
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলীয় সাসেক্সের পিসহ্যাভেন শহরের একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
পুলিশ ঘটনাটিকে মুসলিম বিদ্বেষমূলক অপরাধ (হেট ক্রাইম) হিসেবে বিবেচনা করছে এবং ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। সাসেক্স পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, অগ্নিকাণ্ডের সময় দমকলকর্মীদের দ্রুত ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। আগুনে মসজিদের প্রধান প্রবেশদ্বার ও বাইরে পার্ক করা একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনার সময় মসজিদের ভেতরে দুজন অবস্থান করলেও তারা অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসেন।
এই ঘটনার মাত্র দুই দিন আগে ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় দু’জন নিহত হন। মুসলিম বিদ্বেষ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সাসেক্সের এই মসজিদে অগ্নিসংযোগকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ মুসলিম ফোরামের চেয়ারম্যান তারিক জং বলেন, “শনিবার রাতে মসজিদের ভেতরে কয়েকজন ছিলেন, কিন্তু তারা সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-কে টেলিফোনে বলেন, “তারা সৌভাগ্যক্রমে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছেন।”
তারিক জং আরও বলেন, “ম্যানচেস্টারে উপাসকদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়া ও পরবর্তী ছুরি হামলায় দুইজনের প্রাণহানি এবং এখন মসজিদে আগুন লাগানোর ঘটনা আমাকে হতবাক করেছে। মানুষ কখনোই উপাসনালয়ে যায় না এই আশঙ্কা নিয়ে যে, তারা আক্রান্ত হতে পারেন। তারা সেখানে প্রার্থনা করতে, ক্ষমা চাইতে বা প্রিয়জনদের জন্য দোয়া করতে যান— কিন্তু কেউ তাদের খুন বা পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে, এমনটা কল্পনাও করেন না।”
সিনাগগে হামলার পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। ম্যানচেস্টারে বাড়তি টহলের পাশাপাশি ইহুদি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থানে পুলিশ উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাসেক্সেও একইভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মসজিদের আশেপাশে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
সাসেক্স পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা বুঝতে পারছি, এই ঘটনাটি সমাজে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব পড়বে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণ এবং পরবর্তী গাজা অভিযান শুরুর পর থেকেই যুক্তরাজ্যে ইহুদি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক ঘটনার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। মুসলিম-বিরোধী সংগঠন টেল মামা-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২4 সালে দেশজুড়ে ৬ হাজারেরও বেশি মুসলিম-বিরোধী ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে— যা গত ১২ বছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস