
চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের রায় শুনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন আহত জুলাইযোদ্ধারা।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে তারা ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন। উপস্থিত ছিলেন জুলাইযোদ্ধা রাকিব হাওলাদার, নিয়ামুল এবং আরও কয়েকজন।
বেলা ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের প্যানেল রায় ঘোষণা করবেন। অন্যান্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও কামাল পলাতক। আর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন। রাজসাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন মামুন। প্রসিকিউশন তার শাস্তি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিয়েছেন এবং শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চাওয়া হয়েছে।
সকাল ৯টা ১০ মিনিটে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কড়া করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর। রোববার সন্ধ্যার পর দোয়েল চত্ত্বর থেকে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সাধারণ জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
এই মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এরপর ৯ কার্যদিবসে প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তিকরণ অনুষ্ঠিত হয়। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্য দেন এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তিকরণ শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণের সময় নেন।
যুক্তিতর্কে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে। মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ খালাস চেয়েছেন। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আশা প্রকাশ করেছেন, খালাস পাওয়া সম্ভব।
প্রসিকিউশন এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের নথি মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ চার হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। সাক্ষী হিসেবে ৮৪ জনকে জেরা করা হয়েছে। ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।