আইনি শক্তি সম্পন্ন। বিচার প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে বিশেষ আদালতের প্রয়োজন।”
আদালত ও দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে দেশে ক্রোক করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৭ কোটি ৮৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দেশীয়ভাবে ফ্রিজ করা হয়েছে ২২ হাজার ২২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা এবং বিদেশে ফ্রিজ করা হয়েছে ৩২৮ কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২৬ হাজার ১৩ কোটি ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে।
একই সময়ে বিচারাধীন ২৪৯টি মামলার মধ্যে ১২৬টিতে সাজা দেওয়া হয়েছে, ১২৩টি মামলা খালাস এবং ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকার জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও, ৩২১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ ও চার্জশিট পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১১ মাসে ১১ হাজার ৬৩০টি অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে ৯৬০টি অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ৭৯৮টি এনফোর্সমেন্ট হয়েছে, যার মধ্যে ১৮৮টি অনুসন্ধানাধীন, ২৮টি মামলা এবং চারজন অভিযুক্ত ফাঁদে ধরা পড়েছে। ২৩টি গণশুনানিও হয়েছে।
এই সময়ে মোট ৫১২টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে ২ হাজার ১৯১ জনকে আসামি করা হয়েছে। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৩১৫টি, যাতে ১ হাজার ৭৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এফআরটি বা মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ৭৩টি।
গত বছরের ৫ আগস্টের জনবিক্ষোভের পর শীর্ষ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অর্থপাচার ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর একের পর এক মামলা করা হয় এবং আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্টদের সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হচ্ছে। এই অভিযান এখনও চলমান।