
সুদানে গণহত্যার প্রমাণ গোপন করতে মরিয়া প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। দেশটির চিকিৎসক সংগঠন সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছে, আরএসএফ মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা বা গণকবরে পুঁতে ফেলার মাধ্যমে অপরাধের চিহ্ন মুছে ফেলতে চেষ্টা করছে।
রোববার (৯ নভেম্বর) প্রকাশিত বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ২৬ অক্টোবর রক্তক্ষয়ী হামলার পর পশ্চিম দারফুরের শহর এল-ফাশের দখল করে আরএসএফ। এরপর ওই শহরের বিভিন্ন সড়ক থেকে ‘শত শত মৃতদেহ’ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর অপরাধ পুড়িয়ে বা গোপন করে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।” সংগঠনের দাবি, এল-ফাশেরে যা ঘটছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং আরএসএফের বৃহত্তর গণহত্যা অভিযানেরই অংশ। তারা আরও উল্লেখ করে, মৃতদেহ বিকৃত করা, পুড়িয়ে ফেলা বা গণকবর দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ধর্মীয় নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, আরএসএফ শহরটির শেষ সেনাঘাঁটি দখল করার পর এল-ফাশেরের প্রায় আড়াই লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ৮২ হাজার লোক পালিয়ে গেছে। এলাকায় গণহত্যা, ধর্ষণ ও ব্যাপক নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে, আর অনেক বাসিন্দা এখনো শহরে আটকে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খার্তুম থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা হিবা মরগান জানিয়েছেন, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে উত্তরের আল দাব্বারের দিকে যাত্রা করা অনেকেই খাবার ও পানির অভাবে কিংবা গুলিবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়া মানুষজন আল জাজিরাকে জানিয়েছেন যে, আরএসএফ যোদ্ধাদের পোস্ট করা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও দেখে তারা স্বজনদের মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছেন।
মরগানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেক পরিবারই জানে না তাদের প্রিয়জনরা জীবিত না মৃত। তিনি উল্লেখ করেন, এল-ফাশেরে যারা এখনো বেঁচে আছেন, তারাও জীবন নিয়ে শঙ্কিত, কারণ “খাবার ও পানির অভাব রয়েছে, আর আরএসএফ জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে লক্ষ্য করছে।”
আরএসএফের শিকড় রয়েছে আরব-ভিত্তিক, সরকার-সমর্থিত জানজাউইদ মিলিশিয়ার মধ্যে, যাদের বিরুদ্ধে ২০০৩ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে দারফুরে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় প্রায় তিন লাখ মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় ২৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আরএসএফ সুদানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা দখলের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তাওইলা শহরে পালিয়ে যাওয়া বেসামরিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের প্রতিনিধি সিলভাইন পেনিকাড। তিনি বলেন, অনেকেই জানিয়েছেন যে তাদের গায়ের রঙের কারণে হামলার শিকার হতে হয়েছে। পেনিকাড বলেন, “আমার কাছে সবচেয়ে ভয়াবহ অংশ ছিল, মানুষ যখন জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছিল, তখন তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। কেবল কালো হওয়ার কারণেই তাদের টার্গেট করা হয়েছিল।”
এল-ফাশেরের প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠী জাঘাওয়া ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়ছে। শহরের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হাসান ওসমান জানান, কালো ত্বকের বাসিন্দারা, বিশেষ করে জাঘাওয়া বেসামরিকরা, পালানোর সময় জাতিগত অপমান ও শারীরিক নির্যাতনের মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, “যদি আপনার ত্বক ফর্সা হয়, তারা হয়তো আপনাকে ছেড়ে দেবে। এটি সম্পূর্ণভাবে জাতিগত বৈষম্য।”
সূত্র: আল জাজিরা