
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞাগুলো জারি হয়েছে, সেগুলো যুদ্ধ শেষ হলেও বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালতোনেন।
সোমবার (২৫ আগস্ট) হেলসিংকিতে আয়োজিত ‘বার্ষিক রাষ্ট্রদূত দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে ভালতোনেন বলেন, “যুদ্ধ শেষ হলেও (রাশিয়ার ওপর) চাপ অব্যাহত রাখা হবে। কেবল যুদ্ধবিরতি কিংবা শান্তিচুক্তি রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।” তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার ওপর ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের খসড়া তৈরি করছে এবং তা শিগগির কার্যকর করা হবে। ফিনল্যান্ড নিজ উদ্যোগেও রাশিয়ার ওপর অতিরিক্ত রপ্তানি শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে ভালতোনেন স্পষ্ট করে বলেন, “ইইউ চিরস্থায়ীভাবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে নয়, তবে আমরা কঠিন শর্তের ভিত্তিতে ধীরে ধীরে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে চাই।”
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এর পেছনে ন্যাটোতে ইউক্রেনের সদস্যপদের চেষ্টা এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে পশ্চিমা স্বীকৃতি না দেওয়ার ঘটনাগুলো ভূমিকা রেখেছিল। সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। রুশ আগ্রাসনের জবাবে ইইউ ও তার সদস্যরাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার সরকারি তহবিল ও স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত করা হয়, ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোতে রুশ অর্থ গচ্ছিত রাখা বন্ধ হয় এবং জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক মূল্যসীমা নির্ধারণ করা হয়। রাশিয়ার অর্থনীতি পুরোপুরি বিপর্যস্ত করার লক্ষ্য থাকলেও নিষেধাজ্ঞাগুলো সে উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারেনি এবং যুদ্ধ এখনও চলছে।
এদিকে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারের তালিকায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি শীর্ষে থাকবে। গত মে মাস থেকে তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনায় বসেছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। এর পাশাপাশি ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপর ১৮ আগস্ট হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইইউ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। এই বৈঠকগুলোর পর ট্রাম্প জানান, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তির ব্যাপারে আশাবাদী।
ফিনিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভালতোনেন তার ভাষণে আরও বলেন, পুতিনের লক্ষ্য ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখল করা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই “অবৈধ উচ্চাকাঙ্ক্ষা” কখনও সফল হতে দেবে না। তিনি জানান, যুদ্ধ পরবর্তী সময়েও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখবে ফিনল্যান্ড। পাশাপাশি কিয়েভ যদি প্রশাসনিক সংস্কার এবং দুর্নীতি দমন কার্যক্রমে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখাতে পারে, তবে দেশটিকে ইইউ ও ন্যাটোর সদস্যপদ দেওয়া হবে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি