
প্রতি বছরই নানা চমক নিয়ে হাজির হয় সাতক্ষীরার পূজামণ্ডপগুলো। তবে এবারের দুর্গোৎসবে সবার নজর কাড়ছে ব্যতিক্রমী কয়েকটি উদ্যোগ। দক্ষিণ পারুলিয়ার পূজামণ্ডপটি সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ রেলস্টেশনের আদলে, যা সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের রেললাইন চালুর দাবিকে নতুনভাবে সামনে এনেছে। পাশাপাশি ধান ও পাট দিয়ে তৈরি প্রতিমাও জেলার বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে।
ঘুরে দেখা গেছে, পারুলিয়ার মণ্ডপটি একেবারে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম ও বগির মতো সাজানো হয়েছে। উপরে লেখা রয়েছে পারুলিয়া রেলওয়ে স্টেশন, আর বগির গায়ে ঝলমল করছে ‘সুন্দরবন সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস’। অভিনব এ থিম দেখতে দর্শকদের ভিড় উপচে পড়ছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুরে ধানের তৈরি প্রতিমা এবং কলারোয়ার উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়া সর্বজনীন মণ্ডপে সোনালি আঁশ পাটের প্রতিমা সবার দৃষ্টি কেড়েছে।
দক্ষিণ পারুলিয়া পূজা কমিটির সভাপতি পলাশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমরা প্রতি বছরই ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করি। সাতক্ষীরার রেললাইন চালুর দাবি বহুদিনের। সেই প্রেক্ষাপটেই আমরা ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে পারুলিয়া রেলস্টেশন’ থিমে মণ্ডপ সাজিয়েছি। তিনি জানান, থিমটি বাস্তবায়নে তিন লাখ টাকা এবং পূজার অন্যান্য খরচ বাবদ সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। তাঁর আশা, রেললাইন চালু হলে সাতক্ষীরার অর্থনীতি বিশেষ করে মৎস্য খাত অনেক এগিয়ে যাবে।
দর্শনার্থীরাও মণ্ডপের ব্যতিক্রমী আয়োজন দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে আসা অনাথ মণ্ডল বলেন, এই পূজা কমিটি সবসময় নতুন কিছু করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাতক্ষীরার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন রেললাইনকে সামনে রেখেই তারা এমন থিম নিয়েছে। মণ্ডপটি সত্যিই দারুণ।
সাতক্ষীরার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারী আল মুত্তাসিম বিল্লাহ সুমন লেখেন, এখানে রেলের আদলে পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। রেল নিয়ে সাতক্ষীরাবাসীর আবেগ ও স্বপ্নের প্রতিফলন এটি। একইভাবে রেল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেতা নাহিদ হাসান লিখেছেন, “সাতক্ষীরায় রেলওয়ে স্টেশনের আদলে তৈরি হলো পূজামণ্ডপ। রেল আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাবে।
প্রসঙ্গত, এ বছর সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় মোট ৫৮৭টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০৬টি, তালায় ১৯৫টি, কলারোয়ায় ৪৪টি, শ্যামনগরে ৬৯টি, আশাশুনিতে ১০৩টি, কালিগঞ্জে ৪৯টি এবং দেবহাটায় ২১টি মণ্ডপ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি মণ্ডপ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বলে পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা জানিয়েছেন।