
ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা যেন রূপ নিল ভয়ংকর ট্রাজেডিতে—রাজশাহীতে বিচারকের ছেলে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ঘাতক লিমন মিয়া। হাসপাতালের স্ট্রেচারে শুয়ে তিনি দাবি করেছেন, বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে তার পাঁচ বছরের পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে মহানগরীর ডাবতলা এলাকার পার্ক ভিউ ভবনের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন লিমন। সুমন রাজশাহী সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। হামলায় আহত হন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসি ও লিমন নিজেও। লুসি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, আর লিমনকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার মাত্র ছয় দিন আগে, ৬ নভেম্বর, সিলেটের সুরমা থানায় একটি জিডি করেন বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার। জিডিতে তিনি জানান, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে লিমনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলেও সম্প্রতি তা বন্ধ করে দেন। এরপর থেকেই লিমন নাকি তাকে সপরিবারে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩ নভেম্বর লিমন তাকে এবং তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেন।
অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের সামনে লিমন বলেন, “বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে আমার পাঁচ বছরের পরকীয়ার সম্পর্ক। শুরুতে রাজি ছিলাম না। আমি বলেছিলাম, আমাকে পছন্দ করলে বিয়ে করেন। উনি জোর করে আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। আমার মূল এনআইডি কার্ড ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কার্ডও তার কাছে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “কথা না বললে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই দেখা করতে আসি। গোলাপ ফুল, পপকর্ন, বাদাম এনেছিলাম। কথা না বলায় আমি ফল কাটার চাকু দিয়ে তার হাতে মারি। তখন তাঁর ছেলে বাধা দেয়। এরপর আর কিছু মনে নেই… আমি এর সঠিক বিচার চাই।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লিমন আকস্মিকভাবে ফ্ল্যাটে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান। গুরুতর আহত অবস্থায় সুমন ও তার মাকে দ্রুত রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলে বিচারক আবদুর রহমান ছিলেন না; খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে ছুটে যান। আটক লিমনের বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়িতে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, “হত্যার কারণ এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিরোধের দিকটি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, হামলাকারী যুবক বিচারক পরিবারের পূর্বপরিচিত ছিলেন।