
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে চিহ্নিত করে হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেছে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সাগির হোসেনের বেঞ্চ ৩৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। রায়ে বলা হয়েছে, প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহাকে চার রাউন্ড গুলি করে হত্যা করেন তখনকার ওই থানার এসআই লিয়াকত আলী।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, “যে কোনো সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণিত হয়েছে যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাস এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও হোতা ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীকে বুকে আঘাত করেন, যার ফলে দুইটি পাঁজর ভেঙে যায়, এবং জুতাসহ বাঁ পা ভুক্তভোগীর ঘাড়ের বাম পাশে চেপে ধরেন মৃত্যু নিশ্চিত করতে।”
অপর আসামি লিয়াকত আলী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলে এসে চারটি গুলি চালান। ট্রায়াল কোর্ট দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় প্রদীপ কুমার দাস ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছিল। হাইকোর্টও সেই রায় বহাল রেখেছে।
একই মামলায় ট্রায়াল কোর্টের দেওয়া অন্য ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হাইকোর্ট বহাল রাখে। এরা হলেন- সাবেক এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাবেক কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা, এবং পুলিশ সোর্স মো. নিজামুদ্দিন, মো. নুরুল আমিন ও মো. আয়াজ উদ্দিন। আটজন দণ্ডিতই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছে, “নন্দ দুলাল, সাগর, রুবেল, নুরুল, আয়াজ ও নিজামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সহায়তা, প্ররোচনা ও অভিন্ন উদ্দেশ্যের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ট্রায়াল কোর্ট তাদের সম্পৃক্ততার ধরন বিবেচনায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছে।”
রায়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত পরিকল্পনা ও ঘটনা-প্রবাহও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে মেজর সিনহা কক্সবাজারে ‘জাস্ট গো’ ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও ধারণের জন্য উপস্থিত ছিলেন। তখনকার টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাসের বেআইনি কর্মকাণ্ড- চাঁদাবাজি, গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড রেকর্ড করার কারণে প্রদীপ তার সোর্সদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন।
হাইকোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, হুমকি সত্ত্বেও মেজর সিনহা কাজ চালিয়ে যান। প্রদীপ কুমার দাস নন্দ দুলাল, সাগর, নুরুল, আয়াজ ও নিজামুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে তার হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ৩১ জুলাই ২০২০ মেজর সিনহা ও সাক্ষী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ভিডিও ধারণ শেষে ফেরার পথে, মো. নিজাম উদ্দিন তাদের ‘ডাকাত’ ঘোষণা করে স্থানীয়দের পিটিয়ে হত্যা করানোর চেষ্টা করেন। এ ঘটনা স্বীকারোক্তি ও পরিস্থিতিগত সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর দণ্ডিতরা ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবেন। হাইকোর্টের রায়ে ট্রায়াল কোর্টের রায় যথাযথ ও ন্যায়সঙ্গত হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।